এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১২

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১২
তানিশা সুলতানা

তন্নির সারা রাত কেটেছে নির্ঘুম। যখনই মনে পড়ছে অর্ণবের বলা কথা খানা “আমার বউ দেখার জন্য প্রস্তুত থাকবে” তখনই বুক কেঁপে উঠছে।
পাষাণ পুরুষ বিয়ে করে আনবে? তন্নি কি করে দেখবে এটা?
মুভি সে পুরোটা দেখেছে। একদম ঝরঝরে মুখস্থ করে ফেলেছে। অর্ণবকে সে ভালো করেই বুঝাতে পারবে। কিন্তু কি করে বোঝাবে?

এসব কথা অর্ণবের সামনে কি করে বলবে? লোকটা সব সময় তাকে এতো বিপদে কেনো ফেলে?
এই যে আংটি খানা দিয়ে বিপদে ফেলেছে। তন্নি সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকে। এই বুঝি মা আলমারি গুছাতে গেলো আর আংটি পেয়ে গেলো।
অবশ্য তন্নি মনে মনে ভেবে রেখেছে। ধরা পড়ে গেলে বলবে “আমি পেয়েছিলাম রাস্তায়”
তবুও তার ভয়ের শেষ নেই। মিথ্যে সে বলতে পারে না। তুঁতলে যাবে আর মা ধরে ফেলবে।
নানান চিন্তায় ভোর হয়ে যায়। চোখ দুটো ফুলে কলা গাছ হয়ে আছে। সাথে লাল হয়ে গিয়েছে। তন্নির এই এক সমস্যা ঘুম না হলে চোখ লাল হয়ে যায় এবং ফুলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সকাল সকাল গোছল সেরে নেয় তন্নি। যাতে একটু স্বাভাবিক দেখায়।
ইতি বেগম চুলায় তরকারি বসিয়ে তামিমকে পড়াচ্ছে।ক্লাস টেস্ট পরিক্ষা আজকে তার। মার্ক কম পেলে তারেক পাছার ছাল তুলে নিবে।
তন্নি তার লম্বা চুল গুলোতে গামছা পেঁচিয়ে মায়ের কাছে আসে।
“মা হেল্প করবো?
ইতি বেগম তন্নির দিকে এক পলক তাকিয়ে জবাব দেয়
” কোনো দরকার নাই। যাও স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে নাও।

তন্নি আমতাআমতা করতে থাকে। আসলে সে আজকে স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। একটু ঘুম প্রয়োজন তার। কিন্তু মাকে কি করে বলবে? দিবে এক ধমক।
তন্নিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইতি বেগম ভ্রু কুচকে তাকায়।
“কি হলো?
তোমার বাবা রুমেই আছে। স্কুলে না যাওয়ার বাহানা দিলে মাইর মাটিতে পড়বে না।
অগত্য তন্নি মন খারাপ করে রুমে চলে আসে। বিছানায় তার ফোন রাখা। ফোনটা মৃদু সুরে বেজে চলেছে। তন্নি ফোন তুলে কানে নেয়

” অথৈ বল
“জান আজকে দ্রুত চলে আয়। এদিকে কান্ড বেঁধে গেছে একটা।
তন্নির বুক কেঁপে ওঠে। হাত পায়েও মৃদু কাঁপন অনুভব করে। কান্ড বেঁধে গেছে মানে কি পাষাণ পুরুষ বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে আসলো?
গলা শুকিয়ে আসে তন্নি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। চোখের কোণেও বোধহয় জলের দেখা মিলছে।
” এই তন্নি আসছিস তো?
তন্নি জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে থেমে থেমে বলে
“ক….কি কান্ড?
“আসলেই দেখতে পারবি।

