নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ২০

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ২০
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

“রাত দুটো বাজে, ঘুমাতে না গিয়ে তুমি আমার সাথে ঝগড়া করতে বসেছো?”(কঠোর কণ্ঠস্বরে)
কৌশিক চৌধুরী রাগের সহিত বলে উঠলেন। ইলা তারচেয়েও দ্বিগুন রেগে বলে উঠলো,,
“তুমি এটাকে ঝগড়া ভাবলে ঝগড়াই। তুমি কেনো আদিতকে বলেছিলে আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে? তোমার জন্য আদিত আজকে আমাকে ভালোবেসেও স্বীকার করছেননা যে উনি আমাকে ভালোবাসেন।”(দ্বিগুন রাগী স্বরে)
কৌশিক চৌধুরী মেয়ের রাগান্নিত কণ্ঠস্বরের বাক্য বচন শুনে আরো রাগন্নিত হলেন। রাগান্নিত কণ্ঠস্বরে বলে উঠলেন,,

“একটা বেকার, জেল যাওয়া ছেলেকে তখন তুমি ভালোবাসতে। শুনো আবেগ দিয়ে পৃথিবী চলেনা, আবেগ থেকে বেরিয়ে আসো। এবার শুধু অনার্স ফাইনাল ইয়ারটা তোমার শেষ হোক, তোমাকে বিয়ে দিয়েই ছাড়বো।”(রাগান্নিত স্বরে)
“তুমি তোমার কথা বলেছো আমি শুনেছি, এখন তুমি আমার কথা শুনো। আদিত ওনাকে ছাড়া আমি আর কাউকে বিয়ে করবোনা আমার সোজা উক্তি। একে তো আমার সাথে, আদিত ওনার সাথে অন্যায় করেছো তার উপর অন্য মানুষের সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার কথা বলছো। তুমি যদি তোমার কথায় অটল থাকো তাহলে তুমিও জানো আমি তোমার মেয়ে, তোমার যতটুকু রাগ আছে আমারও ততটুকুই আছে। আমিও আমার কথায় অটল থাকবো।”(রাগান্নিত কণ্ঠস্বরে)

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইলা আর দাঁড়ালোনা কৌশিক চৌধুরীর কক্ষ থেকে হনহন করতে করতে বেরিয়ে গেলো। কৌশিক চৌধুরীর পাশে ওনার স্ত্রী অর্থাৎ ইলার মা প্রমীলা চৌধুরী নিশ্চুপ হয়ে বসে আছেন। এখন উনি কিছু বলা মানেই কৌশিক চৌধুরী “মেয়েকে দেখে রাখতে পারোনি? তুমি থাকতে ও এতো তেজী কিভাবে হলো” বলে উঠা। প্রমীলা চৌধুরী কিছু না বলা শর্তেও কৌশিক চৌধুরী রাগান্নিত চোখে ওনার দিকে চেয়ে সোফা থেকে উঠে বিছানার দিকে আগত হলেন ঘুমানোর জন্য। প্রমীলা চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
ইলা নিজের কক্ষে এসে রাগে পায়চারি শুরু করলো। ফোনটা হাতে নিয়ে আদিতকে ফোন দিলো।
এক দু বার রিং হতেই আদিত কল রিসিভ করলো। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,,
“হু, কে বলছেন?”(ঘুম জড়ানো কণ্ঠে)

ইলা যেন আরো ক্ষুদ্ধ হলো। এদিকে আদিতকে বিয়ে করার জন্য রাত দুইটা বাজে বাবার সাথে এক ধাপ তর্ক করে আসলো আর আদিত কিনা ঘুমাচ্ছে! ইলা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,,
“ফিউচারে আপনাকে খু’ন্তি দিয়ে আদর করা নারী বলছি। কিসের এতো ঘুম হ্যা? উঠুন।”(দাঁত দাঁত চেপে)
শেষোক্তি একপ্রকার ধমকে বলে উঠলো ইলা। এদিকে ইলার এহেনে কথাবার্তা আর এহেন ধমকে ঘুম ছুটে গেলো আদিতের। ফোন কর্ণ থেকে নামিয়ে দেখলো “আলু” অর্থাৎ ইলার নাম্বার। ইলাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সময় ইলা জোর করে নিজের নাম্বার আদিতের ফোনে সেভ করেছিল “বউজান” দিয়ে। সাথে আদিতের নাম্বারও নিজের ফোনে সেভ করে নিয়েছিল। কারণ কিছুদিন আগেই আদিত নাম্বার পাল্টে ফেলেছে।
আদিত পরে অবশ্য “বউজান” নিকনেম “আলু” দিয়ে সেভ করেছিল।
ইলার এমন রাগান্নিত কণ্ঠস্বর শুনে আদিত গম্ভীর কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,,

