রেড রোজ পর্ব ২৫

রেড রোজ পর্ব ২৫
ফারহানা নিঝুম

দীর্ঘ একটি ঘন্টা পর হু’শে ফিরলো উৎসা, তবুও ঠিক করে তাকাতে পারছে না।একটু নড়েচড়ে,গালে হাত রাখতেই মৃদু ব্যথা অনুভব করলো সে।
উৎসা কে দেখে যে কেউ মনে করবে সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে মেয়েটা। পিটপিট চোখ করে তাকালো আশেপাশে, নিজের সামনে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বেশ রাজকীয় ভ’ঙ্গিতে বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। ঐশ্বর্য কে দেখে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল উৎসার,হাত পা অটোমেটিক কাঁপছে।
ঐশ্বর্যের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বাকিরা,নিকি, রুদ্র,কেয়া, জিসান, মিহি আর সবার পিছনে আফসানা পাটোয়ারী।
সবাই অসহায় চোখে তাকায় উৎসার দিকে, এদিকে উৎসার চোখ দুটো সামনে বসা সুদর্শন পুরুষের দিকে আছে। ঐশ্বর্য অগ্নি চক্ষুদয় জ্ব’ল’জ্ব’ল করছে, এমনতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
উৎসা শুকনো ঢুক গিললো, ঐশ্বর্য হিসহিসিয়ে বলল।

“তোরা সবাই বাইরে যা, আমার ওর সঙ্গে কথা আছে।”
একা কথা বলবে,এটা যেনো উৎসার কানে রিতিমত ঝং’কার তুললো।সে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শরীর দূর্বল হওয়ার কারণে খানিকটা ঝাঁ’কুনি অনুভব করলো। ব্যা’লেন্স বজায় রাখতে, খাটের পায়ায় হাত রেখে শক্ত করে দাঁড়ালো উৎসা। অস্থির কন্ঠে বলে।
“না না আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।”
ঐশ্বর্য চট করে উঠে দাড়ালো,উৎসার সামনাসামনি এসে পকেটে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ালো।
“তোরা সবাই যা,আই সেইড গেট আউট।”
ঐশ্বর্য শান্ত ভাবে কথাটা বললেও,কথার মধ্যে উ’ত্তাপ কাজ করছে। সবাই মূহুর্তে জায়গা খালি করলো,একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঐশ্বর্য ফট করে গিয়ে দরজা লক করে দেয়।
উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল, ঐশ্বর্য সোজা হয়ে দাঁড়ালো, অধর বাঁ’কিয়ে বললো।
“এই মুহূর্তে তোর সঙ্গে আমার ঠিক কী করা উচিত বল তো রোজ?”
উৎসা ফুপাচ্ছে,ভয় লাগছে ঐশ্বর্য কে। ঐশ্বর্য এগিয়ে আসতে লাগলো, তৎক্ষণাৎ উৎসা পিছিয়ে যায়। ঐশ্বর্য আচমকা এসে উৎসা কে গালে আরেকটা থা’প্প’ড় বসালো। টেবিলের কোণে গিয়ে আ’ঘা’ত লাগলো তার,মুখ থেকে বেরিয়ে এলো অস্ফুট স্বরে “আহ্” শব্দটি।

ঐশ্বর্য এখানেই থামলো না,উৎসা কে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল।
“হাউ ডেয়ার ইউ!তুই আমাকে না বলে ডিরেক্ট বাংলাদেশ চলে এলি? এত্ত সাহস কোথা থেকে আসে?”
ঐশ্বর্য খুব শক্ত করে চেপে ধরে আছে উৎসা কে, গলা ফে’টে কান্না পাচ্ছে।
“ব,,ব্যথা পাচ্ছি আমি।”
ঐশ্বর্য শুনলো তবে উৎসা কে ছাড়লো না। আরো খানিকটা চেপে ধরে।
“তুই জানিস আমার কী অবস্থা হয়েছিল? আজকে শুধু তোর জন্য ম্যাড হয়ে ছুটে এসেছি বাংলাদেশে।”
উৎসা ঠোঁট টিপে কান্না আ’টকানোর চেষ্টা করে।
“ককেন এসেছেন?আ,, আমাকে তো ভালোবাসেন না, তাহলে কেন আসবেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার কথায় আরো রেগে গেলো,উৎসা কে নিজের দিকে ফিরিয়ে গাল চেপে ধরে।
“ভালো বাসি বা না বাসি, তোকে বলতে হবে?তুই ব্যস আমার সাথে থাকবি।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত চেপে ধরে।
“থাকব না, ছাড়ুন আমায়!”
ঐশ্বর্য আচমকা উৎসা কে তুলে ধা’ক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। উৎসা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো,ব্যথা পাচ্ছে সে।

