এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫
তানিশা সুলতানা

তন্নির বুক কাঁপছে। হাত পাও মৃদু কাঁপছে। নিঃশ্বাস এলোমেলো হয়ে আসছে। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখের কোণেও টলমল করছে এক বিন্দু পানি। তামিম তাকে টানতে টানতে নিয়ে এসেছে মারামারি জায়গায়। ইতোমধ্যে ভিড় জমে গেছে। চেয়ারম্যান এর ছেলে পেলে চলে এসেছে। অর্ণবকেও আঘাত করেছে। এতো গুলো ছেলেপেলের সাথে অর্ণব পেরে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। তবুও থামছে না।
অর্ণবের বন্ধুবান্ধবও ভিড় জমিয়েছে এখন। তারা অর্ণবের হয়ে লড়ছে।
অতঃপর পুলিশ নিয়ে হাজির হয় আনোয়ার চৌধুরী। পুলিশ আহতদের হাত কড়া পড়ায়। আনোয়ার অর্ণবকে জড়িয়ে ধরেন। ভয়ে তিনি সিঁটিয়ে গিয়েছেন। অর্ণব বাবাকে আগলে নেয়। ঠোঁটের কোণা বেয়ে রক্ত ঝড়ছে তার। কপালেও কেটেছে খানিকটা।

তন্নি ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। রক্ত দেখলেই সে ভয় পায়। সেখানে এভাবে মারামারি দেখে তার কলিজা লাফাচ্ছে।
অর্ণবের নজর পড়েছে তন্নির মুখপানে। চোখে পানি দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে অর্ণব। মেয়েটা ঠিক কেনো কাঁদছে? “চেয়ারম্যান এর ছেলেকে মেরেছে বলে? এতো দরদ ওই ছেলের প্রতি?
এমনিতে অর্ণবের রাগ নেই চেয়ারম্যান এর ছেলের প্রতি। কিন্তু গতকাল পাড়ার একটা ছেলে অর্ণবকে খবর দিয়েছে ” চেয়ারম্যান এর ছেলে তন্নিকে পছন্দ করে। এবং নাম্বার লিখে তামিমকে দিয়ে পাঠিয়েছিলো”
তখন থেকেই মাথা গরম অর্ণবের। ইচ্ছে ছিলো চেয়ারম্যান এর ছেলের হাত দুটো কে টে দেওয়ার। কিন্তু এটা করতে পারলো না বলে বেশ আফসোসও রয়েছে অর্ণবের।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আনোয়ার ছেলেকে সুস্থ দেখে খানিকটা স্বাভাবিক হয়। জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস টেনে নেয়। অর্ণবের বন্ধু আকাশ, নাবিল, শুভ সকলেই দাঁড়িয়ে আছে অর্ণবের পাশে।
অর্ণব চোয়াল শক্ত করে দু পা এগিয়ে যায়। তামিমের আলু ভাজা খাওয়া শেষ। সে আপাতত আঙুল চাটছিলো।
অর্ণব বলে ওঠে
“তামিম এখানে কি? বাসায় যাও?
বলেছে ঠিক তামিমকে কিন্তু কেঁপে উঠেছে তন্নি। তারাহুরো করে চোখের পানি মুছে ফেলে। দু পা পিছিয়ে নিজেকে আড়াল করার প্রয়াস চালায়। কিন্তু সফল হয় না।
আনোয়ার খেয়াল করে ওদের। আলতো হেসে বলে

” তন্নি মামনি তামিমকে নিয়ে বাসায় যাও।
তন্নি মাথা নারিয়ে তামিমের হাত খানা শক্ত করে ধরে হাঁটতে শুরু করে। আবছা আবছা কানে আসে
“তামিম সন্ধ্যায় তোমাকে আমাদের বাড়িতে দেখতে চাই।
তন্নি ঠিক বুঝতে পারে না। তামিম কি করে সন্ধ্যায় ওনাদের বাসায় যাবে।
তামিম হাত নারিয়ে বলে
” ঠিক আছে বস।
চলে যাবো।
তন্নির খুব করে ইচ্ছে করছিলো পেছন ঘুরে তাকাতে। রক্তাক্ত ঠোঁট খানা দেখতে। কিন্তু সাহস তো হাঁটুর নিচে।

তিন লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে চেয়ারম্যানকে। টাকা না দিয়ে চেয়ারম্যান মামলা ঠুকে দিবে। ভীষণ রেগে আছে আনোয়ার। অফিসের কাপড় এখনো পাল্টায় নি। তিনি সোফায় বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অর্ণবের দিকে। অর্ণব মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর্থি পায়ে ঔষধ লাগিয়ে দিচ্ছে। আর অথৈ ঠোঁটে। দুই বোনের চোখেই পানি।
আশা বেগম আঁচলে চোখ মুছছে আর ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আনোয়ার এবার প্রশ্ন করে
“মারামারি কেনো করেছো?
অর্ণব ভনিতা ছাড়াই জবাব দেয়

“ওকে জানে মেরে ফেলি নি এটাই ভাগ্য ওর। ওই মাদার****** চোখ তুলে নিতে পারলে শান্তি পেতাম।
হকচকিয়ে যায় আনোয়ার। ছেলে তার বরাবরই উগ্র। তবে এটা তিনি জানে কারণ ছাড়া তার ছেলে এতোটা বেপরোয়া হয়ে ওঠে না। তবে কারণটা তিনি জানতে চায়।
“কথা বলে ঝামেলা মেটানো যেতো না?
অর্ণব উঠে বসে। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে জবাব দেয়
” মন্দ বলো নি।

চোখ দুটো তুলে নিয়ে কথা বলে ঝামেলা মেটানো বেটার অপশন। নেক্সট টাইম এপ্লাই করবো।
বলতে বলতে নিজ কক্ষের দিকে চলে যায় অর্ণব।
আনোয়ার নিজের কপাল নিজে চাপকায়। এই ছেলে কবে জানি তার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে।
অথৈ চলে যায় অর্ণবের পিছু পিছু। ঠিক জানে তার ভাইয়ের এখন তাকে প্রয়োজন। তন্নিকে কল করতে বলবে। লাউড স্পিকারে দিয়ে অথৈ কথা বলবে আর অর্ণব শুনবে।
অথৈ অর্ণবের রুমে পা রাখতেই অর্ণব বলে ওঠে
“সোনা আর্থিকে ডেকে আন।
অথৈয়ের মুডটা খারাপ হয়ে যায়। বরাবরই সেই হেল্প করে আসছে তার ভাইকে। এর জন্য কমিশনও পায় অথৈ। এতো এতো চকলেট কসমেটিকস ফোনের কভার সব এনে দেয় অর্ণব৷ এবার থেকে আর্থিকে ভাগে রাখলে তো অথৈ অর্ধেক পাবে সব।

অথৈ গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে যায়। আর্থিকে গিয়ে বলে অর্ণব ডাকছে। এবং সে চলে যায় কফি বানাতে।
আর্থি অর্ণবের রুমে যায়।
শার্ট খুলে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে সিগারেট টানছে অর্ণব।
” দাভাই কি বলবে?
আধখাওয়া সিগারেট ফেলে দেয় অর্ণব৷ স্পাইডের বোতল হাতে তুলে দুই মোচরে মুখা খুলে ফেলে এবং ঢকঢক করে গিলে ফেলে পুরোটা। অতঃপর বোতল ফেলে এগিয়ে যায় আর্থির,দিকে।
“আমি দুই দিনের জন্য অথৈয়ের তন্নিকে নিয়ে বেরুতে চাই। ম্যানেজ করে দে।
শুকনো ঢোক গিলে আর্থি। এই কাজ করবে কি করে?

” কালকেই বেরিয়ে পড়বো। তোর ফোন নিয়ে আয়। আমার সামনেই কল করে ম্যানেজ করবি। আর হ্যাঁ অথৈকে বলবি না।
আর্থি মাথা নারিয়ে চলে যায়।
অর্ণব পকেট থেকে ফোন বের করে ডায়াল করে কোনো একটা নাম্বারে। রিং হওয়ার সাথে সাথেই রিসিভ হয়।
“মামা তোমাদের বউমাকে নিয়ে আসছি কাল। মামিকে জানিয়ে রেখো।
ওপাশের মানুষটিকে কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে কল কাটে অর্ণব।

তারেক রহমান প্রচন্ড রেগে আছে। তার রাগের কারণ হচ্ছে অর্ণব। বড়লোকদের বড়বড় কারবার। ইচ্ছে হবে কাউকে বিনা অপরাধে বেদম পিটাবে এবং মোটা টাকা ঘুস দিয়ে পুলিশের মুখ বন্ধ করে দিবে।
বড়লোকদের জন্য সাধারণ মানুষদের বেঁচে থাকাই কষ্ট কর হয়ে গেছে।
তন্নি এবং তামিম বই নিয়ে বসে আছে। এখন বই রেখে উঠলে বাবা দিবে এক ধমক। ওই দিকে অর্ণবের জন্য চিন্তাও হচ্ছে তন্নির। মানুষটা যতই তন্নির শত্রু হোক তারপরও একটা মায়া কাজ করে। তাছাড়া মানুষটা আঘাত পেলে অথৈ ভীষণ কষ্ট পায়।

তন্নির এসব ভাবনা চিন্তার মাঝে তারেক রহমানের ফোন বেজে ওঠে। ফোনে নিউজ দেখছিলেন তিনি। কল আসাতে একটু বিরক্তই হয়। সেভ করা নাম্বার। চৌধুরী বাড়ি হতে কল এসেছে।
রাগ দমিয়ে কল রিসিভ করে তারেক।
আর্থি সালাম জানিয়ে খবরাখবর জিজ্ঞেস করে অতঃপর বলে ফেলে
” আংকেল আ…আমি নানুবাড়ি বেড়াতে যাবো। তন্নিকে সাথে নিতে চাচ্ছি। প্লিজ অনুমতি দিবেন?
তারেক স্পষ্ট গলায় বলে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪

“সরি মা। তন্নি যাবে না। ভালো থেকো। সময় করে বেড়াতে এসো।
বলেই কল কেটে দেয় তিনি৷
আর্থি শুকনো ঢোক গিলে তাকায় অর্ণবের মুখপানে।
” ওই শা*লার নাকের ডগা দিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে যাবো আমি।
“দাভাই শশুরকে শা*লা বললে তো মেয়ে দিবে না।
” তার অনুমতি নিবে কে? জাস্ট তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৬