“এই মেয়ে এই, রাত বিরাতে আমায় কেনো ফোন করেছো? ঘুম নিদ্রা নাই তোমার?”(গম্ভীর কণ্ঠস্বরে)
ইলার রাগ যেন আরও বৃদ্ধি পেলো। দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো,,
“আপনার সাথে পঁচা কথা বলবো বলে রাত বিরাতে কল দিয়েছি। কোনো সমস্যা আপনার? আসুন বাচ্চার পরিকল্পনা করি।”(দাঁত কিড়মিড় করে)
আদিত আরও গম্ভীর হলো, রাত দুটো বাজে, এই সময়ে এই মেয়ে ফোন দিয়ে বাজে ব’কছে! আদিতের ইচ্ছে করছে এক ধমক মা’রতে ইলাকে। নেহাত অনেক রাত হয়েছে, এখন চেঁচালে পাশের ঘরে থাকা মা উঠে এসে রিমান্ড দেওয়া শুরু করবে আদিতকে। আদিত গম্ভীর কণ্ঠেই বলে উঠলো,,
“অসভ্য মেয়ে, মুখে আটকায় না? দিনদিন লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে তোমার মুখ। কন্ট্রোল করো নাহয় আমি..”(গম্ভীর কণ্ঠে)

আদিতকে বলতে না দিয়ে ইলা বলে উঠলো,,
“নাহয় আপনি, আপনি কন্ট্রোললেস হয়ে পড়বেন। পরে করতে গিয়ে বিয়ে সেরে বাসরও সেরে ফেলবেন। এরপর আমাদের ডজনখানেক বাচ্চা হবে। এইতো? ঠিকাছে আমি রাজি। স্ক্রু ঢিলা পুরুষমানুষ কোথাকার, রাতের দুটো বাজে আমি বাবার সাথে তর্ক করে এসেছি আপনাকে বিয়ে করবো বলে আর আপনি ভুসভুস শব্দ করতে করতে ঘুমাচ্ছেন! শুধু বিয়েটা হোক না, একসাথে তিনটা বাচ্চার মা হবো। সবার পটি আপনায় দিয়ে পরিষ্কার করাবো স্ক্রু ঢিলা পুরুষমানুষ কোথাকার।”(রাগী স্বরে)

আদিত এবার চেয়েও রাগ সামলাতে পারলোনা। ধমকে বলে উঠলো,,
“শাট আপ, বাজে কথা একদম বলবেনা। নয়তো ঘুম বাদ দিয়ে এই মুহূর্তে তোমার বাড়িতে এসে তোমায় কানের নিচে এমন মারবোনা কেঁদে সমুদ্র বানিয়ে ফেলবে। এক বাচ্চার মা হতেই দম বেরিয়ে যাবে সেখানে তিনটা বাচ্চার মা হওয়ার স্বপ্ন দেখে! চ’ড়িয়ে একদম গাল লা’ল করে দিবো অ’সভ্য মেয়ে। ফোন রাখো।”(ধমকের স্বরে)
আদিতের ধমক খেয়ে ইলা কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠলো। “আপনি ভালোনা, কথা বলবোনা আপনার সাথে” বলেই ফোন কেটে দিলো। আদিত ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো, এই মেয়ে কি জীবনেও তাকে শান্তি দিবেনা? দিনে তো অশান্তি দেয়ই রাতেও অশান্তি দেয়। দুহাতে মাথার চুল টেনে ধুপ করে শুয়ে পড়লো আদিত।

“অসভ্য চোরের মতো আমায় কোলে তুলে কেন নিয়ে আসলেন?”(রাগত স্বরে)
সারুর বাক্য বচনে শেরহাম ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,,
“বউ, বাচ্চা ছাড়া ঘুম আসেনা তাই আমার বউ, বাচ্চা আমি তুলে নিয়ে এসেছি। এতে তোমার কি? তুমি বলার কে?”(ভ্রু কুঁচকে)

