এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৬
তানিশা সুলতানা
ফেব্রুয়ারী মাসটা একটু বেশিই সুন্দর। বসন্তের আমেজ দেখা যায়। গাছে গাছে ফুল, নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা।
ভালোবাসার মাসও এটাকে বলা চলে। এই মাসটা তন্নির ভীষণ প্রিয়। এই মাসের ১৪ তারিখ জন্ম হয়েছে তার। তন্নি অথৈয়ের থেকে জেনেছিলো ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখ অর্ণবের জন্মদিন।
ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখ আজকে। তন্নির ঘুম ভাঙে বাবার চেঁচামেচিতে। বেরুতে হবে তার কিন্তু এখনো রান্না শেষ হয় নি৷ এটা নিয়েই তার হম্বিতম্বি। তন্নি আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। নরম তুলতুলে বিলাই জুতো জোড়া পায়ে চাপিয়ে জানালা খুলে দেয়। এক ফালি মিষ্টি রোদ তন্নির চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ে। মুহুর্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে৷ চোখ বন্ধ করে সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখতে থাকে। ভালো লাগায় মন ছুঁয়ে যায়
স্কুলে যেতে হবে তাকে। তাই বেশিখন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।
দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়। তারেক খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে। প্রতিদিন সকাল এবং রাতের খাবারটা তিনি ছেলেমেয়ের সাথে খায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তন্নি এবং তামিম বসতেই খেতে শুরু করেন তারেক।
স্কুল ড্রেস পড়ে, সাদা হিজাব দিয়ে মাথা ঢেকেছে তন্নি। জুতো জোড়া পায়ে চাপিয়ে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে পড়ে। ইতি বেগম তামিমকে স্কুলে দিতে গিয়েছে বিধায় তাকে বলে যেতে পারে না৷
গেইট পেরিয়ে মেইন রোডে পা রাখতেই কালো রংয়ের গাড়ি খানা চোখে পড়ে তন্নির। মুহুর্তেই কাচুমাচু হয়ে যায়। কাঁধ থেকে ব্যাগ খুলে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে মাথা নিচু করে ফেলে। মনে মনে ভাবতে থাকে “এই লোকটা আজকেও যায় নি?”
গাড়ির কাছাকাছি যত এগোচ্ছে তন্নির পা জোড়া ততো কাঁপতে থাকে। যেনো তার পা বেঁকে যাচ্ছে। মাঝ খান থেকে ভেঙে যাচ্ছে। যেকোনো মুহুর্তেই ঠাসস করে পড়ে যায়। কি যে একটা অবস্থা। নিজের ওঠে নিজেই বিরক্ত তন্নি।
কালো গ্লাস নামিয়ে ফেলে অর্ণব। গম্ভীর চোখ দুটো তন্নির দিকে অবদ্ধ করে।
এতে তন্নির কাঁপা-কাঁপি আরও বাড়তে থাকে। না তাকিয়েও বুঝতে পারে অর্ণবের ধাঁড়ালো দৃষ্টি। তন্নি মনে মনে ভেবে নেয় একদম তাকানো যাবে না। মানে মানে করে কেটে পড়তে হবে।
চোখ মুখ খিঁচে গাড়ির পাশ কাটিয়ে তন্নি চলে যাবে সেই মুহুর্তে গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে
“গাড়িতে উঠো।
তন্নির পা জোড়া থেমে যায়। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। যেনো এই মুহুর্তে চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেছে। খানিকটা সময় নিয়ে চোখ খুলপ তন্নি। জীভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে অর্ণবের দিকে ঘুরে। অর্ণবকে বেশ ধৈর্যশীল দেখাচ্ছে। সে কোনো তাড়া দিচ্ছে না তন্নিকে। বরং শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে।
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে রিনরিনিয়ে জবাব দেয়
“ ক….ক্লাস টে….স্ট এক্সাম আছে আমার। যেতে হবে।
দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে ফেলে অর্ণব। সাহস দেখে খানিকটা রাগ হয় অর্ণবের। ধমকে বলে ওঠে
“মুখে মুখে তর্ক করছো?
মাঝেমধ্যে তন্নির ইচ্ছে করে পৃথিবী থেকে বিলিন হয়ে যেতে। মানুষ এমন কিভাবে করতে পারে?
চোখে পানি জমে তন্নির। কখন তর্ক করলো সে? শুধু জানালো এক্সামের কথা।
“এই মেয়ে তোকে লাস্ট বার গাড়িতে উঠতে বলছি।
তন্নি চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে বসে পড়ে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে একদম কথা বলবে না। যেখানে খুশি নিয়ে যাক বা কেটে ফেলুক।
অর্ণব আড়চোখে এক পলক দেখে নেয় তন্নির টকটকে লাল খানা। চোখে পানি টলমল করছে ঠিক আছে। তাই বলে এই টুকু সময়ের মধ্যে নাকও লাল হয়?
ইন্টারেস্টিং বিষয়টা। অর্ণব ঠোঁট বাঁকিয়ে ঝাঁকড়া চুলে হাত বুলায়। অতঃপর নরম গলায় বলে
“সিট বেল্ট আমি বেঁধে দিবো?
তারাহুরো করে সিট বেল্ট লাগায় তন্নি। দুই গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। সেটাও হাতের উল্টো পিঠে মুছে ফেলে। অর্ণব বাঁকা চোখে এক নজর দেখে গাড়ি চালাতে শুরু করে।
তন্নি একটু পরপর হাত ঘড়ি দেখছে। দশটায় এক্সাম শুরু হবে। এখন বাজে নয়টা পঁয়ত্রিশ। গাড়ি কোন দিকে যাচ্ছে এটাও বুঝতে পারছে না তন্নি৷ যেদিকে যাক এট লিস্ট স্কুলের দিকে যাচ্ছে না। কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ফিরে এসেছে সে।
জিজ্ঞেস করলেই দেবে একটা ধমক।
এতোখনে তন্নির নজর পড়ে অর্ণবের ঠোঁটের দিকে। কালো দাগ হয়ে আছে। কপালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো।
মনে মনে বলে তন্নি
“বেশ হয়েছে। হাত পা ভেঙে পড়ে থাকতে আরও বেশ হতো। পঁচা বেডা”
“দুধ খাও?
আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে চমকায় তন্নি। বড়বড় চোখ করে তাকায় অর্ণবের মুখের পানে।
“গরুর দুধ খাও না? তো উকিল বাপ তোমায় দুধ খাওয়ায় না?
তন্নি মাথা নারিয়ে জবাব দেয় “ হ্যাঁ”
“আজকে থেকে আর খাবা না।
তন্নি চোখ ছোট ছোট করে ফেলে। মুখ ফসকে বলেই ফেলে
“কেনো খাবো?
“আমি না করছি তাই।
এখন থেকে বড়দের খাবার খাবা। যাতে তাড়াতাড়ি বড় হতে পারো।
তন্নি একটু চিন্তা করে। বড়দের খাবার কি?
“দুধ তো বড়দের খাবার আমার বাবাও তো খায়।
অর্ণব গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকায় তন্নির দিকে। তন্নি শুকনল ঢোক গিলে মাথা নিচু করে।
“ তোমার বাপ তো বলদ। বলদ চিনো?
তন্নি রিনরিনিয়ে অভিমানের সুরে বলে
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৫
“আমার বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না। বলে দিলাম।
“বাজে কথা বলি নি তো। বলদ তো পুরুষ গরু। বলদ রা কিন্তু খুব কাজের। কি কাজের শুনবা?
তন্নি জবাব দেয় না। মুখ গোমড়া করে বসে থাকে। অর্ণব ফের বলে
“তোমার বাপ যদি বলে দুধ খেতে তুমি বলবা “ আমি বড় হয়ে গিয়েছি। দুধ খাওয়ার বয়স নাই”
মনে থাকবে?
তন্নি মাথা নারায়।