একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩৭
Mousumi Akter
রোশান সারাহকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। পেছন থেকে সারাহ’র কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
” কিন্তু আমার শুরু, লেট মি ফিনিশ সুইটহার্ট। ”
কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই অদ্ভুত এক অনুভূতি জড়সড় হল সারাহ’র ভেতরে। সে ভাবতেই পারছেনা কথাটা রোশান স্যারের মুখ হতে বের হয়েছে। অর্ধনগ্ন থাকলেও যে পুরুষ ফিরে তাকিয়ে দেখেনা, দৃষ্টি সর্বদা সংযত রাখে সে পুরুষের শক্ত হাত জোড়া আজ তার কোমরে। যে পুরুষের কণ্ঠ সব সময় গম্ভীর্যপূর্ণ থাকে সে পুরুষের কণ্ঠে মাদকভরা এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিকের কণ্ঠের ন্যায় শোনাচ্ছে।
আশ্চর্য হল সারাহ! চোখে-মুখে এক ভয়াবহ বিস্ময়কর অবস্থা! সেই ভয়াবহ বিস্ময়কর চাহনি নিয়ে ঘাড় কাত করল। দেখতে ইচ্ছা করল, চিরচেনা পুরুষের হঠাৎ অচেনা আচরণ করা মুখখানা। মুখ তুলে চাইলো রোশান স্যারের দিকে। সারাহ’র চোখ দু’টো মুহুর্তের মাঝে এক অদ্ভুত মুগ্ধতায় সিক্ত হল। চাকচিক্যময় হয়ে উঠল সারাহ’র মুখের অদল। রোশান সিদ্দিকী’কে প্রেমিকরুপে এত চমৎকার সুন্দর দেখায় সে আগে কেন বোঝেনি। এত সুন্দর, এত সুদর্শন, এত আকর্ষণীয় একজন শ্যামবর্ণের পুরুষ’কে দেখাতে পারে সেটা রোশানসিদ্দিকী’কে না দেখলে এই জীবনে সারাহ’র আর দেখার সৌভাগ্য হতনা। এত সুন্দর পুরুষ তার জীবনে আসতে পারে এটাও কি ভেবেছিলো। সারাহ কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। মোহনীয় দৃষ্টি মেলল। হাত দিয়ে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির গাল স্পর্শ করে কম্পিত কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
” শ্যামসুন্দর পুরুষ। ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রোশান সিদ্দিকী’র কান দু’টো খাড়া হল। আরো একবার শুনতে উদ্যত হল সে ডাক খানা। কেন উদ্যত হবেনা। সারাহ হল সেই মেয়ে যে একবার তাকালেই তার হৃদপিন্ড থমকে যায়। থেমে যায় হৃৎস্পন্দের চলাচল। নার্ভাস হয়ে যায় নিঃশ্বাসের গতিবেগ। হঠাৎ রোশান সিদ্দিকী’র নাকে দূর হতে এক মিষ্টি মধুর খুশবুর ঘ্রাণ ভেষে আসছে। যে খুশবু সে ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারছে না। আনন্দে ভেতরটা অস্থির হয়ে ছটফট করছে। মনের আকাশে রঙিন পাখিরা যেন যেন ডানা ঝাপটে উড়ছে। ঝর্ণার পানি আপণ গতিতে ছুটছে। মহাসমুদ্রে যেন তুফান উঠেছে। রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র গালের সাথে নিজের গাল ঘষে দিল। কণ্ঠ খাদে এনে বলল,
” কি বললেন মিসেস সিদ্দিকী? প্লিজ সে ওয়ান্স এগেইন।”
সারাহ’র চোখে লজ্জা, ওষ্ঠে মৃদু হাসি। দ্বিতীয়বার উচ্চারণ করল,
” শ্যামসুন্দর পুরুষ। এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, সুদর্শন পুরুষের নাম রোশান সিদ্দিকী, আমার স্বামী। ”
রোশান সিদ্দিকী আরেকবার সারাহ’র দুই গালে তার গাল ঘষে দিলো। সারাহ এক ঝটকায় খানিকটা দূরে সরে গেলো। নিজের গালে হাত রেখে বলল,
” আপনি আর গাল ঘষবেন না। আপনার দাঁড়িতে ব্যাথা লাগে।”
রোশান গায়ের শার্ট খুলে ছুড়ে মারল খাটের ওপর। সুঠাম দেহখানা নিয়ে এগিয়ে গেল সারাহ’ দিকে। উন্মুক্ত শরীর নিয়ে আরেকবার সারাহ’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“ইউ লুক মোর এট্রাক্টিভ এন্ড সেক্সি নাউ।”
রোশানের কণ্ঠস্বরের এমন আকর্ষণীয়তায় লজ্জায় সারাহ’র গাল লাল হয়ে এলো। কিছুক্ষণ আগের মুহুর্ত কল্পনা করে লজ্জায় সে মরে যাচ্ছে। সে কি পা-গ-ল হয়ে গিয়েছে। রোশান স্যারের রাগ ভাঙাতে কি -সব নির্লজ্জের মত আচরণ করেছে, নির্লজ্জের মত পোশাক পরেছে। ইশ কি লজ্জাজনক ব্যাপার! এখন সে রোশান স্যার’কে মুখ দেখাবে কীভাবে? কীভাবে রক্ষা করবে নিজেকে রোশান স্যারের থেকে। লজ্জায় ম’রি ম’রি একটা অবস্থা। সারাহ’র কোমরে রোশানের দুই হাতের দশ আঙুলের দুষ্টুমি চলছে । জীবনে প্রথমবার কোমরে কোনো পুরুষালী হাতের স্পর্শ।
সুড়সুড়িতে এক দন্ড স্থির থাকতে পারছেনা সারাহ। শিহরণে বয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীরে শিরা উপশিরায়। সে কোমর থেকে রোশানের হাত সরানোর মিথ্যা চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। সে চাইলেও হাত সরাতে পারবেনা জানে। কারণ রোশান সিদ্দিকী আজ ছাড়ার জন্য ধরেনি। তার ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা পুরুষসিংহকে সারাহ জাগিয়ে তুলেছে। এখন তাকেই ভোগ করতে হবে এই সিংহের ন্যায় পুরুষের থাবা। রোশানের হাতজোড়া কোমর থেকে সারাহ’র পেটে গিয়ে স্থির হল। ঘাড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে, ঠোঁটজোড়া বসিয়ে দিলো ঘাড়ে। ঘাড়ে রোশানের ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই সারাহ’র ভেতরের আত্মাসহ সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল থরথর করে। সে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে রোশানের থেকে নিজেকে মুক্ত করার। সারাহ’র নড়াচড়া দেখে রোশান সারাহ’র ঘাড়েই ঠোঁট রেখে নেশান্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
“ইওর মুভস আর ড্রাইভিং মি ক্রেজি সুইটহার্ট! ”
লজ্জায় সারাহ দুইহাত দিয়ে মুখ ঢাকল। এখনি ম’রে যেতে করছে লজ্জায়। কীভাবে পালাবে সে। পালানোর কি আর কোনো উপায় আছে। রোশান সিদ্দিকী ক্রমশ ঠোঁটজোড়া দ্রুত চালাতে শুরু করল। আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ল সারাহ। লজ্জারা কখন যেন ভাললাগায় রূপ নিলো। উন্মাদের মত হয়ে গেল ভেতরকার অনুভূতি’রা। সারাহ কম্পিত গলায় বলল,
” দরজা খোলা আছে। কেউ চলে আসবে। ”
রোশানের কণ্ঠেজুড়ে আজ মাদকতা। মাদকসেবন কণ্ঠে সে উত্তরে জানাল,
” কেউ আসবে না।”
রোশানের মনোযোগ নষ্ট করতে সারাহ আবারও বলল,
” আপনার সো কলড কাজিন জিনাত আসবে কিন্তু।”
রোশানের অনুভূতির দফারফা করতে এই একটা নামই যথেষ্ট ছিলো। সে আচমকা সারাহ’র গলায় কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল,
” ডিস্টার্বিং নাম এমন মুহুর্তে কি না নিলেই নয়। ফিলিংস এর দফারফা করে দিলে। বাট আমি সেটা হতে দিবোনা। আজ তোমাকে ছাড়ছিনা। ”
সারাহ ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল,
” মে’রে ফেলতে চান নাকি। বাচ্চাদের মত কি করছেন।”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’কে পাজাকোলে তুলে নিলো। সারাহ’র লাজুক চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ইওর ভয়েস ড্রাইভস মি ক্রেজি সুইটহার্ট। ”
সারাহ লজ্জায় মুখ লুকালো রোশানের উন্মুক্ত বুকে। রোশান সারাহ’কে কোলে তুলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো। হাত দিয়ে হাতড়ে সুইচ অফ করল। অন্ধকার রুম ছেয়ে গেল নিস্তব্ধতায়। শুধু শোনা যাচ্ছে দু’জন মানব-মানবির উষ্ণ নিঃশ্বাসের শব্দ। রোশান সারাহ’কে নিয়ে বিছানায় ছাড়ল।
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩৬
সারাহ’র শার্টের বোতামগুলা একটা একটা করে খুলে ফেলল। অন্ধকার রুমে কোথায় গিয়ে পড়ল শার্ট কে জানে। মিলিত হল দু’জোড়া ওষ্ট। আঙুলের ভাজে চলে গেল আঙুল। ভালবাসার অনুভূতিরা ভেতর থেকে জাগ্রত হল । নতুন সুরে, নতুন যাত্রায় দু’জন মানব-মানবী হৃদয় আর শরীর উভয়ের কাছাকাছি চলে এলো। ঘুমন্ত অনুভূতিরা জাগ্রত হলো। শুরু হল গভীর প্রেমের সূচনা।