মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ১৭
ইয়াসমিন খন্দকার
অহনার মুখে এহেন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলে সুনীতি। সে ভাবতেও পারেনি তার প্রিয় বান্ধবী অহনা কখনো তাকে এভাবে বলতে পারে। সুনীতি বলে উঠল,
“অহনা! তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি? ভুলে গেলি আমাদের এত দিনকার বন্ধুত্ব?”
“চুপ, তোর মুখ থেকে আমি আমার নাম শুনতে চাইনা। তোকে তো আমি আমার বন্ধু ভেবেছি সবসময়। আর আজ এটা কি হলো?”
“এখানে আমার কি দোষ?”
“তোরই দোষ। তুই তোর মেয়েকে মানুষ করতে পারিস নি। তোর মেয়েকে শিক্ষা দিতে পারিস নি। ওহ, শিক্ষা দিতে পারিস নি বললে ভুল হবে। তোর মেয়েকে এটাই শিখিয়েছিস যে, কিভাবে অন্য মেয়ের কাছ থেকে তার ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে হয়।”
“মুখ সামলে কথা বল অহনা।”
“এতকিছুর পরেও তুই কিভাবে এটা বলছিস নীতি? নিজের মেয়েকে তো ডেংডেং করে সারজিসের গলায় ঝুলিয়ে দিলি। এতেও শান্তি পাসনি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুনীতি বলে উঠলো,”তুই আমাকে ভুল বুঝলি অহনা। কোন ব্যাপার না,এই সময় তোর মানসিক অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। আমারই উচিৎ হয়নি এখানে আসা।”
বলেই সে বেরিয়ে আসে। অহনা সেদিকে খেয়াল না করে আমায়রাকে বলে,”তুই একদম চিন্তা করিস না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই আছি তো তোর পাশে।”
আমায়রা একটু শান্ত হবার চেষ্টা করে কিন্তু তার মন মানতে চায়না।
সুনীতি আর এক মুহুর্ত এখানে অবস্থান করতে চায়না। কিন্তু তার মূল চিন্তা তার মেয়েকে নিয়ে। তাই তো রাহেলা খাতুনকে সাথে নিয়ে সারজিসের সামনে দাঁড়িয়েছে সুনীতি। সারজিসের উদ্দ্যেশ্যে বলল, “দেখো আমি বুঝতে পারছি বর্তমান পরিস্থিতিটা কেমন কিন্তু এটাও সত্য এই পরিস্থিতির জন্য তোমরাই দায়ী। তোমরাই সত্যটা গোপন করে রেখে আজ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছ যাতে সবাই তোমাদের ভুল বুঝছে। এমনকি তোমাদের জন্য আরো অনেক সম্পর্কই নষ্টের পথে। সেসব বাদ দাও, আমি যতটুকু বুঝেছি তোমাদের সংসার জীবন খুব একটা মসৃণ হবে না। প্রতি পদে পদে অনেক অপমান সইতে হবে। এসব সহ্য করেও কি তুমি আমার মেয়ের পাশে থাকবে? ওর হাত শক্ত করে আকড়ে ধরতে পারবে তো?”
সারজিস অভীক্ষার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”হ্যাঁ, পারব।”
সুনীতি নিশ্চিত হয়ে বলে,”আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম তোমার মুখ থেকে। এখন অনেকটা নিশ্চিত থাকতে পারব।”
অতঃপর সুনীতি অভীক্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”জীবন একটা পরীক্ষা ক্ষেত্র মামনী, এখানে তোমাকে প্রতিনিয়ত একের পর এক পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কখনোই হার মানলে চলবে না। এখান থেকে তোমার একটা নতুন যুদ্ধ শুরু হলো। আশা করি, তুমি আমায় আর নিরাশ করবে না।”
অভীক্ষা সুনীতিকে জড়িয়ে ধরে। দুই মা-মেয়ে অনেকক্ষণ কান্না করে। রাহেলা খাতুন অভীক্ষাকে বলেন,”সখী, তুই এখানে সবার সাথে মিলেমিশে থাকার চেষ্টা করিস। যতটা পারা যায় সবার সাথে ভালো ব্যবহার করিস। কেউ যদি তোর সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে তাহলে প্রতিবাদ করবি। আর সারজিস তোমার কাছে একটাই অনুরোধ, এখন যেমন করে আমার সখীর পাশে আছ ঠিক তেমনি থেকো।”
“আপনি কোন চিন্তা করবেন না দাদী,আমি সবরকম পরিস্থিতিতেই সুনীতির পাশে থাকব।”
সুনীতি ও রাহেলা খাতুন ফিরে যান। সবাই যাওয়ার পর একা রয়ে যায় সারজিস ও অভীক্ষা। সাজিদ তার কিছু বন্ধু ও রিলেটিভসদের ছেলে-মেয়েকে বলে,”তোমরা ওদেরকে ওদের রুমে নিয়ে যাও। আমি মুরুব্বি মানুষ তাই আমি তো আগ বাড়িয়ে কিছু করতে পারছি না। আর বাড়ির পরিস্থিতি তো দেখছই। আমি বাদে কেউই ওদের পাশে নেই।”
“জ্বি, আঙ্কেল। আমরা বুঝতে পারছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না আমরা সব কিছু দেখে নিচ্ছি।”
এই বলে তারা এগিয়ে আসে। কয়েকজন মেয়ে অভীক্ষাকে ঘিরে ধরে আর কয়েকজন ছেলে সারজিসকে। অতঃপর বলে,”চলো, তোমাদের নতুন সংসার জীবন শুরু করবে।”
বাসর ঘরে এসে বসানো হয়েছে অভীক্ষাকে। একটু পর সারজিস বাসর ঘরে প্রবেশ করলো। সারজিসকে দেখামাত্রই অভীক্ষা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,”আপনার সাথে আমার কিছু জরুর কথা আছে।”
“আমারও তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
“আমাকে প্লিজ তুমি করে বলবেন না।”
“আমাদের তো এখন বিয়ে হয়েছে, এখন তো আমাদের একে অপরকে…”
“শুনুন, মিস্টার সারজিস খন্দকার, এই বিয়েটা আমি করেছি বাধ্য হয়ে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে আমার কাছে এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। তবে আমি এই বিয়েটাকে অস্বীকার করবো না। আপনাকেও আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিতে হবে। তবে একটা কথা না বললেই নয়, আমি আপনাকে সেদিনই স্বামীর পরিপূর্ণ মর্যাদা দিবো যেদিন আপনার পরিবারের সবাই আমাদের বিয়েটাকে মেনে নেবে, আমায়রা আমাদের ক্ষমা করে দেবে। তার আগে নয়। এর আগে আমরা একে অপরকে আপনি বলেই সম্মোধন করব।”
“অভীক্ষা!”