“আমার কষ্ট হচ্ছে, আপনি কষ্ট দিচ্ছেন চৌধুরী সাহেব।”
ঐশ্বর্য ভীষণ ক্লান্ত, সে নিজেও এসে উৎসার মুখোমুখি বসলো।
দরজায় কান পেতে সব কিছু শুনলো সবাই। আফসানা পাটোয়ারী তে’তে উঠল।
“এসব কি হচ্ছে এই বাড়িতে?আগে তো এই মিহি বাইরে এসব করতো, এখন তো দেখছি উৎসা বাড়ির ভেতরে এসব শুরু করেছে!”
নিকি বিরক্ত নিয়ে বললো।
“মা তুমি থামো প্লিজ!”
আফসানা পাটোয়ারী থামলেন না।
“মোটেও না, আমি থাকতে এসব খারাপ কাজ করতে দেবো না। এখুনি ওদের বের করব।”
রুদ্র গ’র্জে ওঠে।
“মা তুমি যাও এখান থেকে,জাস্ট লিভ।”
আফসানা পাটোয়ারী কে এক প্রকার জোর করে সবাই বের করে দিলো।
আচমকা নিকি রুদ্র হেসে উঠলো।নিকি পি’ঞ্জ করে বললো।

“ভাই কিছু বুঝতে পারলে?”
রুদ্র ঠোঁট গোল করে বলে।
“হুঁ থুরা থুরা।”
কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
“থুরা থুরা মানে কি?”
রুদ্র ছোট্ট করে দেখায়।
“মানে অল্প অল্প।”
জিসান মুচকি হাসলো, কেয়া অধর প্রসারিত করে হাসলো।
“তাহলে আমিও।”
নিকি শুধোয়।
“তুমিও কী?”
কেয়া রুদ্রর মতো ছোট্ট করে দেখায়।
“বুঝতে পেরেছি থুরা থুরা।”
কেয়ার কথায় সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।

রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা।
ঐশ্বর্য উৎসা দুজনেই বিছানায় শুয়ে আছে, ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে। মেয়েটা ব্যথা পেয়েছে, কপালে কে’টে গিয়েছে। থা’প্প’ড় খেয়ে ঠোঁটের কোণে কিছুটা লেগেছে,চোখ বুজে নিরবে জল ফেলছে।
ঐশ্বর্য উঠে বসলো, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে শুধোয়।
“ফাস্ট এইড বক্স কোথায়?”
উৎসা রাগে দুঃখে কিছু বললো না,চুপ করে রইলো। ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,নিজেই উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুঁজতে লাগলো। অতঃপর ওয়াড্রফ এর উপর দেখতে পায়।
উৎসার কাছাকাছি এসে বসতেই উৎসা বেঁ’কে গেল। ঐশ্বর্য টেনে নিজের কাছাকাছি আনলো ওকে, জোরপূর্বক ব্যান্ডেজ করে দেয়। ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে।
“লাস্ট টাইম ওয়া’র্নিং দিচ্ছি, এরপর যদি কখনও আমাকে ছেড়ে আসার কথা ভাবা হয় তাহলে জান খেয়ে ফেলব, মাইন্ড ইট।”

উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্য ফাস্ট এইড বক্স রেখে এলো। প্রচন্ড টায়ার্ড,স্যুট খুলে সোফার উপর রাখলো।শরীরে ঘামের বি’শ্রী গন্ধ করছে, ঐশ্বর্য শার্ট খুলতে শুরু করে।
উৎসা নি’র্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের দিকে। শার্ট খুলতেই বলিষ্ঠ দেহ দেখতে পায়, অদ্ভুত সুন্দর পুরুষ ঐশ্বর্য।উৎসার ভেতর টা মূহুর্তে শুকিয়ে গেল।
“ওভাবে তাকাচ্ছো কেন? বেহা’য়া মেয়ে মানুষ।”
উৎসা থতমত খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকালো। উৎসা আবারও তাকায়, চোখাচোখি হয় দু’জনের। ঐশ্বর্য ধীর গতিতে এগিয়ে এসে রুমের লাইট অফ করে দেয়। আঁ’ত’কে উঠে উৎসা, ঐশ্বর্য এসে বিছানায় বসে,একদম উৎসার সামনাসামনি। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে উৎসার গাল স্পর্শ করে ঐশ্বর্য।
“স্যরি

উৎসা কাঁপছে, ঐশ্বর্য এমনিতেই তাকে মেরেছে, এখন দেখা যাবে আবারও গাল চেপে ধরবে।
“আপনি ভালোবাসেন না, তাহলে কেন থাকবো বলুন তো!”
ঐশ্বর্য বিরক্ত নিয়ে বলে।
“জাস্ট শাট ইওর মাউথ।”
ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে জানালা খুলে দেয়। চাঁদের বাইরের ছোট ছোট লাইটের কৃত্রিম আলো এসে রুম কে আলোকিত করে তুলছে।
“এএ কী করছেন? আপনি যান আমার ঘর থেকে।”
“উঁহু।”
ঐশ্বর্যের ঘো’র লাগা কন্ঠস্বর।উৎসা বেশ বিরক্ত হয়, একে তো গালে, কপালে ব্যথা করছে তার উপর এসব আজেবাজে কথা।

