প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৪

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৪
মারশিয়া জাহান মেঘ

“ফারাবী, তুমি ওদেরকে কলেজ নিয়ে যাবে কেন? ওদের কি পা নেই?”
লারার কথা শুনে ফারাবী খাওয়া থামিয়ে তাকায় তাশরীফের দিকে। তাশরীফও ফারাবীর দিকেই তাকিয়ে আছে। তোহা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখছে ভাইকে। এখনো তার ভাই চুপ থাকলে সেইই কিছু একটা বলে বসবে। তাশরীফ দাম্ভিক কন্ঠে বলল,

“আমি ফারাবীকে বলতাম না কখনো যদি আমার ব্যস্ততা না থাকত। তুমি বোধহয় একটু বেশিই জেলাস ফারাবীর সাথে কাউকে দেখে। তাই ভাল জিনিসটাকেও বেশ অন্যভাবে নিচ্ছ।”
“ফারাবী যাবে না মানে যাবে না। আমার কথাই শেষ কথা।”
ফারাবী নিরবতা ভেঙ্গে বলল,
“স্টপ লারা৷ এনাফ ইজ এনাফ। গেলে আমার সাথে চলো। সরাসরি বলতে পারছ না বলে এইভাবে ঘুরিয়ে ফেরিয়ে কথা বলার কি দরকার?”
মুহুর্তেই লারা বলে উঠল, “তুমি না বললেও আমি যেতাম ফারাবী। আমার হবু বর ২ টা মেয়ে নিয়ে যাবে সাথে আমার না যাওয়াটা কি মানানসই?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এখন সাইলেন্টলি খাও। খেয়ে তারপর রেডি হয়ে নাও।”
খাওয়া-দাওয়া শেষে তাশরীফ হসপিটালে চলে গেল। ফারাবী লারার রুমে গিয়ে দেখলো লারা রেডি হচ্ছে। ফারাবীকে দেখে লারা যেই বলতে যাবে কিছু একটা তখনি কপালে হাত রেখে বলল,
“কি হলো হঠাৎ? মাথাটা এমনভাবে ঘুরছে কেন?”
“কি হয়েছে লারা?”
“আমার.. মাথা মাথাটা এত….”
আর কিছু বলতে পারলো না লারা। ঘুমে বিভোর হয়ে গেল। ফারাবীর ঠোঁ’টে’র কোণে ফুটে উঠেছে বাঁকা হাসি। ফারাবী বিছানায় লারাকে শুইয়ে দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে। তাশরীফকে কল লা’গা’য় সে। ওপাশ থেকে তাশরীফ কল ধরতেই বলল,

“কাজ হয়েছে?”
” হ্যাঁ, কাজ হয়ে গেছে।”
৪২.
লারাকে খাবারের সাথে ঘুমের মেডিসিন মিশিয়ে দিয়েছিল ফারাবী। তাশরীফ তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল সে যেন খাবারের সাথে ঘুমের মেডিসিন মিশিয়ে দেয়। তাশরীফ আবার কল দেয় ফারাবীকে। ফারাবী কল ধরতেই ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,
“এখন যা করার প্ল্যান ছিল, তাই কর।”
“আভাকে কি বলব? আভা যাবে? আমার আর তোহার সাথে।”
“আভাতো জানেই সব। ওকে নিয়ে যেতে হবে না। ওকে বাসায় রেখে যা। ওই মেয়ের জ্ঞান ফিরলে কি করবে কে জানে।”

“তাও ঠিক বলেছিস। লারাকে আমার একদম বিশ্বাস নেই।”
“জলদি কাজে লেগে যা।”
“তাশরীফ….”
“বল..”
“যা করতে চাচ্ছি, তার বিপরীত হয়ে যাবেনাতো?”
তাশরীফ কিছু একটা ভেবে বলল,
“চিন্তা করিস না, দেখবি সব ভালই হবে। সবচেয়ে বড় কথা, তোর লাইফ রিস্ক আছে। যেই মেয়ে কথায় কথায় বাবাকে সব জানায়, ওই মেয়েকে বিয়ে করলে তোর জীবন ন’র” ক হয়ে যাবে না?”
“আচ্ছা, তুই রাখ…”
“ওকে, আচ্ছা শুন…”
“বল..”

“তোর রিসিপশনের ডেকোরেশন আজই করিয়ে ফেলি?”
“আজ কি কি ঘটবে তা আমি, তুই দুজনেই জানি। আজ না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
“ফারাবী, ডোন্ট ওয়ারী।”
কল কাটতেই নিচতলায় যায় ফারাবী। তাকায় তোহার দিকে। তোহা বুঝতে পেরে বলল,
“চলুন, লারা ছাড়া ঘুম থেকে জাগার আগে বাইরে থেকে আসি।”
ফারাবী আভাকে বলল,
“ওহ জেগে খুব বেশি প্রবলেম করলে, আমাকে কল দিবেন, ওকে?”
“আচ্ছা, এখন জলদি বেরিয়ে পড়ুন আপনারা।”
তোহা আর ফারাবী বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে। ফারাবী ড্রাইভিং সিটে বসে, পাশে বসে তোহা। তোহার ভাবতেই অবাক লাগছে, ভাইয়ের কথায় এই ছেলের সাথে বউ বউ নাটক করতে হবে লারার সামনে। প্রথমে সে কোনোভাবেই রাজি হতে চায়নি। তাশরীফের কথার ধাঁচ দেখে বাধ্যই হলো রাজি হতে। ভাইকে সে ভীষণ ভয় পায়। কিন্তু সে জানে, তার ভাই খারাপ কিছু তার সাথে কখনোই হতে দিবে না।

