শুভ্ররাঙা ভালোবাসা গল্পের লিংক || সুমাইয়া সুলতানা

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১
সুমাইয়া সুলতানা

” কলেজের একজন প্রফেসর হয়ে আমি কিনা বিয়ে করবো পনেরো বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে? বাবা তুমি এটা কিভাবে বলতে পারলে? কলেজে আমার একটা নাম-ডাক আছে। স্টুডেন্ট, কলিগরা যখন জানতে পারবে তখন সবাই আমাকে নিয়ে মজা করবে। হাসাহাসি করবে। অসম্ভব! আমি বিয়ে করতে পারবো না। দরকার হলে চিরকুমার থাকবো। তবুও ওই বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না। ”

” আমি কোনো কথা শুনতে চাচ্ছিনা আগুন। আর না শুনবো। তোমার দাদু মা’রা যাওয়ার আগে তোমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখে গিয়েছিলেন। মেয়েটার বাবাকে তিনি কথা দিয়েছেন তার নাতির পুত্রবধু করে ঘরে তুলবেন। তাই তোমার দাদুর কথা রাখতে বিয়েতো তোমাকে করতেই হবে। ”
” আশচর্য! দাদু বললেই সব হবে নাকি? তিনি কথা দেওয়ার আগে আমাকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করেননি? সবথেকে বড় কথা মেয়েটা নিশ্চই তখন চার/পাঁচ বছরের ছিল। এত ছোট বয়সে আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেললো? মেয়েটারও তো পছন্দ-অপছন্দের ব্যাপার আছে। তাছাড়া দাদুতো মা’রা গিয়েছেন। এখন সেসব কথা ভুলে গেলেই তো হয়। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” চুপ করো তুমি। বিয়ে তোমাকে করতেই হবে। তাও আগামী দু’ দিনের মধ্যে। ”
” হোয়াট! ”
ভদ্রলোক আর কিছু বললেন না। নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালেন। রেগে সামনে থাকা ফুলদানিটাতে সজোড়ে লা’থি মা’রলো আগুন। তখনি আগুনের মা মিনা বেগম ড্রয়িং রুমে এসে হাজির হলেন। রান্না ঘরে ছিলেন তিনি। স্বামী, ছেলের চিৎকার শুনে ছুটে আসলেন। তাকে দেখে মেজাজ নিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে আগুন বলল,
” মা প্লিজ। তুমি আবার এখন শুরু করে দিও না। আমাকে কিছু না বলে বাবাকে বোঝাও। ”
মিনা কাছে এসে ছেলের মাথায় হাত রেখে বোঝানোর স্বরে বললেন,

” রাজি হয়ে যা বাবা। বিয়েটা করেনে। মেয়েটা ভীষন সুন্দরী। কি মায়াবী চেহারা। মুখটা দেখতে কি নিষ্পাপ। ভীষন শান্তশিষ্ঠ, ভদ্র মেয়ে। খুব লক্ষী মেয়েটা। আমি ছবিতে দেখেছিলাম। তুইতো তোর বাবাকে চিনিস। ত্যাড়ামার্কা লোক। তিনি যখন বলেছেন তোদের বিয়ে দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হবেন। ”
” মা তুমি কেন বুঝতে চাইছো না। আমার দিকটা একবার ভাবো। ”

” ভাবার কিছু নেই। খলিল সাহেবকে তোর দাদু যখন কথা দিয়েছেন তো সেই কথা তোকে রাখতেই হবে। মেয়েটার বাবার শরীরও তেমন ভালো নেই। তিনি মেয়েকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাননি। গ্রামে থাকে। বুঝতেই তো পারছিস মেয়েরা একটু বড় হলেই পাড়া প্রতিবেশী না’নান কথা বলে। মেয়েটার চাচাত ভাইয়ের কুনজর পড়েছে তার উপর। দল বেধে গ্রামের কিছু বাজে ছেলেরাও মেয়েটাকে বিরক্ত করছে। খলিল সাহেব নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত। কখন আল্লাহর ডাকে সারা দিয়ে পরলোক গমন করেন বলাতো যায় না। তাই মা’রা যাওয়ার আগে মেয়েকে তিনি বিয়ে দিয়ে যেতে চান। তোর বাবার সাথে ওনার খুব ভালো সম্পর্ক। তোর দাদুর ব্যাপারে তোর বাবা কতটা সিরিয়াস তুইতো জানিস। আর দ্বিমত করিস না বাবা। তোর বাবারও কিন্তু বুকের ব্যথাটা ইদানিং বেড়েছে। প্রেসারেও সমস্যা দিচ্ছে। তিনি কষ্ট পেলে হার্ট এ্যা’টাক করার সম্ভাবনা আছে। ডাক্তার বলেছে তাকে সবসময় হাসি খুশি রাখতে। তুই রাজি না হলে কষ্ট পেয়ে যদি ওনার কিছু হয়ে যায়! পারবি নিজেকে ক্ষমা করতে? ও বাবা পাগলামো করিস না। মায়ের কথাটা একটু শোন। বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে যা। মেয়েটা অনেক লক্ষীমন্ত। মা হয়ে তোর কাছে আমি হাত জোড় করছি। দয়া করে রাজি হয়ে যা। ”