সারু নাক ফুলিয়ে নিশ্চুপ হয়ে শেরহামের বুকে গুটিয়ে রইলো। শেরহাম আলতো হেসে দুহাতে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো সারুকে। সময় এখন রাত তিনটা। শেরহাম হাজার চেয়েও ঘুমাতে পারেনি। এতদিন সারুকে জড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরী হওয়াতে আজকে সারু নেই বলে শেরহামের ঘুম আসছিলোনা। শেষে এপাশ ওপাশ করতে করতে ঘড়ির কাঁ’টা তিনটায় এসে থামতেই উঠে চলে গেলো সারুকে নিয়ে আসতে। ভাগ্য ভালো দরজা ভেতর থেকে লাগানো ছিলোনা নাহয় সারুকে নিয়ে যেতে পারতোনা শেরহাম।
সারুর মাথায় চু’মু দিয়ে শেরহাম প্রশান্তিতে চোখ বুজলো।

নতুন ভোরের আগমন, সেই সাথে নতুন একটা বারের। সারু ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরের দিকে গেলো সবার জন্য নাস্তা তৈরী করতে। সারু ভেবেছিলো এতসকালে একমাত্র সেই প্রথম উঠেছে কিন্তু না সারুর শাশুড়ি মিতালিও রান্না ঘরে উপস্থিত রয়েছেন। সারু ওনাকে দেখে একটু ইতস্তত বোধ করলো। প্রেগন্যান্সির আগ থেকেই মিতালি আর প্রেগন্যান্সি নিয়ে কথা শুনায়নি সারুকে। কথা তেমন বলতেন না, যতটুকু বলতেন সবটাই সারুর নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে বলতেন।
সারু গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো মিতালিকে সাহায্য করার জন্য।

“মা, রুটি আমি বেলে দেই?”
সারু নিচু কণ্ঠে প্রশ্ন করলো মিতালিকে। মিতালি সারুর দিকে চেয়ে মিষ্টি হেসে বলে উঠলেন,,
“তোমার রুটি বেলা লাগবেনা। এতো সকালে কেনো উঠেছো? এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমানের ঘুম দরকার আর এখন কোনো কাজ করা লাগবেনা। যাও বিশ্রাম নাও।”(মিষ্টি হেসে)
সারুর কেনো জানি মিতালির এমন ব্যবহার একবার ভালো লাগে আরেকবার ভালো লাগেনা। কারণ মাঝে মধ্যে মনে হয় শাশুড়ি তার ভালো হয়ে গিয়েছে, এখন থেকে আর ঝগড়া করবেনা। আবার মনে হয় ঝগড়ার সময়টাই সুন্দর ছিল, মাঝে মধ্যে ঝগড়া ভালো না লাগলেও ঝগড়ার সময়টা সারুর ভালো লাগতো সারুর কাছে।
সারু নিচু কণ্ঠে আবারো বলে উঠলো,,

“আমি পারবো মা।”
“আমি জানি পারবে, তবে আমি করতে দিবোনা। যাও এখন ঘরে যাও, বিশ্রাম নাও। নাস্তা তৈরী হয়ে গেলে সবাইকে ডেকে দিবো।”
সারু আর একটাও শব্দ করলোনা। নিশ্চুপ পায়ে ঘরে গেলো। বিছানায় বসতেই শেরহাম শুয়ে থাকা অবস্থায় সারুর কাছে গিয়ে পেছন থেকে দুহাতে সারুর কোমর জড়িয়ে কোমরে ঠোঁট ছোঁয়ালো। আচমকা শেরহামের এহেন কাণ্ডে ভড়কে গেলো সারু। শেরহামের হাত সরাতে চেয়েও সরাতে পারলোনা সারু। শেরহাম সারুকে নিজের কাছে টেনে সারুর কানে কানে বলে উঠলো,,

“আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে উঠে গিয়েছো, এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে জান।”(ফিসফিস করে)
সারু নিজেকে ছাড়ানোর জন্য নড়াচড়া শুরু করলো। শেরহাম নিজের অধর সারুর অধরের সাথে মিশিয়ে দিলো। কিয়ৎক্ষণ উষ্ণ আবেশ বজায় থাকলেও শেরহাম জোরে একটা কা’ম’ড় বসালো সারুর অধরে। সারু ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে শেরহামের দিকে চাইলো। শেরহাম মৃদু হেসে কা’ম’ড় দেওয়া স্থানে আলতো চু’মু খেলো,,

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ১৯

“রোজ সকালে এভাবে আমার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে উঠে যেও, তাহলে রোজ রোজ সকালে তোমায় এমন শাস্তি দিতে পারবো। তোমায় এমন শাস্তি দিতে আমি প্রতিদিনই কেনো প্রতি মিনিটই ইচ্ছুক।”(মৃদু হেসে)

নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব ২১