শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৫
সুমাইয়া সুলতানা
মধ্যরাতে সবকিছু যেমন নিস্তব্ধতায় ছেয়ে থাকে? ঠিক তেমনি বদ্ধ কক্ষে দুজন নরনারী’র শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যতীত আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। আগুনের এমন হুট করে কাছে আসায় মোমের ছোট্ট সত্তা কেঁপে ওঠে। গলা শুকিয়ে আসছে। বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডটা বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। হাত, পায়ে মৃদু কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে। আগুনের শক্ত হাতের মুঠোয় থাকা মোমের নরম হাতের সেই কম্পন টের পায় সে।
আগুনের চোখ দুটো বন্ধ ছিল। চোখ খুলে তড়িৎ বেগে মোমের থেকে ছিটকে দূর সরে যায়। পুনরায় চোখ বুঝে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। মোমের শরীর এখনো কাঁপছে। আগুনের বলা এক একটি শব্দের বাক্য তীরের মতো ছুটে গিয়ে তার হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। মোম অবুঝ নয়। আগুনের বলা প্রতিটি বাক্য সে গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছে। গ্রামে থাকতে পাশের বাড়ির ভাবি, নিজের বিবাহিত বান্ধবী, দাদি, নানির কাছ থেকে খুব ভালো ভাবেই জানতে পেরেছিল স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্ক কেমন হয়। এসব কিছু জানা সত্বেও মোমের মধ্যে ভয় কাজ করছে। কেন হচ্ছে? সেটা বুঝতে পারছে না। আগুন মনে মনে অনুতপ্ত। এক্ষুনি কি করতে যাচ্ছিল ও? মোমের পারমিশন ছাড়া তার এতটা কাছে যাওয়া উচিত হয়নি। মোমের নিশ্চয়ই অস্বস্তি হচ্ছে? আগুন অপরাধী গলায় বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” সরি, মোম। কিছু মনে করো না। আর এরকম হবে না। ”
মোম চকিতে তাকাল। ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বলল,
” ক্ষমা কেন চাচ্ছেন, আপনি? ক্ষমা চাওয়ার মতা তো কিছু হয়নি। ”
আগুন অবাক হয়ে জানতে চাইল,
” তুমি রাগ করো নি? ”
মোম সরল গলায় জবাব দিল,
” নাতো। রাগ কেন করবো? ”
আগুন সন্দেহী কন্ঠে শুধায়,
” তখন ওই ভাবে কাছে যাওয়ায় তোমার খারাপ লাগেনি? ”
একথায় মোমের ভীষণ লজ্জা লাগলো। মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলল,
” খারাপ লাগেনি। তবে কিছুটা ভয় করছিল। ”
আগুন ফোঁস করে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে হতাশ কন্ঠে বলল,
” আবার ভয়? ”
মোম গোমড়া মুখে বসে রইল। কিছু বলল না। আগুন নিজেই বলল,
” বাদ দেও এই টপিক। মুখ ফুলিয়ে বসে না থেকে ঘুমিয়ে পড়। ”
মোম চোখ তুলে আগুনকে একবার দেখে নিল। তারপর বালিশ ঠিক করে নিজের বরাদ্দকৃত জায়গায় ওদিকে মুখ করে ঠাস করে শুয়ে পড়ল। কোনো কারণ ছাড়াই মোমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মোম ভাবছে তখনকার বিষয়টা নিয়ে আগুন মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে। মোম’কে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না। কিন্তু মোম তা সত্যিই কিছু মনে করেনি।মোমের এমন আচরণে আগুনের ললাটে ভাঁজ পড়ল। আগুন হাত বাড়িয়ে মোমের কাঁধ স্পর্শ করে নিজের দিকে ফেরালো। মোম মুখ কালো করে অন্য দিকে চেয়ে আছে। আগুন ভরাট কন্ঠে বলল,
