রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১০

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১০
সিমরান মিমি

রাতের অভিশপ্ত অন্ধকার যেন আজকে কাটতেই চাইছে না।কোথাও একটু আলোর রেশ নেই।হ্যাঁ, তবে ধরণী খুবই স্পষ্ট।প্রতিদিনের মতোই রাত দিনের সেই অভ্যাসগত সত্যকে স্মরণ করে দিন হয়েছে।এইতো সূর্য ও উঠে গেছে।কিন্তু পরশের চোখে সব কিছু অন্ধকার।কোথাও আলোর ছিটেফোঁটা ও নেই।বাড়ির কাউকে না জানিয়েই পাভেল আর প্রাইভেট বডিগার্ড দের নিয়ে ছুটেছে জাহাঙ্গীর নগরের দিকে। সকাল আট’টা।ডেইরী গেটের সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসলো পাভেল।তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না পিয়াশ এরকম কিছু করে বসবে।মন বারবার বলছে হয়তো কোনো প্রাংক করে ভাইকে ভয় দেখিয়ে নিয়ে এসেছে।আজ তো পিয়াশের বার্থডে ছিলো।প্রতিবার ই কিছু না কিছু চমক দিয়ে ভাইকে সারপ্রাইজ দেয়।অবশ্য সারপ্রাইজ ও বলা যায় না।

এগুলো হলো টাকা হাতানোর ধান্দা।এবার ও হয়তো সেরকম কিছুই করতে চাইছে।ভাবনার মধ্যেই গাড়ি থামলো।নজরুল হলের সামনে এসে পড়েছে তারা।কিন্তু রিসিপশন এরিয়ায় এতো এতো ভিড় দেখে কিছুটা ভয় পেল পাভেল।সামনের গ্রাউন্ড ফ্লোর টায় গোল হয়ে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।পরশ দ্রুত পায়ে বের হলো।তাদেরকে দেখতেই কেউ কেউ পাশ থেকে সরে জায়গা দিলো। হৃৎপিন্ড উদাম গতিতে দামামা বাজাচ্ছে।সাদা কাপড়ে বুক অবধি ঢাকা লাশ’টা দেখতেই বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মস্তিষ্ক যেন পুরোপুরি মানতে নারাজ যে তার ছন্নছাড়া ভাই’টা আজ নেই।হাটু গেরে তার পাশে বসতেই চোখে পড়লো গলার দাগ’টা।তৎক্ষণাৎ ই মনে একটা শব্দ ভেসে উঠলো,”সুইসাইড। “কিন্তু পিয়াশ কেন সুইসাইড করবে? ওর কি দুঃখ ছিলো?যে সময় যা চেয়েছে তাই দিয়েছে। তাহলে কিসের এতো যন্ত্রণা? অশ্রুসিক্ত কোমল নেত্রগুলো এক হাত দিয়ে সবার অগোচরে মুছে আশেপাশে তাকালো।পাশেই পিয়াশের রুমমেট গুলো বসা।তাদের দিকে তাকাতেই বলে উঠলো,

” ভাই,ও সেই সন্ধ্যা থেকে ওই ভিডিও টা নিয়ে অনেক টেনশন করছিলো।আর বলছিলো,”লজ্জায় কি করে ভার্সিটিতে যাবে?”আমরা অনেক বুঝিয়েছি।তারপর আড্ডা দিতে অপরাজেয় বাংলা ‘র কাছে গেছিলাম।প্রতিদিন ই আমরা যাই।পিয়াশ ও যায় আমাদের সঙ্গে। কিন্তু আজ ও যেতে লজ্জা পাচ্ছিলো।তাই ওকে বুঝিয়ে ঘুমাতে বলে আমরা চলে গেছিলাম।সাড়ে তিনটা নাগাদ যখন ফিরে আসছিলাম তখন দরজা খুলে দেখলাম ও এভাবে মাটিতে পড়ে আছে আর গলায় রশি বাধা।”
কথাগুলো বলেই ঢুকরে কেঁদে উঠলো।তারপর আবার বললো,
“যদি জানতাম ও এমন করবে তাহলে আমরা ওকে রেখে কখনোই যেতাম না।ও যে এতটা ডিপ্রেশনে চলে গেছে বুঝতেই পারি নি।”

