রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪০

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪০
সিমরান মিমি

“থাপ্পড় মেরে সবক’টা দাঁত ফেলে দেব। বেয়াদ্দপ মেয়ে।নিজের চরিত্রের ঠিক নাই।দিন দুপুরে ছেলে নিয়া কক্সবাজার ধরা খায়।আবার আমার ছেলেকে চরিত্রহীন বলতে আসছে।তোর ভাগ্য ভালো যে আমার ছেলের জন্য নিতে আসছি তোরে।ভাইজান না বললে পা ধরলেও রাজি হইতাম না।মায়ের মতো চরিত্র পাইছোস।তোর মাও চরিত্রহীন ই ছিলো।একটানা উনিশ বছর বাড়ি থেকে পালাইছে প্রেমিকের হাত ধইরা।যাবার সময় মেয়ে নিছে একটা।আসার পর ধরাইয়া দিছে দুইটা।কার না কার মেয়ে,পরিচয় নাই।এখন আমার ভাইয়ের উপরে চাপাইয়া দিছে।লজ্জা নাই, সরম নাই।দিনের পর দিন পরে আছে।এরা আবার আমার ছেলের চরিত্র নিয়া কথা বলে।”

বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল স্পর্শী।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো ক্রমশ।হাত পা গলা কাঁপছে।চোখ গুলো রক্তলাল হয়ে টলমল করে উঠছে অপমানে।সোভাম এগিয়ে গেল শান্তি বেগমের দিকে।বুঝানোর স্বরুপ বললো,”চুপ করুন ফুপি।আমি কথা বলে দেখছি।”
তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো শান্তি বেগম।”চুপ করবো কেন?ও আমার ছেলের চরিত্র নিয়া কথা বলে।কত্ত বড় সাহস!ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের কইরা দিলে রাস্তায় রাস্তায় ঠোকর খাইবে।একটা তো গেছে রাতের আঁধারে পরপুরুষের হাত ধইরা।কি ভাবছিস?শিকদার বাড়ির বউ বানাবে।শিকদার বাড়ির কাজের লোক ও বানাবে না তোদের।বেশি না পনেরো টা দিন ভোগ টোগ কইরা লাত্থি দিয়া আবার জায়গামতো দিয়া যাবে।তখন আবার আমার ভাইয়ের ঘাড়েই উঠবে।এক একটা নষ্টা আইসা আমার ভাইয়ের গলায় ঝুইলা পড়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তুই কে?আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার তুই কে?এইটা আমার বাড়ি।শামসুল সরদার আমার বাপ লাগে।আমি এই বাড়ির মেয়ে।আমার যথেষ্ট অধিকার আছে।তুই কোন সাহসে আমাকে বের করবি।তোর সাহস হয় কি করে আমার মাকে চরিত্রহীন বলার।আমার মা প্রেমিকের হাত ধরে পালাইছে?তুই কি ছিলি আমার মার সাথে?অসভ্য,খ’চ্চর,দ’জ্জাল মহিলা।তোর ছেলের চরিত্র দেখেই বুঝতে পারছি তুই ঠিক কি ধরনের হবি।”
বাকহারা হয়ে গেল শামসুল সরদার। স্পর্শী ক্রমশ রাগে হিতাহিত জ্ঞান শূণ্য হয়ে শান্তি বেগমের দিকে এগোচ্ছে।ভয় পেয়ে গেল পিপাসা।ছুটে গিয়ে মেয়েকে পেছন থেকে ধরলো।কাঁধ ধরে পেছনে আনতে আনতে বললো,”চুপ কর,উনি তোর বড় হয়।রুমে চল মা।চল। ”