অথৈ কল কেটে দেয়। চিন্তিত তন্নির গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আলমা
হতে আংটিখানা বের করে। বাসা থেকে বের হলেই আংটি সাথে নিয়ে বের হয়। যদি অর্ণব চলে আসে আর আংটি না দেখে বকবে না?
স্কুলড্রেস পড়ে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে তন্নির বের হয়। বাবা খেতে বসে গিয়েছে। সামনে রুটি আর তরকারি। হাত গুটিয়ে ফোন দেখছেন তিনি। তন্নি নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে পড়ে।
তন্নিকে দেখে তারেক খাওয়া শুরু করে। তন্নি সবেই রুটি ছিঁড়ে তরকারি মিশিয়ে মুখে পুরবে তখনই তারেক বলে ওঠে

” বেশ শান্তিতে ছিলাম ছ’মাস। এবার আমার অশান্তি চলে এসেছে। মেজাজ গরম হয়ে ওঠে।
ইতি তামিমের মুখে খাবার পুরে জিজ্ঞেস করে
“অর্ণব চলে এসেছে?
চমকায় তন্নি। মাথা নুয়িয়ে ফেলে।
তখনই তারেক ধমকে বলে
” খাচ্ছো না কেনো?
তন্নু আমতাআমতা করে খাবার মুখে দেয়।
তারেক তার মুখের খাবার শেষ করে বলে।

” এসেছে আর
এসেই মাস্টারের ছেলে ইহানকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
বিষম খায় তন্নি। খাবার গলায় আটকে যায়। ইতি বেগম পানি এগিয়ে দেয়। ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি খেয়ে নেয় তন্নি।
“দেখে খাবে তো।
এতো তারা কিসের তোমার?
এবার তন্নি কি করে বলবে? তারাহুরোর জন্য নয় বরং অর্ণবের মারামারির কথা শুনে সে বিষম খেয়েছে।

অর্ণবদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে তন্নি। ভেতরে যাবে কি যাবে না এটা নিয়েই পড়েছে দ্বিধায়।এক পা এগোচ্ছে তো দু পা পিছচ্ছে।
অর্ণবকে আজকে তন্নি কড়াকড়ি ভাবে কিছু কথা বলতে চায়৷ এসব মারামারি কেনো করে সে?
” তন্নি মা দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
পেছন থেকে বলে আনোয়ার। তন্নি শুকনো হেসে বলে
“এই তো আংকেল যাচ্ছি।
আনোয়ার হেসে বলে
” চলো আমার সাথে।

তন্নি আনোয়ারের সাথে পা মেলাতে থাকে। আনোয়ারের দুই হাতে বাজারের ব্যাগ। ব্যাগ ভর্তি নানা রকমের শাক সবজি। অর্ণব আসার আনন্দে এতো বাজার করেছেন তিনি এটা ঢেড় বুঝতে পারছে তন্নি।
বাড়িতে প্রবেশ করতেই তন্নির নজরে পড়ে পাষাণ মানবটিকে।
সে সোফায় অথৈয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। হাতে তার ফোন। দৃষ্টি ফোনের দিকে
তার পায়ের কাছে আর্থি বসে আছে। সে কমলার খোসা ছাড়িয়ে অর্ণবের মুখে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তন্নি মুখ বাঁকায়। আহ্লাদী মানব।
তন্নিকে খেয়াল করে আর্থি।
“আরেহহহ তন্নি

এসো এসো
অর্ণব নজর ঘুরিয়ে তাকায় তন্নির মুখপানে। কপাল কুঁচকে ফেলে।
অর্ণবের দৃষ্টি খেয়াল করে তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। এবং ধীর পায়ে এগিয়ে আসে।
” এটা কে?
একে তো চিনতে পারছি না।
অর্ণব নিজপর চাপ দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলে। তন্নির বুকটা ধক করে ওঠে। নয়নে অশ্রুকণারা ভিড় জমায়।
অথৈ রাগী গলায় বলে
“দাভাই আমার তন্নি এটা।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১১

তুই চিনতে কেনো পারছিস না?
অর্ণব উঠে বসে। তন্নির পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বলে
” কি বলিস রে?
তোর তন্নিকে তো আগে ব্যাঙের মতো দেখাতো। এখন টিকটিকির মতো দেখাচ্ছে কেনো?
ব্যাঙ টিকটিকি হলে আমি চিনবো কি করে?
টুপ করে তন্নির দুই গাল বেয়ে দুফোঁটা অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৩