ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৮

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৮
Arishan Nur

সমুদ্রের যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন আটটা তের বাজে। সে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো পর্দা ভেদ করে সুন্দর মিষ্টি রোদ গায়ে লাগছে। পাখির আওয়াজ কানে আসে। তবে প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে সকালটা সুন্দর হলেও তার জীবনটা এতোখানি সুন্দর নেই বোধহয়। বিছানার বাকি অংশ সম্পূর্ণ ফাঁকা। তার মনে কেমন খটকা লাগলো যেনো! আয়না কোথায় গেলো? চলে গেছে কী? সে উঠে বসে চোখ কচলায়। গতকাল ও প্রায় শেষ রাতে ঘুমিয়েছে৷ এলার্ম দেইনি জন্য জাগনা পায়নি। সারা রুম একনজরে চোখ বুলিয়ে নিয়ে, রুম ছাড়লো সে। একত’লা সুন্দর পরিপাটি বাসাটায় আজ কেমন যেন অস্থির লাগে সমুদ্রের। গতরাতের প্রতিটা ঘটনার স্মৃতিবিশেষ মস্তিষ্কে এসে জমা হলো। সে শায়লা চৌধুরীকে খুঁজতে থাকে৷ ওমনি সময় তিনি রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলে, ” গুড মর্নিং সমুদ্র।”
সমুদ্র সরাসরি জিজ্ঞেস করলো, ” আন্টি আয়না কে দেখছেন? কোথায় ও?”

–” বাবা! ঘুম না ভাঙ্গতেই বউয়ের খোঁজ।”
সমুদ্র কিঞ্চিৎ দ্বিধাবোধ করলো। কী বলবে ওনাকে? পুনরায় বলে উঠে, ” কাল রাতে একটু ঝগড়া হয়েছিলো।”
শায়লা চৌধুরী বেশ বিস্মিত হলেন। উনি ভাবতেও পারছেন না সমুদ্র আয়নাকে নিয়ে এতো বিচলিত! ক’দিন আগেই না বলছিলো কাউকেই ভালোবাসবো না। কোনো মেয়ের প্রতিই এক্সট্রা কেয়ার নিতে পারবে না। আজ আবার ওকে নিয়ে এতো দরদ কেন?
সে চতুরতার সঙ্গে সুধাল, ” কি হয়েছে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সমুদ্র একবার ভাবে তাদের মধ্যকার বিষয়াদি শেয়ার করবে না। তবে শায়লা চৌধুরী একপ্রকার জোড় করলেন। পরবর্তীতে সমুদ্রের মনে হয় জানানো উচিত তাদের সম্পর্কের এমন বিশ্রী দূরত্বর কথা জানিয়ে দেখা যাক কোনো সমাধান পাওয়া যায় কীনা। তাছাড়া শায়লা আন্টি তো তার সবসময় সাহায্যই করেন৷
সে সরল মনে বেশ মার্যিতভাবে দু’জনের মনোমালিন্যর বিষয়গুলো জানালো। সমুদ্রকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও ভীষণ টেনশনে আছে। শায়লা সামান্য হাসলেন। দুই দুইয়ে চার মিলালেন। এরপর মুখ খুললেন৷
উনি বললেন, ” আয়ু এজন্য সকাল-সকাল ঢাকায় ব্যাক করল। ও আসলে তোমার সাথে থাকতে চাচ্ছে না।”

–” থাকতে চাচ্ছে না? এমন কিছু বলেছে?”
–” হুম। বললো তো।”
–” কি বলেছে ও?”
শায়লা চৌধুরী বেশ বিপাকে পড়লেন৷ কীভাবে সমুদ্রের ব্রেইনওয়াশ করা যায় এটাই ভাবলেন৷ যেহেতু তিনি অনেক বুদ্ধিমতী কাজেই বুদ্ধি বের করে ফেললেন৷ মুখ টা কালো করে কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিমায় বলে, ” কথা তো ওর আব্বুর সঙ্গে বলছিলো। যা শুনলাম তাতেই মনে হলো, আয়ু এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। আই মিন সেপারেশন কিনা সিউর না। আমি নিজেও বুঝছিলাম না কিছু।”