অবাকের সপ্তম পর্যায়ে পৌছালো শান্তি বেগম।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ভাইজান,আপনি কিচ্ছু বলবেন না?ছিহঃ!কি ব্যবহার?”
অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন শামসুল সরদার।দিশেহারা হয়ে সোফায় বসে পড়লেন।”তোরা একটু থাম। কি শুরু করলি?”
ফুঁসে উঠলো আরিয়ান।”কি শুরু করলাম মানে?শুরুটা তো তোমার মেয়েই করলো মামা।মাকে তুই -তুকারি করলো তাও তুমি কিচ্ছু বললে না।ডেকে এনে চরিত্রহীন মেয়েকে দিয়ে অপমান করাচ্ছো?আবার বিয়ের কথা বলছিলে?মেয়েকে চাপিয়ে দিতে চাইছিলা আমার মাথায়।এরকম কতগুলো ছেলের সাথে হোটেলে কাটিয়েছে আগে সেসবের খোঁজ নাও।

মাথা নুইয়ে পায়ের জুতোটাকে হাতে নিলো স্পর্শী।ছুঁড়ে মারলো আরিয়ানের মুখের উপর।ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাই পুনরায় থমকে গেল।স্পর্শী চিৎকার করে বললো,
“তোকে আমার জুতোও বিয়ে করবেনা শু’য়ো *য়ে**র বা*চ্চা।বের হ আমার বাড়ি থেকে।নইলে ঝাড়ু দিয়ে পেটাতে পেটাতে বের করবো।”
জাহাঙ্গীর রহমান উঠে দাঁড়ালেন।ছেলের উদ্দেশ্যে বললো,”যা অপমানিত হওয়ার হয়েছো।এবারে দয়া করে চলে আসো।”

বলে তিনি হাটা শুরু করলেন।শান্তি বেগম চিৎকার করে উঠলেন।”এটা আমার বাপের বাড়ি।কেউ যাবা না।ও আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কে?”
চোখ দুটো রাঙিয়ে তাকালো স্ত্রীয়ের দিকে।বললো,”ঠিক আছে।তুমি থাকো।আমি তালাক নামা টা পাঠিয়ে দেব খুব তাড়াতাড়ি। “চমকে উঠলেন শান্তি।স্বামীর পিছু পিছু ছুটতে ছুটতে বললেন,” এসব কি বলতেছো?আমি কি করলাম?এই বয়সে আমার বাপের বাড়ি বইসা তুমি আমারে অপমান করতেছো?”
কোনো উত্তর দিলো না জাহাঙ্গীর রহমান। উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। শব্দ শুনতেই পেছনের সিটে উঠে বসলেন শান্তি ও তার ছেলে।

“শান্তি আমাদের বংশের সবার বড়। তোমার ফুপি হয়।একজন বয়স্ক মানুষের সাথে তার স্বামী সন্তানের সামনে এই ধরনের অভদ্র আচরণ করতে খারাপ লাগলো না তোমার?গত উনিশ বছরে এই শিক্ষা দিয়েছে তোমার মা?”
স্তব্ধ হয়ে গেল স্পর্শী।কন্ঠ যেন চেপে ধরেছে কেউ।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,”আর উনি যে আম্মুর চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে।আমাকে চরিত্রহীণ বলেছে।অপমান করেছে।তার বেলায়?”
থমথমে দৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকালো শামসুল।”তোমার কর্মকান্ডে এসব বলতে বাধ্য হয়েছে ও।”
“ওহহ আচ্ছা!”

বলে থামলো স্পর্শী।মাথা নিচু করে মায়ের দিকে একবার চাইলো।তিনি এখনো মেয়ের হাত ধরে থামার ইশারা দিচ্ছেন।চোখদুটো তার ভেঁজা।লম্বা করে নিঃশ্বাস নিয়ে বাবার দিকে এগিয়ে এলো।শান্ত কন্ঠে বললো,
“আপনার মেয়েকে আপনার বোন চরিত্রহীন বললো,স্ত্রীকে চরিত্রহীন বললো,মেয়ের জন্ম নিয়ে প্রশ্ন করলো, আমি হোটেলে অজস্র ছেলেদের নিয়ে থেকেছি সেসব বললো,আমাকে আমার বাবা,ভাই,চাচা,চাচি এমনকি পুরো পরিবারের সামনে একপ্রকার পতিতা বলে গেল। তাতে খারাপ লাগে নি একটুও?নাকি উপভোগ করছিলেন বিষয়গুলো।আমাকে উড়ে এসে জুড়ে বসা বলে গালি দিলো, অপমান করলো,তাতেও কি খারাপ লাগেনি?কি হলো চুপ করে আছেন কেন?আমাকে আপনি জন্ম দেন নি?ক্লিয়ার করে বলে দিন।আমি শুনতে ইচ্ছুক।
থেমে,

