রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব ৬
লেখিকাঃ দিশা মনি
মোম আজ ঘুম থেকে তাড়াতাড়িই ওঠে পড়েছে। নামাজ পড়ে চটজলদি নিচে চলে আসে। রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে সেলিনা আপা তরকারি কুটছে। মিনা ডিম ভাজি করছে আর রুটি বেলছে। মোম পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মোমকে দেখে মিনার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। বাটিতে ডিম ভাজি নামিয়ে মিনা বললেন,
” এত সকালে উঠে পড়েছ কেন? আরেকটু ঘুমিয়ে নিতে। ”
” আমিতো সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি। গ্রামে থাকতে মা প্রতিদিন ডেকে তুলতো। কালকে ক্লান্ত ছিলাম বলে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিল। ”
” উঠেছো ভালো করেছ। ও বাসায় যাওয়ার পর থেকে সকালেই ঘুম থেকে উঠতে হবে। ”
মোম বুঝতে না পেরে বলল,
” কোন বাসায় মা? কোথায় যাবো আমি? ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” দেখেছো! একদম ভুলে গিয়েছিলাম। তোমাকে তো বলাই হয়নি। আজকে আগুন তার নিজস্ব ফ্ল্যাটে চলে যাবে। কলেজে যাওয়ার সুবিধার্তে সে ফ্ল্যাট নিয়েছে কলেজের কাছাকাছি। আয়মানের ভার্সিটিও সেখানেই। দুই ভাই থাকতো ওই বাসায়। তবে আজ থেকে তুমি আর আগুন থাকবে সেখানে। ”
মোম কিছু বললো না। চুলায় তাওয়ার মধ্যে রুটি গুলো সেক দেওয়ার সময় কেমন ফুলে উঠছে সেগুলোই মন দিয়ে দেখছে। মিনা পুনরায় বললেন,
” শোন মোম। তুমি আগুনের বউ। তার ভালো মন্দ খেয়াল রাখতে হবে তোমাকে। আগুন প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার আগে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে যাবে। রান্না ঘরে গিয়ে সকালে আগুনের জন্য নাসতা তৈরী করবে। দেড়ি করলে চলবে না। নয়তো না খেয়ে আগুনকে কলেজে যেতে হবে। তোমার স্বামী না খেয়ে চলে যাবে। তুমি নিশ্চই সেটা চাইবে না। জানি, তুমি খুব ছোট। হয়তো কাজকর্ম তেমন একটা পারো না। না পারলেও চেষ্টা করতে হবে। মনে থাকবে তো? ”
” জ্বি মা। মনে থাকবে। আর আমি টুকটাক রান্না করতে পারি। ঘরও সুন্দর করে গোছাতে পারি। আর যেগুলো জানি না সেগুলো না হয় আপনার থেকে শিখে নিবো। ”
মোমের কথায় মিনার অধরে হাসি রেখা দেখা গেল। কফি বানানোর জন্য চুলায় গরম পানি বসিয়ে দিয়ে মোমের মাথায় স্নেহময় হাত রেখে বললেন,
” শুনে খুশি হলাম। আমি, ময়ূরী মাঝে মাঝে যাবো তোমাদের কাছে। একদম মন খারাপ করবে না। আগুন কলেজে চলে গেলে ফোন করে আমাদের সাথে কথা বলো। দেখবে ভালো লাগবে তোমার। ”
মোম বিনিময়ে কিঞ্চিৎ হাসলো। মোমের ভীষন নার্ভাস লাগছে। ওই গুরুগম্ভীর লোকটার সাথে এখন থেকে তাকে একা বাসায় থাকতে হবে। হাই তুলতে তুলতে রান্না ঘরে প্রবেশ করল ময়ূরী। মোমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার পেছনে দাঁড়িয়ে এক হাতে মোমের কাঁধ প্যাঁচিয়ে ধরে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
” কি নিয়ে কথা বলছিলে তোমরা? ”
” আগুন ফ্ল্যাটে চলে যাবে সে কথাই বলছিলাম মোমকে। ”