” সমস্যা কি? মুখটা এমন প্যাঁচার মতো করে রেখেছ কেন? ”
মোম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে ব্যগ্র কন্ঠে বলল,
” আমার তো কোনো সমস্যা নেই। মনে তো হচ্ছে আপনার সমস্যা। ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” আমার আবার কি সমস্যা হবে? ”
” সমস্যা না হলে আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন? ”
” আশ্চর্য! কিভাবে কথা বলছি? ”
” আমি তো বললাম, আমি কিছু মনে করিনি। তবুও ওই ব্যাপারটা নিয়ে আপনি গিল্টি ফিল করছেন। যা আমার সহ্য হচ্ছে না। ”
আগুন থমথমে খায়। রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলো,
” আমি কি বলেছি, আমি কষ্ট পাচ্ছি? ”
মোম ঠোঁট উল্টে বলল,
” বলতে হবে কেন? আমি কি বাচ্চা নাকি? যে বুঝতে পারবো না। ”
আগুন ঠোঁটে ঠোঁট চেপে এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” জ্বি, আপনি অনেক বড়ো। তা বড়ো মানুষ, আপনি আমার না বলা কথা গুলোর মধ্যে আর কি কি বুঝতে পারেন? ”
মোম গোল গোল মুখ করে তাকায়। ডাগর ডাগর আঁখি তুলে কয়েকবার পলক ঝাপটি মারে। চিকন পুরো ঠোঁট দুটো নেড়ে নেড়ে বলল,
” আমি তো আপনাকে’ই ঠিক মতো বুঝতে পারি না। তাহলে আপনার না বলা কথা গুলো কিভাবে বুঝবো? ”
আগুন চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” না বুঝতে পারলে আমি যে মনে মনে গিল্টি ফিল করছি, একটু আগে সেটা কিভাবে বুঝতে পারলে? ”
” ওটা তো পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে বুঝতে পেরেছি। ”
আগুম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মোমের মুখে মিটিমিটি হাসি। আগুনকে জ্বালাতে পেরে সে মহা খুশি। কুমড়ো মার্কা লোক একটা। কথায় কথায় শুধু ধমক দেয়। বেশ হয়েছে। তবে হাসিটা চিরস্থায়ী হলো না। আগুন রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছে মনে পড়তেই জ্বলন্ত হাসিটা ধপ করে নিভে গেল। শোয়া থেকে ওঠে আগুনের পিছু ছুটলো।
আগুন ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে। মথাটা ভীষণ ভার ভার লাগছে। জীবনে কোথা থেকে কি হচ্ছে, কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। চারপাশের সবকিছু বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে নিরিবিলি কোথাও গিয়ে বসে থাকতে। কিছুটা সময় একাকিত্ব ভাবে কাটাতে ইচ্ছে করছে। মোম, আগুন’কে খুঁজতে খুঁজতে ড্রয়িংরুমে এসে হাজির হয়। গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় আগুনের নিকট। আগুনের দৃষ্টি ফ্লোরে নিমজ্জিত। মোম গিয়ে আগুনের পাশে বসলো। শুকনো ঢোক গিলে মিনমিন করে বলল,
” কি হয়েছে? চলে আসলেন যে? ঘুমাবেন না? ”
আগুম চোখ তুলে তাকায় মোমের দিকে। মোম মাথা নিচু করে নিল। আগুন দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। জানালার পর্দার দিকে চেয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তুমি আবার ওঠে এসেছ কেন? যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। ”
” আপনি আসবেন না? ”
” আসছি একটু পরে। তুমি যাও। ”
মোম গেল না। ঠায় বসে রইল। অজান্তেই চোখ দুটো জলে ভরে উঠেছে। সবকিছু অগোছালো মনে হচ্ছে। কেমন রুদ্ধশ্বাস অনুভূতি হচ্ছে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