জন্ম দিলে অধিকার দিতে হয় জানেন না?বিপদে আপদে বাবা হয়ে সবার সামনে ঢাল হতে হয় সেটাও জানেন না?তাহলে জন্ম কেন দিয়েছিলেন?আর এতোদিন পর ফিরে আসার পরেও কেন ঘরে তুললেন?ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলতেন,” তোর মা অসভ্য,চরিত্রহীন,প্রেমিক নিয়ে পালিয়েছে।তোরা আমার সন্তান না।তোদের কে আমি জন্ম দেই নি।কোনো অধিকার ও দিতে পারবো না।”

ব্যাস!এতেই তো হয়ে যেতো।এতো নাটক করার কি ছিলো?আপনি কি ভেবেছেন আপনার পরিচয় ছাড়া আমরা মরে যেতাম।কই গত বাইশ টা বছর তো কাউকে পরিচয় দিতে হয়নি।কি ভেবেছেন আপনি না থাকলে না খেয়ে মরে যেতাম?আরে আমার মায়ের আন্ডারেও তিন জন সংসার চালায়।সেখানে আমাদের দেখাশোনা কিছুই না।ভুল করেছে।আমার মা ভীষণ বড় ভুল করেছে।ওর উচিত ছিলো এখান থেকে যাওয়ার পর ভালো একটু শক্ত মেরুদন্ডের পুরুষকে বিয়ে করা।কিন্তু সন্তানের দিকে তাকিয়ে করেনি।এটা ভীষণ রকমের ভুল ছিলো।আর তার থেকেও বড় ভুল ছিলো মাকে ভুল বোঝা।আমি ভেবেছিলাম উনিশ বছর আগে মা ছেলেমানুষী করেছিলো।কিন্তু এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ঠিক কি ধরনের পরিস্থিতিতে মা তার চার বছরের সংসার ছেড়েছে।এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ মেরুদন্ডহীণ।এদের অন্তর টা কালো হয়ে আছে বিষের প্রভাবে।ভেতরটা কুৎসিত আর দুর্গন্ধযুক্ত।সেখানে ভাবনা চিন্তা এমন হওয়াই স্বাভাবিক।আর এই বাড়িতে পুনরায় পা দেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।আর স্পর্শী নিজের ভুল শুধরাতে খুব বেশি সময় নেয় না। ”

শামসুল সর্দারের যেন হুশ ফিরলো।চোখমুখ চকচক করে উঠলো।আমতা-আমতা করে বললো,
“উত্তেজিত হয়ো না।তুমিও কিছু কম বলো নি,আর শান্তিও কম বলেনি।তুমিও এ বাড়ির মেয়ে আর সেও এ বাড়ির ই মেয়ে।যাই হোক,আমি ওকে বলে দেব ” তুমি বিয়ে করছো না।”মাথা গরম করো না রুমে যাও।ও হয়তো রেগে এতোকিছু বলে দিয়েছে।মাথা ঠান্ডা হলে নিজেই ভুল বুঝতে পারবে।”
হেসে দিলো স্পর্শী।চমকালেন উপস্থিত সবাই।সোভাম নিরব ভঙ্গীতে মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে।যেন বর্তমান ঘটনা গুলো তাকে শকড করে দিয়েছে।মায়ের হাত টেনে সোজা নিজের রুমে চলে গেল।
“তোমার জামা-কাপড় কি গোছানো?দ্রুত নিয়ে আসো। ”

পিপাসা আলমারির দিকে ছুটলেন।ভাঁজ করা শাড়ি তিনটা নিয়ে এগিয়ে এলো।স্পর্শীর লাগেজ টা গুছানো।গতরাতের পর আর সেটাকে খোলা হয়নি।বেছে বেছে দুই সেট দামী পোশাক বের করলো।কানের বড় সোনার ঝুমকা জোড়া খুলে হাতে নিলো।এরপর লাগেযে মায়ের জামাকাপড় ভরে হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে এগিয়ে এলো নিচে।সিঁড়ির মাথায় থাকতেই শরীরের সর্বোচ্চ জোড় নিয়ে বাবার দেওয়া ল্যাপটপ টা ছুড়ে মারলো নিচতলায়।ভেঙে খানখান হয়ে গেল মুহুর্তেই।শিউরে উঠলো সবাই।ইতোমধ্যে নিচে নেমে এসেছে দুজন।হাতের ড্রেস দুটো আর কানের ঝুমকো জোড়া ও বাবার সামনে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারলো। ঘেন্না নিয়ে বললো,

“আপনার বা আপনাদের সাথে আমার কখনো দেখা হয়েছে কি না এটাই ভুলে যেতে চাই।”
এরপর মায়ের হাত ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো। মুহুর্তেই বাঁধা দিলো সোভাম।সামনে এসে স্পর্শীর হাত ধরে আটকাতে চাইলেই ক্ষুদ্ধ হয়ে যায়। লাগেজ ছেড়ে সোভামের বুকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় সামনে থেকে।ক্রোধমিশ্রিত কন্ঠে বলে,
“এতোক্ষণ যেমন পুরো ঘটনা গুলো উপভোগ করেছেন। এখনো নিশ্চুপ হয়ে সেটা করেন।ভালোই তো লাগছিলো মা-বোনের চরিত্র নিয়ে খুবই অশ্লীল কথাবার্তা শুনতে।ওপসসস!সরি।সৎ মা-বোন।আর হ্যাঁ বলেছিলেন না, কি হতো নিজের মেয়েদের সাথে যদি মা আপনাকেও বড় করতো ছেলের মতো করে।তাহলে শুনুন।উত্তর টা আমি দিচ্ছি।কোনো মেরুদন্ডহীন পুরুষকে আমার মা পালে না।তাই আমার মায়ের কাছে আপনার জায়গা হয় নি।”
হতবাক হয়ে গেল শামসুল।স্পর্শী চলে যাচ্ছে এটা মস্তিষ্কে ধাক্কা দিতেই ছুটে এলো।মেয়ের হাত থেকে লাগেজ নিয়ে বললো,

“আম্মু, মাথা গরম করে না।আমার কথা শোনো।একটু শান্ত হও।বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে?এটা তোমার বাড়ি।এখানে তোমার অধিকার আছে।কেউ বললেই কি হলো নাকি?শান্তি আর এ বাড়িতে আসবে না।আমি বারন করে দিবো। ও রাগের মাথায় কি না কি বলেছে সেই জন্য সব হবে নাকি?”
থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো স্পর্শী।শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমার লাগেজ দিন।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৯

“না দেবো না।” বলে স্পর্শীর হাত ধরতে এলেই ছিটকে দূরে সরে গেলো।দাঁতে দাঁত পিষে বললো,”ডোন্ট টাচ মি!ভুলেও না।আপনাকে আমি ঘেন্না করি।আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ঘেন্না লাগে। বুঝতে পারছেন না আপনি।আর আমাকে ছুঁতে আপনার ঘেন্না লাগছে না।আমি তো হাজার টা ছেলে নিয়ে যেখানে সেখানে থাকি।আমি তো চরিত্রহীন।আপনার আদুরে বোন বলেছে,আর আপনি চুপ থেকে সম্মতি দিয়েছেন।”
এরপর হাত থেকে ছোঁ মেরে লাগেজ নিয়ে গেলো। মাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪১