রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩১

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩১
সিমরান মিমি

“লাস্ট বারের মতো আপনাকে সাবধান করছি পাভেল ভাই।এই মুহুর্তে যদি আপনি আমার ফোন রিসিভড না করেন তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।এক্ষুনি সিম ভাঙবো,মোবাইল ভাঙবো,তারপর সোজা ঢাকা চলে যাবো।এরপর একশোটা ছেলের সাথে প্রেম করবো।”

স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলো পাভেল।সামনেই পরশ তার দিকে সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চমৎকার সকাল।আর এই চমৎকার আবহাওয়াকে খুব ভোর বেলায় গায়ে মাখিয়ে উঠে পড়েছে পুরো শিকদার পরিবার।খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই।প্রথম দিকের খানিকক্ষণ সময় নিরবতা থাকলেও ধীরে ধীরে টুকটাক কথায় এখন তা বিশাল এক আলোচনার সভা হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর এই মুহুর্তে আলোচনার বিষয়বস্তু ক্লিয়ার।এই যে আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পাভেল এবং পুরবীর বিয়েটা করিয়ে রেজিস্ট্রি করিয়ে রাখা হবে।আর এ ব্যাপারে স্বয়ং পুরবীর বাবাই মত দিয়ে রেখেছে।তিনি পাভেল কে অত্যন্ত পছন্দ করেন। তাছাড়া পরশের সাথে বিয়ে ভাঙার পর থেকে তার স্ত্রী সারাদিন বিলাপ করছেন।ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হবে এই শঙ্কায়।তাছাড়াও ছেলে-মেয়ের মত পাল্টাতে দেরি হবে না।যেকোনো সময় এদের মধ্যে দ্বিমত হতে পারে।আর এছাড়াও সে তো আর এক্ষুনি মেয়ে দিয়ে দিচ্ছে না।এখনো চার/পাঁচ বছর পর দেবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলতে গেলে বাড়ির প্রত্যেকেই রাজী।সবাইই এই বিষয়ে কথা বলছে।এর মধ্যেই আর্শি অনবরত কল দিয়ে চলেছে।বার বার কেটে দেওয়া সত্ত্বেও সে কল দিয়ে চলেছে।কিন্তু তার পরেও ফোন না ধরায় রীতিমতো সে মেসেজে হুমকি দিয়ে চলেছে।
পরশ একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে পাভেলের দিকে।এরপর গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ফোন কেটে দিচ্ছিস কেন?কে ফোন দিয়েছে?”
চমকে উঠলো পাভেল।আমতা-আমতা করে বললো,
“তেমন কেউ না।পরে কথা বলে নেব।ইম্পর্ট্যান্ট কল না।”
পরশ সন্দেহী দৃষ্টি সরালো না।পুনরায় গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তাহলে এটাই ঠিক।আগামী শনিবারে তাহলে কাজি ডেকে নিয়ে বিয়েটা পড়িয়ে রাখা হোক।”
হুট করে দাঁড়িয়ে পড়লো পাভেল।তড়িৎ কন্ঠে বললো,

“সম্ভব না।আমি এখন বিয়ে টিয়ে করবো না।আগে ভাইয়ের বিয়ে হোক,তারপর।আগে আমি বিয়ে করলে সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে।টিটকারি মারবে।”
“এখনই তো আর বড় করে বিয়ে হচ্ছে না।আর কেউ জানছেও না।শুধু রেজিস্ট্রি টা করা হোক।এরপর বছর কয়েক পর না হয় জানাবো।প্রয়োজনে পরশের বিয়ের পর লোক জানাজানি করে অনুষ্ঠান করবো।”
বাবার কথা শুনে হতাশ হয়ে বসে পড়লো। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লো।এরপর সোজাসাপটা দাঁড়িয়ে বললো,
“দেখো,আমার এসব বাড়াবাড়ি মোটেই ভালো লাগছে না।আমি বিয়ে করতে চাইছি না মানে এটাই ফাইনাল।আশ্চর্য! ছেলের কি অভাব পড়েছে?মানে একজ নের পর একজন কে চেপে ধরতেই হবে ফুপির।আমি পুরবীকে বিয়ে করতে পারবো না।”