সমুদ্র যেন কেমন মিইয়ে যায়। কপালের ভাঁজ দৃঢ় হলো। ছোট একটা ঝগড়া থেকে সোজাসাপটা বাবার সঙ্গে ডিসকাসন করে ফেললো যে সেপারেশন চাই ওর।গতরাতেও এ বিষয়ে নীরব থাকলো। আর সকালে উঠে আমাকে না জানিয়ে সিদ্ধান্ত তলব করে চলে গেলো। যাওয়ার আগে একবারও নিজের নেওয়া সিদ্ধান্ত তো আগে সমুদ্রকে জানাবে! আজব। তার ঘুম থেকে উঠার অপেক্ষাও করলো না তার আগেই এতো বড় সিদ্ধান্ত।
শায়লা আন্দাজে ঢিল মেরে বললো, ” সেপারেশন চাইছে কিনা ও এটা আমি সিউর না বাবা।”
সমুদ্র যেন মিইয়ে আসা কণ্ঠে বলে, ” সেপারেশন ই মনে হয়।”

–” হুম, তোমার সাথে কন্ট্রাক্ট ও করতে চায় না এমনটাই শুনলাম। ”
সমুদ্র চকিত উঠে বললো, ” এটাও বলে গেছে যেন আমি কল না দিই?”
–“তাই তো শুনলাম। আমি ভুলও হতে পারি। ”
সমুদ্র যেন ভীষণ আহত হয়। ঝড়ে পাখির পালক ভেঙে গেলে যেমন নড়বড়ে অবস্থা হয় ওমন দেখালো ওকে।
শায়লা চৌধুরী ওর কাঁধে হাত রেখে বললো, ” তুমি টেনশন নিও না৷ আমি আছি তো। দেখি আয়ুকে বুঝাই। এতো সহজ নাকি সবকিছু! ”

সমুদ্র কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললো, ” আমিও যাই। ভালো লাগছে না।”
–” আপসেট হও না বাবা৷ আন্টি আছেন না? সব ঠিক করে দিবো।”
সমুদ্র ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলে, ” পরিস্থিতি ঠিক করে দিলেও ভাগ্য তো ঠিক করে দিতে পারবেন না। আমার মনে হয় বেটার হাফ ভাগ্য ভীষণ বাজে। যার সঙ্গে জড়াই সে-ই বিরক্ত হয়ে সরে যায়৷ ”
–” আয়না খুব ভালো একটা মেয়ে। সৎমেয়ে জন্য এমনটা বলছি না। মন থেকে বলছি।”
–” আপনি সত্যি খুব ভালো মনের মানুষ। এই প্রথম কোনো সৎমা কে দেখলাম নিজের স্টেপ মেয়ের গুনগান গাইতে।”

–” ও আমারই মেয়ে। তুমিও আমার ছেলের মতো। আপন মানুষ। আচ্ছা শুনো, আমাকে একটু জানাবে কি ভাবছো তুমি ভবিষ্যৎ নিয়ে। আগেই আয়নার সঙ্গে যোগাযোগ করো না৷ তোমার দশা আমার চেয়ে কে ভালো জানে? সো আমি বুঝিয়ে দিবো কোনটা সঠিক তোমাদের জন্য। নাস্তা খেয়ে তারপর যাও।”
শায়লা আন্টি অনেক সাধলেন কিন্তু সমুদ্রের কেন যেন খেতে মন চাচ্ছে না। সে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে ঢাকার উদ্দেশ্য। বারবার ফোন চেক দিলো যদি আয়না কোনো ম্যাসেজ দেয়। কিন্তু না আয়নার নাম্বার থেকে কোনো কল বা ম্যাসেজ কিছু আসেনি। সে গাড়ি ড্রাইভ করার সময় একবার ভুলবশত সামনের গাড়িতে লাগিয়েও দিলো। সব কেমন গুমোট লাগছে৷ আয়না একচুয়ালি চাচ্ছে টা কী? সে তো দূরত্ব দিতেই চাইলো। বিষয়টা দু’জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখত। ফাহাদ সাহেবকে কেন বললো সেপারেশন চাই! হুয়াই ডিরেক সেপারেশন তাও বিয়ের এক সপ্তাহ পর-ই! কিছুদিন আরোও সময় নিতো! যাকগে, ও যা ভালো বুঝে তাই সই। সে একা একা তো এই বিয়ে চালিয়ে যেতে পারবে না।

আয়না নিজের বাসায় ফিরে আসে সকাল সাড়ে ন’টার পর। রুমে এসেই শু’য়ে পড়ে৷ আলিয়া জেগেই ছিলো। আপার এমন করুণ দশা দেখে জিজ্ঞাসা করলো, ” কী হয়েছে আপা?”
আয়না জবাব দিতে পারে না৷ আলিয়া কে কী বলবে? ও ভীষণ কষ্ট পেতে পারে। তবুও সত্যটা জানা উচিত। দুইদিন বাদে পরের মুখে শোনার চেয়ে আজ আপনের মুখে শুনলে তা বেশি গ্রহণযোগ্য। কষ্ট পেলেও এখনই সবটা সামলে নিবে দু’বোন।
আয়না বলে উঠে, ” বাবা ঐ মহিলাকে বিয়ে করে নিয়েছে। তাও গোপনে আরোও কয়েকমাস আগেই। আমাদের না জানিয়েই।”

আলিয়া যেন আকাশ থেকে পড়ে, ক্ষণেই নিজেকে দ্রুত সামলানোর চেষ্টা করে। বিভিন্ন চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার৷ শায়লা চৌধুরীর সঙ্গে বাবার আরোও তিনবছর আগেই বিয়ে হতো যদি আপা ঝামেলা না করত৷ কিন্তু আপা আর সে মিলে বাবার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে। তারপর অনেক কাহিনি। একসময় আপা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো। এরপর বাবা মন পরিবর্তন করলেন। বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন৷ কিন্তু আলিয়া জানত বাবা সম্পর্কটাকে নাকচ করেননি। নিজের বাবাকে নিয়ে এসব বলতে বা ভাবতেও কেমন রাগ লাগে। গা জ্বালা দেয়৷ পূর্বাভাস পাওয়ার পরও সে মানতে পারেনা বাবার দ্বিতীয় বিবাহ। কোনো সন্তান ই চায় না সৎমা আসুক। এ’ ঘটনা যেন কিছুটা অভিশাপেরও অভিশাপ! যেন অভিশাপকেও কেউ অভিশাপ দিলো! কিন্তু তার কী বা করার আছে? বাবা কী আর তার কথামতো চলবে? বরং তাকেই বাবার আদেশ মেনে চলা লাগবে৷ বহু কষ্টে কান্না চাপিয়ে রাখে। নিজেকে শক্ত করে রাখার চেষ্টা চালায়। কিন্তু পারে না এক প্রকার ঠুকরে কেঁদে ফেলে।

সে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, ” শায়লা আন্টি কী এখানে এসে আমাদের সঙ্গে থাকবেন?”
এহেন প্রশ্নে আয়নার যেন গা জ্বালা দিয়ে উঠে৷ কোনোভাবেই এ’বাসায় ওনার উপস্থিত সহনীয় নয় তার কাছে। চোখ ফেটে কান্না আসে তার। আলিয়া ছোটবোন হওয়া সত্তেও তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, ” আপা তুমি তো দুইদিন বাদেই সমুদ্র ভাইয়ার সঙ্গে থাকবা। তোমার ওনার সাথে থাকতে হবে না।”
আয়না চোখ মুছে বলে, ” আলিয়া আমার খুব মাথাব্যথা করছে৷ আমি ঘুমাবো।”
–” আচ্ছা আমি যাই তাহলে। ”

আলিয়া রুম ছেড়ে বেরিয়ে এসে বারান্দায় বিরস মুখে বসে থাকে। ওর কিছু ই ভালো লাগে না। মন খারাপ কীনা তাও বুঝে না। সব ফাঁকা ফাঁকা লাগে। এই দিনটা আরোও তিনবছর আগেই দেখার ছিলো তবুও তিন বছর পর ঘটার পরও মানতে পারেনা। চোখে জল আসে। বাবার উপর রাগ লাগে। মনে হলো আব্বুর সঙ্গে আর কোনোদিন কথা-ই বলবে না। ক্ষণেই চমকে উঠে সে। এমন কথা আগে আপা বলত। আপা সাফ বলে দিয়েছিলো বাবা বিয়ে করলে ওনার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিবে। এইজন্য কী বাবা আপার এতো দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিলো? তাদের ফ্যামিলিতে সবাই অর্নাস শেষ করেই বিয়ে করে। তার ফুপুই বিএ পাশ করে সেই যুগে বিয়ে করেছিলো।

অথচ আপা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েও, সেকেন্ড ইয়ারে বিয়ে দিয়ে দিলো বাবা৷ সেও যদি বিরোধিতা করে তাহলে ক’দিন বাদে তারও যদি বিয়ে ঠিক করে। মনের মধ্যে বেদনার চেয়ে ভয় বেশি কাজ করে। তার কেন যেন মনে হচ্ছে আপা ঝামেলা করত জন্য-ই আপাকে জলদি বিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া কারণ সে দেখছে না কোনো। সে নিজের ক্ষেত্রে মোটেও এতো দ্রুত বিয়ে চায় না। তাহলে কী করবে? যতোদ্রুত সম্ভব শায়লাকে মেনে নিবে? এটাও তো ভীষণ কঠিন একটা কাজ।

সমুদ্র ফিরে এসেই মাকে জানালো আজ অফিস যাবে না। মিসেস রোদেলা ছেলের চেহারা দেখেই চমকে উঠে। একি হাল বানালো চেহারার। এমন চোখ-মুখ লাল করে রাখত যখন ইউশার সঙ্গে ওর ব্রেক আপ হয়। আজ এতোদিন পর এমন কী কষ্ট পেলো যে ওর চেহারায় আগের মতো যন্ত্রণা ফুটে উঠলো?
মিসেস রোদেলা বলে, ” কি হয়েছে বাবু?”
সমুদ্র মাকে একদম কোনো বাড়তি প্রেশার দিতে চায় না৷ এক জীবনে মা-বাবাকে কম দুঃখ দেয়নি। এখন চুপ থাকাই শ্রেয়।
সে বললো, “অসুস্থ লাগছে। কিছুক্ষণ ঘুমাবো। সেড়ে যাবে।”

সমুদ্র নিজের বিছানায় এসে গা এলিয়ে দিলো। কেমন শূন্য শূন্য লাগছে। সারাটা ক্ষণ কেবল মাথায় আয়নার কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। আর কোনো চিন্তাই মস্তিষ্কে নেই। আচ্ছা আয়না না বললো ওইসময় ‘আই লাভ ইউ সমু।’ ভালোবাসি বলেও মাত্র একবার চলে যেতে বলায়, সে চলে গেলো? কই সমুদ্র তো যায়নি। তার প্রথম প্রেম যখন বলেছিলো ছেড়ে যাও। সে তো একবারে ছেড়ে যাই নি। তাহলে আয়না কেন এমন করলো?
তাহলে সে কী ধরে নেবে, মেয়েদের ভালোবাসা কিছুটা কচুপাতায় বৃষ্টির ফোঁটার মতো। দূর থেকে দেখতে কী অদ্ভুত সুন্দর কিন্তু একটু নাড়ালেই কেমন সহজভাবে গড়িয়ে চলে যায়।

অনেক চেষ্টা করেও সমুদ্রের ঘুম হলো না। সে উঠে বসে নীলা আর সায়নের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার ডিসিশন নেয়৷ ওরা দু’জন ওকে অনেক ভালো বুঝে। এট লিস্ট আব্বু-আম্মুর চেয়ে ভালো বুঝে। ছোট্টবেলার বন্ধু তারা। যদিও বা সায়ন জার্মানি তে আছে৷ কিন্তু শত ব্যস্ততার পরও সমুদ্র আর নীলার কল ও ইগনোর করে না। তিন বন্ধু একসঙ্গে ভিডিও কলে আসে। নীলার মেয়ে হয়েছে। সবে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে৷ তবু চোখ-মুখে আনন্দের ছাপ ক্লান্তি ছাপিয়ে দিচ্ছে।

ওরা সবাই কিছুক্ষণ গল্প করলো। এরপর সমুদ্র বলে, ” দোস্ত আমি তো বিরাট এক সমস্যায় পড়েছি।”
নীলা বলে, ” আবার কি করলি? এক জীবনে তোর নাটক দেখেই পাকিস্তানি ড্রামা বানানো যাবে৷”
সমুদ্র বিরক্তিতে ‘চ’ ধ্বনি প্রকাশ করে এরপর বলে, ” আয়নার সঙ্গে অনেক সমস্যা হচ্ছে। এডজাস্ট তো হলোই না। তার আগেই ও ডিভোর্স চায়।”
সায়ন বলে উঠে, ” কস কী ব্যাটা এতো দুর্যোগ পাড়ি দিয়ে বিয়ে করলি। ভাবী ভাগলো ক্যান? ইয়ার তোর মধ্যেই ঝামেলা আছে। দোস্ত ট্রিটমেন্ট নে লাগলে। এখন কতো চিকিৎসা বের হলো। তুই ডাক্তার হয়েও বিনা চিকিৎসায় সাফার করছিস।”

–” সায়ন তোরে আমি পি–টায় মে– ফেলবো। আজাইরা কথা বললে।”
–” ওই ব্যাটা বিয়ের সাতদিন পর এসব কইলে মানষে ওইসবই ভাববে৷ কই তুই জিগাবি হানিমুনের জন্য কক্সবাজার নাকি সিলেট ভালো হবে –তা না তোর এখন ডিভোর্স লইয়ার চাই!”
সমুদ্র যতোটা পারে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এই সায়ন এতো লেইম কথা বলে! নীলা এতোক্ষণ চুপ থাকে। এবারে ও বলে উঠে, ” ডিটেইলসে সব বল তো।”
সমুদ্র এ টু জেট বললো কিছু-ই বাদ রাখে না।
নীলা মাথায় হাত চাপড়ে বলে,” এমন করলে তোর আর কোনোদিন বউয়ের হাতের রান্না খাওয়া হবে না। সমুদ্র কোন ধাতের মানুষ রে তুই ?”

–” ও বলছে আমি নাকি রোবট!”
সায়ন বলে, ” এক্কেবারে এতো খাটি কথা বলার জন্য ভাবী উরফ এক্স ভাবী একটা নোবেল ডিজার্ভ করে। ”
নীলা বলে, ” এমন করা ঠিক হয়নি৷ কারো ফিলিংস নিয়ে খেলাটা কী অন্যায় হচ্ছে না? সত্য গোপন রেখে কতোদিন? ”
সমুদ্র মাথা নিচু করে বলে, ” আমিও ভালো থাকার-ভালো রাখার অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছি।”
নীলা পরামর্শ দিলো, ” দেখ ভুলেও যোগাযোগ অফ করস না। এইটা বোকামি হবে। এট লিস্ট টাচে্ থাক। দেখা কর ওর সাথে। এভাবে দূরে থাকলে ওই ডিভোর্স ই শেষ ভরসা।”
–” ও নিজেই নাকি বলছে যোগাযোগ করতে চায় না।”

নীলা বাঁজখাই গলায় বলে, ” তোরা ছেলেরা এমন কেন রে? মানে একবার পেয়ে গেলেই ইফোর্ট একদম জিরো পার্সেন্ট। মানে একদম ফিক্সড মানুষ যাই করবি থেকে যাবে এমন মনোভাব কেন রে? এতো মিসবিহেইভ করলি, ও রেগে গিয়ে কী এমন বললো তুমি মিয়া সব ছাড়ে দিয়ে বসে আছো। মানে কথা বলার ট্রাই ও করবি, মিনিমাম ইফোর্ট ও দিবি না? ইউশার জন্য পারলে জান দিতি আর এখন কিছু ই করবি না। আয়না কী বানে ভাসে আসছে! বা–ল তুই একটা!”

সমুদ্র বলে, ” ওই মেয়েকে নিয়ে আর কিছু বলিস নাহ। ওর জন্য জীবনটাই বরবাদ।”
সায়ন বলে, ” মেয়েদের জন্য ছেলেদের জীবন ধ্বংস হয় এটায় ইতিহাস সাক্ষী আছে। আর তোরা ফেসবুকে আইসা ঢং মারাস।”
জেন্ডার রিলেটেড ইস্যু নিয়ে নীলা আর সায়নের মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়।

সমুদ্র কেমন আনমনে হয়ে উঠে। আজ সারাটা দিন কেবল আয়নার জন্যই ভেবেছে সে। ইন ফ্যাক্ট অন্য কেউ বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও ভালো লাগছে না। কি করবে সে? একবার কল দিবে ওকে? দেওয়া উচিত বোধহয় ।
ল্যাবটপ সাইডে রেখে সে ফোন হাতে নিতেই একটা ইমেইল পেল। আয়না অফিশিয়াল ইমেইলে পাঠিয়েছে। সেখানে লিখা ও রিজাইন করতে চাইছে। ইমেইল পড়ার পরই সমুদ্র ঘামতে লাগে। তাহলে শায়লা আন্টি-ই ঠিক ছিলো। আয়না আসলেই সবটা ছেড়ে দিতে চাচ্ছে। সমুদ্রর মাথার দুই সাইডে তীব্র ব্যথা অনুভব হলো। মাথায় ভোভো আওয়াজ হচ্ছে যেন।

আর কিছুদিন পরই ট্রেনিং সম্পূর্ণ হবে এরপর সার্টিফিকেট পাবে। আর মেয়ে এই মাঝপথে কেন রিজাইন চাচ্ছে? ওর ইমেইল দেখে মনটা আরোও বিষিয়ে উঠে। সে সাহস করে আয়নাকে কল দেয়। তিনবার কল হওয়ার পর আয়না রিসিভ করলো। ওর ভয়েজ শুনে কেমন যেন অনুভূতি হলো সমুদ্রের। বুকের কোথাও সূক্ষ্ম ব্যথা ফিল হয়৷
দু’জনেই চুপ থাকে। যেন চুপ থাকার প্রতিযোগিতা চলছে। আর লাভবান হচ্ছে সীম কোম্পানি।
সমুদ্র বলে, ” ডিস্টার্ব করলাম নাকি?”

–” হ্যাঁ। ”
–” ও আচ্ছা, আচ্ছা। না বেশি সময় নিবো না। মেইল দেখলাম।”
–” এপ্রুভ করে দেন।”
সমুদ্র একটু নীরব থেকে সহসাই বলে উঠে,
–” আয়না সিউর? আর ক’টা দিন আসো। ট্রেনিং শেষ হলে আমি ম্যানেজ করে সার্টিফিকেট দিয়ে দিব। অফিসে বাকি তিনমাস আসা লাগবে না।”
–” না, আমি আর আসবো না।”

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৭

–” অফিসে এ’কয়েকদিন এক্সট্রা কোনো প্যারা দিবো না। আসো। লাভই হবে। এ’সময় রিজাইন করার কী মানে?”
সে জিজ্ঞেস কর‍তে চাইছিলো সেপারেশন নিয়ে কি ভাবছে আয়না কিন্তু মুখ দিয়ে কিছু বের হয় না সমুদ্রের। কীভাবে আগাবে সে? ধ্যাত মাথায় কিছু আসে না।
আচমকা সে বলে, ” হ্যাপি ডিসটেন্স। অন্যান্য কাপলরা হ্যাপি টুগেদার সেলিব্রিট করে আমরা নাহলে ডিস্টেন্স পালন করি। ফানি!
ফোন কানে নিয়ে বসে থাকে ও। ও-প্রান্ত থেকে আয়না একদম চুপ। নিজেকে এতো পরিমাণ বলদ মনে হচ্ছে।

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৯