শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২
সুমাইয়া সুলতানা

শত জল্পনা কল্পনা ভাবতে ভাবতে শ্বশুর বাড়ি এসে পৌঁছাল মোম। আগুন আগে আগেই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। রাশেদ বিরক্ত হলেন। নতুন বউ’কে একা ফেলে কেউ এভাবে চলে যায়? ময়ূরী মোমের একটা হাত ধরে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করল। শাড়ী পড়ায় মোমের নামতে অসুবিধা হচ্ছিল। মোমকে নিয়ে সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়াল ময়ূরী। বউমা এসেছে শুনে মিনা চট জলদি নিচে নেমে আসেন। আগুন বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়িতে এসেছে শুনে কয়েক জন পাড়া প্রতিবেশীও এসেছেন বউ দেখতে। মিনা খুশি হলেন। প্রতিবেশীর সাহায্যে বেশ কিছু নিয়ম আছে সেগুলো পালন করতে উদ্ধত হলেন। কিন্তু এ কি? আগুন কোথায়? তাকে ছাড়া তো নিয়ম গুলো সুষ্ঠ ভাবে সম্পূর্ণ হবে না। ময়ূরী কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

” যা তো তোর বড় ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়। মেয়েটা আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে। ”
ময়ূরী মাথা নেড়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দেখতে পেল আয়মান হাসি মুখে, নাচার ভঙ্গিতে দুলতে দুলতে আগুনকে নিয়ে আসছে। কানে তার হেড ফোন। মিউজিক শুনছে সে। তার এক্সাম ছিল বিধায় বিয়েতে যেতে পারেনি। কাছাকাছি আসতেই ময়ূরী নিজ কানে হাত দিয়ে ইশারা করে বললো,
” হেড ফোনটা সরা কান থেকে। তোর সাথে আমার কথা আছে। ”
আয়মান খুশিতে গদগদ হয়ে সুর টেনে বলল,
” দুষ্টু কোকিল ডাকে রেএএ
কুক কুক কুক কুক কুককক কুক কুক কু
মনে বাশি বাজে রেএএ
কুক কুক কুক কুক কুককক কুক কুক কু ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ময়ূরী চোখ বড় বড় করে তাকায় ভাইয়ের দিকে। নাক, মুখ কুঁচকে আয়মানের সামনে এসে একটানে হেড ফোনটা ছিনিয়ে নেয়। চাপা স্বরে ধমকে বলল,
” এ্যাই! এই সব কি বলছিস টা কি হ্যাঁ? মাথা সাথে আছে না গেছে? ”
আয়মান ভ্রু কুঁচকে বলল,
” আমি আবার কি করলাম? তুই তো জানতে চাইলি আমি কি গান শুনছি। সেজন্যই তো গানের কিছু অংশ গেয়ে শুনিয়ে দিলাম। আমার হেড ফোন দে। ”
ময়ূরী নিজ কপালে থা*প্পড় দিয়ে নাক ফুলিয়ে বলল,

” না দেবো না। আরে মাথা মোটা কি গান শুনছিলি জানতে চাইনি। হোড ফোনটা কান থেকে সরাতে বলেছিলাম। ”
আয়মানের টনক নড়ল। ভাই, বাবা সামনে দাঁড়িয়ে। নতুন ভাবিও আছে। অমনি জিভ কা’টলো। ছিঃ! নতুন ভাবি কি ভাবছে? মাঝে মাঝে ছেলে মানুষিটা কি না করলেই নয়! সবার দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল,
” ওহ। আমি ভেবেছিলাম…..যাগগে, চল ভাবিকে দেখবো। ”

আগুনের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। আগুন আসতেই মিনা তাকে দরজার বাইরে মোমের পাশে দাঁড়াতে বললেন। যা যা নিয়ম আছে পালন করলেন। দুজনকে বললেন এক সাথে ভেতরে প্রবেশ করতে। নিয়ম পালন করে আগুন গটগট পায়ে রুমে চলে গেল। আগুনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হতাশ কন্ঠে আয়মান বলল,
” যা বাবা! এটা কি হলো? ভাই ভাবিকে ছাড়াই নিজের রুমে চলে গিয়েছে কেন? আমার বউ হলে আমি কোলে তুলে রোমান্টিক মুডে বউয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে বউ নিয়ে রুমে যেতাম। ”
আয়মানের কথায় মোম চোখ তুলে তার দিকে তাকায়। তার কথায় কিছুটা লজ্জাও পেয়েছে। মোম চিনে না তাকে। আয়মানের দিকে ইশারা করে মিনা বললেন,

” এটা আমার ছোট ছেলে আয়মান। সম্পর্কে তোমার দেবর হয়। ”
মোমের দিকে এগিয়ে যায় আয়মান। সালাম দিয়ে কেমন আছো জিজ্ঞেস করতেই মোম ছোট করে উত্তর দেয় যে, সে ভালো আছে। আয়মান বুঝতে পারছে তার সাথে কথা বলতে মোম অসস্তি বোধ করছে। তাই বলল,
” ভাবি আমি তোমাকে তুমি করে বলবো ঠিক আছে? আপনি বলতে কেমন যেন লাগছে। সম্পর্কে তুমি আমার থেকে বড় হলেও বয়সে তুমি আমার থেকে ছোট। তুমি আমাকে বড় ভাই ভাবতে পারো। মনে কোনো দ্বিধা রেখো না। কোনো প্রয়োজন হলে নিরদ্বিধায় আমাকে বলতে পারো। তুমি করে বললে কোনো অসুবিধা নেই তো তোমার?
মোম এক পলক তার দিকে চেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। আয়মান ফের জিজ্ঞাসা করতেই মোম বলল,

” জ্বি। আপনার যেটা ভালো লাগে সেটা বলেই আমাকে ডাকতে পারেন। ”
আয়মান খুশি হলো। মেয়েটাকে ছবিতে যেভাবে দেখেছে বাস্তবে দেখতে আরো সুন্দর। আব্বুর পছন্দ আছে। তবে একে বারেই পিচ্চি একটা মেয়ে। মনে মনে ভাবে, আমার গম্ভীর রাগচটা ভাইটাকে এই পিচ্চি মেয়েটা সামলাতে পারবে তো?

রাত প্রায় দুটো বেজে গিয়েছে। ময়ূরী মোম কে আগুনের রুমে নিয়ে আসলো। কাপড় পাল্টে ফ্রেস হতে সাহায্য করল। মেয়েটা সেই কখন থেকে না খেয়ে আছে। খাবার রুমে নিয়ে এসে নিজের হাতেই মোমকে খাইয়ে দিল। মোম অবাক হয়ে তাকে দেখছে। তার ননদটা কত ভালো। মুখে এক চিলিতে হাসি ফুটে উঠল। আয়মান এসে মোমের লাগেজটা দিয়ে গিয়েছে। এটাতেই মোমের প্রয়োজনীয় জামা-কাপড় সব জিনিস আছে। ময়ূরী বলল,
” ভাবি আমি এখন আসি। প্রচুর ক্লান্ত লাগছে। তুমিও নিশ্চই ক্লান্ত? অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। যাও বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। ”

ময়ূরী চলে আসার জন্য দরজার দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে মোম তার হাত টেনে ধরে।
” কিছু বলবে ভাবি? ”
” আপু আমাকে কি এই রুমে একা থাকতে হবে? ”
” একা কেন থাকবে? ভাইয়া আছে তো। ভাইয়া থাকবে তোমার সাথে। দেখো হয়তো তোমাদের রুমের বেলকনিতে অথবা ওয়াশরুমে আছে। ”
মোম শুষ্ক ঢোক গিললো। ওই রাগচটা লোকটার সাথে থাকতে হবে? কিছু ভুল হলে যদি মোমকে মারে! মোম দেখেছে, গ্রামে থাকতে ওর এক বান্ধুবীর বিয়ে হয়েছিল। শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার প্রথম দিনই তার স্বামী তাকে মে’রে ছিল। মোম কাঁদো কাঁদো মুখে বলল,

” আমি ওনার সাথে থাকবো না। আমার ওনাকে ভয় লাগে। আমি তোমার সাথে ঘুমাবো। ”
মোমের কথায় ময়ূরী হেসে ফেলল। মোমের থুতনিতে হাত রেখে বলল,
” ভয় পাওয়ার কি আছে? সে তোমার স্বামী। বিয়ের পর স্বামীর ঘরই মেয়েদের ঘর। সারাজীবন স্বামীর ঘরে তার সাথেই থাকতে হয়। এটাই নিয়ম। তাছাড়া আমার ভাই খুব ভালো মানুষ। একটু রাগী তবে তার মনটা অনেক ভালো। ভাইয়া যেটা বলবে সব শুনে চললে তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। আদর করবে। তার কথা না শুনলে সে অনেক রেগে যায়। ”

মোমের শরীর কা’টা দিয়ে উঠল। ওই গম্ভীর লোকটার সাথে থাকতে হবে ভাবলেই বুকের ভেতর ধকধক করে উঠছে। ময়ূরী আরো কিছু কথা বুঝিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। মোম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ময়ূরীর কথা গুলো ভাবছে তক্ষুনি ওয়াশরুমের দরজা খুলে আগুন বেরিয়ে আসে। কোমড়ে একটা টাওয়াল প্যাঁচানো। শাওয়ার নিয়েছে সে। মাথার চুল থেকে টপটপ করে বৃষ্টির ফোটার মতো পানি পড়ছে মুখে। সেখান থেকে গড়িয়ে রড়ছে উদাম বুকে। মোম তাকায় আগুনের দিকে। বুকের মধ্যে ঘন কালো লোম গুলোর দিকে নজর পড়তে বুকের ভেতর ধ্রীম ধ্রীম শব্দ হতে থাকে। পানির ফোটা গুলো মুক্তর মতো চকচক করছে। পেটানো শরীর লম্বা চওড়া বলিষ্ঠ বান পুরুষটি’কে দেখে নিঃশ্বাস আটকে আসার উপক্রম। মোম সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। হাত পা মৃদু কাঁপছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায় আগুন। অন্য একটি তোয়ালে নিয়ে মাথার চুল সহ শরীর মুছতে থাকে। আয়নায় মোমের ভীতি লজ্জাকর মুখ দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

” শঙের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। ”
মোম শুনতে পেয়েছে নাকি বোঝা গেল না। একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে। টাউজার পড়ে গায়ে টি-শার্ট জড়িয়ে মোমের সামনে এসে দাঁড়ায় আগুন। ছয় ফুট লম্বা আগুনের বলিষ্ঠ শরীরের সামনে মোমকে চুনোপুটি মনে হচ্ছে। আগুনের বুক পর্যন্ত হবে। বয়সও অল্প। ভবিষৎে আর একটু লম্বা হলেও হতে পারে। মোম ঘনঘন চোখ ঝাপটাচ্ছে। ঠোঁট দুটো মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে। হাতে দুটো স্বর্ণের চুড়ি। নাকে ছোট্ট একটি পাথরের নোজ পিন। লাইটের আলোয় চকচক করছে। গায়ে কলা পাতা রঙের সুতির শাড়ি। ফর্সা গায়ে ভালো মানিয়েছে। চুল গুলো বেনুনি করা। যা কমোড় ছাড়িয়ে হাটু পর্যন্ত চলে গিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটার চুল অনেক লম্বা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে মোম’কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে। ভ্রু কুঁচকে মৃদু ধমকে বলল,

” এ্যাই মেয়ে! কি ব্যাপার? চুপ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমি তোমাকে কিছু বলেছি শুনতে পাও নি? ”
ধমকে মোম হালকা কেঁপে উঠল। কাঁপা কন্ঠে উচ্চারন করলো,
” জ..জ্বি? ”
আগুন বিরক্ত হলো। তার মানে এই মেয়ে তার কথা শুনতে পায়নি? অদ্ভুত! নিজেকে সামলে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” কি জ্বি জ্বি করছো? তোমাকে আমি কিছু বলেছি শুনতে পাও নি? ”
মোম মাথা নিচু করে নিল।
” দুঃখিত আমি শুনতে পাইনি। জ্বি বলুন কি বলবেন? ”
আগুন অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে। বলে কি এই মেয়ে? একটা কথা এতবার বলা লাগবে? মেজাজ খারাপ হলো আগুনের। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” কয়টা বেজেছে জানো? আর কয়েক ঘন্টা পড়েই সকাল হয়ে যাবে। যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। ”
মোম বিছানার দিকে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াল। আগুন পেছন থেকে ডেকে উঠে। মোম ড্যাবড্যাব করে তাকায় তর পানে। আগুনের ভাবভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করে। রয়েসয়ে আগুন বলল,
” তোমার নামটাই তো জানা হলো না। তা কি নাম তোমার? ”
আগুনের কথায় মোম বেশ অবাক হলো। যাকে বিয়ে করেছে এখনো তার নামই জানে না? কাবিন নামায় সাইন করার সময় তো নামটা দেখার কথা। বিয়ে পড়ানোর সময়ও তো কাজী নাম বলে। জিজ্ঞেস করবে কি? না থাক। লোকটা যা রাগী জিজ্ঞেস করলে যদি আবার ধমক দেয়। মোম আর ঘাটলো না। ছোট করে কাঁপা কন্ঠে বলল,

” জ্বি ম..মোম। ”
” কোন ক্লাসে পড়? আই মিন এখনো পড়াশুনা করো নাকি বাদ দিয়ে দিয়েছো? ”
” এইবার দশম শ্রেণীতে উঠেছি। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে বলল,
” হুম। তা তোমার বয়স তো সবে পনেরো। এত ছোট থাকতে বিয়ে করার কারন কি? বাবা-মাকে বলতে পারলে না যে, তুমি এখন বিয়ে করতে চাও না। পড়াশুনা করার আর কোনো ইচ্ছা আছে? ”
আগুনের কথায় মোমের মন’টা খারাপ হয়ে যায়। চোখ দুটো জলে ভরে উঠে। সে তো এখন বিয়ে করতে চায় নি। শুধু বাবার জন্য বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছে। ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,

” আমি পড়তে চাই। এখন বিয়ে করতে চাই নি। বাবা অসুস্থ বলে তার কথা ফেলতে পারি নি। ”
আগুন আরো কিছু বলতে চেয়েছিল। মোমের ক্রন্দনরত মুখশ্রীর দিকে নজর পড়তেই সহসা থেমে গেল। মোমের মুখটা লাল হয়ে আছে। ফর্সা হওয়াতে একটু কাঁদলেই নাক লাল হয়ে যায়। সে নিজেও তো দাদুর কথা রাখতে বিয়ে করেছে। সে ছেলে হয়ে যখন বিয়েটা আটকাতে পারলো না। তখন মেয়ে হয়ে মোম কি ভাবে আটকাতো? তাই বলল,
” শুনে খুশি হলাম। তুমি পড়তে না চাইলেও তোমাকে পড়তে হতো। একজন প্রফেসরের বউ হয়ে মাত্র নবম শ্রেণী পাশ করে বসে থাকলে তো চলবে না। যেহেতু তোমার ইচ্ছা আছে পড়ার তাই আমি তোমাকে পড়াবো। চিন্তা করো না। দেখি চেষ্টা করে এখানকার কোনো স্কুলে ট্রান্সফার করানো যায় কি না। ট্রান্সফার করা না গেলেও সমস্যা নেই। এখানে থেকে পড়বে আর এক্সাম টাইমে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে এক্সাম দিয়ে আসবে। ”

” জ্বি আচ্ছা। ”
” তুমি জানো আমি তোমার থেকে কত বছরের বড়? ”
” জ্বি জানি। ”
আগুনের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। অবিশ্বাসের স্বরে বলল,
” তুমি জানো? কিন্তু কিভাবে? ”
” কাবিনের কাগজে সাইন করার সময় আপনার জন্ম তারিখ দেখেছিলাম। ”
” ওহ। তা নিজের থেকে গুনে গুনে চৌদ্দ বছরের বড় কাউকে বিয়ে করতে খারাপ লাগেনি? ”

” খারাপ লাগবে কেন? গ্রামের এক কাকী বলেছেন মেয়েদের থেকে ছেলের বয়স একটু বেশিই হয়। এতে অসন্তোষ্ট হওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া আমার ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে। সেটা বদলানোর ক্ষমতা আমার নেই। আল্লাহ্ তায়ালা আপনার সাথে আমার ভাগ্য জুড়ে রেখেছিলেন। তিনি উত্তম পরিকল্পনা কারী। তিনি যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ”
মোমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আগুন। ছোট্ট একটা মেয়ে কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। কথা বললেও আস্তে করে বলে। মা ঠিকি বলেছিলেন মোম সত্যি শান্তশিষ্ট একটা মেয়ে। আগুন বলল,
” কথা বলতে বলতে অনেক দেড়ি করে ফেললাম। এসো ঘুমাতে হবে তো। ”

আগুন লাইট অফ করে নীল রঙের ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ল। কপালে এক হাত দিয়ে শুয়ে রয়েছে। একটু আলো থাকলেও আগুন ঘুমাতে পারে না। পুরো রুম অন্ধকার করে ঘুমানোর অভ্যাস তার। মোম যদি ভয় পায়। তাই মোমের কথা চিন্তা করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে রেখেছে। সত্যিই মোম অন্ধকারে ভয় পায়। আগুনের পাশে শুতে মোমের কেমন যেন লাগছে। শরীরে অন্যরকম একটা শিহরন জাগছে। যদিও পুরুষটি তার স্বামী। অচেনা একজন পুরুষের সাথে ঘুমাতে একটু অসস্তি হওয়ারই কথা।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১

মোম গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানার অন্য পাশে আটঘাট হয়ে আগুনের দিকে মুখ করে শুয়ে পড়ল। আগুন ওপাশ ফিরে শুয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর মোমের দিকে মুখ করে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। ডিম লাইটের আলো মোমের মুখে পড়ছে। ঘুমিয়ে গিয়েছে মেয়েটা। এত তাড়াতাড়ি? হয়তো ক্লান্ত ছিল তাই। আগুনও চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করে। জার্নি করে আসায় সে নিজেও ক্লান্ত ছিল। তাই তো আগুনের চোখ দুটোও ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