“সুইটহার্ট তোমাকে মিস করছি।”
উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। যত্তসব ঢং।
“আচ্ছা একা একা চলে এলে, কিছু হলে কী হতো?”
উৎসা ভাবলেশহীন ভাবে।
“হলে হতো অন্তত আপনার থেকে তো মু’ক্তি পেতাম!”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,উৎসা কে আকাশ দেখিয়ে বললো।
“ওই যে দেখো আকাশ,ওর বুকে কিন্তু একটাই চাঁদ। আচ্ছা চাঁদ কে তো সবাই ধরতে চায়। কখনও কী পেরেছে ধরতে?আর আকাশ কি কখনও চাঁদ কে ছেড়েছে? না তো।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথা কিছুই বুঝলো না।
ঐশ্বর্য ফের বললো।
“ঠিক তেমনি, তোমাকে আমি ছাড়ছি না সুইটহার্ট।”
উৎসা ফুঁসে উঠে। অস’ভ্য লোক একটা।উৎসা দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“আপনি বের হন আমার রুম থেকে আমি ঘুমাবো।”
ঐশ্বর্য শুনলো না।

“কোনো ঘুম নেই,আজ আমরা রাত জাগবো।”
উৎসা চমকে উঠে।
“কীঈ?রাত জাগবো মানে?”
ঐশ্বর্য উৎসার কাছাকাছি গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে জানালার পাশে নিয়ে এলো।
“আজ এখানেই থাকব, কোনো ঘুম টুম নেই।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কোনো কারণই বুঝতে পারলো না।
আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে, রূপালী থালার মত চাঁদ।
“বিউটিফুল।”
ঐশ্বর্যের প্রশংসা শুনে নিষ্পলক তাকালো উৎসা।
” আপনি চাঁদের সৌন্দর্য দেখেন!”
ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।

“হুঁ,আগে দেখতাম।মাম্মা থাকা কালীন চাঁদ রাত জেগে পার করতাম।মাম্মা সারা রাত জানালা খুলে বসে থাকত।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথা গুলো মন দিয়ে শুনলো। লোকটা যেমন দেখায়,আসলে তেমন না।
“শুনো!”
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো,উৎসা ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“কী?”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে কাছাকাছি নিয়ে এলো। কপালে গাঢ় একটা চুমু খায়।
“রেড রোজ যাওয়ার কথাটা আর কখনও ভাববে না।এটা আমার নিষেধ।”
উৎসা পিলে চমকে উঠে, ঐশ্বর্য তো তাকে ভালোবাসে। কিন্তু কেউ স্বীকার করে না?
“ভালোবাসেন?”
ঐশ্বর্য নাহুচ করলো।
“উঁহু।”
উৎসার বিগড়ে গেলো।
“ফা’জি’ল লোক একটা।সরুন।”

উৎসা চলে যেতেই ঐশ্বর্য হাত টেনে ধরে,বুক বরাবর টেনে এলো।
“ইয়াক আপনার শরীর থেকে বি’শ্রী গন্ধ আসছে।”
ঐশ্বর্য ভ্রুকুটি করে নেয়। ঐশ্বর্য উৎসা কে জাপটে জড়িয়ে ধরে।
“ঘামের গন্ধ গায়ে মেখে নাও।”
উৎসা রাগে ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিল।
“সরুন। ঘুমাবো আমি।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে তুলে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিল।

“কী করতে চাইছেন?”
“উম্মাহ্উম্মাহ্।”
ঐশ্বর্য ঠাস ঠাস করে দু তিনটে চুমু খায়।উৎসা তম্বা খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য উৎসার চিবুকে হাত ছুঁয়ে বলে।
“রাত জাগতে হবে।”
উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য বক্ষ স্থলে মধ্যে খানে উষ্ণ ছোঁয়া দিতেই কেঁপে উঠলো উৎসা।
“আপনি পাগল।”
“অফকোর্স,এখনো ডাউট আছে?”
ঐশ্বর্যের বাঁকা হাসি রাগের কারণ হচ্ছে উৎসার। ঐশ্বর্য উৎসার বুকে মাথা রেখে নিশ্চুপ ভঙিমায় শুয়ে রইলো।

রেড রোজ পর্ব ২৪

“তুমি কিছু বলবে? না কী আমি কিছু করব?”
আফসানা পাটোয়ারী রুমে এসে শহীদের উপর রাগ দেখাতে লাগলো। মেজা’জ বিগ’ড়ে গেলো শহীদের।
“নির্লজ্জ মহিলা, এবার তো কিছুটা লজ্জা করো।ছিহ্ আর কত? এবার সবাই কে রে’হাই দেও।”
আফসানা রিতিমত তম্বা খেয়ে গেলো।কেউ তো তাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না!

রেড রোজ পর্ব ২৬