মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩০
নুজাইফা নূন
” ফটোশুট চলছে তো চলছেই।সিজদার বিরক্ত লাগছে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।সিজদা বারবার প্রবেশদ্বার দেখছে তার মামা মামী এসেছে কিনা।সিজদা মন খারাপ করে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখে তার মামা , মামী , ঐশ্বর্য,সালেহা খালা সবাই এসেছে। সবাইকে দেখে যেন কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায় সিজদার। এতোক্ষণে সিজদা সিজদা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
সালেহা বেগম দৌড়ে ছুটে এসে সিজদা কে জড়িয়ে ধরে সিজদার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
-” কেমন আছিস মা?”
-” খুব ভালা আছি খালা। তুমি কেমন আছো?বিয়ার পর আমি পর হয়ে গেছি তাই না খালা? একটু ও খোঁজ নিলা না আমার।সব কুটুম চলে আইছে। অথচ তোমাগো কোনো খোঁজ খবর নাই।আমারে এতো তাড়াতাড়ি পর কইরা দিলা খালা?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” পাগলি মাইয়ার কথা শোনো দেখি?”
-”তোমাগো আইতে এতো দেরি হইলো ক্যা খালা? আমি সকাল থেইক্কা তোমাগো লাইগা পথ চাইয়া বইয়া রইছি। বারবার দেখতাছি তোমরা আইছো কিনা ?”
-” আর কোইস না মা।বাড়িতে যে নাটক চলতাচিলো।ছোট ম্যাডাম বাড়িতে আইসা বাড়ি মাথায় তুইলা লইছিলো।মাইয়া ডা একদম উচ্ছন্নে চইলা গেছে। কোন অকাম কুকাম কইরা গা ঢাকা দিছিলো তার ঠিক নেই।।”
-” এসব কথা বাদ দ্যাও খালা।তুমি কেমন আছো আগে তাই কও খালা?”
-”গতকাইল থেইক্কা ভালা ছিলাম না।শরীল ডা ঐ বাড়িতে থাকলেও মন ডা তোর কাছে পড়ে ছিলো। ইচ্ছে করছিলো তোর কাছে ছুটে চলে আসি।এহন তোরে দেহোনের পর থেইক্কা ভালা হয়ে গেছি।মনে হচ্ছে কতো বছর পর তোর মুখ খান দেখতাছি।তোরে তে চেনাই যাইতেছে না। এক্কারে রানীর মতো লাগতাছে। এতো বড় বাড়ি।এতো দামি গয়না, এতো দামি পোশাক।দেখে আমার চোখ ভরে গেছে রে মা।বাড়ির সবাই কেমন আচরণ করছে তোর সাথে? গালমন্দ করছে নাকি আবার?”
-” না খালা।এ বাড়ির সবাই অনেক ভালা।আমারে সবাই আপন করে নিছে ।মনে হচ্ছে আমি যেন তাদের কতো দিনের চেনা।আমি তাদের আপন কেউ।সবাই খুব ভালা খালা।”
-” মাইয়া মানুষ সুখে আছে।এইডা শুনতে ও ভালা লাগে।সালেহা বেগম কে কথা বলতে দেখে রাশেদ চৌধুরী, বিথী চোধুরী, ঐশ্বর্য সবাই সিজদার দিকে এগিয়ে আসে। রাশেদ চৌধুরী সিজদা কে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো চুমু খেয়ে বললো,
-” কেমন আছিস মা?”
-” ভালো আছি মামু। তুমি কেমন আছো?”
-” তোকে দেখার পর থেকে অনেক ভালো হয়ে গেছি আমি।তোকে একজন উপযুক্ত মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি।সাইফান তোকে অনেক ভালো রাখবে।তোকে আমি একটা নতুন জীবন দিতে পেরেছি।এখন আমি মরেও শান্তি পাবো রে মা।”
-” মরার কথা কইবা না মামু।আমার কষ্ট লাগে।”
-” ঠিক আছে মা।আর কখনোই বলবো না বলে রাদেশ চৌধুরী এটা ওটা জিজ্ঞেস করে ফারুক মির্জার সাথে দেখা করতে চলে যান।তিনি যেতেই ঐশ্বর্য সিজদা কে পিঞ্চ মেরে বললো,
-”অনেক মেয়েদের সোনার কপাল হতে শুনেছি। কিন্তু তোর তো ডায়মন্ডের কপাল রে সিজদা।রাজা , রাজকুমার,রাজত্ব সবই তো তোর হাতে।আমি তো ভাবতেও পারছি না তুই এই বাড়ির বউ। তুই কখনো ভেবেছিলি কাজের মেয়ে হয়ে এতো বড় বাড়ির বউ হয়ে আসতে পারবি? এসব কিছু হয়েছে আমার জন্য। চিন্তা করিস না। খুব শ্রীঘ্রই আমি ও এই বাড়ির বউ হয়ে আসবো।এ বাড়ির বড় ছেলে সারজিস মির্জার বউ।”
-” সারজিস মির্জার বউ কথাটা শুনে চমকে উঠলো সিজদা।সিজদা মনে মনে বললো,আমি তো জানতাম ই না যে ডাক্তারবাবুর নামই সারজিস মির্জা।দাদি জান ডাক্তারবাবুর সাথেই আমার বিয়ে ঠিক করেছিলেন। ডাক্তারবাবুই সেই পুরুষ যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি।অথচ তিনি আমাকে বিয়ে করতে চান নি।আর চাইবেন ই বা কেন? আমি তো তার যোগ্য না।আমি জানতাম সে আমাকে বিয়ে করবে না।সে তার লেভেলের কোন মেয়েকে বিয়ে করবে।আর সেটাই হলো।যাই হোক এখন আমি অন্য কারো বউ।তার কথা ভেবে কোনো কাজ নেই আমার। তবে তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা সারাজীবনের জন্য।”
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২৯
-” সিজদার থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ঐশ্বর্য আবারো বললো ,
-”বড়লোক বাড়ির বউ হয়ে অহংকারে মাটিতে পা পড়ছে না তোর।আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ও প্রয়োজন মনে করছিস না। আমি সারজিসের বউ হয়ে এই বাড়িতে আসা মাত্রই তোর সব অহংকার ফানুস হয়ে যাবে। তুই আবার আমার চাকরানী হয়ে যাবি।যার স্থান যেখানে তাকে সেখানেই মানায়।”
-” ঠিক বলেছেন ম্যাডাম।যেমন আপনার স্থান জেলখানায়।আপনাকে জেলখানা তেই মানাবে।”