একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪২

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪২
Mousumi Akter

সারাহ জারবেরা ফুলের ডালা হাতে মোহগ্রস্থ চোখে মুখে ধীর পায়ে উপরে উঠছে। পা দুটো যেন ভারী হয়ে আসছে তার। মাত্র কয়েকটা সিঁড়ি তাও রাস্তা ফুরাচ্ছেনা। বুকের মাঝে দুরু দুরু শব্দ হচ্ছে। মনপাড়ায় যেন এক অদ্ভুত কম্পন শুরু হয়েছে। বিয়ের পর অসংখ্যবার অজ্ঞাত কেউ তার ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়েছে, উপহার পাঠিয়েছে, ফোনে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসছে। বারবার এসবের মালিক হিসাবে আরিয়ানের নামটাই তার মনে ভেষে উঠেছে। কেন যেন মনে হয়েছে এসবের মালিক আরিয়ানই। ভুলক্রমেও রোশান সিদ্দিকী’র নাম তার হৃদয়আঙিনায় ভেষে ওঠেনি। কীভাবে ভেষে উঠবে।

বিয়ের দিন অনিচ্ছাকৃত রোশান সিদ্দিকী’কে বিয়ে করতে হয়েছে। এমনকি রোশান সিদ্দিকী নিজেও জানত না কার সাথে তার বিয়ে হচ্ছে। বিয়েটা নিয়ে সে নিজেই বরং বিরক্ত ছিলো। বিয়ের দিন তার বাবা ফোনের সিম চেঞ্জ করে দেন। সেই নতুন সিমেই রেগুলার ভালবাসাময় মেসেজ আসতে শুরু করে। রোশান স্যার তো বিয়ের পরেরদিন ই আমাকে ভালবাসেন নি, তাহলে উনি সেই মানুষটা কীভাবে হবেন। কিন্তু আজকের এই ফুল পাঠানো তো রোশান স্যারকেই ইঙ্গিত করছে। বাই এনি চান্স কপ্নভাবে উনি আমাকে প্রথমদিন থেকেই ভালবাসতেন না’তো। সারাহ’র মাথায় কিচ্ছুই ঢুকছেনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তবে কেন যেন সব প্রশ্নের উত্তর রোশান স্যারের কাছেই আছে। আমার তো কোনদিন জারবেরা ফুল পছন্দই ছিলোনা। আজ এমনিই মনে হল জারবেরা ফুলের কথা। আরিয়ান তো জানত আমার বেলি ফুল পছন্দ। সে দিলে তো বেলি ফুল দিবে। জারবেরা নয়। সারাহ এক’পা দু’পা করে ঘরে প্রবেশ করল। হন্য হয়ে বেলকনিতে গেল৷ রোশান সিদ্দিকী বেলকনিতে কাপড় মেলে দেওয়ার জন্য দঁড়ি বাঁধছিলো। জারবেলা ফুলের ডালা হাতে সারাহ দাঁড়িয়ে আছে রোশান সিদ্দিকী’র মুখোমুখি। কি অদ্ভুত সুন্দর তাকে দেখাচ্ছে। রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র চোখের অনন্ত মায়ায় ডুবল। হাতের দঁড়ি ফেলে দিয়ে গভীর চোখে সারাহ’র দিকে চেয়ে রইলো। ইন্ট্রোভার্ট মানুষটা নিজেকে আজ কন্ট্রোল রাখতে পারছেনা। বরং চিৎকার দিয়ে সারাহ’কে জড়িয়ে ধরে সারা শহরকে জানাতে ইচ্ছা করছে, ‘এই অসম্ভব মায়াবী মেয়েটাকে আমি একটু বেশীই ভালবাসি। যার চোখের অনন্ত মায়ায় ডুবেছি আমি। হৃদয়আঙিনায় তোমাকে খুঁজে না পেলে নিঁখোজ বিজ্ঞাপ্তিতে ছেঁয়ে দিবো তোমার শহর। ‘

সারাহ আচমকা রোশানের গেঞ্জির কলার টেনে তার দিকে টেনে নিলো রোশান স্যার’কে। সম্পূর্ণ আন্দাজে আর মনের সন্দেহে রোশান’কে সন্দেহ করে বলল,
” কেন এত লুকোচুরি করেন আমার সাথে শ্যামসুন্দর পুরুষ? কেন করেন?”
রোশান বাইরে তাকিয়ে বলল,
” পাশের বিল্ডিং এর মানুষজন কিন্তু ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করে ক্যাপশন দিবে, কার বউ এমন দ’জ্জা’ল।”
সারাহ মুহুর্তের মাঝে রাগান্বিত হয়ে বলল,

” মজা করার মুডে নেই আমি। আজ উত্তর লাগবে আমার।”
রোশাণ সারাহ’কে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
” বাচ্চা মেয়ে বিয়ে করে কি বিপদে আছি। মান ইজ্জত কিছুই রাখবেনা দেখছি। নিজের বরকে মা’র’বা যখন রুমে দরজা লাগিয়ে মা’রো। ”
সারাহ পা ছোড়াছুড়ি করে বলল,
” আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন। আমি কি আপনাকে মে’ রে’ ছি নাকি। আজ আমি ভীষণ সিরিয়াস, আমি আমার উত্তর চাই।”
রোশান সারাহ’কে বিছানায় ফেলে বলল,
” কি জানতে চাও?”
সারাহ ফুলগুলো ইশারা করে বলল,

” এইফুলগুলোর ব্যাপারে। ফুলগুলো আপনি ছাড়া কেউ পাঠায়নি আমি জানি। এতদিন ওই গিফটগুলা, ওই চিঠি ওসব ও কি তাহলে আপনি পাঠাতেন। আজ সত্য না বললে বাসা ছেড়ে চলে যাবো আমি। এটা নিয়ে অনেকদিন চিন্তায় আছি আমি।”
রোশান এইবার নিজেও সারাহ’র পাশে সুয়ে পড়ল। দুষ্টু হেসে বলল,
” উত্তর দিতে পারি এক শর্তে।”
সারাহ উত্তর জানতে আগ্রহী৷ সে অতি আগ্রহী কণ্ঠে বলল,
” কি শর্ত বলুন।”
রোশান তার ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে বলল,
” জাস্ট একটা চুমু। ”
সারাহ লজ্জায় চোখ বড় বড় করে চাইলো। রোশানের ঠোঁটে দুষ্টুমির ছড়াছড়ি লেগেই আছে। সারাহ লজ্জায় অন্যদিকে ঘুরল। লাজুক কণ্ঠে বলল,

” এসব পারব না আমি। ছিঃ দিন দুপুরে এসব। অস্তাগফিরুল্লাহ।”
রোশান প্রশ্ন করল,
” তাহলে রাতে পারবে?”
ইশ কি লজ্জাজনক কথা৷ সারাহ এসব কি বলছে৷ কি লজ্জাজনল কথা এসব। সে লজ্জায় একেবারে গুটিসুটি হয়ে উত্তর দিলো,
” আমার লজ্জা করে। এসব মোটেই পারব না।”
” লজ্জা ভাঙেনি এখনো তোমার? ”
নির্লজ্জের মত কি বিশ্রী প্রশ্ন। সারাহ লজ্জায় মুখ ঢাকল হাত দিয়ে৷ রোশানকে বলল,
” আপনি কি আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন?”
” শর্ত না মানলে দিবোনা।”
সারাহ বুঝে গিয়েছে এই লোকটা দিন দিন চরম অসভ্যতে পরিণত হচ্ছে। এখন চুমু একটা কেন দশটা দিয়ে হলেও সত্যটা জানতে হবে। সারাহ কোনো কথাবার্তা না বলে রোশানের দিকে ঘুরেই রোশানের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলল,
” এইবার বলুন।”

রোশান সারাহকে নিজের বুকে টেনে নিলো সাথে সাথে। সারাহ’র চুলে হাত বুলোতে বুলোতে বলল,
” কি জানতে এত ব্যাকুল আমার ছোট্ট বউটা।”
” এই ফুল, আগে আসা গিফট, চিঠি, ফোনে মেসেজ এসব আপনিই দিতেন তাইনা?”..
রোশান সারাহ’কে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
” জি ম্যাডাম আমিই।”
সারাহ’র বুকের ওপর থেকে মস্তবড় একটা পাথর সরে গেল। দুঃচিন্তা গুলো আস্ত একটা সুখের পৃথিবীতে পরিণত হল। আনন্দে এখন কেদে দিতে ইচ্ছা করছে। সারাহ নিজেকে সামলাতে পারল না। সে কেদেই দিলো খুশীতে৷ রোশানের বুকে মাথা গুজে কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
” আপনি খুব পঁচা। ছাড়ুন আমাকে। কেন এতদিন চিন্তায় রেখেছেন আমাকে। আগে বললে আমাদের ভালবাসাটা আরো আগেই হয়ে যেত।”

” আগে বললে তুমি কি এগুলা গ্রহন করতে। ছুড়ে ফেলতে আমার মুখের ওপর। আরো কত কথা শুনাতে।”
” তা ছাত্রীকে পাত্রী বানালে কথা শুনাব না। আগে বলুন আপনি কি প্রথম দিন থেকেই আমাকে ভালবাসতেন? মেসেজ আর চিঠিতে যে লিখতেন।”
রোশান সারাহ’র মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে কপালে চুমু খেয়ে বলল,
” অফ কোর্স আগেই ভালবাসতাম৷ না হলে কি এত ঝ’ড় তুফান পেরিয়ে বিয়ে করতাম।”
সারাহ’র কৌতুহল বাড়ল। চট করে বলল,
” কাহিনী কি বলুনতো।”
“সব বলব। তার আগে তোমাকে কিছু শেয়ার করতে চাই৷ আসলে মানুষের মন খারাপের গল্প শুনলে আমার ভাল লাগেনা। কেমন একটু ডিস্টার্ব লাগছে নিজের। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে যিনি থাকেন উনাকে নিয়ে।”..

” কেন কি হয়েছে?”
” তুমি একটু উনার ফ্ল্যাটে যাওতো। ”
সারাহ সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” কেন? কি হয়েছে?”
” উনার মেয়েটাকে একটু দেখে আসবে আর আমার কাছে নিয়ে আসবে। তুমি আর আমি মিলে বুঝাতে চাই। মেয়েটা একটা ভাদাইমা ছেলের সাথে রিলেশন করে ফেঁসে গিয়েছে। লোকটা ভীষণ চিন্তা করছে মেয়েকে নিয়ে। সন্তান ভুল পথে গেলে মা-বাবার কত চিন্তা।”
সারাহ রোশানকে জড়িয়ে ধরে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪১

” কাল গেলে যাব, আজ নয়। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। পুরা রাতটা আপনার বুকে মাথা গুজে কাটাতে চাই।”
রোশান সারাহ’কে আরো একটু শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” আই লাভ ইউ।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৩