এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩
তানিশা সুলতানা

জুতোটারও বোধহয় কান্ডবজ্ঞান নেই। এই অসময়ে ছিঁড়তে হলো?
তন্নি অর্ণবের পেছন পেছন সবেই বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। গেইট পেরুনোর আগেই জুতো জোড়া ছিঁড়ে গেলো। যদিও তন্নি অর্ণবকে এখনো বুঝতে দেয় নি। চুপচাপ ছেঁড়া জুতো হাতে নিয়ে হাঁটছে।
অর্ণব গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। তন্নি ইতস্তত বোধ করছে। কোথায় বসবে? সামনে না কি পেছনে?
সামনে বসতে গেলে যদি একটা ধমক দিয়ে দেয়? তার থেকে পেছনে বসাই ভালো।
তন্নি পেছনের দরজা খুলতে যায়। অর্ণব ভ্রু কুচকে তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে

“ওই হ্যালো
আমি তোমার ড্রাইভার না।
অগত্য তন্নি দরজা বন্ধ করে সামনের দরজা খুলে বসে পড়ে। স্যান্ডেল এবার পায়ে চাবিয়েছে। অর্ণব তন্নির দিকে একটু এগিয়ে আসতেই তন্নি তারাহুরো করে সিটবেল্ড এ হাত দেয়।
অর্ণব নিজের জায়গায় বসে পড়ে। বিরবির করে বলে
” আনরোমান্টিক”
অতঃপর গাড়ি স্ট্রাট দেয়। তন্নি এক মনে বাইরের দৃশ্য দেখে যাচ্ছে। বিরক্ত অর্ণব৷ পাশে হ্যান্ডস্যাম ছেলে বসে আছে। কোথায় নজর ফিরিয়ে ফিরিয়ে তাকে দেখবে। তা না বাইরের গাছ পালা দেখছে। বলি জীবনে কি গাছ পালা দেখে নি? ইডিয়েট।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হঠাৎ অর্ণব গাড়ি থামিয়ে ফেলে। তন্নি চমকে ওঠে। তাকায় অর্ণবের দিকে। শুকনো ঢোক গিলে বলে
“গাড়ি কি নষ্ট হয়ে গেলো? কোনো ব্যাপার না আমি একাই যেতে পারবো এইটুকু।
তন্নি গাড়ি থেকে নামতে যায়। অর্ণব হাত ধরে ফেলে তন্নির। গাড়ির ভেতরের লাইট জ্বালিয়ে দেয়। তাকায় তন্নির দিকে।
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলেছে।
” গলায় তিল আছে তোমার।

আপনা আপনি তন্নির হাতটা চলে যায় নিজের গলায়। আসলেই তন্নির গলায় একখানা তিল আছে। একদম রগের ওপর থুতনির একটু নিচে। কিন্তু এটা অর্ণব দেখলো কি করে?
“তোমার তিলটা একটু ছুঁয়ে দেই?
তন্নি কাঁপতে শুরু করে। কি জবাব দেবে? না বলবে? অবশ্যই না বলা উচিত। কিন্তু তন্নির গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। অর্ণব নিজের সিট বেল্ট খুলে ফেলে৷ তন্নির দিকে খানিকটা চেপে বসে।
অতঃপর গাড়ির লাইট নিভিয়ে চট করে ঠোঁট ছোঁয়ায় তন্নির গলায়। কয়েক সেকেন্ড সময় নেয়। এবং নিজের সিটে বসে পড়ে। গাড়িও চালাতে শুরু করে।
তন্নি চোখ মুখ খিঁচে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। শ্বাস নিতে যেনো ভুলেই গেছে। কি হয়েছে আন্দাজ করতে হচ্ছে। সত্যিই কি কিছু হয়েছে? এই তো মনে হলো গলায় ঠান্ডা ভেজা কিছু ছুঁয়ে গেছে।

” শ্বাস টানো ইডিয়েট
বলে অর্ণব। তন্নি শ্বাস টানে। গলায় হাত চেপে ধরে আছে। নাক ফুলিয়ে বলতে যায়
“আ..পনি আমাকে
” হুমম আমি তোমাকে?
বাকিটা শেষ করো।
তন্নি বলে না। গাল ফুলিয়ে আবারও বাইরের দিকে নজর দেয়। বাঁকা হাসে অর্ণব।
“তোমার তিলটা নস্টালজিক বানিয়ে দেয় আমায়।
বাই দ্যা ওয়ে কখনো যেনো মাথা থেকে ওড়না না সরে।
তন্নি কথা বলে না। অর্ণব কিছু একটা চিন্তা করে আবারও গাড়ি থামিয়ে ফেলে। তন্নি নাক মুখ কুঁচকে তাকায় অর্ণবের দিকে।

” দেখুন
অর্ণব গালে হাত দিয়ে তন্নির দিকে তাকিয়ে বলে
“দেখাও
তন্নি ফোঁস করে শ্বাস টেনে চুপ করে যায়।
” নেক্সট ওয়েক এ এসে দেখবো। আপাতত বলে আমি বেশি সুন্দর না কি সাকিব খান বেশি সুন্দর।
কপালে ভাজ ফেলে অর্ণবের দিকে তাকায় তন্নি। রাত বাজে সাড়ে ৯ টা। একটু পরেই ১০ টা বেজে যাবে। আর এই লোকটা মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বিচার করছে কে বেশি সুন্দর।
“আমি সাকিব খানকে চিনি না। আর আপনাকেও দেখি নি। তাই বলতে পারলাম না।
গাল ফুলিয়ে জবাব দেয় তন্নি। অর্ণব পকেট থেকে ফোন বের করে। সাকিব খানের একটা পিকচার বের করে তন্নির সামনে ধরে

” এটা সাকিব খান।
অতঃপর নিজের একটা পিকচার দেখিয়ে বলে
“এটা আমি
তন্নি বলে
” আপনি বেশি সুন্দর। এবার দয়া করে আমাকে দিয়ে আসুন। মা আজকে আমাকে মেরেই ফেলবে
মুখ বাঁকায় অর্ণব।
“আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখলে যাবো। নাহলে এখানেই রাতটা কাটিয়ে দিবো।
বলতে বলতে তন্নি ছোট হাত খানা নিজের হাতের মুঠোয় নেয় অর্ণব। তন্নির ছোটছোট আঙুলের ভাজে নিজের আঙুল গলিয়ে দেয়।
তন্নি কিছু বলে না।

রাস্তা খুব বেশি না হওয়াতে চলে আসে তন্নিদের বাড়ির সামনে। গাড়ি থামিয়েছে কিন্তু তন্নির হাত ছাড়ছে না অর্ণব।
“স্কুলে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখলে ছেলেটাকে খু ন করবো আমি। আর তোমার সাথে বিয়ে ছাড়াই বাসর করবো।
বাসর বুঝো তো?
না বুঝলে গুগলে সার্চ দিয়ে জেনে নিও।
তন্নি মাথা নারিয়ে সম্মতি দেয়।
” তোমার ছোট্ট মাথায় কথা গুলো ঢুকিয়ে দিয়ে।
বলতে বলতে আবারও ঠোঁট ছোঁয়ায় তন্নির গলায় তিলটার ওপর। এবার হালকা করে নয়। খানিকটা সময় নিয়ে গভীর ভাবে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২

অতঃপর হাত ছেড়ে দেয়। তন্নি যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো। এক লাফে নেমে যায় এবং এক দৌড়ে বাড়ির ভেতরল ঢুকে যায়।
অর্ণব তন্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে
“মায়াবতী বড় হওয়ার সুযোগ দিতে পারবো না আমি। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিবো। বিয়ের পর দুজন এক সাথে বড় হবো।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