মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ২০
মুশফিকা রহমান মৈথি
“অবশেষে পুরুষরুপে তোমার নজরে আসলাম তাহলে!”
পিউ হাসলো আহাশের কথায়। পায়ের পাতায় ভর করে এলোমেলো করে দিলো ছেলেটার সুসজ্জিত চুল। মিষ্টি স্বরে বললো,
“এছাড়া উপায় আছে। কি থেকে কি হয়ে গেছিস। আমি তো চিনতেই পারছিলাম না। পাটকাঠি থেকে মেহগনি হয়ে গেছিস। একেবারেই সৌম্যপুরুষ। প্রেম ট্রেম করছিস নাকি হ্যা! বিদেশী মেম পেলি বুঝি”
পিউয়ের কথায় লজ্জায় আহাশের কাল রক্তিম হলো। বামকানটা একটু ডলে লাজুক স্বরে বললো,
“তুমিও না পিউ আপু! আমার মন ওই বিদেশী মেম টেমএ গলে না”
“তাহলে বলছিস, দেশী কারোর কেশের দোলায় হৃদয় হারিয়েছিস?”
“তা বলতে পারো!”
পিউয়ের দিকে গাঢ় নয়নে চেয়ে উত্তর দিলো সে। পিউ এবার সশব্দে হেসে উঠলো। ব্যাঙ্গ করে বললো,
“বাহবা, এ ছেলে তো দেখছি একেবারে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, আবার লজ্জা পাচ্ছে। থাক আর লজ্জা দিবো না। তা থাকছিস তো কিছুদিন, নাকি উড়াল দিবি আবার”
“না না, আছি বেশ কিছুদিন। আর যতদিন আছি তোমার শিডিউলে আমার জন্য সময় কিন্তু রাখতেই হবে। যতদিন আমি দেশে থাকছি তোমার সময় আমার”
“বুকিং দিচ্ছিস নাকি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“না আর বলতে, তোমার তো বৃত্ত সুবিশাল। সে বৃত্তে আমার মত নগন্য মানুষের কি ভাত আছে। তাই বুকিং দিতে হয়। আড়াই বছর পর ফিরেছি, এটুকু তো আমার হক”
পিউ হাসতে হাসতে বললো,
“তুই এখনো লেউটা রয়ে গেলি রে!”
“আমার লেউটাপনা তো সবার জন্য নয় পিউ আপু”
আহাশ বিড়বিড় করে কথাটা বললো। পিউ হট্টগোলের সুরে শুনতে পেলো না। ঠিক তখন ই নীলাদ্রি এক প্রকার ছুটে এলো। পরণের শার্টটা ঘামে ভিজে আছে। তার কপাল ঘামের বিন্দুতে অলংকৃত। হাঁফাতে হাফাতে বললো,
“পিউ একটু চলো তো আমার সাথে, ইমার্জেন্সি”
পিউ হতচকিত হলো। বিস্মিত স্বরে বললো,
“কি হয়েছে নীলাদ্রি ভাই?”
“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কিন্তু বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে। তুমি এক্ষুনি আমার সাথে চলো”
“আপনি একটু শান্ত হন। শান্ত হন। জোরে শ্বাস নিন। কুল কুল”
নীলাদ্রি জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে একটু শান্ত করলো। এরপর বললো,
“আমি শান্ত হয়েছি। চলো এবার”
বলেই পিউয়ের হাতটা ধরলো আলতো করে৷ এর মাঝেই আহাশ বাধা দিয়ে বললো,
“নীলাদ্রি ভাই, কি হয়েছে আমাকে বলুন। আমরা যেহেতু প্রোগ্রাম এরেঞ্জ করেছি তাই ঝামেলা হলে সমাধান আমরাই করতে পারবো। পিউ আপু খামোখা যেয়ে কি করবে। পিউ আপু, তুমি বরং কাউন্টারে যাও। আমি তোমার পছন্দের কালোজামের ব্যবস্থা করেছি। উপরে বাদাম কুঁচিও দেওয়া”
আহাশের কথায় তীব্র বিরক্তি নিয়ে নীলাদ্রি বললো,
“এই ছোকরা! আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি? আমার ঝামেলা তুমি সমাধান করতে পারলে আমি তো তোমার কাছেই আসতাম। উচ্চতর পর্যায়ের গর্দভ কোথাকার। এই পিউ চলো তো”
পিউ কোনো কথা বলার সুযোগ পেলো না। একপ্রকার হাতখানা টেনে নীলাদ্রি তাকে নিয়ে গেলো। আহাশ কাতর নয়নে তাকিয়ে রইলো। বুকটা ঝা ঝা করছে তার। এমন কেনো হয়! যাকে মনশহরে নিমন্ত্রণে হৃদয় ব্যকুল সেই মানুষটিই এই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে না। আহাশের মনোক্ষুন্ন হলো। চোখে মুখে স্পষ্ট হলো বিষন্নতা।
পিউয়ের সামনে একটি হালকা বাদামী ছোট কুকুর। সে লেজ নাড়ছে, আর গোলগোল ঘুরছে। নীলাদ্রি তাকে টেনে কমিউনিটি সেন্টারের বাহিরে নিয়ে এসেছে৷ হাতখানা ছেড়ে বললো,
“দেখো”
পিউ হতবাক স্বরে বলল,
“আপনি আমাকে কুত্তা দেখাতে নিয়ে এসেছেন নীলাদ্রি ভাই?”
“কুত্তা বলো না তো, শুনতে পেলে কষ্ট পাবে। বেঁচারারও মন আছে”
বেশ কঠিনতা প্রকাশ পেলো নীলাদ্রির স্বরে। পিউ তার বাক্য শুধরে বললো,
“আচ্ছা আপনি আমাকে ডগ দেখাতে নিয়ে এসেছেন?”
“এটা যে সে কুকুর নয়। খেয়াল করে দেখো এটা মিক্সড ব্রিড। নেড়ি কুত্তা আর পমিরিয়ানের কম্বো। আশ্চর্য ব্যাপার। এই কুকুরগুলো শহরে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় সাজেকের রাস্তায়। আরেকটা অবাককর ব্যাপার আমি একটাকে এডাপ্ট করেছিলাম। কিন্তু সেটা তো বান্দরবান। তাকে দেখা শোনা করছে আমার সাবেক এসিস্ট্যান্ট অজল সাঙ। অথচ এই কুকুরটা দেখতে হুবুহু তার মতো। স্ট্রেঞ্জ৷ সে আমার কথাও বুঝে। দেখ আমি সিট বললে বসবে”
নীলাদ্রি সিট বলতেই কুকুরটা বসলো। নীলাদ্রি হতবাক কিন্তু খানিকটা উল্লাসিত স্বরে বললো,
“দেখেছো? স্ট্রেঞ্জ, শকুনতলা এতো দুর থেকে এলো কি করে বলোতো? পাঁচশত সতেরো কিলো যেখানে দুরুত্ব”
“শকুনতলা কে?”
“আমার কুকুরের নাম। সে কুকুর হয়েছে তাতে কি তার কি নাম হবে না। আমি তার নাম রেখেছি শকুনতলা। পাঁচ অক্ষরের নাম। কারণ ওকে শকুনতলা ডাকলে সে পাঁচবার ঘেউ করে।”
পিউ মুখে হাত দিয়ে বললো,
“ও যে মেয়ে জানলেন কি করে? পরীক্ষা করে দেখেছেন? যদি ছেলে হয় তাহলে নাম কি হবে? কদমআলী? পাঁচ অক্ষর আছে।”
“অজল বলেছে ও মেয়ে। তাই মেয়েদের নাম। শকুনতলা”
“সারনেম দেন নি? কুকুর হয়েছে তো কি? একটা সারনেম থাকবে না? শুধু নামে তো কষ্ট পেতে পারে। ওকে বরং শকুনতলা মজুমদার বলে ডাকবেন। নীলাদ্রি মজুমদারের কুত্তা থুক্কু ডগ শকুনতলা মজুমদার”
নীলাদ্রি চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো,
“তুমি মজা করছো আমার সাথে পিউ?”
“মজা করছি না নীলাদ্রি ভাই, আমি সিরিয়াস। দেখুন আমি কি হাসছি”
বলেই মুখ এগিয়ে দিলো। নীলাদ্রি কিছুসময় দেখলো পিউকে। তার মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই সে কৌতুক করছে নাকি সিরিয়াস। সে কথা ঘুরিয়ে বললো,
“আচ্ছা ও এখানে এলো কি করে পিউ! তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতী একটু বলোতো”
“এই কুকুর যে শকুনতলা মজুমদার আপনি কি শিওর! ওর নাম ধরে ডাকুন। দেখি সে পাঁচবার ঘেউ করে কিনা”
নীলাদ্রি সত্যি সত্যি ডাকলো। আর আশ্চর্যজনকভাবে কুকুরটা পাঁচবার ঘেউ করলো। নীলাদ্রি প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো,
“সি! ও শকুনতলা”
“হুম্ম…. আমার মনে হয় ও বান্দরবান থেকে আপনার জন্য চলে এসেছে। ওদের নাক তো অনেক তীক্ষ্ণ হয়। শুকতে শুকতে চলে এসেছে। স্ট্রেঞ্জ, নীলাদ্রি ভাই। আপনি বরং বান্দরবান যাওয়া বাদ দিয়ে দিন। এখানে থেকে কুকুরের উপর রিসার্চ করুন। রিসার্চের বইয়ের নাম “আমার কুকুর শকুনতলা মজুমদার””
“তুমি আবার মজা করছো পিউ?”
“মোটেই না। আমি সিরিয়াস। দেখুন আমি হাসছি না”
নীলাদ্রির মুখে ভীষণ চিন্তা ভর করলো। সে ফোন বের করলো। নিজের সাবেক এসিস্ট্যান্টকে ফোন করলো। সে ফোন ধরলো না। ফলে আরোও চিন্তায় পড়লো নীলাদ্রি। কাল সকালে বাস। অথচ এখন এই শকুনতলা কান্ড ঘটলো। সেই কান্ডের সমাধান ছাড়া তো যাওয়াও যাবে না। পিউ ফোস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
“আমি এখন যাই নীলাদ্রি ভাই! কালোজামের কাউন্টার শেষ হতে চললো”
“তুমি যেও না, প্লিজ। আমার কাছে বসে থাকো। আমার না ভয় লাগছে”
“কিসের ভয়!”
“জানি না, দেখো আমি ঘামছি। প্লিজ আমার কাছে থাকো”
পিউ হাসলো। নিজের শাড়ির আঁচলখানা দিয়ে আলতো করে মুছে দিলো নীলাদ্রির কপাল। তারপর সহাস্য স্বরে বললো,
“আমি আছি, ভয় নেই নীলাদ্রি ভাই। আপনি বললে আমি সারাজীবন আপনার পাশে থাকবো”
“ধন্যবাদ পিউ”
পিউ দীর্ঘশ্বাসটা গোপন করে নিলো। নীলাদ্রি হাটু গেড়ে কুকুরটার সামনে বসেছে। সে যতবার তাকে ডাকছে সে ঘেউ ঘেউ করছে। তাও ঠিক পাঁচবার। পিউ এই পাগলামি দেখছে। মুগ্ধনয়নে। তার কালোজাম আজ খাওয়া হবে না। তবে আফসোস নেই। এই পাগল পুরুষটাকে দুচোখ মুদে দেখতে তো খারাপ লাগছে না।
অভ্রের খালারা আজ চলে যাবে। বাস রাত এগারোটায়। কিন্তু অভ্র এবং ঐন্দ্রিলা তাদের বিদায় দিতে পারবে না। কারণ এখন তারা ঐন্দ্রিলাদের বাড়ি যাবে নাইওরে। ফলে খালারা ঐন্দ্রিলাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন,
“বউ আর দেখা হবে না রে। তুই তো তোর বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছিস। আমাদের ভুলিস না। আমাদের তোরে খুব ভালা লাগছে। আমাদের বাড়ি আসিস কিন্তু। একেবারে মাস দুই তিনেক জন্য আইবি, ওই ছোটা কাজের মানুষের মতো আইবি না কইলাম। আমি তোরে পিঠা খাওয়ামু। হাস রাইন্দে খাওয়ামু। কথা দে আইবি”
“আপনারা আর কিছুদিন থেকে যান না খালা। আমি বাড়ি এসে ঘুরতে যাবো”
“নারে, জানিস তো পোলাদের পরীক্ষা। তুই আসিস বউ”
বলেই অশ্রু ছেড়েদিলেন তিনজন। মাত্র দুইদিনে কারোর এতো মায়ায় পড়া যায় বুঝি! ঐন্দ্রিলার মনে হলো তারা তিনজন তার আপন খালা। মায়ের কোনো বোন নেই। তাই খালার আদর কখনো পায় নি ঐন্দ্রিলা। এই তিনজনের মাথায় বেশ সমস্যা আছে বটে। কিন্তু তারা মনের দিক থেকে খুবই ভালো মানুষ। তাই ঐন্দ্রিলাও কেঁদে দিলো। তারা জড়াজড়ি করে কাঁদছে। একখালা বলছে,
“তুই যাইস না”
“আমি যাব না খালা”
অভ্র হতবাক নয়নে এই চারজন নারীকে দেখছে। তার ঠিক কেমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত জানা নেই। কোনো বধু নাইওরে যাবার সময় কাদে এই ঘটনা বিরল। বিল্লাল ফিসফিসিয়ে বললো,
“ভাবীআপু কানতেছে কেন?”
“যা জিগায় আয়”
“ছিঃ স্বামী হলে এটুকুও জানিস না!”
ধিক্কার জানালো বিল্লাল। বিল্লালের দিকে কঠিন নয়নে তাকালো অভ্র। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো। খালাদের থেকে ছাড়ালো ঐন্দ্রিলাকে। ঐন্দ্রিলার কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে যাবার উপক্রম। অভ্র তাকে একহাত জড়িয়ে ধরে খালাদের বললো,
“এখন কিন্তু বেশি সময় নেই। বাস মিস করবা। সতেরো টাকার টিকিট। লস হবে কিন্তু পাঁচ হাজার একশত টাকা”
টাকার কথা শুনে তারা কান্না থামালো। অবশেষে ব্যাগ নিয়ে রওনা দিলো। ঐন্দ্রিলা আরোও কিছুদিন কাঁদলো। এই মেয়ে তার বিদায়তেও কাঁদে নি। অথচ নাইওরে যাবার সময় কাঁদছে। অভ্র তাকে দেখে মৃদু হাসলো। তারপর একটা টিস্যু দিয়ে চোখে মুছে বললো,
“থাক! আমরা যাবো খালাদের বাসায়। কাঁদিস না”
“সত্যি”
“হ্যা, সত্যি”
অবশেষে নিজের ঘরে আসলো ঐন্দ্রিলা। কেমন যেনো শান্তি শান্তি অনুভব হচ্ছে। বাহিরে দরজা ধরে অভ্রের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নিয়েছে ঐন্দ্রিলার ফুপাতো বোনেরা। অভ্র ঘরে এসেই আগে ওয়াশরুমে গিয়েছে।ঐন্দ্রিলা নিজের খাটে শুলো। দুদিন মনে হচ্ছে দুই বছর। এই দুদিন ঘুমাতে পারে নি পাথরের বস্তার জন্য। চট করেই মাথায় একটা বুদ্ধি চলে এলো। পাশে পানির বোতল রাখা ছিলো। খাটের বামপাশটায় পুরো বোতল পানি ঢেলে দিলো সে। মনে মনে পৈশাচিক হাসি হাসলো সে। এর মাঝেই বেরিয়ে এলো অভ্র ভেজা মুখ মুছতে মুছতে। ঐন্দ্রিলা তাকে দেখে ঢং করে বললো,
“আহারে অভ্র, তোর জায়গাটা তো ভিজে গেছে। ভেজা জায়গায় কি করে ঘুমাবি? তোর আবার বামপাশ ছাড়া ঘুম হয় না! আর আমি মোটেই শ্রেষ্ঠ স্ত্রী ট্যাগ নেবার জন্য আমার অংশটা তোকে ছেড়ে দিবো না। এখন কি হবে অভ্র? তুই কি ভেজা অংশে ঘুমাবি নাকি আমি তোকে নিচে বিছানা করে দিবো?”
ঐন্দ্রিলার ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি। অভ্রের বুঝতে বাকি রইলো না তার শোবার অংশটা ভিজলো কি করে। কিছুসময় ধীর নয়নে চেয়ে থেকে সে হাসলো কিঞ্চিত। তারপর ঐন্দ্রিলার দিকে ঝুঁকে এসে বললো,
“শ্বশুরবাড়িতে জামাই মাটিতে শুলে তোর মা-বাপের সম্মান যাবে। বেচারা শ্বাশুড়ি মা এতো যত্ন করে জামাই আদর করছেন সব ভেস্তে যাবে। তুই চিন্তা করিস না, আমি তোর জায়গাতেই এডজাস্ট করে নিতে পারবো। তুই বরং আমার বুকের উপর শুয়ে যাস। স্বামী-স্ত্রী আমরা জড়াজড়ি করে ঘুমিয়ে পড়বো”
“আমার ঠেকা পড়ছে নাকি!”
“তাহলে আমি বরং শ্বাশুড়ি মাকে বলি! আমাকে একটু শোবার জায়গা করে দিতে। আমার বউ তো আমাকে শুতে দিবে না। দেখি মা কি বলেন”
বলেই সে বাহিরের দিকে পা বাড়াতেই ঐন্দ্রিলা তার হাত টেনে ধরে তাকে বসালো খাটে। তার মুখখানা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,
“চুপ করে বসে থাক। তোর ঘুমানোর শখ খুব না। তুই এই খাটে থাক।”
অভ্র ঐন্দ্রিলার হাতখানা নামিয়ে তাকে টেনে নিজের কোলে বসালো। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তা বললে হয় বাবু! আমার তো তোকে বুকে নিয়ে ঘুমানোর শখ”
ঐন্দ্রিলা অতিকষ্টে তার বাধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। রাগী স্বরে বললো,
“মরে যা”
বলেই আলমারী থেকে একটা কাঁথা আর বালিশ বের করলো। নিচে বিছালো। তারপর শুয়ে গেলো। অভ্র হাসছে পিচাশের মত। ঐন্দ্রিলার ইচ্ছে করছে এই ছেলেটার গায়ে আবার গোবর পানি ঢেলে দিতে। তারপর আবার গোসল করাতে। কিন্তু এখন কিছু করা যাবে ন। তবে শোধ তো সে তুলবেই। অভদ্র ছেলেটা এসির টেম্পারেচার কমিয়ে দিলো। বলে ঠান্ডা লাগছে ঐন্দ্রিলার। সে কড়া নজরে তাকাতেই অভ্র নির্বিকার চিত্তে বললো,
“আমার গরম লাগছে বাবু। তুই চাইলে আমার বুকে এসে শুতে পারিস”
“বে য়া দ ব”
বলেই চোখ বুজে নিলো ঐন্দ্রিলা। সে কথা বাড়াবে না। মনে মনে বললো,
“সকাল হতে দাও বাঁছা”
অন্যদিনের মতো বেশ আয়োজন করে সকালো হলো। পাখির কিচিরমিচির অবধি শোনা গেলো। জানালার শিখ গলে প্রবেশ করলো কাঁচা রোদ। ঐন্দ্রিলার ঘুম ভাঙ্গলো ধীরে ধীরে। চোখ মেলতেই বেশ অবাক হলো। সে খাটে শুয়ে আছে। তার গায়ে মোটা কম্বল। খুব অবাক হলো সে। অভ্রকে নজরে পড়লো না তার। সে উপরে কি করে এলো বুঝতে পারছে না। অভ্র তাকে উপরে শোয়ালো! ওই বেয়াদব এমন কিছু করবে নাকি!