” ভাইয়া আজকেই চলে যাবে? ”
” হ্যাঁ। ”
মোম ফট করে বলল,
” আমিও কাজ করতে চাই। আপনারা কাজ করছেন আর আমি দাঁড়িয়ে আছি আমার ভালো লাগছে না। কি করতে হবে বলুন। আমি করে দিচ্ছি।
মিনা কফির মগে, কফি ঢালতে ঢালতে মোমের উদ্দেশ্যে বললেন,
” এখন তেমাকে কিছু করতে হবে না। রান্নার জন্য সব গোছানো’ই আছে। তুমি এক কাজ করো, তোমার যা যা জিনিসপত্র এখানে আছে সবকিছু গুছিয়ে নাও। কিছু যেন বাদ না থাকে। ওই বাসায় গিয়ে এটা ফেলে এসেছি, ওটা ফেলে এসেছি এসব যেন বলা না লাগে। ব’দ মেজাজি আগুন রেগে যাবে। ভালো মতো চেক করে নিও। ”
মোম মাথা নেড়ে স্বায় জানায়। মোমের হাতে কফির মগটা দিয়ে মিনা বললেন,
” কাজ করতে চাচ্ছিলে না? দিলাম কাজ। যাও কফিটা আগুনকে দিয়ে আসো। ”
মোম মাথা নিচু করে আছে। মিনা তাড়া দিয়ে বললেন,
” কি হলো? যাও। ”
ময়ূরী দাঁত ক্যালিয়ে বলল,
” ভাবির মনে হয় লজ্জা লাগছে। ভাইয়ার সামনে গেলেই তো তাদের ভালোবাসার মুহূর্ত গুলো মনে পড়ে যাবে। লজ্জায় গোলাপী হওয়ার উপক্রম অবস্থা হবে। সেজন্য যেতে চাচ্ছে না। তাইনা ভাবি? ”
মোম থমথম খায়। তাকায় ময়ূরীর দিকে। শ্বাশুরীর থেকে কফি নিয়ে বলল,
” জ্বি। আমি দিয়ে আসছি। ”
মোম চলে গেলে মিনা মেয়েকে চোখ রাঙিয়ে শাষিয়ে বললেন,
” মেয়েটা জ্বালাতে ভালো লাগে? বাচ্চা মেয়েটা তোর এসব হুটহাট মজাতে ঘাবড়ে যেতে পারে বোঝা উচিত তোর। ”
ময়ুরী ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
” আরে রাগ করছো কেন মা? মিথ্যা বলেছি নাকি? রাগ করলে মনে মনে ভেবে নাও, আমি তো এমনিতেই বলেছি। ”
” হয়েছে হয়েছে। যা আয়মান উঠেছে নাকি দেখ। না ওঠলে ডেকে তুল ওকে। আজকে কি ভার্সিটিতে যাবে না? জিজ্ঞাসা করিস তো। ”
ময়ূরী চলে যায় আয়মানকে ডাকতে। আয়মান কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। তার চোখ, মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে খুবই বিরক্ত। ফোনের ওপাশের মানুষটি রাগী কন্ঠে বলল,
” তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো। সত্যি করে বলো, লাবিবা কে? ”
আয়মান ফোনের ওপাশের মানুষটিকে বোঝানোর স্বরে বলল,
” ওহো, তুমি আমাকে বিশ্বাস কেন করছো না? এই লাবিবা কেডা? আমি তাকে চিনি না। ট্রাস্ট মি, জান। ”
” মেয়েটি তো তোমার ব্যাপারে সবকিছু জানে। এক্সাম শেষে তাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলে তুমি। সেই ছবিও আমাকে দেখিয়েছে। ”
সহসা জিভ কা’টে আয়মান। আমতা আমতা করে বলল,
” হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ও আমার খালার মেয়ে। খালাতো বোন হয়। কেন কি হয়েছে? ”
” আমিতো জানি তোমার কোনো খালা নেই। বোনের মধ্যে তোমার মা একাই। ”
আয়মান পড়লো বিপাকে। মেকি হাসি দিয়ে বলল,
” আজব তো! মায়ের আপন বোনই কি শুধু খালা হয়? অন্য কোনো সম্পর্কের মাধ্যমে খালা হওয়া যায় না? ”
ফোনের অপর প্রান্তের মেয়েটি সন্দিহান কন্ঠে বলল,
” আচ্ছা মেনে নিলাম। তাহলে শিলা কে? সেটা বলো? ”
” শিলা আমার চাচাতো বোন হয়। ওহো! ময়মোনা, আজকে তুমি এত প্রশ্ন কেন করছো? কি হয়েছে বলবে তো?
মেয়েটি হতাশ কন্ঠে বলল,
” আমি মাইসা। ”
আয়মানও হতাশ কন্ঠে জবাব দেয়,
” আসলে আমি অসুস্থ। তাই কি বলছি, না বলছি কোনো কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। তুমি লাইনে থাকো। সুস্থ হয়ে কথা বলবো। ”
ময়ূরী এসে লাস্ট কথাটা শুনেছে। কাছে এসে চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
” তুই অসুস্থ? একবারো তো কাউকে বলিস নি? ”
আয়মান, ময়ূরীর চুল টেনে দিয়ে বলল,
” অসুস্থ হলে তো বলবো, নাকি? ”
বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। ময়ূরী বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। বোঝার চেষ্টা করছে। তবে কথাটা বোধগম্য হলো না। কথাটা তার মাথার উপর দিয়ে গেল।
আগুন ড্রয়িরুমের সোফায় বসে আছে। বসে বসে পরীক্ষার কিছু খাতা দেখছে। রাশেদও তার পাশে বসা। চায়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে খাচ্ছেন তিনি। ছেলের সাথে কথা বলছেন না। তাকাচ্ছেনও না তার দিকে। নিজের মতো করে খাচ্ছিন তিনি। আগুন ভ্রু কুঁচকে আড় চোখে তাকায় বাবার দিকে । এত ভাব কিসের বুঝতে পারছে না সে। রাশেদ যা বলেছেন আগুন তো চুপচাপ সবটা মেনে নিয়েছে। তাহলে এমন করছে কেন? নাকি যত সমস্যা শুধু তার বেলায়? মোম কফি নিয়ে আগুনের সামনে এসে দাঁড়ায়। কফির মগ তার নিকট এগিয়ে দিয়ে বলল,
” আপনার জন্য কফি নিয়ে এসেছি। মা পাঠিয়েছেন। ”
মোমের কথায় আগুন মাথা তুলে তাকায় তার দিকে। মোম তার দিকে তাকিয়ে আছে। আগুন তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে। মোম চট করে দৃষ্টি সরিয়ে মাথা নিচু করে কফি হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। আগুন হাত বাড়িয়ে কফিটা নেয়। মোম কফি দিয়ে আর এক মুহূর্তও আগুনের সামনে থাকেনি। চলে আসে সেখান থেকে।
রাশেদ চা শেষ করে সাইড থেকে রিমোট হাতে তুলে নেন। টিভিতে চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে রাশভারী কন্ঠে বোঝানোর স্বরে বললেন,
” বিয়ে হওয়ার যে কতটা সুবিধা যতদিন যাবে সেটা তুমি ত’ত গভীর ভাবে বুঝতে পারবে। বিয়ে করতে চাচ্ছিলে না মেয়ে ছোট বলে। দেখো, ছোট মেয়েটা কত যত্ন নিয়ে তোমার জন্য কফি নিয়ে এসেছিল। বিয়ে না করলে এসব সম্ভব হতো না। একজন সঙ্গী থাকা মানে জীবনের অর্ধেক কষ্ট লাঘব হওয়া। সেই সঙ্গী যেই সঙ্গী খারাপ সময়ও তোমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখবে। বেছে বেছে খাঁটি সোনা এনে দিয়েছি তোমার জন্যে। সেটা তুমি আজকে বুঝতে না পারলেও ভবিষৎে ঠিকি বুঝতে পারবে। হয়তো তোমাদের বয়সের পার্থক্যটা অনেক। জীবনে ভালোবেসে দুজন মানুষ এক সাথে থাকতে চাইলে বয়সটা ম্যাটার করে না। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কথাটা তাকে বাস্তবতা উপলুব্ধি করানোর জন্য বলেছে। নাকি বাবা ভাবেন যে, মোমকে সে মেনে নেয়নি তাই খোঁচা দিয়ে কথাটা বললেন? বলতেই পারে। আগুনকে খোঁচা দিয়ে কথা বলার পুরোনো অভ্যাস আছে তার। কোনো কারণ ছাড়াই লম্বা ভাষন শোনাতে ওস্তাদ তিনি। এমন ভাবে বলছেন যেন, মোম তার জীবনে না আসলে সে কফি খেতে পারতো না? আশ্চর্য! রাশেদের কথা গায়ে মাখলো না সে। চুপ করে হাতে থাকা কফি’টা শেষ করে। রাশেদ টিভিতে নিউজ দেখায় মত্ত। কিছুক্ষণ পর মিনা এসে আগুনকে ডেকে যান। আগুনের রুমে যেতে বলে। আগুন নিজের রুমে এসে মিনাকে আপসেট মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। চিন্তিত কন্ঠে শুধাল,