” আপনি কি আমার উপর বিরক্ত? আমার কোনো কথায় কষ্ট পেয়েছেন কি? কি করেছি বলুন না? এমন চুপচাপ বসে আছেন কেন? ”
মোমের আকস্মিক কান্নায় আগুন হতভম্ব হয়ে গেল। ললাটে প্রগাঢ় ভাঁজ পড়ল। ভ্রু কুঁচকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে মোমের আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করল। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে ভারিক্কি গলায় বলল,
” আমি ঠিক আছি। আর তোমার উপর কোনো বিরক্তও হইনি। অল্পতেই ভয় পাওয়া, কান্না করা এরকম ছিঁচ কাঁদুনে বউ আমার পছন্দ নয়। ”
মোম নাক টেনে টলমল চোখে চেয়ে মায়াভরা কন্ঠে বলল,
” আপনি আমার থাকে দূরে থাকলে আমার ভালো লাগে না, মাস্টার মশাই। আপনার রাগী, গম্ভীর লুক টাই আমার ভালো লাগে। আপনাকে জ্বালালে আপনি বরং আমাকে বকুনি দিয়েন। তবুও রাগ করে থাকবেন না। ”
মোমের কথায় আগুন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছে। কাকে বুঝালো এতক্ষণ? রেগে যাওয়ার প্রশ্ন কোথা থেকে আসছে? আগুন চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
” আচ্ছা একটা কথা বলোতো। তোমার সমস্যা কি? আমি রুম থেকে চলে আসায় নাকি তখন ওই ভাবে রিয়্যাক্ট করায়? ”
মোম গোমড়া মুখে উত্তর দিল,
” আপনি চলে আসায়। আমি জানি, আামার কথা’তেই তখন ওই ভাবে চলে এসেছেন। ”
আগুন মৃদু হাসল। দৃঢ় চোখে তাকিয়ে গমগম স্বরে বলল,
” বড়ো মানুষ, এখন চলুন ঘুমাতে হবে। বড়ো মানুষের সাথে তর্ক করে লাভ নেই। ”
বলেই আগুন বেডরুমের দিকে হাঁটা ধরল। এভাবে বারবার বড়ো মানুষ বড়ো মানুষ বলে কি মোম’কে অপমান করল? মোম গাল ফুলিয়ে আগুনের পিছু পিছু চললো।
আগুন বিছানায় গিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। এক হাত কপালে ঠেকানো। ডিম লাইট জ্বালানো। মোম এসে লাইট বন্ধ করে দেয়। মোম এতদিনে জেনে গিয়েছে, আগুন লাইটের আলোয় ঘুমাতে পারে না। বাইরে থেকে অল্প আলো খোলা জানালা দিয়ে রুমে প্রবেশ করেছে। আবছা আলোয় পা চালিয়ে মোম বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। মোমের ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করছে। তক্ষুনি আগুনের গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে,
” বুকে ঘুমাবে? ”
মোম দ্বিধা করল না। তড়িৎ বেগে ছোট্ট মাথাটা এলিয়ে দিলো পুরুষালী প্রসস্থ বুকে। আগুন এক হাত বাড়িয়ে আগলে নিলো সহধর্মিণী’কে। মোমও পেলব এক হাত দিয়ে আগুনকে জড়িয়ে ধরল।
” হ্যালো, আগুন। কোথায় তুই? ”
আগুন এক হাতে ড্রাইভিং করতে করতে উত্তর দিল,
” গাড়িতে। কলেজে যাচ্ছি। কোনো দরকার? ”
নাঈমা ডুকরে কেঁদে উঠল। উৎকন্ঠিত গলায় বলল,
” এক্ষুনি আমাদের বাড়িতে চলে আয়। খুব বড়ো বিপদে পড়েছি রে। প্লিজ যত দ্রুত সম্ভব আমাদের বাড়িতে চলে আয়। ”
আগুন কপাল কুঁচকে ফেলল। চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
” বিপদ! কিসের বিপদ? আমি তে কিছুই বুঝতে পারছি না। আঙ্কেল, আন্টি কোথায়? ”
” আম্মু-আব্বু বাড়িতে নেই। নানু বাড়ি গিয়েছে। আমার নানু অসুস্থ। ”
” তুই তাদের সাথে যাসনি কেন? আর না গেলে এতক্ষণে তোর হসপিটালে থাকার কথা। তাহলে তুই বাড়িতে কি করছিস? ”
