শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৯
সুমাইয়া সুলতানা
বদ্ধঘরে দুজন কপোত-কপাতি একে অন্যের প্রতি মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে। চোখের পলক পড়ছে না কারোরই। রুমটিতে বিরাজ করছে গুমোট আবহাওয়া। সেই সাথে আগুনের উষ্ণ নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে কিশোরী কন্যাটির মুখের উপর। আগুন ঠোঁট বাঁকায়। নজর ফিরিয়ে নেয়। দৃষ্টি রাখে সাদা রঙের টাইলস দ্বারা আবৃত ফ্লোরে। ঠোঁট দুটো গোল করে ভারিক্কী নিঃশ্বাস ছেড়ে শীতল কন্ঠে বলল,
” এভাবে তাকিয়ো না, মোম। কিছু একটা করে ফেলবো। তখন আবার আমাকে দোষ দিতে পারবে না। ”
আগুনের কঠিন ভাষা বুঝতে অক্ষম, মোম। অবুঝের মতো প্রশ্ন করলো,
” কি করার কথা বলছেন আপনি? মা’রবেন নাকি? ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। স্নিগ্ধ মুখটাতে বাচ্চামোর ছাঁপ। মোমের ঠোঁটের দিকে চেয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তেমন কিছু না। সঠিক সময় আসলে একদিন ঠিক বুঝতে পারবে। ”
পরপর মুখভঙ্গী বদলে নিজের সেই গাম্ভীর্য ভাব ফুটিয়ে অবাক সহিত জিজ্ঞেস করে,
” তোমাকে মা’রার কথা কেন বললে? তোমার কেন মনে হলো আমি তোমাকে মা’রবো? ”
মোম চঞ্চল কন্ঠে জবাব দিল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” আমাদের গ্রামে দেখেছি স্বামীর কথা না শুনলে তারা বউদের মা’রে। আমার বান্ধুবি রাহি ওরোতো বিয়ে হয়েছে। আমাদের বিয়ের এক মাস আগে তার বিয়ে হয়েছিল। রাহির স্বামী সামান্য খুঁত পেলেই তাকে মা’রে। ”
আগুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
” আমাকে কি তোমার তেমনটাই মনে হয়? ”
মোম মাথা নিচু করে নিল। মিনমিন করে বলল,
” না। কিন্তু আমার আপনাকে ভয় করে। ”
” আমাকে ভয় পাও? কেন? আমি কি কোনো দৈত্য যে তোমাকে মে’রে ফেলবো! নাকি কোনো জন্তু যে তোমাকে খেয়ে ফেলবো? কোনটা? ”
মোমের অস্বস্তি লাগছে। কি বলবে? কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না। মোম নিজেও জানে না, কেন সে লোকটাকে ভয় পায়। কোনো কারণ ছাড়াই ভীষন ভয় পায় ও। মোমের নিরবতা দেখে আগুন প্রসঙ্গ পাল্টায়। খিটখিটে মেজাজ নিয়ে বলল,
” আচ্ছা বলতে হবে না। তবে তোমাকে আমার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমার সাথে সময় কাটিয়ে নিজের মধ্যকার জড়তা কাটাতে হবে। কথা বলতে হবে। কথা বললে নিজেকে আমার সাথে স্বাভাবিক করতে পারবে। ”
মোম চুপ করে আছে। আগুন একটা হাত মোমের হাতের উপর রাখতেই মোম হাত সরিয়ে নেয়। আগুন অবাক হলো না। এটা স্বাভাবিক। বাচ্চা মেয়ে হয়তো দ্বিধা কাজ করছে। মোম থেকে কিছুটা দূরে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো। মোমের মুখশ্রী অবলোকন করল গভীর ভাবে। এভাবে চলতে থাকলে ওদের সম্পর্ক কোনোদিনই ঠিক হবে না। আগুন তো চেষ্টা করছে মোমকে নিজের সাথে ক্ষাপ খাওয়াতে। মোমের আচরন, ব্যবহার স্বাভাবিক না হলে ও একা সম্পর্ক বজায় রাখার, সম্পর্কটা ধরে রাখার চেষ্টা করেও কোনো লাভ হবে না। মোম অত্যন্ত মোলায়েম কন্ঠে জবাব দিল,
” জ্বি, আমি চেষ্টা করবো। ”