রেগে গেলেন আমজাদ শিকদার।ছেলের দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তোমার কি মনে হয় তুমি বিয়ে না করলে আমার ভাগ্নির বিয়ে হবে না?তুমি এতটাই যোগ্য।আমার বোন তোমাদের দু ভাইকে ছেলের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে।নিজের মেয়েটাকে এই পরিবারে দিতে চাইছে ওর বিশ্বাসের কারনে।অথচ তোরা দুই ভাই এমন ভান করছিস যেন আমার ভাগ্নিকে কেউ বিয়ে করবে না তাই তোর গলায় ঝুলিয়ে দিতে চাইছে।লাগবে না বিয়ে।আমি বারন করে দিচ্ছি ওদের।”

বলার সাথে সাথেই কোনোরুপ রিয়্যাকশন না দিয়ে উপরে চলে গেল পাভেল।রুমের মধ্যে ঢুকতেই ফোন হাতে নিলো।পরিচিত নাম্বার টিতে কল দিতেই ওপাশ থেকে রিসিভড হলো।মুহুর্তেই ঝাঁঝালো কণ্ঠে পাভেল বললো,
“সমস্যা কি তোমার?বলেছি না যখন তখন ফোন করবা না আমার নাম্বারে।আমি অফিসে থাকি,ভাইয়ের কাছে থাকি, বাড়িতে থাকি,বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে ব্যস্ত থাকি এটুকু মাথায় ধরে না তোমার?যখন ফোন কেটে দেই তখন আরো বার বার ফোন কেন দাও।মাথায় কি কিচ্ছু নেই।পুরোটাই কি ফাঁকা?”

বিছানা থেকে উঠে চুপটি করে ফোনের দিকে কান পেতে রইলো আর্শী।সে বুঝতে পারছে তার পাভেল ভাই রেগে গেছে।এই মুহুর্তে তাকে সামলানো দরকার।নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
“ফাঁকা কেন থাকবে পাভেল ভাই।পুরো মগজ টা জুড়েই তো আপনি থাকেন।”
বিরক্ত হলো পাভেল।দুম করে শুয়ে পড়লো খাটে।ক্ষোভ নিয়ে বললো,
“প্রেম করাকালীন প্রেমিকাদের বিয়ের কথা আলোচনা হয়।সেই বিয়ে কি করে ভাঙবে সেই চিন্তায় থাকে প্রেমিক।অথচ আমার বেলায় উলটো।তুমি কি কখনো শুনেছো প্রেমিক দের বিয়ের কথা আলোচনা হয়।ওরা রীতিমতো আমাকে ব্লাকমেল করছে বিয়ের জন্য।”
হাসলো আর্শী।অস্ফুটস্বরে বললো,

“বাহ!দারুন তো।এটা তো ভীষণই এডভেঞ্চার টাইপের।কিন্তু আমি মোটেও চিন্তিত নই পাভেল ভাই।কারন এখানে আমি আপনার বিয়ে ভাঙতে একদমই কোনো কাজ করবোনা।যা দায় দায়িত্ব আপনার।এমনিতেই এতোগুলো দিন প্রেম করেছি কি সাধে সাধে।অনেক টায়ার্ড আমি।এবারে যা করার আপনিই করুন।”
পুনরায় বিরক্ত হলো পাভেল।হতাশ কন্ঠে বললো,
“তুমি কি আদোও পরিস্থিতি বুঝতে পারছো আর্শি।আ’ম সিরিয়াস।ভাই নিজেও আমাকে ইদানীং বেশ শাসনে রাখছে।একপ্রকার মেয়েদের মতোন লুকিয়ে লুকিয়ে তোমার সাথে কথা বলতে হচ্ছে।”
মুহুর্তে ই খুট করে দরজা খোলার আওয়াজ এলো।পাভেল পিছু ঘুরে দেখতেই চমকে উঠলো।পরশ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।ফোনটাকে এক হাত দিয়ে পেছনে নিয়ে আস্তে করে কেঁটে দিলো ফোন।কিন্তু পকেটে আর ঢোকাতে পারলো না।এরমধ্যেই খপ করে ধরে ফেললো হাত।ফোনটাকে নিজের হাতে নিয়ে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো ভাইয়ের দিকে।বললো,