নাঈমা জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। তীব্র উত্তেজনা দমিয়ে ছটফট কন্ঠে বলল,
” সকালে রেডি হয়ে হসপিটালে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে ছিলাম। তখন কোথা থেকে এক গুন্ডা এসে আমার পিছু নিয়েছে। ছু’রি নিয়ে এসে মা’রার হুমকি দিয়েছে। এখনো বাড়ির সামনে মেইন গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আগুন প্লিজ আমাকে বাঁচা। ”
” তুই চিন্তা করিস না। আমি এক্ষুনি আসছি। ”
গাড়ি ঘুরিয়ে নাঈমার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলো, আগুন। জ্যাম না থাকায় আধা ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে। গাড়ি পার্ক করে ভেতরে প্রবেশ করল। বাড়ির দারোয়ান আগুন’কে চিনেন। নাঈনার সাথে কয়েকবার এখানে এসেছিল। তাই আর কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। আগুন কয়েক কদম এগিয়ে পুনরায় পিছু ফিরে চাইল। দারোয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলল,
” চাচা, বাড়ির আশেপাশে অপরিচিত কাউকে দেখে ছিলেন কি? ”
দারোয়ান পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হেসে বললেন,
” তা তো বলতে পারবো না বাবা। আমি এসেছি সবে পাঁচ মিনিট হয়েছে। তবে আমি আসার পর কাউকে দেখিনি। ”
” জ্বি, চাচা। ধন্যবাদ। ”
আগুন ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডোরবেল চাপ দিতেই নাঈমা দরজা খুলে সহসা আগুন’কে জড়িয়ে ধরল। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি খাটিয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। নাঈমার কাজে আগুন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গিয়েছে। তড়িৎ বেগে নাঈমার দুই বাহু চেপে ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভ্রু কুঁচকে চওড়া গলায় বলল,
” নাঈমা কি করছিস এসব? ছাড় আমাকে। ”
” না ছাড়বো না। ছেড়ে দিলেই তুই পালিয়ে যাবি। তুই জানিস না? তোর ইগনোর আমি সহ্য করতে পারি না। তবুও কেন এত যন্ত্রণা দিচ্ছিস। এতো অবহেলা কেন করিস আামাকে? ”
আগুন জোর করে নিজের থেকে নাঈমাকে ছাড়িয়ে নেয়। ধমকে বলল,
” পাগল হয়ে গিয়েছিস নাকি? কি করছিস, কি বলছিস কোনো খেয়াল আছে তোর? ”
নাঈমা উন্মাদের মতো বলতে লাগল,
” হ্যাঁ, হ্যাঁ! আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। আর সেটা তোর জন্য। আমাকে বিয়ে করবি কবে বল? চল, আজকেই আমরা বিয়ে করে ফেলি। ”
আগুন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে সন্দেহী কন্ঠে বলল,
” তোকে নাকি কোন গুন্ডা তাড়া করেছিল? সেটা কি মিথ্যা ছিল? আমাকে বাড়িতে ডেকে আনার জন্য মিথ্যে বলেছিস, তাই তো? ”
নাঈমা ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিল,
” হ্যাঁ। মিথ্যা কথা বলে তোকে ডেকে এনেছি। মিথ্যা না বললে কি তুই আসতি? উল্টো আমি নিজে থেকে তোর কাছে গেলে ইগনোর করিস। ”
সহসা আগুনের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। রাগে শরীরের গরম রক্ত টগবগিয়ে উঠছে। হাত দুটো মুঠো করে নেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” এরকম পাগলামোর মানে কি? তুই জানিস না এটা আমার কলেজ টাইম? ”
নাঈমা, আগুনের কাছে এসে হাত বাড়িয়ে তার এক গাল ছুঁয়ে মোহনীয় কন্ঠে বলে উঠলো,
” তুই কেন বুঝতে পারছিস না? আমি তোকে খুব ভালোবাসি। একবার আমার হয়ে দেখ, তোকে আমার ভালোবাসার যাঁতাকলে মুড়িয়ে রাখবো। ”
আগুন হাত সরিয়ে দেয়। রেগে গমগম স্বরে বলল,
” কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। তার জায়গা তুই কখনোই নিতে পারবি না। তোকে শুধু বন্ধু মনে করি। এর বেশি কিছু না। যদি চাস আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে না যাক, তাহলে এরকম আর কক্ষনো করিস না। ”
বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। নাঈমা পেছন থেকে আগুনের শার্টের কলার টেনে ধরে কাতর গলায় বলল,
” তুই আমার সাথে এমনটা করতে পারিস না। একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল, একটু আগে যা বলেছিস মিথ্যা বলেছিস। ”
আগুন ঘুরে নাঈমার দিকে রক্তিম চোখে তাকায়। নাঈমা শুষ্ক ঢোক গিলে কলার ছেড়ে দিল। আগুন চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” দ্বিতীয় বার আমার কলার ধরার সাহস করিস না। তাহলে এর পরিণাম খুবই খারাপ হবে। ”
নাঈমা আগুনের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তুই যাকে ভালোবাসিস, কে সে? কোথায় থাকে? ঠিকানা দে। আমি তাকে দেখবো। সে কি আমার থেকে বেশি সুন্দরী? যার জন্য আমাকে মেনে নিতে পারছিস না। ”
” সে নিঃসন্দেহে তোর থেকে সু্ন্দর। একটু বেশিই সুন্দর। তবে বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসার জন্য চাই সুন্দর একটি মন। যেটা তোর মধ্যে নেই। ”
” বললাম না ঠিকানা দে। আমি তাকে দেখতে চাই। ”
আগুন বিরক্ত হয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” তার ঠিকানা আমার বাড়িতে’ই। ”
নাঈমা ক্ষেপে উঠল। ঝাঁঝ নিয়ে বলল,
” তোর বাড়িতে মানে? সেই মেয়ে তোর বাড়িতে কেন থাকবে? ”
আগুন মুখ ফসকে রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলো,
” কারণ, সে আমার বিবাহিতা স্ত্রী। আমার বিয়ে করা বউ। আমার অর্ধাঙ্গিনী। তিন কবুল পড়ে বিয়ে করা সহধর্মিণী। ”
নাঈমা চমকে উঠে। বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে নিষ্ঠুরতম আগুনের দিকে। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে অবিশ্বাসের সুরে বলে,
” তুই বিয়ে করে ফেলেছিস? কবে? কখন? কোথায়? আমাকে জানাসনি কেন? ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” জানানোর প্রয়োজন মনে করিনি তাই জানাইনি।এখন তো জেনে গিয়েছিস। আমাকে যেতে হবে। অলরেডি অনেক লেট হয়ে গিয়েছে। এটা নিয়ে আর কোনো বারাবাড়ি করিস না। আসছি। ”
আগুন চলে গেল। নাঈমা দরজা ঘেঁষে ফ্লোরে বসে পড়ে। চিৎকার করে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে ক্রোধান্বিত কন্ঠে বলে উঠলো,
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৪
” তোকে আমি ছাড়াবো না, আগুন। তোর জন্য আমি আজ পর্যন্ত বিয়ে করিনি। তোর কথা ভেবেই আমার দিন শুরু হয়, রাত কাটে। আর সেই তুই আমাকে এতো বড়ো ধোঁকা দিলি? কিভাবে পারলি এমনটা করতে? তুই আমার ফিলিংস নিয়ে খেলেছিস। আমাকে কষ্ট দিয়ে তুই বউ নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াবি আর আমি সেটা চেয়ে চেয়ে দেখবো? এরকমটা ভেবে থাকলে তুই ভুল ভাবছিস। যেই যন্ত্রণা আমি পাচ্ছি, সেই একই যন্ত্রণা তোকেও ভোগ করতে হবে। ”