এইটুকুতেই আগুন ভরসা পেলো। অধর কোণে ধরা দিল কিঞ্চিৎ মুচকি হাসি। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
” অনেক দিন তো হলো পড়াশোনার কি খবর বলো? পড়ার ইচ্ছা নেই? ”
” হ্যাঁ, আছে তো। ”
” ওকে। আমি তাহলে কালকে আশেপাশের স্কুলের হ্যাডমাস্টারের সাথে কথা বলে দেখবো তোমাকে ভর্তি করানো যায় কি না। ভর্তি তো করানো যাবেই, আশা করি। তবে ট্রান্সফার করানোটাই মেইন। ”
মোম চকিতে তাকালো। ছটফট কন্ঠে বলে উঠলো,
” কোনো দরকার নেই। আমি আমাদের বাড়ির স্কুলেই পড়াশুনা করবো। আপনি তো ওইদিন বলেছিলেন আমাকে বাড়িতেই পড়তে দিবেন। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” পিচ্চি মানুষ একটু বেশিই বুঝে। আমি বলেছিলাম, ইভেন এখনো বলছি। তুমি তোমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েই পরীক্ষা দিবে। কিন্তু পড়াশোনা তো কন্টিনিউ করতে হবে। এখান থেকে কি তুমি প্রতিদিন তোমাদের গ্রামের বাড়ির স্কুলে যেতে পারবে? যাওয়া আজও সম্ভব? ”
মোম দু” দিকে মাথা নাড়ালো। আগুন পুনরায় বলল,
” সেজন্যই তো বলছি। এখানে থেকে রেগুলার পড়াটা মেইনটেইন করবে। বাড়িতে থেকে কতটুকু পড়া কমপ্লিট করতে পারবে? আমি না হয় রাতের পড়া না বুঝলে, না পারলে বলে দিতে পারবো। তবে ভালো গাইড লাইনস, স্কুলের সাহচর্যে থাকলে অনেকটা এগিয়ে থাকবে। এসএসসি পরিক্ষা আসতে এখনো অনেক মাস বাকি। স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেই ভালো হবে। তাছাড়া, আমি কলেজে চলে গেলে সারাদিন বাসায় তোমাকে একা থাকতে হবে। পারবে একা থাকতে? ”
মোম কিছুক্ষণ চুপ থেকে গোমড়া মুখে বললো,
” একা থাকতে কিছুটা অসুবিধা তো হবেই। কয়েকদিন গেলে আসতে আসতে ঠিক হয়ে যাবে।তবে আমি তো এই শহরে নতুন। কাউকে তেমন চিনি না। মানুষজন কেমন হবে সেটাও জানি না। আমার ভীষন ভয় করছে। ”
আগুন বিরক্ত হলো। কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তুমি ভয় পাও না কিসে, সেটা আগে বলো? একটু জোড়ে শব্দ পেলে ভয় পাও। বজ্রধ্বনির আওয়াজ শুনলে ভয় পাও। আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে ভয় পাও। আমাকে দেখলেও ভয়ে পাও। ইনফ্যাক্ট আমি তোমার কাছাকাছি আসলেও ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দেও। সবকিছুতেই এত ভয় কেন পাও? হুম? ”
মোম বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। ছোটবেলা থেকেই মোম সামান্য কিছু হলেই ভয় পেয়ে যায়। আগুন এভাবে ভয় পাও, ভয় পাও বারবার বলায় মোমর লজ্জা লাগছে। ওকে নিশ্চই ভিতুর ডিম ভাবছে? না ভাবার কিছু নেই। ও ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে বলেই তো ভাবছে। আগুন রাশভারী কন্ঠে বলল,
” একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো? সত্যি বলবে কিন্তু! ”
” জ্বি। ”
আগুন হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
” শুনেছি গ্রামের মেয়ের হাইস্কুলে গেলেই নিজেদেরকে বড় ভাবতে শুরু করে। অনেকটা ফ্যান্টাসিতে ভুগে। অল্পতেই পেকে যায়। যদিও সবাই এক না। আচ্ছা, তুমি কি স্কুলে থাকতে কখনো কারো সাথে রিলেশনে জড়িয়ে ছিলে? কারো সাথে প্রেম করে ছিলে? তুমি ভয় পেও না। করলেও আমি কিছু মনে করবো না। এই বয়সে এমন একটু আধটু ভুল হয়। সরল মনে আমার সাথে সবটা শেয়ার করতে পারো। নিজের বউয়ের মুখে তার লাভ-স্টোরি শুনতে মন্দ লাগবে না। ”
আগুনের কথায় মোম হকচকিয়ে যায়। অক্ষীযুগল বড়বড় করে তাকায়। মুখভঙ্গিতে ফুটে উঠে অবাকের চিহ্ন। এই লোক এসব কি বলছে? কিভাবেই বা বলছে? কেনই বা বলছে? মোম মুখ কুঁচকে দৃঢ় কন্ঠে বলল,
” এসব কিছুতে আমি কখনো জড়াইনি। আর না ওইসব প্রেম, ভালোবাসা সম্পর্কে আমার পূর্বে কোনো ধারণা আছে। আমি এসব পছন্দ করতাম না। সবসময় নিজেকে এসব বিষয় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। ”
মোমের কথায় আগুন মনে মনে তৃপ্তিময় কিঞ্চিৎ হাসলো। মোম যদি ওদের বিয়ের আগে কারো সাথে রিলেশন করতো, এতে আগুন মোমকে কিছু না বললেও হয়তো এক্ষুনি বাসর’টা সেরে ফেলতো। মোম বাঁধা দিলেও শুনতো না। কেন শুনবে? যে মেয়ে বিয়ের আগে প্রেম করতে পারে সে নিশ্চই এতটা অবুঝ নয়? একজন প্রাপ্ত বয়স্কের মতোই আচরন করবে। শুধুশুধু বিয়ে করা বউকে অবুঝ ভোলা-ভালা ভেবে, নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। আগুন, নিজের ব্যাক্তিগত জিনিস নিয়ে প্রচন্ড সিরিয়াস। সেখানে বউ তো সবচেয়ে ব্যক্তিগত। আগুন নিজের মুখে গাম্ভীর্য ভাব ফুটিয়ে বলে উঠলো,
” তাহলে আমিই তোমার জীবনের প্রথম পুরুষ হবো। সেই সাথে প্রথম অনুভুতি, প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা। বিষয়টা দারুন না? আরেকটা বিষয় হলো, আমি ছ্যাঁকা খাওয়া থেকে বেঁচে গেলাম। নয়তো জীবনে প্রেম না করা এই আমি, শেষে কিনা রিলেশনে জড়ানো একজন বউ পেতাম? ভাবতেই কেমন ছ্যাঁকা ছ্যাঁকা ফিলিংস হচ্ছে। ”
আগুনের কথায় মোম কিঞ্চিৎ লজ্জা পেলো। তবে আগুনের শেষের কথাগুলো শুনে ফিক করে হেসে ফেলে। আগুন মুগ্ধ চোখে চেয়ে দেখে সেই হাসি।
” এসো, ঘুমিয়ে পড়ো। আমি একটু আসছি। ”
” রাতের বেলা এখন আবার কোথায় যাবেন? ”
আগুন ফিচেল হাসে। মোম ওর প্রতি নিরদ্বিধায় অধিকার খাঁটিয়ে কথা বলায় বেশ ভালো লাগলো। শান্ত কন্ঠে বলল,
” তেমন কোথাও না। জাস্ট বেলকনিতে কিছুটা সময় কাটাবো। তুমি আসবে সাথে? ”
” না। বারান্দায় আলো নেই। অন্ধকারে ভয় পাই। ”
” আমি সাথে থাকলেও? ”
মোম মাথা নাড়ে। অর্থ্যাৎ আগুন থাকলে সে ভয় পায় না।
” তাহলে আসো। ”
” না থাক আপনিই যান। ”
” আচ্ছা। ”
আগুন মোবাইলটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। মোম বিছানায় শুয়ে, আগুনের বলা তখনকার কথা গুলো ভাবতে লাগলো।
” মা, জলদি বাসায় আসো। আয়মান ড্রেনে পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছে। ডান পায়ের গোড়ালি ফুলে গিয়েছে। আমি দেখতে চাইলে আমাকে দেখতে দিচ্ছে না। উল্টো চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে রুম থেকে বের করে দিচ্ছে। ”
ফোনের ওপাশ থেকে ময়ূরীর কথা শুনে আঁতকে উঠেন, মিনা। চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন,
” সেকি! ব্যথা পেলো কিভাবে? কখন পেয়েছে ব্যথা? ”
” সকালে নাকি ওর প্রাইভেট আছে। আমি সেলিনা আপাকে বলে নাস্তা রেডি করে দিলাম। নাস্তা খেয়ে বাড়ি থেকে সুস্থসবল বেরিয়ে ছিল। কয়েক ঘন্টা পর ফিরে আসে। জিজ্ঞাসা করতেই বলল, ড্রেনে পড়ে নাকি ব্যথা পেয়েছে। ”
” তোর আব্বুকে বল ডাক্তার ডেকে আনতে। ”
” তোমার ছেলে’তো দরজাই খুলছে না। তোমাকে জানাতে নিষেধ করেছিল আমি তবুও জানিয়ে দিলাম। ”
” আমি এক্ষুনি আসছি। ”
কল কে’টে দ্রুত ছুটলো আগুনের রুমের দিকে। দরজা বন্ধ। তিনি জোড়ে জোড়ে দরজায় করাঘাত করছেন। আগুন, বেলকনিতে এক্সারসাইজ করছে। আগুনের গায়ে ছিন্টু গেইঞ্জি আর টাউজার। গা থেকে নোনতা ঘাম চুয়ে চুয়ে পড়ছে। দরজায় নক পেতেই তোয়ালে দিয়ে শরীরের ঘাম মুছে দরজার নিকট এগিয়ে যায়। মোম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দরজা খোলে দিতেই মিনা ছটফট কন্ঠে বললেন,
” আমাকে এখন ও বাড়িতে ফিরতে হবে। আয়মান অসুস্থ। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রাশভারী কন্ঠে বলল,
” ওর আবার এত সকাল সকাল কি হয়েছে? হঠাৎ অসুস্থ হলো কিভাবে? ”
” কিভাবে হলো সেটাতো বাড়িতে গেলেই বুঝতে পারবো নাকি? ”
” আচ্ছা, তুমি তৈরী হও। আমি গাড়ি ডেকে আনছি। ”
আগুন একটা টেক্সি ভাড়া করে মিনার জন্য অপেক্ষা করছে। মিনা তৈরী হয়ে এসে একবার ঘুমন্ত মোমের দিকে দেখলো। আগুনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন থাকবো। সেটা আর হলো কই? এই আয়মান’টাকে নিয়ে আর পারি না। ছেলেটা যে কখন কি করে বসে! আমার আর এসব সহ্য হচ্ছে না। মেয়েটার প্রতি খেয়াল রাখিস বাবা। যত্ন নিস ওর। ছোট মানুষ, ভুলত্রুটি হবেই। তুই হুটহাট মেয়েটার উপর রেগে যাস না। ঘুমাচ্ছে তাই, মেয়েটাকে বলেও যেতে পারছি না। ঘুম থেকে ওঠে আমাকে না দেখতে পেলে অভিমান করবে হয়তো। আমারও তো কোনো উপায় নেই। ছেলেটা ব্যথা পেয়েছে। বাড়িতে যাওয়াটা জরুরী। আমি চেষ্টা করবো এখানে আবার আসার। না আসতে পারলেও সেলিনাকে পাঠাবো। ”
” মা, তুমি এত টেনশন করো নাতো। আমি সবটা ম্যানেজ করে নিবো। মোমের বেশি অসুবিধা হলে বাসায় না হয় একজন কাজের লোক রেখে দিবো। তুমি অযথা চিন্তা করে শরীর খারাপ করো না। ”
” আসছি, বাবা। ভালো থাকিস। মোমকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলিস। ”
” হুম। এখন চলো। বাইরে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ”
আগুন, মিনাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে ফ্ল্যাটে ফিরে আসে। মেইন দরজা আটকে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়ে। পকেট থেকে ফোনটা বের করে আয়মানকে কল করল। আয়মান বিছানায় বাম কাত হয়ে শুয়ে আছে। বড় ভাইয়ের কল দেখতে পেয়েই দ্রুত কল রিসিভ করে। আগুন গম্ভীর কন্ঠে ধমকে বলল,
” মাকে টেনশন দিতে তোর ভালো লাগে? বে’য়া’দপ! এত সকালে কোথায় গিয়েছিলি? ”
আয়মান শোয়া থেকে ওঠে বসে। কোলের মধ্যে বালিশ রেখে সেটাতে থুতনি ঠেকিয়ে হতাশ কন্ঠে বলল,
” কাজ ছিল সেজন্য গিয়েছিলাম। আমি কি জানতাম নাকি সাডেনলি এক্সিডেন্ট টা হয়ে যাবে? বাট ব্রো, আমি তো মাকে কিছু বলিনি। জানলো কিভাবে? নিশ্চই ময়ূরী বলেছে। ওকে আমি পইপই করে নিষেধ করেছিলাম মাকে না জানাতে। তবুও বলে দিয়েছে! আমার পেছনে না লাগলে ওর ভালো লাগে না। ”
” কি হয়েছে? ”
আয়মান আমতা আমতা করে বলল,
” ওই আনমনে হাঁটতে গিয়ে ভুল করে পা পিছলে মোড়ের ছোট্ট ড্রেনে পড়ে গিয়ে হাতে, পায়ে অল্প ব্যথা পেয়েছি। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে সন্দীহান কন্ঠে বলল,
” আমার কেন মনে হচ্ছে তুই আমাকে মিথ্যা বলছিস? সত্যি করে বল কি হয়েছে? পড়ে যদি আমি জানতে পারি তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিস, বুঝতেই তো পারছিস তোর কি হাল করবো। ”
দমে গেল আয়মান। শুকনো ঢোক গিললো। কাঁচুমাচু হয়ে মুখটা কালো করে উত্তর দিল,
” কি আর বলবো দুঃখের কথা। মাইশা বলেছে দেখা করবে। এত সকালে ফোন করায় ভাবলাম হয়তো সিরিয়াস কোনো ব্যাপার। সেজন্য দেখা করতে গিয়েছিলাম। আসার সময় কলেজের অনুষ্ঠানে তোলা কিছু ছবি ছিল সেগুলো নিয়ে আসতে বলে ছিল। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কলোনির মোড়ে ওইযে গুল্টে কাকুর বাড়িটা আছে না? সেখানে আসতেই একটা ছবি হাত ফসকে পড়ে গিয়েছিল। বাতাসে উড়ে ছবিটা গুল্টে কাকুর বাড়ির সামনে পড়ল। সেখানে তার বউ দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ওনাদের বাড়ি, ওনার বউ, গুল্টে কাকুকে খেয়াল করিনি। আমার কাছে ছবিটা নেওয়া জরুরী ছিল। গুল্টে কাকুর বউয়ের পায়ের কাছে গিয়ে ছবিটা পড়েছে। আমি গিয়ে ভদ্র ভাবে বললাম, ভাবি কাপড়টা উঠান ছবি তুলবো। ব্যাস! বাকিটা ইতিহাস। ”
” ইতিহাসটা শুনতে চাচ্ছি। তারপর কি হলো। আ’ঘাত পেলি কি করে? তোকে মে’রেছে? ”
আয়মান কাঁধ উঁচিয়ে বাঁকা হেসে ভাব নিয়ে বলল,
” আমাকে মা’রবে এত সাহস এই মহোল্লায় কারোর আছে? গুল্টে কাকু আমার কথা শুনে টি শার্টের কলার ধরে শাষিয়ে বলল, ফা’জিল ছেলে আমার বউকে কাপড় উঠাতে বলিস? তোর ভাইকে বিচার দিবো। আমি ওনার থেকে কলার ছাড়িয়ে বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম। উনিও মেনে নিয়েছেন। না জেনে কলার ধরায় শা’লাকে ইচ্ছে মতো কয়েক ঘাঁ দিতে ইচ্ছে করছিল। নিহাত ওনার মেয়ের সাথে লাইন মা’রি। সেজন্যই তো ছেড়ে দিয়েছি। ”
” কি বললি? ”
আয়মান চমকে যায়। কি বলতে কি বলে ফেলেছে। মেকি হেসে বলল,
” বলছিলাম, ছবিটা নিয়ে আসার সময় পাগলা কুকুর তাড়া করেছিল। দৌড়ে সেখান থেকে চলে আসার সময় ড্রেনে পড়ে পায়ে, হাতে কিছুটা চোট পেয়েছি। তুমি চিন্তা করোনা। আমি ঠিক আছি। রাখছি, এখন। ”
ফোন কে’টে সস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করল, আয়মান। বিড়বিড় করে বলল,
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৮
” এই পাগলা কুকুর যেইসেই কুকুর না, ব্রো। এটা হলো ব’দ’হারামি পাগলা গুল্টে কাকু। ছবি নিয়ে ওনার মেয়ে কেমন আছে সেটা জিজ্ঞেস করতেই লুঙ্গি কাঁছার দিয়ে কাঠের লাকড়ি নিয়ে দৌড়ে এসেছিল মা’রার জন্য। শা’লা একটু সময় দে। সুদে আসলে সব শোধ করে দিবো। আয়মানকে মা’রতে আসা? আমাকে তো চিনো না চান্দু। এখন থেকে হারে হারে টের পাবে আয়মান কি জিনিস।”