পূর্ণতা শেষ পর্ব 

পূর্ণতা শেষ পর্ব 
নন্দিনী নীলা

স্মরণ পেইজ উল্টে পাল্টে দেখল তারপর আর কিছুই লেখা নেই। ফাঁকা পেইজ।
অদ্ভুত এমন মাঝপথেই থেমে গেছে কলম কিন্তু কেন? তারপর আর কিছু লেখা নেই কেন?
প্রভাত আর পূর্ণতার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সবাই রাজি ছিল। তারপর ও কেন পূর্ণতা কে মিস্টার দিদান কে বিয়ে করতে হয়? কিছু তো রহস্য আছে।‌এরপর কি হয়েছিল যে পূর্ণতা ডাইরি লেখা বন্ধ করে দিয়েছিল।
বাকিটা জানতে আমায় পূর্ণতার মুখ খুলতে হবে কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব? যে মেয়ে তার মুখ খোলা কি এতোই সহজ?

স্মরণ ডাইরি বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। তারপর ঢাকা পৌঁছানোর জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। স্মরণের পাশে একজন ছেলে ছিল সারা রাস্তা গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলে কাটিয়েছে। স্মরণ ডাইরি পড়ায় মনোযোগী ছিল বাকি সময়টা দুজনের প্রেম করা দেখে কাটালো।
মায়ার বাসায় যেতেই
মায়া জিজ্ঞেস করল,” আরে ভাইয়া কি খবর? পূর্ণতা কে তো রাজি করিয়েই ফেলেছ দেখছি। সেদিন ট্রেনে তোমার অনুভূতি জানার পর বলেছিলাম ওকে মানাতে পারবে না। কিন্তু সকালে পূর্ণতা তোমার ঠিকানা নিয়ে রাজশাহী যেতেই বুঝেছি মেয়ে পটে গেছে। তোমার হৈমীর সাথে বিয়ে আর এদিক পূর্ণতা সেখানে উপস্থিত। সত্যি ইন্টারেস্ট কাহিনী। আমি অসুস্থ না থাকলে এই দৃশ্য মিস দিতাম না।”
স্মরণ বিমূঢ় কন্ঠে সুধাল,“ কি বলছো?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মায়ার কথা শুনে স্মরণ স্তব্ধ হয়ে গেছে। পূর্ণতা রাজশাহী গিয়েছে? ওতো বিলিভ করতে পারছে না।
স্মরণের এখন মন টিকছে না। খিদের জ্বালায় পেট ব্যথা করছিল কিন্তু পূর্ণতা রাজশাহী গিয়েছে শুনতেই ওর খিদে মিলিয়ে গিয়েছে। ও আবার রাজশাহী ব্যাক করবে এখনি।
মায়া তা দেখে বলল,“ তার মানে তুমি জানতে না পূর্ণ যাবে ওখানে?”
” আরে না ভাবি‌। পূর্ণতা আমার জন্য নয় নিজের জিনিসের জন্য গিয়েছে। উফ আমি এখন কি করব ভাবি? আম্মু তো আমার উপর রেগে বোম হয়ে আছে পূর্ণতা ওখানে গিয়েছে ওর যে কি অবস্থা। আল্লাহ!”

মায়া নিজেও চমকে উঠল। পূর্ণতা যেদিন মায়ার কাছে নাম্বার চেয়েছিল। মায়া ভেবেছিল হয়ত স্মরণ এর প্রতি ও দূর্বল হয়ে পড়ছে। আজ সকালে যখন ঠিকানা চাইল তখন তো বুঝল বান্ধবী তার ফেঁসে গেছে। ও পূর্ণতাকে এই নিয়ে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি। কারণ সবাই জানে পূর্ণতার বিয়ের কাহিনী। পূর্ণতা সাংসারিক ঝামেলা স্বামীর পরকীয়া কথা, সবটাই জানত ওরা সবাই। কিন্তু সবার অজানা প্রভাত এর বিষয়টা যেটা জানতে পেরেছে স্মরণ। স্মরণ মায়াকে পূর্ণতার অতীত নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল কিন্তু মায়া বলেছিল। “মাঝেমাঝেই পূর্ণতা কে অস্বাভাবিক লাগত। কারো কথা বলত কিন্তু তার সম্পর্কে তার নাম এমন কিছুই কখনোই বলেনি। ওর স্বামীর নামটাই তো ও কখনোই বলেনি। নিজের সম্পর্কে ও কিছুই কখনো বলেনি শুধু নাম আর শ্বশুরবাড়ি এটাই বলেছিল।”
স্মরণ কে এমন অস্তির হয়ে বের হতে দিল না মায়ায় হাজব্যান্ড। ওকে রুমে পাঠিয়ে বলল ফ্রেস হয়ে খাবার খেতে আসতে।