“হুম, এটা নাহলে আমি প্রতি মুহুর্তে অপরাধবোধ এ ভুগব। দয়া করে আমার অনুরোধটা রাখবেন।”
সারজিস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”বেশ, তুমি মানে আপনি যা চান তাই হবে।”
এই বলে সারজিস একটা বালিশ হাতে নিয়ে বলে,”তো এখন আমি সোফায় শুই আপনি বিছানায়।”
“এর কোন দরকার নেই। আপনার সাথে বিছানা আমি শেয়ার করতেই পারি। আফটার অল, এটা তো আপনারই ঘর।”
সারজিস মুচকি হেসে বলে,”যেদিন আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হবে এটা সেদিনই সম্ভব। তার আগে নয়।”
এই বলে সারজিস সোফাই শুতে যাবে এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। সারজিস বালিশটা বিছানায় রেখে বলে,”কে?”
কিন্তু কোন উত্তর আসে না৷ দরজার ধাক্কার মাত্রা বাড়ে। সারজিস গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ইভাকে দেখতে পায়।
ইভাকে দেখে সারজিস বলে ওঠে,”মম, তুমি?!”
ইভা সারজিসকে উপেক্ষা করে বাসর ঘরে প্রবেশ করে। অভীক্ষাকে দেখেই তো তার মেজাজ গরম হয়ে যায়। ইভা ফুল দ্বারা সজ্জিত বাসর ঘরটা এলোমেলো করতে করতে বলে,”হবে না কোন বাসর! এই মেয়েকে আমি কিছুতেই তোমার স্ত্রীর অধিকার পেতে দেব না।”
বলেই ইভা অভীক্ষার হাত টেনে ধরে বলে,”এক্ষুনি বেরিয়ে যাও এই রুম থেকে। তোমার কোন অধিকার নেই এখানে থাকার।”
সারজিস এগিয়ে এসে বলে,”এবার কিন্তু তুমি সব সীমা অতিক্রম করছ মম। এসবের মানে কি?”
“মানে কি তুমি বুঝতে পারছ না? আমি আমায়রাকে তোমার বউ হিসেবে পছন্দ করেছি। তাই কিছুতেই এই মেয়েকে মানব না।”
“তোমার মানা না মানায় কিছু এসে যায়না মম। অভীক্ষা আমার স্ত্রী আর এটাই সত্য।”
বলেই সারজিস ইভার হাত ধরে টানতে টানতে তাকেই রুমের বাইরে বের করে দেয়। ইভা অবাক কন্ঠে বলে,”সারজিস!”
সারজিস ইভার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলে,”সরি, মম। কিন্তু তোমার পাগলামী থামানোর জন্য এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। তুমি নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নাও তাহলে শান্ত হতে পারবে।”
ইভার মাথায় আগুন জ্বলতে থাকে। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে,”এই অভীক্ষাকে আমি কিছুতেই তোমার স্ত্রী হিসেবে থাকতে দেব না। আমি ওর শেষ দেখে ছাড়ব।”
ইভা চলে যেতে নেবে এমন সময় তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে জরিনা ছুটে এসে বলে,”বড় ম্যাডাম, অনেক বড় কাণ্ড হয়ে গেছে!”
“আবার কি হলো?”
“আমায়রা ম্যাডাম বি*ষ খেয়েছেন। ছোট স্যার আর ছোট ম্যাডামা কাঁদতে কাঁদতে ওনাকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে গেল!”
সারজিস সবটাই শুনতে পায়। হতবাক হয়ে দরজা খুলে বলে,”কি বলছ তুমি এসব!”
“ঠিকই বলছি সারজিস স্যার।”
মন রাঙানোর পালা সিজন ২ পর্ব ১৬
ইভা বলে,”দেখলে তো আজ তোমার জন্য কি হলো! তোমাকে আমি দোষ দিচ্ছি কেন? সব দোষ তো ঐ অভীক্ষার। তোমাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেছে আর..”
সারজিস আর এসব শোনার প্রয়োজন মনে করল না। ঐ অবস্থাতেই হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো।