এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২২
তানিশা সুলতানা
“কি বলবে নিধি দ্রুত বলো। কাজ আছে আমার।
হাত ঘড়িতে নজর বুলিয়ে বলে অর্ণব। চোখে মুখে তার বিরক্তির ছোঁয়া। বেশ অনেকদিন যাবত নিধি তাকে বলে যাচ্ছে “পার্সোনাল কথা আছে” অর্ণবের সময় হয়ে ওঠে না। আজকেও তাড়া দেখিয়ে চলেই যাচ্ছিলো তখনই নিধি তাকে ধরে নিয়ে আসে।
নিধি মনে মনে কথা সাজিয়ে নেয়। গত তিন দিন যাবত কথাগুলো সাজাচ্ছে সে। কিন্তু ঠিকঠাক ভাবে বলতে পারবে কি না এটা নিয়েই কনফিউশান। আর অর্ণবের রিয়াকশন কেমন হবে সেটা ভেবেই নার্ভাসনেস।
নিধিকে চুপ থাকতে দেখে অর্ণব আবারও বলে ওঠে
“বলবে কি?
নাহলে যেতে হবে আমাকে।
চমকায় নিধি। অন্য ভাবনায় বিভোর ছিলো বিধায় অর্ণবের হুট করে বলা কথায় ভয় পেয়েছে। অর্ণবের কপালে ভাজ ফেলে নিধিকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। আজকে অন্য রকম লাগছে মেয়েটাকে। এইমাত্র অর্ণব খেয়াল করলো নিধি শাড়ি পড়েছে। এবং বেশ সুন্দর করে সেজেছে। দারুণ লাগছে নিধিকে৷ একটু প্রশংসা করতে চায় অর্ণব কিন্তু নিধির অদ্ভুত আচরণের জন্য বলে না।
নিধি জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বসে পড়ে অর্ণবের পাশে।
অর্ণবের হাতের ওপর হাত রেখে রিনরিনিয়ে বলে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আমি যা বলতে চাচ্ছি তা শুনে তুমি রেগে যাবে না তো?
নিধির হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়।
“ রাগার মতো কথা বললে রাগবো না?
শুকনো ঢোক গিলে নিধি। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে স্বভাবিক করার চেষ্টা করে। হার্টবিট অদ্ভুত ভাবে লাফাচ্ছে।
“বাই এনি চান্স তুমি কি আমায় প্রপোজ করতে চাচ্ছো?
সময় নষ্ট না করে অনবরত মাথা নারিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে নিধি। এটাই সুযোগ। অর্ণব আলতো হাসে।
“ঠিক আছে তোমার প্রপোজ করতে হবে না। আমিই তোমাকে প্রপোজ করছি।
নিধি অবাক হয়। মনের মধ্যে বাক-বাকুম পায়ড়ারা উড়তে থাকে। ইসস এতো দিনের ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে। অর্ণব চৌধুরী তাকে প্রপোজ করবে। এতো খুশি সে রাখবে কোথায়?
মুহুর্তেই নিধি ভেবে ফেলে আজকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অর্ণবকে ট্যাগ করে রিলেশনশিপ স্টাট্যাস দিবে এবং কালকেই লং ড্রাইভে যাবে।
“নিধি Will you be my Sister?
নিধির কানে সিস্টার কথাটা বোধহয় বাড়ি খায়। কি বললো? অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় অর্ণবের মুখ পানে। অর্ণব বাঁকা হেসে বলে
“তুমি আমার বন্ধু। বন্ধুরা বোনের মতোই হয়।
নিধি বেশ অনেকটা জোরে বলে ওঠে
“আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার বউ হতে চাই।
অর্ণব একটুখানি কিছু একটা ভাবে। অতঃপর জবাব দেয়
“ আপাতত বিয়ে করার জন্য একটা গাঁধা পেয়ে গিয়েছি। ইন ফিউচার দ্বিতীয় বিয়ে করলে তোমায় জানাবো।
বলেই অর্ণব চলে যেতে নেয়। নিধি অর্ণবের হাত ধরে। অর্ণব ঘাড় বাঁকিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকায়। নিধি ভয় পেয়ে ছেড়ে দেয় না। বরং শক্ত করে ধরে বলে
“আমি মজা করছি না। এ’ম সিরিয়াল।
“তোমার সাথে আমার মজা করার সম্পর্কও নয়। আমি একটা মেয়েকে অসম্ভব ভালোবাসি। তোমাকে বন্ধু এবং বোন ছাড়া অন্য কোনো দৃষ্টিতে কখনোই দেখি নি।
নিধি হাত ছেড়ে দেয়। আঁখিতে অশ্রু কণা জমে তার। ধরে আসা গলায় বলে
“মেয়েটা যদি তোমায় ভালো নাও বাসতে পারে।
“ ওর আমাকে ভালোবাসতে হবে না। আমি যতটা ভালোবাসি। সেই ভালোবাসা দিয়েই দুজনের পুষিয়ে যাবে।
অর্ণব চলে যায়। নিধি শব্দ করে কেঁদে ওঠে। এভাবে রিজেক্ট হবে কখনোই ভাবে নি সে।
বিকেলে মায়ের সাথে রসমালাই বানাচ্ছে তন্নি। ইউটিউব দেখে শিখেছে। তামিম ওদের পাশে বসেই পড়ছে। তারেক কোর্ট থেকে ফিরে নতুন কেচের জন্য কিছু বই ঘাটাঘাটি করছে রান্না ঘরের দরজার পাশে বসে। এখানে বসার কারণ হচ্ছে কারেন্ট নেই। বাইরে থেকে ফুরফুরে বাতাস আসছে। সেই বাতাস উপভোগ করতেই এখানে বসা।
পড়তে পড়তে হঠাৎ তামিম বলে ওঠে
“মা তোমার ছেলে একদিন মস্ত বড় মাফিয়া হবে।
ইতি চোখ পাকিয়ে তাকায় তামিমের মুখ পানে। তাতে তামিম ভয় পেয়ে চুপসে যায় না বরং আরও কনফিডেন্সের সাথে বলে
“ তখন বলে বলে মেয়ে তুলে বিয়ে করবো।
বারো চোদ্দটা পুত্রবধূ থাকবে তোমার। তোমার আর বাবার তো সোনার কপাল।
তন্নি ফিক করে হেসে ফেলে।
“এই স্বপ্ন দেখিস তুই?
“দেখতাম না তো। বসস জোর করে দেখাচ্ছে। আমি তো চেয়েছিলাম ছোটখাটো গুন্ডা হবো আর মেয়েদের ইফটিজিং করবো। কিন্তু বস বললো ইফটিজিং করাতে মজা নেই। আসল মজাই তো মেয়ে তুলে বিয়ে করা। আহহহহা মেয়ের বাপের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেয়ে বলবো শা******লি কবুল বল। নাহলে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবো।
তামিমের কথা শেষ হতে না হতেই একখানা চপ্পল উড়ে এসে পড়ে তামিমের গায়ে। চপ্পল খানা হাতে তুলে তামিম বলে ওঠে
“আব্বে শা***লা কে রে জুতো ফিক্কা মারল
বাকিটা শেষ করার আগেই বাবাকে দেখতে পায় তামিম।
“ওরেহহহহহহহহহ শাশুড়ী ররররররটে
তোমার মাইয়ার জামাইরে বাঁচাও
বলতে বলতেই এক ভৌ দৌড় লাগায় তামিম। পেন্ট খানিকটা খুলে পড়ছে। সেই অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারেক ছেলেকে তাড়া করতে উঠছিলো ঠিক তখনই বাড়িতে দুজন মহিলা ঢুকে পড়ে। তারেক চিনে তাদের। একজন হচ্ছে এমপির বউ আশা বেগম আরেকজন আশা বেগমের বোন সুমি।
তারেককে দেখে আশা বেগম সালাম দিয়ে হাসি মুখে বলে
“ভাই ভালো আছো?
তারেকও একটু হাসার চেষ্টা করে কুশলাদি বিনিময় করে ওনাদের উঠোনে চেয়ার টেনে বসতে দেয়। কারেন্ট থাকলে বসার ঘরে নিয়ে যেতো।
ততক্ষণে তন্নিদের রসমালাই বানানো শেষ। রসমালাই এর বাটি ড্রিপ ফ্রীজে ঢুকিয়ে তন্নিও আসে ওনাদের সাথে গল্প করতে।
গল্পের এক পর্যায়ে তন্নি যায় ওনাদের জন্য রসমালাই আনতে।
তখনই আশা বেগম বলে
“ ভাই আমার বোনের তন্নিকে খুব পছন্দ সে। চাচ্ছিলো তার ছেলের সাথে তন্নিকে নিতে।
“ভাবি কি বলছেন? আমার মেয়ে এখনো ছোট।
সুমি বলে
“ এখুনি বিয়ে দিতে বলছি না। আমরা কথাবার্তা এগিয়ে রাখি। তন্নির এইচএসসির পরে নাহলে বিয়ে নিয়ে ভাববো।
তারেক বেশ পছন্দ করে আদিলকে। যেমন দেখতে সুন্দর তেমন ভদ্র। বরাবরই দুর্দান্ত রেজাল্ট করেছে। আর এখন ভালো চাকরি করছে। তার মেয়ের জন্য এতো ভালো সমন্ধ আর কখনোই আসবে না ঢেড় জানে তারেক।
তাই অমত করে না। তবে শর্ত রাখে “কোনোক্রমেই এইচএসসির আগে বিয়ের প্রসঙ্গ তোলা যাবে না”
ওনারাও রাজি হয়।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২১
এবং ঠিক করে সামনে শুক্রবার তন্নিকে আংটি পড়িয়ে দিবে।
তন্নিও তখন রসমালাই নিয়ে আসে সকলের জন্য। সবাই বেশ প্রশংসা করে।
ইতি বেগম এক কোণায় দাঁড়িয়ে মেয়েকে দেখছে। বোনের মেয়ে বলে কখনোই অবহেলা করে নি। তবে খুব বেশি ভালোবাসাও দেখায় নি। বরাবরই তন্নি শ্বাসন করেছে কড়াকড়ি ভাবে। সেই পিচ্চি মেয়েটার বিয়ের সমন্ধ আসছে। কিছুদিন পরে শশুর বাড়িতে যাবে।
সময় কি দ্রুত চলে যায় তাই না?