আগুন অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকায়। মায়ের চোখের পানি সে সহ্য করতে পারে না। মা তার অনেক প্রিয়, কাছের একজন মানুষ। তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” ঠিক আছে। কান্না থামাও। আমি বিয়ে করবো। তোমরা সব ব্যবস্থা করো। ”
কথাটা বলে এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না। ধুপধাপ পা ফেলে নিজ কক্ষে চলে গেল। মিনা হতাশার নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। তবে তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। তার রা’গচটা গম্ভীর ছেলে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে। এর থেকে বড় খুশি আর কি হতে পারে। মুচকি হেসে তিনি রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন।

আগুন শিকদার বাবা মায়ের বড় সন্তান। তার একটা ছোট বোন ও একটা ভাই আছে। বোন ময়ূরী শিকদার। সে মেডিকেল এ পড়াশুনা করছে। দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট। তার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তবে বাবার ইচ্ছাতে ডাক্তারি পড়ছে। এ প্রফেশনটা নিয়েও সে অনেক খুশি। ভাই আয়মান শিকদার। সে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। মূলত আয়মান, ময়ূরী দুই ভাই-বোন জমজ। আগুনের বাবা রাশেদ শিকদার একজন সফল ব্যবসায়ী। নিজেদের বড় বড় দুইটা শপিংমল আছে। সেগুলোই দেখশুনা করেন তিনি। আগুন এখন তাকে কাজ করতে না করে। বাড়িতে থেকে রেস্ট নিতে বলে। কিন্তু ভদ্রলোক কাজ করতে পছন্দ করেন। ছেলের কথা শুনতে তিনি নারাজ। আগুনের মা একজন গৃহিনী।

বড়সড়ো একটা গাড়ি এসে থামল কাঁচা মাটির রাস্তায়। এখান থেকে হেঁটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছোতে হবে। প্রায় নয় ঘন্টা জার্নি করে আগুন তার পরিবার নিয়ে গ্রামে এসে পৌঁছেছে। কনের বাড়ি গ্রামে। এখানেই আগুনের বিয়েটা হবে। যদিও বিয়েটা আরও দুইদিন পর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগুন রাজি হয়েছে শুনে রাশেদ শিকদার আর দেড়ি করেননি। তারপর দিন’ই বিয়ের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। ছেলের মন বোঝা বড় দায়। বলা তো যায় না। এখন রাজি হয়েছে পড়ে যদি আবার বেঁকে বসে, তখন? তাই আগুনের বাবা কোনো রিস্ক নিতে চান না। যত দ্রুত সম্ভব ছেলের বিয়েটা দিতে চান। খলিল সাহেব অনেক গরীব।

তিন বেলা খাওয়ার মতো মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার তার। তবে মেয়েকে ধুমধাম অনুষ্ঠাত করে বিয়ে দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। রাশেদ শিকদার বিষয়টা বুঝতে পারেন। তিনিও এত ঘটা করে অনুষ্ঠান করতে চান না। খলিলের এমনিতেই অসুস্থতার জন্য বেশ টাকা পয়সা খরচ হচ্ছে। এত আয়োজন করে মেয়েকে বিয়ে দেওয়া চারটি খাঁনি কথা না। এতে বিশাল বড় একটা চাপ পড়বে খলিল সাহেবের পরিবারের উপর। কি দরকার অসুস্থ মানুষটাকে এত প্রেসার দেওয়ার। বিয়েটা খুব ছোট করে সাধারন ভাবেই দিতে চান। যদি আগুন চায় তখন না হয় ওনাদের বাড়িতে বড় করে বউ ভাতের আয়োজন করবে।
” কিরে মোমকে তোদের এখনো সাঁজানো হয়নি? বর পক্ষের লোকেরা চলে এসেছে তো। জলদি কর তোরা। মোম কে তৈরী করে দে। ”

মোমের মা আতিফা বানু কথাটা বলেই তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন। কত কাজ পড়ে আছে। স্বামী অসুস্থ বলে একা হাতে সবকিছু সামলাতে হচ্ছে তাকে। মোম মায়ের চলে যাওয়ার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে। সে এখন বিয়ে করতে চায় না। পড়াশুনা করতে চায়। যার সাথে বিয়ে হবে সে যদি পড়াশুনা করতে না দেয়? গ্রামের মানুষ বলে মেয়ে মানুষের এত পড়াশুনা করার দরকার হয় না। শুধু স্বামীর সংসার করাই তাদের এক মাত্র লক্ষ হওয়া উচিত। মোম এসব কথা মানতে নারাজ। সে বিশ্বাস করে মেয়েরাও ছেলেদের মতো পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। ভাগ্যে মনে হয় আর পড়ালেখা নেই তার। যার সাথে মোমের বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে মোম দেখেনি। তার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। শুধু জানে সে একজন কলেজের প্রফেসর। মোমের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মুছলেও বেহায়া চোখ দুটো আবার ভিজে উঠে। কোনো ভাবে যদি বিয়েটা আটকানো যেতো? বাবার অসুস্থতার জন্য তার মুখের দিকে চেয়ে সে বিয়েতে মত দিয়েছে। পাশেই তার ছোট বোন মুনিয়া বসা। বোনের বিয়ে বলে তার আনন্দের শেষ নেই। এগারো বছর বয়স। খুব চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। বর এসেছে শুনে সে বর দেখতে বাইরে চলে গেল।

সকল নিয়ম কানুন মেনে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো আগুন মোম। বিদায়ের ঘন্টা বেজে গিয়েছে। সময় এসে গিয়েছে বাবার বাড়ি ছেড়ে শশুর বাড়ি যাওয়ার। মোম কাঁদছে। বাধ ভাঙা কান্না তার। ওর মা, বোনও কাঁদছে। মোমের একটা হাত আগুনের শক্ত হাতের মুঠোয়। খলিল সাহেব মেয়ের হাত জামাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছেন। তার চোখেও পানি। অশ্রুু চোখে চেয়ে আগুনকে বললেন,

” আমার মেয়েটা খুব ছোট বাবা। বড় আদরে মানুষ করেছি আমার মোম’কে। মেয়েটা আমার বড্ড অবুঝ। নিজের অসুস্থতার কথা চিন্তা করে এত ছোট বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছি। ওর কোনো বড় ভাই নেই যে, আমার অনুপস্থিতিতে ওদের দেখবে। কিছু করার নেই। পরিস্থিতির স্বিকার আমি। ও কোনো ভুল বা অন্যায় করলে রাগ করো না। সুন্দর করে বুঝিয়ে দিও। ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিলেই আমার মেয়ে বুঝবে। অনেক বুদ্ধীমতি আমার মেয়ে। ওকে কখনো কষ্ট দিও না বাবা। একটু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো। ভালো রেখো আমার মোম’কে। আমার মেয়েটা বড় হওয়ার আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছি পরের ঘরে। ”

বলতে বলতে কান্না করে দেন তিনি। বাবার চোখে পানি দেখে মোমও হাউমাউ করে কান্না করে উঠে। খলিল সাহেবের কাঁধে ভর্সার হাত রেখে গম্ভীর কন্ঠে আগুন বলল,
” জ্বি। আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো আপনার মেয়েকে ভালো রাখার। দোয়া করবেন। ”
সকলেই গাড়িতে উঠে পরে। মোমের মা মোমকে বুঝিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়। গাড়িতে উঠার পরো মোমের কান্না থামেনি। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আগুনের বিরক্ত লাগছে। কান্না করার কি আছে? কেউ কি তাকে মে’রেছে? নাকি কারো কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে যে এভাবে কাঁদতে হবে? ভ্রু কুঁচকে ফোন দেখায় মনোযোগ দিল সে। মোমের পাশে ময়ূরী বসেছে। সে একটা টিসু পেপার মোমের নিকট এগিয়ে দিল। মোমের টিসু নিয়ে চোখ, মুখ মুছে নিয়েছে। আড়চোখে আগুনের দিকে একবার চেয়ে ময়ূরীকে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু বলতে পারছে না। মনের মধ্যে দ্বিধা কাজ করছে। ময়ূরী বুঝতে পেরে শুধায়,

” ভাবি তোমার কি কিছু চাই? কোনো সমস্যা হচ্ছে? ”
মোম ইতস্ত করে বলল,
” আপু আমার গরম লাগছে। কেমন গা গুলাচ্ছে। আমাকে জানালার পাশে বসতে দিবে প্লিজ? ”
ভাইয়ের দিকে তাকালো সে। আগুন ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তার এদিকে কোনো খেয়াল নেই। স্মিথ হেসে বলল,
” হ্যাঁ। নিশ্চই। ”

বলেই ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামতেই মোম’কে জানালার পাশের সিটে বসতে দিয়ে সে ভাইয়ের পাশে বসলো। এতক্ষণ মোম, আগুন আর ময়ূরীর মাঝখানে বসে ছিল। বাসায় পৌঁছাতে প্রায় আরো চার/পাঁচ ঘন্টা লাগতে পারে। তাই মাঝ পথে সবাই হালকা কিছু খেয়ে নিয়েছে। মোম তেমন কিছুই খায়নি শুধু পানি ছাড়া। গাড়িতে উঠে বমি করার অভ্যাস আছে তার। সেজন্য খায়নি। গাড়ি পুনরায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে। জানালা খোলা থাকায় বাইরে থেকে বাতাস গাড়ির ভেতর প্রবেশ করছে। মন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে মোমের। চারদিকে আবছা অন্ধকার। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই মাগরিবের আযান দিবে। মোম ময়ূরির দিকে চেয়ে দেখলো তার চোখ দুটো বন্ধ। গাড়ির ঝাঁকুনিতে ঘাড় হালকা ভাবে নড়ছে। হয়তো ঘুমিয়ে গিয়েছে। ননদের থেকে নজর সরিয়ে আগুনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। তার নজর ফোনের দিকে। ফোনের হালকা আলোয় মানুষটার মুখশ্রী স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর তার স্বামী। একদম রাজপুত্রের মতো চেহারা। গালে হালকা চাপ দাড়ি। ফর্সা মুখশ্রীতে বেশ মানিয়েছে। জোড় ভ্রু যুগল কুঁচকে আছে। ঠোঁ দুটো হালকা গোলাপি বর্ণের। নিচের ঠোঁট কামড়ে মন দিয়ে কি যেন দেখছে। চোখের পাপড়ি গুলো বড় বড়। সুঠাম দেহের বলিষ্ঠবান পুরুষটিকে দেখে মোম মনে মনে বলে উঠলো,

” মাশা আল্লাহ্। এই সুন্দর পুরুষটি আমার স্বামী? এত সুন্দর পুরুষ আমার ভাগ্যে ছিল। আল্লাহর দরবারে হাজারো শুকরিয়া। আচ্ছা মানুষটাকি বোবা? এমন চুপ করে আছে কেন? সেই কখন থেকে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। ”
মোমের ভাবনার মাঝেই ময়ূরির ঘুম ছুটে গিয়েছে। আগুনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে সে। হাই তুলে মোমের কাঁধে হালকা ধা’ক্কা দেয় ময়ূরী। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলস,
” আমার ভাইয়াটা কি সুন্দর তাই না? পছন্দ হয়েছে তো? হয়তো একটু বেশিই পছন্দ হয়েছে। সেজন্যই তো কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছো। এভাবে তাকিয়ো না নজর লেগে যাবে। কেউ নিয়ে যাবে না। রাত এখনো অনেক বাকি। বাসর ঘরে গিয়ে যত খুশি দেখো। ”

ময়ূরীর কথায় মোম হকচকিয়ে গেল। কিঞ্চিৎ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিয়েছে। আমতা আমতা করে বলল,
” তেমন কিছু না আপু। ”
ময়ূরী বেশ ভাব নিয়ে বলল,
” তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? আরে লজ্জা পাওয়ার কি আছে। তোমারই তো বর। আমি জানি আমার ভাই অনেক হ্যান্ডসাম। দেখতে হবে না, ভাইটা কার? হ্যান্ডসাম তো হবেই। ”
মোম কিছু বলেনা। চুপ করে আছে। কে জানে মুখ খুললেই হয়তো ননদিনী আবার উল্টা পাল্টা কিছু বলে তাকে লজ্জা দিবে। তার থেকে বরং চুপ থাকাই বুদ্ধীমানের কাজ।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২