রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৭

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৭
সিমরান মিমি

ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?কিছু লাগবে?
চমকে উঠলো আর্শি।দ্রুত দুপাশে মাথা নাড়িয়ে জানালো তার কিছুই লাগবে না।এরপর পায়ের বেগ বাড়িয়ে চলে এলো ড্রয়িংরুমের দিকে।ঠোