প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৩

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৩
মারশিয়া জাহান মেঘ

“লারা, জান.. আগামীকাল বের হবে ঘুরতে?”
ফারাবী কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই লারা এক্সাইটেড হয়ে বলল,
“সত্যি বেব?!”
“৩ সত্যি।”
“আমার বেব দেখছি ভাল হয়ে গেছে। আমার প্রতি দিন দিন উইক হয়ে পড়ছ নাকি বেব?”
“এত সুন্দর তুমি, ইমপ্রেস না হয়ে থাকতে পারি নাকি?”
লারা ফারাবীকে জ’ড়ি’য়ে বলল,
“লাভ ইউ সো মাচ বেব।”
“লাভ ইউ টু।”
ফারাবী লারাকে জ’ড়ি’য়ে ধরে মনে মনে বলল,
“আগামীকাল তোমাকে চিনি ছাড়া লারা দিব বেবি, জাস্ট একটু ওয়েট কর। ফারাবী রাজকে পুতুল নাচ করার শা’স্তি এইবার তুমি হারে হারে টের পাবে।”

তাশরীফ হাতের ঘড়ি খু’লে বিছানায় শুতে শুতে বলল,
“আভা, কি করছিস?”
আভা কাপড়-চোপড় ভাজ করে ওয়ারড্রবে রাখতে রাখতে বলল,
“কিছু লাগবে?”
“লাগবেতো, অনেক কিছু লাগবে?”
“বলুন আমি এনে দিই।”
“আনতে হবে না, আসতে হবে।”
“মানে?”
“আমার কিছু লাগবে না, তোকে লাগবে শুধু।”
“আমার প্রতি দিন দিন একটু বেশিই উইক হয়ে যাচ্ছেন নাকি তাশরীফ ভাই?”
“তোর প্রতি আমি বরাবরই উইক ছিলাম আভা। ভালোবাসি বেশি, প্রকাশ করি কম।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মধ্যরাতে ঘুমের ঘোরে নিজেকে তাশরীফের হাতের মাঝে আবদ্ধ দেখে চমকে উঠে আভা। মুহুর্তেই রাতের ঘটনা ভেবে লা’জু’ক হাসে সে। দিন দিন সম্পর্কটা কেমন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। তাশরীফ নড়েচড়ে আরও শ’ক্ত করে জ’ড়ি’য়ে ধরে আভাকে। ঘুমের ঘোরে তাশরীফ বলল,
“এত দূরে দূরে থাকিস কেন? আরেকটু কাছে আয়।”
আভা চুপসে নিজের মত শুয়ে থাকে। নড়ে না৷ ভীষণ করে তাশরীফকে তার বলতে ইচ্ছে হয়, “আমাকে নিজের করে নেন না তাশরীফ ভাই।” কিন্তু লাজুকতা তাকে বলতে দেয় না। সাহস তাকে উৎসাহ দেয় না।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আভা ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে ধীর পায়ে দরজা হাল্কা লা’গি’য়ে চলে যায় নিচে। নিচে যেতে যেতে তার মনে হলো, তোহার কাছে গিয়ে, তোহাকে ঘুম থেকে উঠাবে। সে তোহার রুমে গেল। তোহাকে সে জাগাবে কি? তোহা আগে থেকেই জেগে আছে। বেলকনিতে চুপসে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে বাইরে। নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে। শহরে এই একটা ঝামেলা। ভোরে না উঠলে সুন্দর পরিবেশ দেখা থেকে বিরত থাকতে হয়। পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো আভা। বলল,

“কখন উঠেছিস তুই?”
আভার কন্ঠে পেছন ফিরে তোহা। কোমল কন্ঠে বলল,
“এইতো আধাঘন্টা হয়েছে।”
“এত সকাল সকাল উঠলি যে!”
“ঘুমটা সকালেই ভেঙ্গে গেছে। কি করব বল? আর এ বাড়িতে বিদেশি লারা ছাড়া জায়গা দিয়ে যা ভুল করল ভাইয়া।”
“ওহ আবার কি করেছে?”
“ঘুমতো ভাঙ্গতো না। সকালে ওই মেয়ে এমন উচ্চস্বরে ফারাবী ভাইয়ার সাথে কথা বলছিল.. যে না পেরে আমাকে বিছানা ছাড়তে হলো।”

“এত সকালে ওরা দুজন কথা বলছিল?!”
“উহুম বিষয়টা ওরকম না যে দুজন প্রেম-পিরিতের আলাপ করছিল। ব্যাপারটা হচ্ছে, মিস্টার বিদেশি ফারাবীকে ফো’র্স’লি মেইবি ঘুম থেকে তুলে মেয়েটা রং- ঢং করছিল। এত সব প্যারা ছেলেটা নিচ্ছে কেমন করে আল্লাহ্ এই জানে।”
“তা যা বলেছিস। লারা এত সকাল সকাল উঠল কেন? ঘুম কি বলতে নেই মেয়েটার?”
“নেইই বোধহয়। আচ্ছা, মেয়েটা অনেক সুন্দর তাই নারে?”
“যাদের মন সুন্দর না, তারা চামড়ার সুন্দর হয়ে কি লাভ? চামড়াতো ঝড়ে যাবে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর। কিন্তু মন? মন কখনো ঝড়ে পরে না। কফি খাবি?”
“এক কাপ হলে, খারাপ হয় না।”
“চল নিচে যাই। দুজন মিলে কফি খাই।”
“চল….”

আভা আর তোহা বসে বসে কফি খাচ্ছিলো। হুট করেই লারা এসে বলল,
“আমার কফি কোথায়? এখনো আমার রুমে পৌঁছায়নি কেন?”
তোহা এইবার সত্যি সত্যি বিরক্ত হলেও জবাব দিলো না। আভা আর তোহা নিজেদের মত করে কফি খাচ্ছে। আভা বলল,
“বাংলাদেশের কফি যদি আবার শরবতের মত ফেলে দাও, তাই দিইনি। খাবে? খেলে বলো, বানিয়ে দিচ্ছি।”
লারা নাক বেংচি কে’টে বলল,
“তোমার হাতের কফি আদৌ কফি? বাই দ্য ওয়ে, দাও।”
তোহা কিছু বলতে যাবে তখন আভা তোহাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আমার হাতের কফিতো খাওয়া যাবে না। তুমি বরং, নিজের কফিটা নিজেই মেক করে খেয়ে নাও লারা।”
লারা চোখ বড় বড় করে বলল,
“আমি কফি বানাব?”
“ইয়েস, তুমি বানাবে। কারণ, তুমিতো আবার যার তার হাতের কফি খাও না। সামান্য একটা কফি নিয়ে এত রুড বিহেভ করার কোনো রিজন হয় না লারা।”
“কল মি ম্যাম। নট, লারা।”

“তা তোমার বাবার কোন কাজ আমি করি? যে তোমাকে ম্যাম ডাকব? সবাইকে কি ফারাবী রাজ পেয়েছ?”
উপরোক্ত কথাটি বেশ তেজ নিয়ে বলল তোহা। লারার মুখ থমকে গেল। সে কথা না বাড়িয়ে চলে গেল উপরতলায়। হনহনিয়ে ফারাবীকে ডাকতে তার রুমে পা বাড়াল। আকস্মিক ধা’ক্কা’য় ঘুম থেকে জেগে উঠে ফারাবী। একটু আগেই চোখটা লেগে এসেছিল। সারা রাত লারা ওকে বিরক্ত করেছে। ঘুমাতে দেয়নি। এখন আবারও সমস্যা করছে। চোখগুলো লাল হয়ে আছে। ফারাবী বলল,
“হোয়াটস ইউর প্রবলেম লারা? হুয়াট ইউ নো? ইউ আর এ ক্রেজী গার্ল।”
“হাউ ডেয়ার ইউ ফারাবী? তুমি আমাকে কথা শুনাচ্ছ? আজই আমরা এই দেশ থেকে ব্যাক করব। তাও, কোনো কথা ছাড়া।”

“তোমার কথায় আমি যাব? এইটাও তোমার মনে হয়?”
“অফকোর্স। মনে হওয়ার কি আছে? আমি যা বলব তা শুনতে তুমি বাধ্য।”
তাদের কথার মাঝেই রুমে প্রবেশ করে তাশরীফ। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচেই যাচ্ছিলো সে। চেঁচামেচি শুনে ফারাবীর রুমে এলো। তাশরীফকে দেখে রাগে বেলকনিতে চলে গেল লারা। তাশরীফ বিষয়টা বুঝেও না বুঝার ভান ধরে বলল,
“ফারাবী, আজ আমার হসপিটালে অনেক বেশি চাপ। তাই, আভা আর তোহাকে কলেজে দিয়ে আসতে পারব না। তুই ড্রপ করে দিস?”

“আচ্ছা, তুই এইটা নিয়ে চিন্তা করিস না।”
“এখনো শুয়ে আছিস কেন? ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে খেতে আয়। টাইম অল্প।”
“তুই যা, আমি লারাকে নিয়ে আসছি।”
তাশরীফ যাওয়ার সময় লারার দিকে একপলক তাকালো। এই মেয়ে ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না তা সে ভালো করেই বুঝতে পারছে।

ফারাবী উঠে লারার কাছে গেল। সময় বুঝে টি’প ফেলতে হবে। নয়তো সব গুলমাল হয়ে যাবে।
“লারা.. রাগ কেন করছ বলোতো? তুমি অনেক সিক তা কি তুমি জানো?”
লারা তাকালো ফারাবীর দিকে। জেদী কন্ঠে বলল,
“আমরা এই দেশ আজ ছাড়ব মানে ছাড়বই। নয়তো আমি ডেডকে কল দিতে বাধ্য হব ফারাবী।”
“কাম অন লারা, সব কিছুতে এত ডেড ডেড করো কেন? আমাকেও একটু ডাকো।”
নিমিষেই লারা জ’ড়ি’য়ে ধরল ফারাবীকে। মুখ দিয়ে বলল কেবল,
“তোমার বু’কে এত শান্তি কেন ফারাবী? আরও শ’ক্ত করে জ’ড়ি’য়ে ধরো না আমায়।”

“ফারাবী, তুমি ওদেরকে কলেজ নিয়ে যাবে কেন? ওদের কি পা নেই?”
লারার কথা শুনে ফারাবী খাওয়া থামিয়ে তাকায় তাশরীফের দিকে। তাশরীফও ফারাবীর দিকেই তাকিয়ে আছে। তোহা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখছে ভাইকে। এখনো তার ভাই চুপ থাকলে সেইই কিছু একটা বলে বসবে। তাশরীফ দাম্ভিক কন্ঠে বলল,
“আমি ফারাবীকে বলতাম না কখনো যদি আমার ব্যস্ততা না থাকত। তুমি বোধহয় একটু বেশিই জেলাস ফারাবীর সাথে কাউকে দেখে। তাই ভাল জিনিসটাকেও বেশ অন্যভাবে নিচ্ছ।”
“ফারাবী যাবে না মানে যাবে না। আমার কথাই শেষ কথা।”
ফারাবী নিরবতা ভেঙ্গে বলল,

“স্টপ লারা৷ এনাফ ইজ এনাফ। গেলে আমার সাথে চলো। সরাসরি বলতে পারছ না বলে এইভাবে ঘুরিয়ে ফেরিয়ে কথা বলার কি দরকার?”
মুহুর্তেই লারা বলে উঠল, “তুমি না বললেও আমি যেতাম ফারাবী। আমার হবু বর ২ টা মেয়ে নিয়ে যাবে সাথে আমার না যাওয়াটা কি মানানসই?”
“এখন সাইলেন্টলি খাও। খেয়ে তারপর রেডি হয়ে নাও।”
খাওয়া-দাওয়া শেষে তাশরীফ হসপিটালে চলে গেল। ফারাবী লারার রুমে গিয়ে দেখলো লারা রেডি হচ্ছে। ফারাবীকে দেখে লারা যেই বলতে যাবে কিছু একটা তখনি কপালে হাত রেখে বলল,
“কি হলো হঠাৎ? মাথাটা এমনভাবে ঘুরছে কেন?”
“কি হয়েছে লারা?”
“আমার.. মাথা মাথাটা এত….”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১২

আর কিছু বলতে পারলো না লারা। ঘুমে বিভোর হয়ে গেল। ফারাবীর ঠোঁ’টে’র কোণে ফুটে উঠেছে বাঁকা হাসি। ফারাবী বিছানায় লারাকে শুইয়ে দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে। তাশরীফকে কল লা’গা’য় সে। ওপাশ থেকে তাশরীফ কল ধরতেই বলল,
“কাজ হয়েছে?”
” হ্যাঁ, কাজ হয়ে গেছে।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৪