” ডেকেছো কেন? কিছু কি হয়েছে? ”
মিনা ছেলের চোখের দিকে চেয়ে সিরিয়াস কন্ঠে বললেন,
” তোর সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলার আছে। ”
” বলো। ”
” আমি যা বলবো মন দিয়ে শুনবি। বোঝার চেষ্টা করবি। ঠিক আছে? ”
আগুনের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এভাবে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে কথা না বললে কি এদের পেটের ভাত হজম হয় না। রাশেদের খোঁচা মা’রা কথা শোনার পর রাগটাও তরতর করে বেড়ে যাচ্ছে। নিজেকে শান্ত রাখতে চেয়েও পারছে না। নিজেকে সামলে কিঞ্চিৎ রাগী স্বরে বলল,
” যা বলার সরাসরি বলো। হেয়ালিপনা ভালো লাগছে না মা। ”
” শোন বাবা, বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন। হয়েছে তো। মেয়েটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মন থেকে মেনে নিয়ে নিজের সংসারটা গুছিয়ে নিস। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে মায়ের দিকে তাকায়। হঠাৎ এসব কথা বলার কোনো কারণ সে বুঝতে পারছে না।
” এসব কথা কেন বলছো? তোমার মাথায় কি চলছে ক্লিয়ারলি বলো তো। ”
” আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুই মোমকে মেনে নিতে পারিসনি। মেয়েটার থেকে দূরে দূরে থাকিস। আমি লক্ষ করেছি, মোমও যথাসম্ভব তোর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। তুই কি ওকে তোর সাথে দূরত্ব রেখে চলতে বলেছিস? মোমকে কি তোর পছন্দ হয়নি? ”
মিনার কন্ঠে ছটফট ভাব। মায়ের দিকে চেয়ে আগুন শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
” আমি কেন মোমকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলবো? এখন, এসব কথা বলে কি কোনো লাভ আছে মা? যা হবার সেটাতো হয়েই গিয়েছে। আমি যদি এখন বলি মোমকে আমার পছন্দ হয়নি। তুমি সেটা মেনে নিবে? এই পছন্দের কথাটা বিয়ের আগে তোমার আমাকে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল। তখন যেহেতু জিজ্ঞাসা করোনি। উল্টো বাবার হয়ে বিয়েতে রাজি হওয়ার জন্য বলেছ। তাহলে এখন বলার কোনো মানেই হয় না। ”
মিনার বুক ধ্বক করে উঠল। আগুনের যদি মোমকে পছন্দ না হয় মেয়েটার কি হবে? ভালো থাকতে পারবে না কেওই। রাশেদ জানতে পারলে আবার কোনো ঝামেলা বাঁধবে বাবা ছেলের মাঝে। মিনা কাতর কন্ঠে বললেন,
” এভাবে বলিস না বাবা। মেয়েটার কথা একবার ভাব। তুই যদি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিস মেয়েটা কোথায় যাবে? খলিল সাহেবকে আমরা কি জবাব দিবো? মোম কষ্টে আছে জানতে পারলে তিনি ভেঙে পড়বেন। তার বড় রকমের কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তার কথা একবারো ভাববি না? এমনিতেই মানুষটা অসুস্থ। ”
মিনার এতটা ব্যাকুলতা দেখে আগুনের খুব হাসি পাচ্ছে। আটকাতে চেয়েও পারলো না। কন্ঠ ফুঁড়ে মিটিমিটি হাসিটা বের হয়েই আসলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে কিঞ্চিৎ নিচু হয়ে দু’ হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
