এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১১
তানিশা সুলতানা
ছয় মাস পেরিয়ে গিয়েছে। অর্ণবের সাথে তন্নির আর দেখা হয় নি। জীবন তার নিজ গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে দিন, মাস, তারিখ। কিন্তু বদলাচ্ছে না তন্নির অস্থিরতা।
খুব দেখতে ইচ্ছে করে অর্ণব নামক ওই নিষ্ঠুর পুরুষকে। ছলেবলে অনেকটা অথৈকে জিজ্ঞেস করেছে অর্ণবের কথা। অথৈ নিজেও ঠিকঠাক জানে না অর্ণব কবে ফিরবে। অথৈয়ের থেকে নাম্বার নিয়ে কলও করেছিলো তন্নি। পাষাণ মানব কল তুলে নি। মাঝেমধ্যে তন্নির বেশ কান্না পায়।
যদি এভাবে গায়েবই হয়ে যাবে তাহলে কেনো চুমু খেয়েছিলো?
সেই চুমুর জন্যই তো তন্নি তাকে ভুলতে পারে না। সামনাসামনি আবার দেখা হলে তন্নি কৈফিয়ত চাইবে।
অথৈও বদলে গিয়েছে৷ এই যে অথৈয়ের চুল গুলো কোমর ছাড়িয়েছে। এটাই অথৈয়ের পরিবর্তন। ক্লাস নাইনের পরিক্ষা শেষ করে নিউ টেন এ পদার্পণ করেছে তন্নি এবং অথৈ। তন্নিকে অথৈয়ের বাড়ি যেতে কড়াকড়ি ভাবে নিষেধ করে দিয়েছে তারেক। তবুও তন্নি লুকিয়ে অথৈয়ের বাড়িতে যায়।
আজকে পায়ে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে তন্নি তামিম এবং অথৈ। তারেকের প্রচুর কাজ থাকায় ছেলেকে স্কুলে দিয়ে যেতে পারে নি। আর ইতি বেগমের জ্বর এসেছে। অগত্যা তন্নিই নিয়ে এসেছে। ভাইকে স্কুলে দিয়ে সে তার স্কুলে চলে যাবে। তন্নি এবং অথৈ দুজনই স্কুল ড্রেস পড়ে মাথায় সাদা হিজাব বেঁধেছে। তন্নির মুখটা বরাবরের মতোই ভাড় হয়ে আছে। শক্ত করে হাত ধরে আছে তামিমের।
হাঁটতে হাঁটতে তামিম বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“অথৈ আপি
আমার বস কেনো আসছে না? আমি তার কাছে ফাইটিং শিখতে চাই।
অথৈ তামিমের চুলে হাত বুলিয়ে বলে
” আসবে আসবে
“কবে?
জানো আমার স্কুলে একটা ভম্বল আছে। যে আমাকে মারার হুমকি দেয়। আমি অবশ্য চুপচাপ আছি। ফাইটিং শিখে সরাসরি ওকে মেরে দিবো।
তামিম রহমান কথায় না কাজে বিশ্বাসী।
তন্নি চোখ পাকিয়ে তাকায় তামিমের দিকে। অথৈ হেসে বলে
” মারামারি করা ভালো না।
তামিম ঘোর প্রতিবাদের সুরে বলে
“খুব ভালো
বড় হয়ে মেয়র হবো আমি। মারামারি না শিখলে মেয়র বানাবে না আমায়।
তন্নি ধমকে বলে
” চুপচাপ থাকবি একদম। মেয়র হবে
বড় হ আগে। বেয়াদব।
কথায় কথায় তামিমের স্কুলের সামনে চলে আসে ওরা। তামিমকে ক্লাসে বসিয়ে দিয়ে তবেই ওরা নিজেদের স্কুলের দিকে যায়।
স্কুলের গেইটের সামনে বাইক নিয়ে বসে আছে সাগর। সে প্রতিদিনই প্রায় এখানে বসে থাকে। পাশের কলেজে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়াশোনা করে। তন্নি এবং অথৈয়ের সাথে বেশ ভাব তার। সাগরের বাইকটা অথৈয়ের ভীষণ পছন্দ।
সাগরকে দেখেই অথৈ লাফিয়ে ওঠে।
“সাগর ভাইয়া
বলে ডাকে। তন্নি ঘাবড়ায়। একটু ভয়ও পায়। এভাবে আচমকা কেউ ডাকে? মন খারাপ করে ফেলে তন্নি৷ নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত। এভাবে ভয় পায় কেউ?
সাগর হাসে ওদের দেখে। বাইকের ওপর থেকে নামে।
“কেমন আছো তোমরা?
” খুব ভালো আছি৷ আপনাকে দেখা যায় না যে ইদানীং?
“ঢাকায় গিয়েছিলাম।
তা তন্নি চুপচাপ কেনো?
ওহহ হো তুমি তো বরাবরই চুপচাপ।
তন্নি একটু হাসার চেষ্টা করে। সাগর দেখতে থাকে সরলতম প্রেয়সীকে। কারণ ছাড়াই এই মেয়েটাকে সাগরের একটু বেশিই ভালো লাগে।
তন্নি হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে বলে
” ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। আসছি ভাইয়া।
বলেই অথৈয়ের হাত টেনে নিয়ে যেতে থাকে। সাগর মাথা নারিয়ে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।
মূলত তারও ক্লাস চলছে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এসেছিলো মায়াবতীকে এক নজর দেখতে।
রাত বারোটা বেজে ১০ মিনিট। তন্নির ফোনটা একটু পরপরই কেঁপে উঠছে। বইয়ে মনোযোগী তন্নির সেটা খেয়াল হচ্ছে না। সে অংক মেলাতে ব্যস্ত।
যখন ক্যালকুলেটর এর প্রয়োজন বোধ করলো তখনই ফোনটা হাতে তুলে। আর নজর পড়ে ফোনের স্কিনে। সেখানে “চিনি না” নামটা স্পষ্ট জ্বল জ্বল করছে। মূলত তন্নি সেদিন অর্ণবের নাম্বার চিনি না নামে সেভ করেছে। কারণও আছে
কারণটা হচ্ছে অর্ণব তন্নির কল রিসিভ করে নি।
হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে তন্নির৷ মাথার ওপরে ফুল স্পিডে সিলিং ফ্যানের বাতাসেও সে ঘামছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
কলটা কি ধরবে?
মনটা ছটফট করছে কল রিসিভ করার জন্য। আবার হাত পা ও কাঁপছে। তন্নির নার্ভাসনেস কাটতে কাটতে কলটাই কেটে যায়। মুহুর্তেই তন্নির মুখটা কালো হয়ে যায়। চোখের কোণে পানি টলমল করে ওঠে। ছয় মাস পরে লোকটার কন্ঠ শোনার একটা চান্স পেলো সেটাও হাত ছাড়া করে ফেললো?
তন্নি তুই সত্যিই একটা গাঁধা। স্টুপিট ইডিয়েট।
নাক টেনে ফোন নামিয়ে রাখতে যেতেই আবারও ফোন কেঁপে ওঠে। সাথে কেঁপে ওঠে তন্নিও। সময় না নিয়ে রিসিভ করে কানে দেয়।
ওপাশ থেকে ভেসে আসে গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ
“ফোন রেখে হাডুডু খেলছিলে ইডিয়েট?
অর্ণবের ধমকে ফের কেঁপে ওঠে তন্নির সত্তা। থেমে থেমে জবাব দেয়,
” প….পড়ছিলাম।
“পড়বেই যখন তখন আমাকে কল করেছিলে কেনো? স্টুপিট
তন্নি থমথমে খেয়ে যায়। সে কল করেছিলো গুণে গুণে ৫৫ দিন আগে। আজকে তো দেয় নি। তাহলে লোকটা ধমকাচ্ছে কেনো?
আমতাআমতা করে তন্নি জবাব দেয়
” ৫৫ দিন আগে কল করেছিলাম।
“তো?
কল করেছিলে মানে ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকবে ৫০০ বছর। এর মধ্যে একদিন না একদিন আমি কল করবোই।
তন্নি কিছু না বুঝেই জবাব দেয়
” আচ্ছা
হাসে অর্ণব। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে কথা বলছিলো তন্নির সাথে। আকাশে আজকে বিশাল চাঁদ উঠেছে। চাঁদের পানে তাকিয়ে অর্ণব নরম গলায় বলে
“বড় হয়েছো?
তন্নি ছোট গলায় বলে
“সবে ছয় মাস হয়েছে। আর ছয়মাস পরে ১৭ হবে।
” হুমম কল দিয়েছিলে কেনো?
এবার তন্নি পড়ে যায় বিপাকে। কি জবাব দিবে? কন্ঠখানা একটু শুনতে কল দিয়েছিলো এটা বললে নিশ্চয় একটা ধমক দিয়ে দিবে। আরেক দফা নিজের ওপর রাগ হয় তন্নির৷ কেনো কল করেছিলো?
তন্নির নিরবতায় অর্ণব আবারও প্রশ্ন করো
“জলদি বলো
প্রেম করার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই আমার।
” ভ…..ভুলে দিয়েছিলাম।
“বলদরা ভুলেই কল দেয়। নেক্সট টাইম কল দিবা প্রেম করার জন্য। ১৮+ কথা বলার জন্য।
মনে থাকবে?
তন্নি খানিকটা অপমানিত হয়। লোকটা বদলে গিয়েছে। কথায় কথায় শুধু বদল স্টুপিট ইডিয়েট।
” ১৮+ মানে বুঝো?
“বুঝি না।
তন্নি মিথ্যে বলে ফেলে। খুব চেনে মানুষটাকে। বুঝি বললেই বলবে ” আমাকে বোঝাও” তখন তন্নি কিভাবে বোঝাবে?
“ইডিয়েট
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১০
হোয়াটসঅ্যাপ এ একটা ১৮+ মুভির লিংক দিচ্ছি আজকে সারা রাত মুভিটা দেখবে। A to Z
দ্যান কালকে আমাকে বোঝাবে।
বোঝাতে না পারলে বউ দেখার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
বলেই কল কেটে দেয় অর্ণব৷ তন্নি আতঁকে ওঠে। সাথে সাথে হোয়াটসঅ্যাপ এ মেসেজ আসে। তন্নি লিংক এ ক্লিক করে কানে হেডফোন গুঁজে নেয়।
প্রথমেই ভেসে আসে ” My fault” নামটা।