“আর্শী কে?”
পাভেল আড়চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে পুনরায় ফ্লোরে তাকালো।তার নিরবতা দেখে পরশ আবারো ধমকে বললো,
“এই আর্শীই কি আর্শীয়া সরদার? আমি জানতে চাইছি।”
প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও এবারে শিরদাঁড়া উচু করে দাঁড়ালো।শান্ত কন্ঠে বললো,
“হ্যাঁ, শামসুল সরদারের মেয়ে।আমি ওকে পছন্দ করি।ইনফ্যাক্ট আমরা রিলেশনেও আছি বেশ কিছুদিন ধরে।আশা করি তুই এর মধ্যে আমাকে শাসন করতে আসবি না।অন্তত এই এক জায়গায় আমাকে স্বাধীনতা দে।আমি পুরবী কে বিয়ে করবো না।করতে হলে আর্শী কেই করবো।”

মুহুর্তেই ঠাস করে থাপ্পড় পড়লো গালের উপর।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো পাভেল।বিশ্বাস হলো না যেন।পরক্ষণেই ফোন টাকে ধরে দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারলো।উপরের গ্লাসগুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ধরা দিলো পাভেলের কাছে।হুংকার ছেড়ে উঠলো এবারে।পাশ থেকে টেবিল টাকে ছুড়ে মেরে ক্ষোভ নিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
“একদম কোনো খবরদারি করবি না আমার সাথে। আমি বাইরে তোর সেক্রেটারি হলেও বাড়িতে কিন্তু নই।তোর সব আদেশ মেনে বসে থাকবো না আমি।আমার পছন্দ হয়েছে আমি প্রেম করবো।ব্যস!
পরশ দাঁতে দাঁত কামড়ে পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো,

“গলার আওয়াজ নিচু কর।টিপে মেরে ফেলবো শু*য়ো*রে*র বা*চ্চা।তুই এত্তো মেয়ে রেখে ওই সরদার বাড়ি ঢুকলি কেন?শামসুল সরদার জানলে তোর মাথা দুভাগ করে সদরে দাঁড়িয়ে থাকবে।লাস্ট বারের মতো সাবধান করছি আমি।এরপর সোজা খুন করে ফেলবো।তবুও সরদার দের হাতে তোকে মেরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকবো না।”
ইতোমধ্যে বাড়ির সকলে উপস্থিত হয়ে গেছে।আমজাদ শিকদার পরিস্থিতি ভয়ানক দেখে বড় ছেলেকে ঝাপটে ধরে বাইরে নিয়ে গেলেন।পিয়াশা ছোট ছেলেকে বোঝাচ্ছে অনবরত। কিন্তু পাভেল কিচ্ছু মানছে না।চিৎকার করে সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলো।এরপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেল ফোনের দিকে।ফোন টা ভেঙে গেছে পুরোপুরি।পরপর তিনবার দেয়াল থেকে ফ্লোরে পড়েছে ধাক্কা খেয়ে।প্রথমে দেয়ালে ছুড়লে ফোনটা টেবিলে পড়ে এরপর পুনরায় ফ্লোরে পড়ার কারনে ডিসপ্লে চলে যায়।অস্থির হয়ে উঠলো পাভেল।ফোন টাকে বারকয়েক দেখার পর আশাহত হলো।তার প্রিয় মোবাইল এটা।রাগে,ঘেন্নায়,ক্ষোভে পুনরায় ছুড়ে মারলো দেয়ালের দিকে।হন্নে হয়ে খুঁজতে লাগলো পারসোনাল ফোন টা।
আর নয়।অনেক সহ্য করেছে।অনেক আদেশ মেনেছে।এতটা পরাধীনতা আর ভালো লাগছে না।সিম ঢুকিয়ে কল লাগালো পরিচিত নাম্বার টাতে।

