প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৮
মারশিয়া জাহান মেঘ
তাশরীফ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে টাওয়াল দিয়ে ফেইস মুছতে মুছতে দেখল, আভা পড়তে বসেছে। আভাকে দেখে আনমনেই তাশরীফের মনে জেগে উঠল একটা বাক্য।
“কি অদ্ভুত! ছোট্ট এই মেয়েটা শাড়ি পড়লেই এমন পুতুল পুতুল লাগে কেন!”
তাশরীফকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আভা বলল,
“কিছু লাগবে আপনার?”
তাশরীফ বু’কে হাত দিয়ে বলল,
“লাগবে, পানি লাগবে।”
“আপনি বসুন, আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।”
আভা রুম থেকে বেরুতেই তাশরীফ বড় করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। হাতটা বু’কে নিয়ে আপন মনেই বলে উঠল,
“পা’নির তৃষ্ণা না, সত্যিতো এইটাই, দেখার তৃষ্ণায় শেষ হয় না।”
আভা পানি নিয়ে রুমে এসে দেখে, তাশরীফ বিছানায় শুয়ে আছে। আভা নিচু সুরে বলল,
“পানি খাবেন না?”
তাশরীফ উল্টোদিকে চেয়ে শুয়েছিল। তার দৃষ্টি ছিল বেলকনিতে। আভার কন্ঠ শুনে তাকালো তার দিকে। বলল,
“চাচা কল দিয়েছিল।”
“তারপর?”
“বলল, তোকে নিয়ে আগামীকাল যেতে। কি নাকি, আচার-অনুষ্ঠান বাকি।”
“আপনি কি বললেন?”
“আমাদের রিসিপশন শেষ হলে তারপর যাব।”
“রিসিপশন!”
তাশরীফ বিছানা থেকে নেমে আভার হাত থেকে পা’নির গ্লাসটা নিতে নিতে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“তো? রিসিপশন হবে না? ভুলে যাচ্ছিস? আমি ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী। আমার বিয়ের অনুষ্ঠান যেমনভাবে হয়েছে, তেমনভাবে হওয়ার উচিৎ ছিল না। ধুমধাম ভাবে একটা অনুষ্ঠান করা, অস্বাভাবিক কিছু না আমার জন্য।”
আভা ছোট-খাটো ধা/ক্কা খেলো বোধহয়। তাশরীফের কথা শুনে অবাক না হয়ে সে যেন পারেই না। তাশরীফের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েছে আভা। তাশরীফ বিষয়টা পরখ করল কিন্তু বুঝতে দিলো না। বলল,
” তুই চাচার সাথে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলে নিস।”
“আমি? আপনিই বলুন না…”
অনেকটা ভীতু হয়েই সাহস করে কথাটা বলে ফেলল আভা। তাশরীফ বলল,
“তুই মেয়ে, তুই বললে সমস্যা কোথায়? আমি এতো কথা ওনাদের বলতে পারব না। অভ্যাস নেই। বিয়ে কি এর আগে করেছি? যে জানব, কিভাবে ল’জ্জা কা/টি/য়ে কথা বলতে হয় শ্বশুর -শাশুড়ীর সাথে?”
আভার হেঁ’চ’কি উঠল। তাশরীফ কথাগুলো বলছে? সেতো মানতেই চাইছে না।
“পড়াশোনা গাছে উঠিয়েছিস এ বাড়ি এসে? একবারও পড়তে দেখলাম না যে।”
” আপনি কি সারাদিন বাসায় থাকেন? যে দেখবেন।”
তাশরীফ ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“ওহ তাই? পড়তে বসিস? আমার কাছে কিন্তু….
আভা ভাব নিয়ে বলল,
” কি?”
“এই রুমে কিন্তু সিসি ক্যামেরা আছে।”
“কি!!!”
চিৎকার দিয়ে বলল আভা। তাশরীফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুম থেকে বেরুতে বেরুতে বলল,
“এনিওয়ে, এক কাপ কফির খুব প্রয়োজন আমার। নিয়ে আয়…”
তাশরীফ যেতেই আভা দাঁত কটমট করে বলতে লাগলো,
“ব্যাটার ত’লে ত’লে এত বুদ্ধি? আমার আর, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিন পার করা হলো না। ইশ…”
ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে ফারাবী আর তাশরীফ। এই ছাঁদটা তাশরীফের শখের বাগানও বলা চলে। ছাঁদে লাগানো নানান রকম ফুল-ফলের গাছ। আরেকদিকে সবজি। মধ্যে দোলনা। ফারাবীর এক কাত পকেটে অন্য হাত কফিতে। সে কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলল,
“তোর বিয়েটা এইভাবে হয়ে যাবে, তা অপরদিক ছিল তাশরীফ।”
তাশরীফ কফি খেতে খেতে বলল,
“ঘরে আভা বউরুপে আসার পরও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, যে আমি বিয়ে করেছি।”
“কে জানত! যে তুইও বিয়ে করবি। আসলে কি বলতো, ভাগ্যে যা থাকে তা কোনো না কোনোভাবে ঠিকিই প্রতিফলিত হয়ে যায়।”
“আমার কথা বাদ দে, হঠাৎ বাংলাদেশে বেড়াতে আসার কারণটা বুঝিনি। তুইতো, এই দেশে ব্যাকই করতে চাসনি।”
ফারাবী তাকালো তাশরীফের দিকে। বিষণ্ন মুখে বলল,
“মম ডেডের, ডি’ভো’র্স’টা আমাকে অনেক প্যারা দিচ্ছিলো তাশরীফ। দ্যাটস হোয়াই, এসেছি। ফ্রেশ নিশ্বাস নিতে।”
তাশরীফের মনটা খারাপ হয়ে গেল নিমিষেই। সে জানতো যে ফারাবীর মা- বাবার বন্ডিং ভালো না। ফারাবী তাকে সব বলতো আমেরিকা থাকতে। কিন্তু, ভালো না বলে যে, এত ভালো না তা সে জানতো না। যার ফলস্বরূপ ডি’ভো’র্স হতেই হলো। তাশরীফ কাঁধে হাত রাখে ফারাবীর। শান্ত কন্ঠে বলল,
“ফারাবী, মন খারাপ করিস না। দেখিস, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“কোনো কিছু ঠিক হবে না তাশরীফ। সবকিছু কেমন নিজের চোখে শে’ষ হতে দেখলাম দেখ। ডেড কল দিয়ে বলে, ডেডের কাছে চলে যেতে। মম কল দিয়ে বলে, মমের কাছে চলে যেতে। এই ভাগাভাগির মধ্যে আর নিজেকে রাখতে পারছি না। আমেরিকা গেস্ট হাউজে, আমি একাই থাকতে হয়। আমিতো এমন জীবন চাইনি, যেই জীবনে, মম ডেড আমার সঙ্গে থাকবে না।”
“ফারাবী, তোরতো আছে, আমারতো তাও নেই…”
ক্ষণিকের মাঝেই, দুইটা মানুষের মন, ধ্যান-ধারণা হারানো, আক্ষেপ, আফসোসের জগতে পাড়ি জমালো।
“শুনছেন?”
কারো ন’র’ম কন্ঠে পেছনে তাকালো তাশরীফ। আভাকে দেখতে পেয়ে বলল,
“এইখানে কেন?”
“খাবার রেডি, খেতে আসুন আপনারা।”
ফারাবী আলতো হেসে বলল,
“ভাবী, আপনি রান্না করেছেন?”
“জি ভাইয়া।”
তাশরীফ বলল, “আমরা আসছি, তুই যা।”
আভা যেতেই,
তাশরীফ টি’ট’কা’রি মে/রে বলল,
“ফারাবী, বার বার ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য রেডি থাক।”
ফারাবী বেশ তাড়াতাড়িই বলল,
“কেন কেন?”
“খাবার মুখে দিয়ে, চোখে পানি আনবি তাই।”
তোহা, আভা, ফারাবী, তাশরীফ খাবার টেবিলে খেতে বসেছে। ফারাবী খাবার কেবল নাড়ছেই, মুখে আর তুলছে না। তোহা বলল,
“বিদেশের খাবার মিস করছেন? এইখানে সাদা মুলাদের, খাবার পাওয়া যায় না। এইখানে খাঁটি বাঙ্গালিয়ানা খাবার পাওয়া যায়।”
তোহা যে বেশ খোঁ/চা মেরেই কথাটি বলেছে তা সবাই না বুঝতে পারলেও, ফারাবী ঠিকিই বুঝতে পেরেছে। ফারাবী জোরপূর্বক হেসে বলল,
“না মিস তোহা, আমি ওইসব খাবার মিস করছি না। আমিতো তাশ….”
তাশরীফ মু’খ চে/পে ধরেছে ফারাবীর। মাত্রই হাঁটে হাড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছিলো এই ছেলে। আভা আর তোহার সামনে যদি বলে দিলো যে, “খাবার খেলে ওয়াশরুমে যেতে হবে তাশরীফ বলেছে।” তাহলেতো, কে’লে’ঙ্কা’রি বেঁধে যেতো।
আভা আর তোহা একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। তোহা বলল,
“তাশরীফ ভাইয়া কি বলেছে?”
তাশরীফ থতমত খেয়ে বলল,
“কই, কিছুনাতো? এই ফারাবী, খাবারের সময় এত কথা বলতে হয় না, খেয়ে উঠ জলদি। আজ সারা রাত আমরা আড্ডা দিব।”
ফারাবী, সাথে তাল মিলিয়ে খাওয়ার ভান ধরে বলল,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ তাইতো…”
“আপনি আপনার বন্ধুকে বলেছেন আমি ভালো রান্না পারি না তাই না?”
তাশরীফ ল্যাপটপে হসপিটালের কিছু কাজ করছিল। আভার কথা শুনে হাত থেকে ফাইল পড়ে গেছে তার। তাশরীফ ফিরে তাকালো আভার দিকে। আমতা আমতা করে বলল,
“কখন? কবে? তুই কি স্বপ্ন দেখিস? আমি এসব ওসব বলব। তুই কি ভেবেছিস? আমি বলে দিয়েছি ওকে? ওইদিন যে এত মরিচের গুঁড়ো দিয়ে, তরকারি রান্না করেছিস?”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ৭
তাশরীফ নিজের মুখ নিজেই চে/পে ধরে। তাড়াহুড়োই, নিজের কথা দিয়ে, নিজেই সে ধরা খেলো! আভা কো’ম’ড়ে দু হাত গুঁজে, রাগী লুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাশরীফের সামনে। বলল,
“দেখলেনতো? সত্যি কথা কিভাবে মু’খ দিয়ে বের হয়ে গেল।”