“ফারাবীইই… ফারাবীইই.. কোথায় তুমি?”
লারা ঘুম থেকে উঠেই চিৎকার করে ফারাবীকে ডাকতে ডাকতে নিচ তলায় চলে আসে। আভা রান্না করছিল। আজ, দুপুরে তাশরীফ বাসাতেই খেতে আসবে। লারার কন্ঠস্বর শুনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলো সে। লারা কপালে হাত রেখে সোফায় বসে পড়ল। মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে তার। আভা এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে লারার সামনে গেল। বলল,
“পানিটা খেয়ে নাও।”
লারা গ্লাসটা হাতে নিয়ে পানিটুকু খেলো। বলল,
“আমার কি হয়েছিল? ফারাবী কোথায়? তুমি কলেজ যাওনি কেন?”

“তোমার কি হয়েছিল তাতো তুমিই জানো। হঠাৎ বললে, অনেক ঘুম পেয়েছে তাই আমাদের সাথে যাবে না। তাই তোহাকে শুধু কলেজে পাঠিয়েছি। আমি যেতে পারিনি, কারণ তুমি বাসায় একা। তোমার কিছু লাগলে কাউকে না পেলে প্রবলেম হবে তোমার।”
“ফারাবী নিয়ে গেছে ওই মেয়েটাকে?”
“হ্যাঁ। ওর নাম তোহা।”

“আমাকে না নিয়েই ফারাবীইই বলে গেল? আজ আসুক, ডেডকে আমি কল দিবই আজকে। এন্ড ইটস শিওর নাউ।”
“কথায় কথায় এত বাবাকে আনো কেন লারা? তুমি ফারাবী ভাইয়াকে ভালোবাসো, ভাল কথা। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছ? এইটাকে ভালোবাসা বলে কিনা। ভালোবাসলে এইভাবে কেউ এতটা টর্চার করতে পারে নিজের মানুষটাকে? কথায় কথায় আ’ত’ং’কে ফেলে রাখো তুমি ফারাবী ভাইয়াকে। এইটাতো ভালোবাসা না। এইটা ভালোবাসার নামে তি’লে তি’লে মে’রে ফেলা।”
“এই মেয়ে, জাস্ট শাট আপ ওকে? এখন তুমি আমাকে শেখাবে তাইনা? কোনটা ভালোবাসা, আর কোনটা ট’র্চা’র।”
“কেউ যদি তা না জানে, তাহলে তাকেতো শেখাতেই হয়।”

তোহা থতমত খে’য়ে বসে আছে কাজী অফিসে। চোখে -মুখে কেবল বিস্ময় আর বিস্ময়। এইটা কি করছে ফারাবী? তোহা ফারাবীকে কাজী সাহেবের সামনে মিনমিন স্বরে বলল,
“এইসব কি হচ্ছে? আপনি আমাকে এইখানে এনেছেন কেন? আমাদের কথাতো এইটা ছিল না। চলুন এইখান থেকে।”
ফারাবীর চেহারা আগের মতই স্বাভাবিক। তোহা যতটা অবাক হয়ে সব কেবল ছলছল চোখে দেখছে, ফারাবী তার বিন্দুমাত্রও দেখাচ্ছে না। তার কাছে সব স্বাভাবিক। যেন এইটাই সে চাইছিল। ফারাবী সাইন করে তোহাকে বলল,
“সাইন করো।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৩

“কি সাইন করব? আর ইউ ম্যাড? কি করছেন এইসব? আমাকে ছাড়ুন বলছি, আমি ভাইয়াকে এক্ষুনি কল দিব।”
ফারাবী তোহার হাত আরও শ’ক্ত করে চে’পে ধরল। তোহার চোখ ছলছল করছে। এই ফারাবী কি করতে চাচ্ছে? তাদের কথা ছিল, “বাইরে থেকে তোহা আর ফারাবী গিয়ে লারাকে বলবে, নিচক একটা এক্সিডেন্টলি তাদের বিয়েটা হয়ে গেছে৷ কিন্তু ফারাবী এখন এইটা কি করছে? মিথ্যে বিয়ের বদলে সত্যি সত্যি ফারাবী তাকে বিয়ে করে ফেলবে? তার ভাই কি জানতো এইটা? জেনেশুনে এইভাবে, এই অবস্থায় তাকে ফেলতে পারলো তাশরীফ! আর ভাবতে পারলো না তোহা। সাথে সাথেই সেন্সল্যাস হয়ে যায় সে।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৫