রাত প্রায় সাড়ে এগারো টা। আশপাশ টা নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে।দূর থেকে আসা নিশাচর প্রানী গুলোর আওয়াজ ভয়ংকর ঠেকছে।হাতে পিৎজার প্যাকেট টা নিয়ে মেয়ের রুমের দিকে পা বাড়ালেন শামসুল সরদার।মাত্রই সে বাড়িতে আসলো।কিছু দলীয় কাজে বরিশাল গিয়েছিলো সেই সকালে।মেয়ে তার সকালেই বায়না ধরেছে বিভাগীয় বড় রেস্টুরেন্টের পিৎজা খাবে।রুমের দরজা ভেড়ানো।আলতো হাতে খুলতেই অবাক হলো।ভেতরে আর্শী নেই।বারকয়েক ডেকে পুনরায় নিচে নামলো।মনে হয় বাথরুমে আছে।সোফায় বসতেই সোনালী নেমে এলো।সে খাবার দিতে এসেছে ভাসুর কে।
শামসুল সরদার খেতে খেতে বললেন,

“আর্শী কি খেয়েছে?”
মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো সোনালী।বললো,
‘নাহ,অনেক ডেকেছি।বললো ঘুম পাচ্ছে।সে খাবে না।তাই আর বিরক্ত করি নি।’
চমকে গেলেন শামসুল।বললেন,
“কই রুমে তো ও নেই।জেগে গেছে হয়তো।ডেকে নিয়ে আসো তো।বলো ওর জন্য পিৎজা এনেছি।”
সোনালী উপরে গেল।মিনিট খানেকের মধ্যেই আবার ফিরে এলো।উৎকন্ঠা নিয়ে বললো,
“ভাইজান,ঘরে তো দেখছি না ওকে।বাথরুমেও নেই।”

অবাক হয়ে খাবার ছেড়ে উঠলো। হাত ধুয়ে ছাদের দিকে ছুটলো।কিন্তু সেখানেও নেই।একে একে চিৎকার করে ডাকায় পুরো সরদার বাড়ির সবাই জেগে গেল।কিন্তু সারা বাড়ি খুজেও পেল না আর্শিকে। ফোন ও বন্ধ।
গেটের দিকে ছুটলো জিহান।দারোয়ান ও কিছু জানে না।সন্ধ্যার পরে গেটের কাছে যায় নি ইশি।দিশেহারা হয়ে গেল পুরো পরিবার।এতো রাতে কোথায় যাবে তাদের ছোট্ট মেয়েটা।জিহান দারোয়ান কে নিয়ে বেরিয়ে গেছে বাড়ির সীমানার বাইরে খুঁজতে।কিন্তু আধ ঘন্টা পর ক্লান্ত হয়ে ফিরেও খোঁজ দিতে পারলো না আর্শির।
মাথা শূন্য হয়ে গেল শামসুল সরদারের।দ্রুত হাতে ফোন লাগালো স্পর্শীর ফোনে।মাত্রই শুয়েছিলো সে।রাত সাড়ে বারোটার সময় বাবার থেকে কল পেয়ে অবাক হয়ে গেল।দ্রুত রিসিভড করে কানে নিতেই স্তব্ধ হয়ে গেল।চিৎকার করে বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩০

“খুঁজে পাচ্ছো না মানে?কোথায় গেছে ও?বাড়ির সবাই কোথায় ছিলা?ও কি রাতে বাইরে বের হয়েছিলো?আশ্চর্য! ও ওখানকার কিচ্ছু চেনে না।দ্রুত লোক লাগাও।খোঁজো ওকে।আমি আসছি।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩২