রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৯
সিমরান মিমি
“এতো আয়োজন কিসের কাকি?কেউ কি আসবে?”
হাসিমুখে পেছনে তাকালো সোনালী।তার পাশে ছোট কাকিও আছে আজকে।বিস্মিত হলো স্পর্শী।সচারচর ছোট কাকি রান্নাঘরে আসে না।কাজের মহিলা আর মেঝো কাকিই রান্না সামলায়।হাতের ঘড়ির কাঁটার দিকে চাইলো স্পর্শী।মাত্র সাত টা বাজে।সোনালী ডো মাখাতে মাখাতে বললো,
“উঠে গেছো তুমি।আমি ডাকতে চাইছিলাম তোমায়।”
“কেন?আর এতো আয়োজন কার জন্য?”
এবারে মাথা নিচু করলো হাসলো তিনি।তেল মাখাতে মাখাতে বললেন,
“সেকি?ভাইজান তো কাল খাবার সময়ই বললো।বড় আপা,ভাইজান,আরিয়ান আর অদিতি আসছে।আজকেই এনগেইজমেন্ট সেরে ফেলতে চাইছে ওরা।সে জন্যই পিঠা বানাচ্ছি।”
বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল স্পর্শী। “কিন্তু তাদের তো পরশু আসার কথা ছিলো।তাহলে?”
“কারন তোমার উপর আমাদের বিশ্বাস নেই।তাই যত দ্রুত সম্ভব বিয়েটা সেরে ফেলতে চাইছি।”
পেছন থেকে ভাইয়ের গম্ভীর আওয়াজ পেতেই ফিরে তাকালো স্পর্শী।সোভাম শার্টের হাতা গোছাতে গোছাতে রান্নাঘরের দিকে এলো।স্পর্শীকে পাশ কাঁটিয়ে সোনালীর কাছে গেল।ব্যস্ততা নিয়ে বললো,
“সোনামা?কিছু কি রেডি হয়েছে?আমি বাইরে যাব।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তড়িৎ গতিতে উঠলেন সোনালী।হাত ধুতে লাগলেন দ্রুত।”হ্যাঁ হয়েছে তো।তুই গিয়ে টেবিলে বস।আমি নিয়ে আসছি।”একটু পরেই নুডুলস হাতে চলে গেলেন ডাইনিং এ।স্পর্শী রান্নাঘরের ভেতরে ঢুকলো।বিশাল আয়োজন।একপাশে অজস্র ফল কাঁটা।অন্য পাশে মিষ্টান্ন।বন্ধ চুলার উপর রাখা আছে রান্না করা সেমাই,নুডুলস,ডিম পোঁচ।এদিকে পিঠা বানাচ্ছে এখনো।মুখ ভেংচি কাঁটলো স্পর্শী।বড় একটা প্লেট নিয়ে সেখানে একে একে নুডুলস,ডিম,রসগোল্লা,কিছু কাঁটাফল আর ভেজে রাখা পিঠা নিলো।আতঁকে উঠলো ছোট চাচি।হইহই করে বললো,”একিই!ওগুলো মেহমান দের জন্য।তুমি সব গুলো পদ এটো করছো কেন?”
চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো স্পর্শী।”বিয়েটা যেহেতু আমার,তাই আয়োজন টাও আমার জন্য করা হয়েছে।অতএব,আমার উচিত সবগুলো পদ টেস্ট করে দেখা।বুঝেছো কাকি?”
চলে এলেন সোনালী।হাসতে হাসতে বললেন,”যে শাশুড়ী জুটছে তাতে এরকম সাহস কখনো দেখিয়ো না।জন্মের মতো খাইয়ে দেবে।”
তড়িৎ গতিতে চাইলো স্পর্শী।কিন্তু নিরব রইলো।কাল মা ও সেইম কথাই বলেছিলো।আচ্ছা, তাকে তো কোথাও দেখা যাচ্ছে না।কোথায় আছে সে?রুমে?ভাবতেই দ্রুতপায়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
“আমি আত্মীয়ের মধ্যে সম্বন্ধ করবো না।”
তীর্যক দৃষ্টিতে পিপাসার দিকে তাকালো শামসুল।কন্ঠে তার গম্ভীরতা স্পষ্ট। “কি বললে?”
একই কথা পুণরায় শুনতে চাওয়ায় রেগে গেল পিপাসা।কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো,
“আমি আমার মেয়ের বিয়ে আত্মীয়ের মধ্যে দেবো না।শুনতে পেয়েছেন?আর আপনার বোনের সংসারে তো নয়ই।মেয়েটাকে সারাজীবন জ্বালানোর জন্য দিবো নাকি?”
চোয়াল শক্ত করে ফেললো শামসুল।”ভুলে যেওনা,তুমি যাকে নিয়ে কথা বলছো সে আমার বোন।”
“না ভুলিনি।ভুলিনি বলেই নির্লজ্জের মতো এসেছি।আপনি আমার মেয়েকে নরকে ঠেলে দিতে পারেন না।ও ছোটবেলা থেকে আপনাকে পায়নি বলে আজ আপনার কথা ফেলছে না।বাবাকে ভালোবাসে বলে ইচ্ছে করে আপনাকে ফেরাচ্ছে না।নাহলে ও যে কি করতো আপনি তা কল্পনাও করতে পারতেন না।ওকে আপনি চেনেন না।”
“ও আমার ও মেয়ে।আমি আমার মেয়ের ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নিবো,সঠিক ই নিবো।”
ধৈর্য্যহারা হয়ে গেল পিপাসা।”ওকে আমি বড় করেছি।আমি এক্ষুনি সাভারে যাব আর আমার মেয়েকে সাথে নিয়ে যাবো।”
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বাবা-মায়ের বাকবিতন্ডা দেখছে স্পর্শী।শেষে বাধ্য হয়ে ভেতরে আসলো।ঠান্ডা কন্ঠে বললো,”আম্মু,ও বাড়ি থেকে সবাই এসে পড়েছে।সোভাম ভাই আনতে গেছে তাদের।যেকোনো সময় এসে পড়বে।চুপ করো একটু।”
পিছু তাকালো পিপাসা।স্পর্শীর হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো রুমে। কম্পনরত কন্ঠে বললো,”তুই এসব কি করছিস মা?কেন করছিস?আমি তো তোর মা তাই না।মা যেটা বারন করছে সেটা খারাপ ই। রাজি হোস না সোনা।আমার সাথে ঢাকায় চল।জামা-কাপড় গোছা।”
“আম্মু,আম্মু শোনো।দেখো এমন পাগলামি করো না।আমি কোনো কিছু বিবেচনা না করে রাজী হয়নি।যে আমার ভাগ্যে আছে তাকে ঢাকা কেন?পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়েও মুছতে পারবো না।আমি সময়টাকে পুরোপুরি ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি।ভাগ্য আমায় যেখানেই নিয়ে যাক না কেন? আমি মেনে নেব।তুমি কোথাও যাচ্ছো না।এখানে বসো।”
ফুঁসে উঠলো পিপাসা।রাগন্বিত হয়ে বললো,”ওহহহ,এখন সব মেনে নিবি।আর আমি যখন পরপর কতগুলো সম্বন্ধ আনলাম তখন তো তুলকালামকান্ড বাঁধিয়েছিলি।বাবাকে পেয়েছিস এখন,বাবা যা বলছে বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে মেনে নিচ্ছিস।আমি তো কেউ না।আমাকে তো এখন আর লাগে না।না তোর বোন কোনো মূল্য দিয়েছে আর না তো তুই দিচ্ছিস।ঠিক আছে, খুব ভালো।ভালো থাকিস।মা মরে গেছে মনে করবি।আর কখনো আমার কথা মুখেও আনবি না।”
পিপাসা রেগে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।স্পর্শী হতাশ হয়ে বসলো।ফোন টা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ঘাটলো।নাহ,পরিচিত নাম্বারটা থেকে কোনোরুপ মেসেজ,কল আসে নি।কেন আসলো না?আসার তো কথা ছিলো।তবে কি স্পর্শীর ভাবনা ভুল।সে সত্যিই তাকে চায় না।উফফফ!এমনই যদি হয় তাহলে অনুভূতি গুলো তাকে কেন দগ্ধ করছে।কেন গেছিলো কক্সবাজার?কেন হলো এমন সর্বনাশ।এরকমটা তো হওয়ার কথা ছিলো না।ভাবনার মাঝখানেই ভেতরে ঢুকলো ছোট চাচি।হাতে শাড়ি আর কিছু জুয়েলারি নিয়ে স্পর্শীর পাশে গেল।বললো,
“এগুলো পড়ে নাও তো দ্রুত।ওরা এসে পড়বে এক্ষুনি।”
একদৃষ্টিতে শাড়ির দিকে তাকালো স্পর্শী।পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নিলো।বললো,”আমি শাড়ি পরতে পারবো না কাকি।যদি জামা-কাপড় পড়লে হয় তাহলে আমাকে ডেকো।আমি এখন এইসব সং সাজতে পারবো না।”
কিছু কড়া কথা শোনাতে গিয়েও গিলে ফেললো মহিলা।শামসুল সরদার বার বার বলে দিয়েছে যেন স্পর্শীর সাথে খারাপ ব্যাবহার না করা হয়।নিজেকে যথাসাধ্য সামলে হনহন করে হেটে চলে আসলো।
কই?স্পর্শীকে ডেকে আনো।কতক্ষণ হয়ে গেল এখনো তো দেখছি না।”
সোভাম রুমের দিকে তাকিয়ে পরপর দুবার ডাকলো।ভাইয়ের ডাক শুনতেই বিছানা থেকে নামলো স্পর্শী।গায়ে মাথায় ওড়না জড়িয়ে আলতো পায়ে সিঁড়িতে নামলো।পার্পেল কালারের থ্রিপিস টা যেন ফর্সা গায়ে খুব মানাচ্ছে।সেই উজ্জ্বলতাকে হার মানিয়ে গায়ের দুধে-আলতা রঙ টা যেন চোখ ঝলসে দিচ্ছে।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরিয়ান।সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই সোভাম হাত ধরে এগিয়ে নিলো।সোফায় বসিয়ে পেছনে ঠায় হয়ে দাঁড়ালো।
“মামুনি কি পড়াশোনা করছো?”
ফুপার গলার আওয়াজ পেতেই চোখ তুলে তার দিকে তাকালো।শান্ত কন্ঠে বললো,’জ্বি।”
ভদ্রলোক যেন এইটুকু কথা শুনে খুশি হলেন না।তিনি বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন।খুক খুক করে কেশে পুনরায় বললো,
“তা কোন ভার্সিটিতে পড়ছো?”
“জ্বি আংকেল আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১-২২ সেশনে জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ নিয়ে পড়ছি।এবার তৃতীয় বর্ষে উঠবো।”
এবারে খুশি হলেন ভদ্রলোক।ফলস্বরূপ মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পড়লো অযাচিত হাসি।কিন্তু পরক্ষণেই অসস্তিতে পড়লেন।মেয়ে তাদের চেনা।গুষ্টি জ্ঞাতি সবই জানা।তাহলে এবার কি জিজ্ঞেস করবে?ভেবে পেল না।এ পর্যায়ে শান্তি বেগম নড়েচড়ে বসলেন।গম্ভীর কন্ঠে বললো,”আরিয়ান,ওকে নিয়ে বাইরের বাগান টা ঘুরে আয়।পরিচয় সেরে নে।”
তাল মেলালেন সোভাম।”হ্যাঁ হ্যাঁ যাও।নিজেদের মধ্যে একটু কথা বলে জড়তা ছাড়িয়ে নাও।
হায়,আমি আরিয়ান।”
চোখ দুটো ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো স্পর্শী। গমগমে গলায় বললো,”হ্যালো,আমার নাম নিশ্চয়ই ফুপি বলেছে।”
হেসে দিলো আরিয়ান।স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বললো,”তুমি যথেষ্ট সুন্দরী।শুধু যথেষ্ট নও যাকে বলে আগুন সুন্দরী।শিক্ষিত এবং ব্রিলিয়ান্ট ও বটে।তোমার মতো মেয়েকে রিজেক্ট করার কোনো কারন’ই নেই।মামা আমাকে তোমার সম্পর্কের কথা জানিয়েছে।ওই ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোও দেখেছি আমি।তবে এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।কারন আজকাল কার দিনে এরকম পাঁচ/ছ টা প্রেম কিছুই না।এগুলো ব্যাস চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন জনে জড়ায়।তবে তোমার একটু বাছবিচার করা উচিত ছিলো।সব রেখে তোমার বাবার রাজনৈতিক শত্রুর কাছেই ধরা দিলে।এতে অপমানিত হয়েছে মামা।তবে একটা কথা জেনে রাখো।পরশ শিকদার কিন্তু তোমাকে ভালোবাসেনি।সে তোমাকে জাস্ট ইউজ করেছে তোমার বাবার উপর শোধ নেওয়ার জন্য।
স্পর্শী নিষ্পলক তাকিয়ে আছে ছেলেটির দিকে।খুবই মনযোগ তার।মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এটা।আরিয়ান এগিয়ে এলো আরেকটু।সন্দেহ নিয়ে বললো,
“আচ্ছা,কক্সবাজারে কি তোমরা একই রুমে ছিলে?”
বাম ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো স্পর্শী। তার ভ্রুঁ কুঁচকানো দেখে আরো মজা পেল আরিয়ান।বললো,”আমি বলতে চাইছি তুমি কি আদৌ ভার্জিন আছো?আমার তো মনে হচ্ছে না।কিভাবে বুঝবো? ”
ঠোঁট বাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো স্পর্শী।আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে বললো,
“কেন প্রথম বার টেস্ট করলেই তো বুঝতে পারবেন।আপনি কি ইচ্ছুক?”
চোখ দুটো চকচক করে উঠলো আরিয়ানের।ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে নিচুস্বরে বললো,
“অবশ্যই।আগে টেস্ট করতে দিলে মন্দ হয় না।”
মুহুর্তেই ঠাস করে থাপ্পড় মারলো স্পর্শী।পরমুহূর্তে কাছে গিয়ে বললো,
“কি মনে হচ্ছে?ভার্জিন কি আছি?বুঝতে পেরেছেন আদৌ।
গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো আরিয়ান।রেগে স্পর্শীর দিকে এগিয়ে আসতেই পুনরায় ঠাস করে থাপ্পড় মারলো।তখন রুম থেকে রেগে বের হলেও বাড়ি থেকে বের হয়নি পিপাসা।মেয়ের চিন্তায়ই এনগেজমেন্ট পর্যন্ত থেকে যেতে হয়েছে।নিচে যাবে না বলে ছাদে এসে বসে ছিলো।হুট করেই নিচের এই চমকপ্রদ ঘটনা দেখে অন্তরাত্মা লাফিয়ে উঠলো।দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে বাইরে আসার জন্য ছুটলো।
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৮
গটগট পায়ে ড্রয়িংরুমে ঢুকলো স্পর্শী।গলার আওয়াজ উঁচু করে বললো,
” আব্বু,তোমার আনা এই পাত্রকে আমার পছন্দ হয়নি।নেক্সট টাইম পাত্র আনার আগে চরিত্রের দিকে নজর রাখবে।”