খাবার রুমে যেতেই দেখলো হুল্লোড় পড়েছে। বাদশাহ ছুটছে একটা বাদামী কুকুরের পেছনে। রান্না শুরু হয়ে গেছে। গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। নীলাদ্রি পাহাড়ে যায় নি। সে আয়েশ করে খিঁচুড়ি খাচ্ছে। খাওয়া শেষে হাড্ডি খাচ্ছে। ঐন্দ্রিলা বসতেই সে গম্ভীর স্বরে বলল,
“সাবধান হ, বিপদ সামনে। আমার মনে হচ্ছে যেভাবে আমাকে আমার ঘর থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে তোকেও করা হচ্ছে। তোর জায়গা নিবে অভ্র। বেশি দিন বাকি নেই অভ্রকে মজুমদার বংশে দত্তক নেওয়া হবে”
“কেনো?”
“বাবাকে নিয়ে সকালে বাজারে গিয়েছে। বাবা মুগ্ধ তার বাজার করায়। সে অভ্রের মাঝে নিজেকে দেখিতে পাচ্ছে”
ঐন্দ্রিলা চোখ ছোট ছোট করে দেখলো অভ্রকে। ফুপুদের সাথে কি খাতির তার। ফুপুরা পারলে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়। হ্যাপি তো বলেই বসলো,
“ঐন্দ্রিলার রাজকপাল। তোমার মতো জামাই পেয়েছে। নয়তো ওর যে স্বভাব আমি তো ভেবেই রেখেছিলাম ওর বিয়ে হবে না। বুঝলি ঐন্দ্রিলা অভ্রকে মাথায় করে রাখবি। ও সব জেনেও তোকে কি ভালোবাসে!”
হ্যাপি ফুপির কথার উত্তর কখনোই দেয় না ঐন্দ্রিলা। আজও তাকে এড়িয়ে গেলো। সালাম সাহেব বোনকে চোখ রাঙ্গালেন। কিন্তু হ্যাপি শুনল না। সে বলতেই লাগলো,
“তোমাকে বাবা আগ থেকেই বলে রাখি, আমার ভাতিজী মোটেই মিষ্টি স্বভাবের নয়। খুবই রাগী, আর ঝগরুটে। পরে বলো না”
মনশহরে তোমার নিমন্ত্রণ পর্ব ১৯
“আপনি না থাকলে কি হতো ফুপু। ভাগ্যিস জানালেন”
অভ্র ব্যঙ্গ করে বলল। ফলে খুশি হয়ে গেলো হ্যাপি। মিষ্টির প্লেট এগিয়ে বললো,
“নাও, বাবা মিষ্টি খাও”
“না ফুপু, আমি মিষ্টি খাই না। আসলে আমার মিষ্টি পছন্দই না। সেটা হোক খাবার বা মানুষ। এইজন্যই বুঝি ঐন্দ্রিলা আমার বউ”. …………