” রিলাক্স মা। এতটা উত্তেজিত হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য হানি’কারক। আমি কি বলেছি মোমকে মেনে নিতে পারিনি? তাকে আমার পছন্দ হয়নি? মোমকে পছন্দ না হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। মিষ্টি একটা মেয়ে। আমি মোমকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছি। একটু সময় দাও আমাকে। সময়ের সাথে সবটা ঠিক করে নিবো। ট্রাস্ট মি। ”
মিনার খুশিতে চোখ দুটো চকচক করে উঠল। ছেলের প্রতি তার অঘাত বিশ্বাস আছে। বাবা-মা কষ্ট পাবে এমন কাজ আগুন করবে না। এ পর্যন্ত তাদের কোনো কথা সে অবজ্ঞা করেনি। শুধু তাদের কথা ভেবে মোমকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবে এমন ছেলে আগুন নয়। সে অনেক স্মার্ট একজন ছেলে। আবেগ দিয়ে না সে বিবেগ দিয়ে যেকোনো কাজ করে এবং সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য ছেলেকে ভীষন ভালোবাসেন তিনি। আগুন তার বড় আদরের। ছোট ছেলে তাকে তেমন পাত্তা দেয় না। নিজের মর্জিতে চলে। তবে বড় ভাই, বাবাকে অনেক মেনে চলে। বিয়ের মূল্য আগুন বুঝে। বয়সের পার্থক্যের জন্যই সে কিছুটা ব্যাকে বসে আছে। তবে সত্যিই তো মোমকে অপছন্দ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগুনের কোনো মেয়েকে পছন্দও নেই। তাই শুধুশুধু চিন্তা করারও প্রয়োজন নেই। এখন সময়ের উপর সবটা ছেড়ে দেওয়া উচিত। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
” ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি। এভাবে কেউ বলে? ”
আগুন ফিচেল হেসে জবাব দেয়,
” তুমিতো পুরো কথা না শুনে অল্পতেই হাইপার হয়ে যাও। বিশ্বাস রাখো মা। আমি তোমাদের নিরাশ করবো না। মোমকে ভালো রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ”
ছেলের কথায় মিনা মুচকি হাসেন। আগুন ফের বলল,
” আজকে তো ওই বাসায় চলে যাবো। আয়মান কি তার জিনিসত্র নিয়ে এসেছে? ”
” হ্যাঁ। তা মোমকে সাথে নিবি না? ”
এবার আগুনের মেজাজ সত্যি সত্যি খারাপ হলো। মায়ের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” এই এক কথার উত্তর দিতে আমি জাস্ট হাঁপিয়ে গিয়েছি। সেদিন তো বলেছি নিয়ে যাবো। আয়মানের কথা কি এমনি এমনি জিজ্ঞাসা করেছি? আমি নিতে না চাইলেও বাবা জোড় করে মোমকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিবে। ”
” ওহ। তার মানে মোম তোর সাথে যাচ্ছে তাই তো? ”
আগুন অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকায়। মা বলে রাগ দেখাতে চেয়েও পারছে না। তিরিক্ষী মেজাজ নিয়ে বলল,
” হুম। হুম। ”
রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব ৫
আগুন, মিনাকে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। ওনার সামনে এখন থাকা যাবে না। সেই এক কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করবে। তার থেকে বরং বাবার সামনে বসে থাকা ঢের ভালো। আগুন নিজ মনে বিড়বিড় করে মিনার কথার প্রেক্ষিতে পুনরায় বলে উঠলো,
” নিয়ে যাবো তো। ঘরে, বাইরে, শয়নে-স্বপনে, ওয়াশরুমে যেখানেই যাই মোমকে সাথে করে নিয়ে যাবো। ”