মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৮
নুজাইফা নূন
-” আরে পাগলী মেয়ে কান্না করছো কেন? সাইফান তোমার ছিলো আর তোমারই থাকবে।আমি একটা বিয়ে করি বা চারটা বিয়ে করি ইটস্ ড্যাজেন্ট ম্যাটার।বিয়ে যাকেই করি না কেন মন তো তোমাকেই দিয়েছি।আমার হৃদয় জুড়ে শুধু তুমি বসবাস করো।সেখানে আর কারো হস্তক্ষেপ করার রাইট নেই।তাছাড়া তুমি তো খুব ভালো করে জানো এই বিয়েটা কেন করেছি আমি?বিয়ের পেছনে কি উদ্দেশ্য আছে আমার?সবটা জানার পরেও তুমি এমন পাগলামি কেন করছো তানশি? তুমি যদি এমন করো তাহলে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না।সবটা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাবে।
সাইফান একনাগাড়ে কথা গুলো বললেও তানশির থেকে কোনো রেসপন্স পেলো না।ফোনের অপর প্রান্ত থেকে শুধু নাক টানার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।সাইফান বুঝতে পারলো তানশি কান্না করছে। ভেতরটা দুমরে মুচড়ে উঠলো তার।সাইফান দরদমাখা কন্ঠে বললো,
-” কথা বলবে না তানশি?”
-”বউয়ের সাথে নিশ্চয়ই বাসর হয়ে গিয়েছে?হাজার হোক পুরুষ মানুষ তো তুমি।একই বিছানায় দুজন নর নারী থাকা মানে আগুন আর মম পাশাপাশি থাকা।আগুনের সংস্পর্শে যেমন মম গলে যায় ।তেমনি নারীর সংস্পর্শে গেলেও পুরুষ বদলে যায়।তার ভেতরের পৌরুষ চিত্ত জেগে উঠতে বাধ্য হয়।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আমার প্রতি বিশ্বাস ভরসা নেই তোমার?”
-” আছে। তবু ও পুরুষ মানুষ তো।”
-” তোমার ভাবনা অনুযায়ী কিছুই হয় নি তানশি। শারীরিক চাহিদার চেয়ে ও সিজদার বিশ্বাস ভরসা অর্জন করাটা বেশি জরুরী আমার কাছে।যতো তাড়াতাড়ি সিজদার বিশ্বাস ভরসা অর্জন করতে পারবো।ততো তাড়াতাড়ি আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল হবে।”
-” তার মানে তোমাদের মধ্যে কিছুই হয় নি।”
-” না।সিজদার বিশ্বাস ভরসা অর্জন করার জন্য আমাকে নিখুঁত অভিনয় করতে হচ্ছে।সিজদা খুবই সহজ সরল একটা মেয়ে।আমার বিশ্বাস আমি খুব শীঘ্রই সিজদার বিশ্বাস ভরসা অর্জন করে সিজদার চোখে একজন আদর্শ স্বামী হয়ে উঠতে পারবো।”
-” দেখো অভিনয় করতে করতে আবার সিজদার মায়ার পড়ে যেও না।মায়া কিন্তু খুব খারাপ জিনিস।তোমাকে একদম নিঃশেষ করে দিবে।”
-” কোনো চান্স ই নেই।আমি যে তানশি তে মগ্ন।রাতভর জেগে থাকি তারই জন্য।।”
-” বিয়েতে হালিমা মঞ্জিলে তেমন সাজসজ্জা না থাকলেও বৌভাতের অনুষ্ঠানে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন করা হয়েছে। একদম রাজকীয় ভাবে হালিমা মঞ্জিল সাজিয়ে তোলা হয়েছে।বর কনের জন্য রাজকীয় ভাবে আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ির বাইরে খাবারের স্টল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নিমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করেছে।সাইফান ও রেডি হয়ে গিয়েছে।তার পরণে রয়েছে সাদা শার্ট।গলায় টাই বাঁধা। শার্টের উপরে কালো কোর্ট। পকেটে লাল পকেট স্কয়ার।কালো প্যান্ট।পায়ে কালো সু।হাতে দামি ঘড়ি।সিজদার সাজ ও কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে।সিজদা কে পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিয়েছে।সিজদার পরণে রয়েছে পিংক কালারের লেহেঙ্গা।গা ভর্তি স্বর্ণের গহনা।কপালে টিকলি , মেহেদী রাঙ্গা দু হাত স্বর্ণের বালা,চুড়ি দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে রয়েছে।মুখে ভারী মেকাপ।সব মিলিয়ে নতুন এক সিজদার সৃষ্টি হয়েছে।সামিরা সিজদা কে নিয়ে এসে স্টেজে বসিয়ে দেয়।এতো এতো লাইট , ক্যামেরা , অপরিচিত মুখ দেখে ভড়কে যায় সিজদা। নিমন্ত্রিত অতিথিরা প্রায় সবাই চলে এসেছে। কিন্তু চৌধুরী বাড়ির কাউকে না দেখতে পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায় সিজদার।”
-” সকাল থেকে সারজিস রুম থেকে বের হয় নি। ফ্লোরে টানটান হয়ে শুয়ে সিগারেটের ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।।পাঞ্জাবি খুলে ফেলে দিলেও বাকি পোশাক এখনো গায়ে জড়ানো রয়েছে। পোশাক ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।গায়ে যেন বিন্দুমাত্র শক্তি নেই। বুকের বাম পাশ টা বড্ড জ্বালাপোড়া করছে।মনে হচ্ছে যেন বুকে কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।সারজিস শোয়া ছেড়ে উঠে বসে একসাথে চার টা সিগারেট মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে লাইটার জ্বালিয়ে দিবে তখনি ফারুক মির্জা দরজায় কড়া নাড়ে।
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৭
কয়েকবার ডাকার পর সারজিস ফ্লোর ছেড়ে উঠে এসে দরজা খুলে দিয়ে আবারো ফ্লোরে বসে পড়ে।ফারুক মির্জা রুমে প্রবেশ করতেই তার নাকে সিগারেটের বিদঘুটে গন্ধ আসে।সে এদিক ওদিক তাকাতেই ফ্লোরে সিগারেটের প্যাকেট, লাইটার, সিগারেট খেয়ে রাখা উচ্ছিষ্ট অংশ পড়ে থাকতে দেখে।এসব দেখে ফারুক মির্জা হতবাক হয়ে যায়।যেই ছেলেটা সিগারেটের গন্ধই নিতে পারে না।সেই ছেলেটা সিগারেট খাচ্ছে এটা যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ফারুক মির্জার। ফারুক মির্জা সারজিস কে ফ্লোর থেকে তুলে বললো,
-” এসব কি হচ্ছে সারজিস?আমি তো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। একদিনে এতো পরিবর্তন হয়েছে তোমার?এ আমি কোন সারজিস কে দেখছি?”