মায়া খাবার গরম করে ডাইনিং টেবিলে রাখল।
স্মরণ খেতে ও আসছে না। ওকে জোর করেই মায়ার হাজব্যান্ড খেতে নিয়ে এসে বলল,“ স্মরণ এমন করছিস কেন? সারাদিন জার্নি করে এসেছিস আজ বের হলে তুই অসুস্থ হবি। কাল সকালে চলে যাস আটকাবো না।”
স্মরণ বলল,“ মাকে কল দিলাম রিসিভ করল না। হয়ত বুজে গেছে আমি জেনে গেছি। ”
মায়া বলল,“ টেনশন করো না পূর্ণতার কিছুই হবে না‌। ও অনেক শক্ত মেয়ে।”
স্মরণ চিন্তিত সুরে বলল,“ আমার ফুপি আর মায়ের সামনে টেকা মুশকিল। এমনিতেই সবাই আমার উপর রেগে আগুন হয়ে আছে। সেই ক্ষণে পূর্ণতা ওখানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। সবার রাগ পূর্ণতার উপর গিয়ে পড়েছে। কি যে হচ্ছে! টেনশনে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।”

স্মরণের দুশ্চিন্তা দেখে পূর্ণতার জন্য মায়ার টেনশন হতে লাগল। তবুও স্মরণ কে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে বলল।
স্মরণ অস্থিরতা নিয়েই খাবার খেল পেটের ক্ষুধায়। রুমে এসে স্মরণ পূর্ণতাকে কল দিল। পূর্ণতা একবার রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করল। যেন রিসিভ করার জন্য বসে ছিল। স্মরণ ঢোক গিলল এতো দ্রুত রেসপন্স পেয়ে।
স্মরণ হ্যালো বলতেই ওপাশ হতে পূর্ণতা বলল,“কোথায় আপনি?”
“ আমি তো ঢাকা।”

“ আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাকে নিজের পরিবারের সামনে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন তাই না। যেটা আমি করিনি তার জন্য সবার সামনে আমাকে হেনস্তা হতে হচ্ছে। তারা আপনাকে নয় আমাকে মেইন কালপ্রিট ভাবছে। অথচ আমি কিছুই করিনি। আপনি স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়েছেন কিন্তু তারা বিশ্বাস করে আমি আপনাকে পালিয়ে যেতে উস্কে দিয়েছি। আমার উপর সমস্ত দায়ভার দিয়ে দিচ্ছে, অদ্ভুত।” রাগে গজগজ করে বলল পূর্ণতা।
স্মরণ কন্ঠে অসহায়ত্ব এনে বলল,“আই এ্যাম সরি পূর্ণতা। তুমি ওখানে যাবার আগে একবার আমার সাথে কথা বলে নিলে এই ঝামেলায় পড়তে হতো না।”

“ আমি আপনাকে হাজার বার কল দিয়েছি আপনি আমার কল রিসিভ করেননি কেন? আপনি কোন সাহসে আমার জিনিস এ হাত দেন‌। শুধু তাই নয় সেটা নিয়ে যাওয়ার সাহস করেন? আমি আপনাকে ছাড়ব না। মিস্টার স্মরণ আপনি কাজটা একদম ঠিক করেন নি।”
স্মরণ বলল,“আমিও চাই না তুমি আমাকে ছেড়ে দাও।”
“ আপনাকে আমি কাছে পেলে কি করতাম জানেন?”
“ জানি না কিন্তু আন্দাজ করতে পারি।”

” আপনার পরিবারের কেউ আমায় বাসা থেকে বের হতে দিচ্ছে না। তারা বলছে আপনি বাসায় ফিরে হৈমীকে বিয়ে করা না পর্যন্ত এখানে থেকে আমাকে বের হতে দেবে না। আব্বু পর্যন্ত আমাকে বাসায় ফেলে রেখে ঢাকা চলে গেল। এমন পাগল ফ্যামিলি আপনার। আমার রাগে কি যে করতে মন চাচ্ছে।” দাঁতে দাঁত চেপে বলল পূর্ণতা।
স্মরণ বলল,“ কয়েকদিন শ্বশুর বাড়িতে কাটিয়ে দেখো কেমন লাগে। সারাজীবন থাকার উপযুক্ত নাকি বুঝতে পারবে।”

“ সারাজীবন আমি এখানে কেন থাকব সুযোগ পেলেই আমি চলে যাব।”
“ তুমি ওখানে আছো শুনে আমি ব্যাক করার জন্য তাড়াহুড়ো করছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যাওয়াটা না হয়ে ভালোই হয়েছে। আব্বু নিজেই আমাকে পালিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। আমি জানি আব্বু আর তারিন তোমার দেখাশোনা ঠিকমতোই করবে। তাই আমার এতো হন্তদন্ত হয়ে যাবার প্রয়োজন নেই। আমি রিল্যাক্স এ থাকি। তুমি ও কয়েকদিন শ্বশুরবাড়ির হাওয়া গায়ে লাগাও। রাজশাহী তুমি আমার হতেই গিয়েছ। আমার না হয়ে তুমি আর ফিরতে পারবে না পূর্ণতা। মনে আছে আমি কী বলেছিলাম?তোমাকে আমি মিসেস স্মরণ না বানিয়ে রাজশাহী নেব না। আমি কিন্তু তোমায় নেই নাই। আমার কথা আমি রেখেছি। তুমি নিজের ইচ্ছায় চলে গেছ। ফিরে আসবে নতুন রূপে আমার হয়ে‌। আমি সেই দিনটার জন্য অপেক্ষায় আছি।”

“ আপনার জন্য একটা মেয়ে ব‌উ সেজে বসে আছে। আপনার জন্য কাঁদছে। তার কথা একটুও ভাবছেন না?”
“ দেখো একতরফাভাবে ভালোবাসার কষ্ট আমি বুঝি কিন্তু হৈমীর আমার প্রতি ভালোবাসা নেই। ও ভালোবাসা বুঝার ও সুযোগ পায়নি। নাবালক থাকতেই ফুপি ওর মাথায় আমার ভূত চাপিয়ে দিয়েছে আমি ওর চয়েজ নয় ওর অভ্যাস হয়ে গেছি। উঠতে বসতে আমার নাম জপে এই অবস্থা। কিন্তু আমি বিচক্ষণ একজন ছেলে। আমার দিকে থেকে টাইমপাস এর সময় নেই। আমি তোমায় সত্যিকার ভালোবাসি। তুমি ছাড়া আমি আর কাউকে গ্রহণ করতে পারব না পূর্ণতা।”
“ দেখুন,”

“ শ্বশুরবাড়িতে তোমার স্বাগতম পূর্ণতা। আমি ছিলাম না তাই দেরি হলো স্বাগতম জানাতে। আমাদের নেক্সট কথা হবে বৃহস্পতিবার। আল্লাহ হাফেজ।
কাহিনীতে মেবি টুয়েস্ট আসছে লেখিকা এখন লিখতে চাইছে না। তাই আমাদের এই গল্পের সমাপ্তি হোক। তুমি বাড়িতে কি ফেস করতেছো জানতে সবাইকে অপেক্ষায় থাকতে বলো, দ্বিতীয় অধ্যায় এর জন্য।”
পূর্ণতা আরো কিছু বলতে চেয়েছিল স্মরণ ফোন কেটে দিল। এক সপ্তাহ নিজে গিয়েছিল থাকার জন্য নিজে থাকতে না পারলেও পূর্ণতা কে একসপ্তাহ রাখার বন্দোবস্ত করে দিল। ও যেমন পূর্ণতা কে জানতে গিয়েছিল ওর বাসায়। আজ বাধ্য করে আটকে দিল নিজের বাসায় যাতে পূর্ণতা ওকে জানতে পারে। বুঝতে পারে। চিনতে পারে।
এই চেনায় হয়ত অনেক কিছুই পাল্টে যাবে। স্মরণ এর ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি।

পূর্ণতা পর্ব ৩৯

পূর্ণতা এক গোলক ধাঁধায় আটকে পরেছে। আব্বু কেন ওকে এই বাসায় ফেলে চলে গেল ও বুজতে পারছে না! বাসার সবাই ছেলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে ওকে কেন আটকে দিল সেটাও বুঝতে পারছে না! ওর কথা কেউ কেন বিলিভ করছে না!

সমাপ্ত