যন্ত্রণায় ভেতরটা ছটফট করে উঠলো পরশের।আজ একটা মেয়ের কারনে তার ভাইটা আর নেই।ওকে তো খুন করে ফেলবে পরশ।পুলিশ ইতোমধ্যে হাজির।তারা লাশ নিয়ে ময়না তদন্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।কিন্তু পাভেল দিতে নারাজ।এসব কাঁটাছেড়া কখনোই পছন্দ নয় তার মায়ের।শুনলে আরো ভেঙে পড়বে।কিন্তু পরশ যখন স্পর্শীর বিরুদ্ধে কৌশলে খুনের কেস করতে চাইলো তখন আর তারা বাধা মানলো না।যেহেতু এটা এখন আত্মহত্যার মধ্যে নেই,খুনের মধ্যে চলে গেছে সেহেতু সঠিক তদন্তের জন্য লাশের মেডিকেল রিপোর্ট অবশ্যই লাগবে।
লাশ নিয়ে গেল এম্বুলেন্সে করে।পেছনে পাথরের ন্যায় মূর্তিমান পরশের গাড়িও যেতে লাগলো।এই মুহুর্তে ওই মেয়েকে ছিড়েখুঁড়ে নোংরা ডাস্টবিনে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তার তো এখন মাথা গরম করার সময় নয়।কিছু একটা করে বসলে তার পদ,মানসম্মান থেকে শুরু করে পরবর্তীতে নিজেকে ভুগতে হবে।কিন্তু নাহ!এমন টা মোটেও হতে দেওয়া যাবে না।

টিউশনি শেষ করে মাত্র বাসায় এলো স্পর্শী।উদ্দেশ্য গোসল করে ভার্সিটিতে যাওয়া। মা ইতোমধ্যে পার্লারে চলে গিয়েছে।আর্শি এখনো ফোন নিয়ে শুয়ে আছে। আজ ও কলেজে যাবে না সে।ইচ্ছে করছে না মোটেই।স্পর্শীও জোর করলো না।গোসল শেষে প্লেটে খাবার বারতেই গেট ধাক্কানোর আওয়াজ এলো।মুখের লোকমা চিবুতে চিবুতে হাঁক ছেড়ে বললো,
“ওই গেট খোল তো।মনে হয় ময়লা নিতে এসেছে।”

এলোমেলো পায়ে ছুটতে ছুটতে গেটের কাছে গেল আর্শি।সিটকিনি খুলতেই বুটের ধুলো উড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো তিনজন পুলিশ।একজন ইনস্পেকটর ও দুজন মহিলা কনস্ট্রাবেল। স্পর্শী অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে।ইতোমধ্যে প্রতিবেশীরা যে যেখান থেকে পারছে উঁকি দিয়ে তামাশা দিয়ে তামাশা দেখছে।একজন মহিলা কনস্ট্রাবেল স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললো,
“আপনিই কি স্পর্শীয়া শিকদার?”
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলতেই হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ালো মহিলাটি।ইনস্পেকটর বলে উঠলো,

“পিয়াশ শিকদারকে কৌশলে খুন করার অপরাধে আপনাকে এরেস্ট করা হলো।মৃত ব্যক্তির বড় ভাই পরশ শিকদার আপনার নামে মামলা করেছেন।আর সাক্ষী হিসেবে পিয়াশ শিকদারের তিনজন রুমমেট ফ্রেন্ড সিগনেচার করেছেন।এক্ষুণি আমাদের সাথে যেতে হবে আপনাকে।
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না।হুট করেই এমন কিছু ভেবে উঠতে পারছে না সে।তাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।শুধু আলতো কান্নাভেজা স্বরে বললো,
” আ..হ.মি কিচ্ছু করি নি।”

টেনে নিয়ে গাড়িতে তুললো স্পর্শীকে।আর্শি উদভ্রান্তের ন্যায় কাঁদছে। আর বলছে,
“আপুকে ছেড়ে দিন।ওকে ছাড়ুন।ও কিছু করেনি।”
ঝাপসা চোখে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ানো আর্শিকে দেখে নিলো একবার।দূরে অবস্থান রত কালো রঙের গাড়িটা দেখতেই মস্তিষ্ক সচল হয়ে উঠলো স্পর্শীর।ইতোমধ্যে গাড়ি স্টার্ট দিতে শুরু করেছে ড্রাইভার।চিৎকার করে আর্শির উদ্দেশ্য বললো,
“বাসার ভেতরে যা।মা না আসা অবধি বাইরে বের হবি না।”
ক্রমান্বয়ে বলতে থাকা বাক্যগুলো আর শোনা যাচ্ছে না। কেননা গাড়ি ইতোমধ্যে সোসাইটি গেট থেকে বেরিয়ে চলে গেছে রেডিও কলোনীর উদ্দেশ্যে।সেখান থেকেই হয়তো থানা স্টান্ডের দিকে যাবে।পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো আর্শি।গেটের ভেতরে ঢুকে গেট লাগাতেই ওপাশের রুম থেকে এক প্রতিবেশী মহিলা বললো,

“আরে তুই আবার কই যাস?তোর বইনরে পুলিশ ধইরা নিয়া গেছে আর তুই বাসায় বইসা থাকবি গা?
হেঁচকি তুলে আর্শি বললো,
” আম্মু তো বাসায় আসে নি।আমাকে বাসায় থাকতে বললো আপু।”
মুহুর্তেই ওপাশের মহিলা বলে উঠলো,
“তুই কি পাগল?তোর মায়ে কি জানে তোর বইনরে পুলিশ ধরছে।তুই আগে যা তোর মায়ের কাছে।গিয়া বলবি,তারপর তো তোর মায়ে আইবো,উকিলের কাছে যাইবো।এমন কইরা বইসা থাকলে কি হইবো?খুনের আসামী তোর বইন।কিছুক্ষণের মধ্যেই রিমান্ডে নিবো।আল্লাহ গো আল্লাহ,রিমান্ডে নিলে কি আর বাইচ্চা আইবো।মাইয়াডার তো আর ইজ্জত ই থাকবো না।কি না কি করে রিমান্ডে নিয়া ওই ব্যাডা পুলিশ গুলায়।ওরা তো সব সময় নেশা কইরা রিমান্ডে যায়।

আর্শি পাগল হয়ে গেল।প্রতিটা কথায় প্রাণ টা ভেতর থেকে ছিড়ে আসতে চাইছে যেন।দ্রুত গেট খুলে ছুটলো রাস্তার দিকে।কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে দৌড়াতে লাগলো।ইতোমধ্যে পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে থামলো রাস্তায়।আর্শিকে দেখে ভেতর থেকে এক মোটাতাজা পুরুষ বেরিয়ে এসে আলতো হেসে বললো,
তুমি আর্শি?তোমার মা আমাকে পাঠিয়েছে তার ফোন টা নিতে।আমার বোন তোমাদের পার্লারেই আছে।ও ওখানে সাজছে।ফোন টা কি দেবে আমায়।”
থেমে,

একি তুমি কাঁদছো কেন?আর এভাবে রাস্তার মধ্যেই বা ছুটছো কেন?
আর্শি দিশা হারিয়ে ফেললো।বললো,
আম্মুর কাছে যাব।আমার দরকার আছে।ফোন দিতে পারবো না এখন।
লোকটি কিছুক্ষণ ভাবলো। বললো,
ঠিক আছ,আমার গাড়িতে বসো।পৌছে দিচ্ছি আমি।
আর্শি উঠলো না।লোকটির দিকে নিশ্চুপ হয়ে তাকাতেই হেসে বললো,

“আরে আমি চিনি তো।তোমাদের পার্লার তো এনাম মেডিকেলের কাছেই।ওঠো,আমি পৌছে দিচ্ছি।
বলেই হাত ধরে গাড়িতে উঠালো।জায়গাটা অনেকটা জনমানব হীন।দুরেই ময়লার স্তুপ ফেলা।কিছুটা সংকোচ নিয়ে ভেতরে ঢুকে লোকটার দিকে তাকাতেই হেসে দিলো। বাম হাত থেকে স্প্রে টা বের করে পুশ করতেই ঢলে পড়লো আর্শি।পা এবং মুখ বেধে ব্যাক সিটে শুইয়ে ড্রাইভিং সিটে চলে এলো লোকটি।পকেট থেকে ফোন বের করে কল করতেই ওপাশ থেকে রিসিভড হলো।বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৯ (৩)

” ভাই,হয়ে গেছে।”
ওপাশ থেকে কোন সাড়াশব্দ এলো না।কিছুক্ষণ পর বললো,
“সোজা পিরোজপুর।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১১