একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৪

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৪
Mousumi Akter

তরী ভিজে বাসায় প্রবেশ করল, ওর পিছ পিছ মৃন্ময় ও বাসায় প্রবেশ করল। দু’জনে দু’তলায় উপস্থিত হতেই তরীর বাবার রুমের দরজা খুলে বের হলো তরীর বাবার নতুন বউ। সে তরী আর মৃন্ময়কে বাইরে থেকে বৃষ্টিতে ভিজে আসতে দেখে যা বোঝার তা বুঝে নিয়েছে। চোখ,মুখ,ভ্রু সব কুচকে তাকিয়ে আছে ওদের দু’জনের দিকে। তবে তরীকে আড়াল করে দৃষ্টি রাখল মৃন্ময়ের দিকে। কেমন যেন লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকালো মৃন্ময়ের দিকে।কিশোরী মনে এমন সুদর্শন বৃষ্টি ভেজা স্নিগ্ধ যুবক দেখে মনে তোলপাড় শুরু হওয়া অস্বাভাবিক কিছুতো নয়। মৃন্ময় কিছু না বলেই নিজেদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করল। তরীও নিজেদের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করল। তখন তরী নতুন মা তার বাবাকে বলল,

‘ তোমার মেয়ে কোথায় ছিলো জানো?’
তরীর বাবা বলল,
‘ না’তো।’
‘ ওর কাছে জিজ্ঞেস করো ভিজে পুড়ে কোথা থেকে এলো।’
তরীর বাবা ভ্রু কুঁচকে তরীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ গিয়েছিলে কোথায়?’
তরীর নতুন মা বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ বাড়িওয়ালার ছেলের সাথে ভিজে পুড়ে এলো এই মধ্যরাতে। আর কি কি করে এসছে জিজ্ঞেস করো।’
তরীর বাবা চোখ মুখ ভয়ানক রকম পাকালেন। তরীর দিকে তেড়ে গিয়ে খুব জোরে একটা থা’প্পা’ ড় কষিয়ে দিলেন। সেই থাপ্পড়ে তরীর কোমল গালে পাঁচটা আঙুলের দাগ বসে গেলো। সাথে সাথে তরীর গাল গড়িয়ে নোনা জল পড়ল। তরীর বাবা আরো চোখে রাঙিয়ে বললেন,
‘ রাত -বিরাতে ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করা কবে থেকে শিখলে। আর যদি কোনদিন এসব শুনেছি কে’ টে কয়েক টুকরো করে নদীতে ভাষিয়ে দিবো ‘

তরী অশ্রুসিক্ত চোখে তার বাবার দিকে একবার তাকালো। চোখের পানি মুছে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে ভেজা কাপড় পাল্টালোনা। সে অবস্থায় ফ্লোরে বসে কাঁন্নাকাটি করলো। এই পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবাটি কেন তার হলো। তার বাবার খারাপ চরিত্রর জন্য তার মা কোনদিন একটু সুখ খুঁজে পাইনি। বাবার পরকিয়ার জন্য তার মা সারাজীবন চোখের পানি ফেলতে ফেলতে পরপারে গিয়েছে। বলে গিয়েছিলো তোর মামাদের হাতে তোকে দিয়ে যেতে পারলেও একটু নিশ্চিন্ত হতাম। কিন্তু তা আর হলো কই। তার আগেই তার মা পরপারে চলে গেলো। তরী আর কোনদিন তার মামাবাড়ি খুঁজে পেলোনা।

মৃন্ময় রুমে গিয়ে গায়ের ভেজা কাপড় চেঞ্জ করল। পরণে কেবলমাত্র একটা টাওয়াল। ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে লোশন মাখছে। তখনই আয়নায় ভেষে উঠল তরীর মুখ৷ মৃন্ময় সাথে সাথে হেসে দিলো। এত মায়া কেন ওর মুখে। কেন যেন মৃন্ময়ের মন বলছে ও এই রাতে আরেকবার বাহিরে আসবে। নিশ্চয়ই মৃন্ময়ের মতই সে ও মৃন্ময়কে দেখার জন্য ছটফট করছে। মৃন্ময় খালি গায়ে শুধুমাত্র একটা টাওয়াল পরে নিজেদের ফ্ল্যাটে প্রবেশের মেইন দরজা টা খুলল। দরজা খুলতেই দেখল লাল রঙের নাইটি পরে দাঁড়িয়ে আছে তরীর নতুন মা। মৃন্ময়কে দেখেই মৃন্ময়ের আপাদ-মস্তক চোখ বুলালো। মৃন্ময় এমনিই লম্বা, ফর্সা সুদর্শন যুবক। আরোও টাওয়াল পরে থাকার জন্য বেশীই আকর্ষনীয় দেখাচ্ছে। তরীর নতুন মায়ের দৃষ্টি মৃন্ময়ের থেকে সরছেই না। ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃন্ময় বলল,

‘ আপনি এতরাতে জেগে আছেন যে?’
‘দেবরের সাথে গল্প করতে রাত জেগে আছি।’
‘ অস্তাগফিরুল্লাহ, কে দেবর? কার দেবর?’প
‘ তুমি আমার একমাত্র দেবর।’
মৃন্ময়ের শরীর ঘিনঘিন করছে। সে ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
‘দেখুন কাকিমা আমাকে দেবর ডাকবেন না। কাকাকে বলবেন আগামিকাল থেকে আমার বাবাকে যেন ভাই ডাকে। আজকের মত শুভরাত্রী ঘুমাব।’ বলেই মৃন্ময় ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো। তরীর নতুন মা একনজরে তাকিয়ে রইলো মৃন্ময়দের ফ্ল্যাটের দিকে।

আজ সারাহদের শেষ পরীক্ষা। সারাহর মুড অফ গতকাল রাত থেকেই। রোশানের মায়ের কথাগুলো তার কানে বেজে চলেছে। এইজন্য আজ আরো জিদ করে জিন্স আর, কামিজ পরে কলেজে এসছে। যে যা বলবে বলুক। সে তার মত। বিয়ে হয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি। বুঝিয়ে তো বলতে পারত। ওভাবে খিটমিট করে কেন বলল। সে চাইছে রোশান তাকে দেখুক সে জিন্স পরেছে। রোশান তাকে কিছু বলুক এ ব্যাপারে। তারপর সে উচিৎ জবাব দিয়ে ছাড়বে। পরীক্ষা শেষ করে রোশানকে খুজছে। রোশান সম্ভবত লাইব্রেরিতে আছে। কিন্তু বের হচ্ছেনা কেন?
দ্বীপ সারাহ’র উঁকি ঝুঁকি মারা দেখে বলল,

‘ কাকে খুঁজছিস তুই?’
সারাহ বলল,
‘ ছোঁয়াকে খুঁজছি, দেখেছিস?’
দ্বীপ শ’য়’তা’নি হাসি দিয়ে বলল,
‘ তন্ময়ের সাথে প্রাইভেট কথা বলতে গিয়েছে। আসলে চেক দিস তো ছোঁয়ার ঠোঁট, গাল লাল রং ধারণ করেছে কীনা!’
সারাহ ভ্রুযুগল উঁচিয়ে বলল,

‘ এত বয় বেয়াদব কেন তুই? এসব কি ছিঃ মার্কা কথা তোর। তন্ময় কি তোদের মত লুইচ্চা।’
এতক্ষণ ধরে মৃন্ময় তরীর চিন্তায় বিভোর ছিলো। দ্বীপ খোঁচা মেরে বলল,
‘ কিছু বুঝলি? সারাহ সরাসরি আমাদের লুচ্চা বলছে।’
মৃন্ময় সারাহ’ দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ শোন আমি গতকাল সারারাত ক্রাশের সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছি। একটুও যৌনতা আসেনি ভেতরে। তাহলে আমি লুচ্চা হলাম কীভাবে? ওই পদবীটা দ্বীপকে দে।’
দ্বীপ শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বলল,

‘ ওরে আমার শালা। শেষমেষ নিজে সাধু সেজে আমাকে লুচ্চা বলা হচ্ছে। তোর ক্রাশ তোকে ডাকে চাচা বলে। চাচার ভাতিজির প্রতি কি এমন বালের ফিলিংস হবেরে ভাই। যদি তোর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ বেবি আই আম সো হয় নাউ’ তাহলেই তোর হুজুরগিরি সব বের হয়ে যেত।’
মৃন্ময় দ্বীপের চুল টেনে ধরে বলল,
‘ শোন ভুলেও কোনদিন ওর নামে ওসব বলবিনা। ও ওসব ধরনের মেয়ে না।’
‘ বাহ! যার পছন্দের নায়িকা সানি লিয়ন তার বউ এমন এটা যেন নতুন এক ইতিহাসের রচনা করবে।’
সারাহ বলল,

‘ তাইতো মৃন্ময়, তুই নিজেই বলতি বিয়ে যদি করি সানি লিয়নের মত হট মেয়ে দেখেই বিয়ে করব৷ এখন পছন্দ পালটে গেলো কীভাবে?’
মৃন্ময় একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ তওবা, তওবা, হে প্রভু তুমি এদের ঈমান দাও। আমি একটি ভদ্র পরিবারের সন্তান। সানি লিয়ন কে? আমি তো তাকে চিনিই না।’
দ্বীপ বলল,

‘ আমার মেসেঞ্জারে যেসব পাঠাস সব আছে। ওগুলো সব তোর নতুন ক্রাশকে দেখাবো।’
‘ এমন ভাবে বলছিস যেন আমি রেগুলার ক্রাশ খাই। সানি ছাড়া আর কার ওপর ক্রাশ খেয়েছি আমি।’ ওরা তিনজন হাসাহাসি করছে। এ সময় রোশান স্যার ওদের সাইড কেটে খুব ব্যস্ততার সাথে হেঁটে যাচ্ছে। কানে ফোন। সারাহ বুঝল না সে এত ব্যস্ততার সাথে কোথায় হেঁটে যাচ্ছে।

রোশান লাইব্রেরিতে বসে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছিলো। একটা আননোন নাম্বারের কলের যন্ত্রণায় সে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলো। তার নাকি একটা পার্সেল এসেছে। এইদিকে রোশান ইহকালেও কোনদিন অনলাইনে কোনো প্রডাক্ট অর্ডার দেয়নি। তাহলে তার নামে,তার ঠিকানায় পণ্য আসলো কীভাবে। ডেলিভারি দেওয়া ছেলেটা কলেজের ভেতরে চলে এসছে। রোশান ছেলেটির কাছাকাছি গিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘ কি আছে এতে?’
ছেলেটা বলল,
‘ জানিনাতো, মনে হয় পোশাক জাতীয় কিছু।’
রোশান খানিককা বিচলিত। সে ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ ধরে চিন্তা করল, রিসিভ করা ঠিক হবে কীনা!। ছেলেটা বলল,

‘ স্যার দুই হাজার টাকা হয়েছে আপনার বিল। বিলটা দিয়ে আপনার পণ্যটি রিসিভ করুন।’
রোশান এইবার আরোও খানিকটা অবাক হলো। সে এতক্ষণ ভেবেছিলো কেউ হয়ত তাকে কিছু উপহার পাঠিয়েছে। কিন্তু না। উপহার পাঠালে তো সে পেমেন্ট করেই দিতো। এমন সময় রোশানের সাইড দিয়ে তাদের আরেকজন লেকচারার যাচ্ছিলেন। ওনার নাম শিমুল। তিনি রোশান স্যারকে দেখে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘ কি স্যার, কি অর্ডার দিয়েছিলেন?’
রোশান স্বভাবসুলভ হেসে জানাল,
‘ স্যার, নিজেই জানিনা কি আছে।’

শিমুল স্যার দাঁড়ালেন রোশান স্যারের অর্ডারের জিনিস দেখার জন্য। রোশান স্যার বললেন,
‘ কি আছে খুলে দেখে জানান।’
ছেলেটা প্যাকেট একটু ছিদ্র করে বলল,
‘ স্যার লাল রং আপনার প্রিয় নাকি।’
রোশান আবার ও ভ্রুঁ যুগল কুচকালো। ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকালো। তার জীবনে সে লাল রঙের কিছুই ব্যবহার করেনি। সে কি মেয়ে নাকি যে লাল রঙের জিনিস ব্যবহার করবে। বিরক্তিতে রোশান স্যারের মুখখানা থমথম করছে।সে থমথমে মুখভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,

‘ জিনিস টা কি?’
ছেলেটা মুচকি হেসে বলল,
‘ স্যার আন্ডারওয়্যার আছে।’
রোশান স্যারের মাথায় যেন বজ্রভেঙে পড়ল। চোখ দু’টো যেন কপালে উঠে গেলো। সে যেন অথর্ব হয়ে গেলো। বিরক্তিতে তার চোখ দু’টো ছোট হয়ে এলো। তাই বলে কেউ তাকে হেনস্থা করতে আন্ডারওয়্যার পাঠাবে৷ তাও আবার লাল রঙের। রোশান দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। বিরক্তিতে লাল হয়ে এসছে মুখ। ওইদিকে শিমুল স্যার হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শিমুল স্যারের হাসিতে রোশান আরো অপমানিত হচ্ছে। অপমানে তার মুখ আরোও থমথমে হয়ে আসছে। রোশান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৩

‘ এসব লাগবে না আমার। ফেরত পাঠিয়ে দাও।’
শিমুল স্যার বললেন,
‘ আরে স্যার, নিন নিন। পুরুষ মানুষের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। নিয়ে আমাকেও দু’টো দিন। এতগুলা যখন অর্ডার করেছেন।’
রোশান এত বিরক্ত হলো, এত বিরক্ত হলো এই মুহুর্তে তার ফোনটাই ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু এই কাজ করল টা কে? এতবড় অকাজ করার সাহস কার আছে?

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১৫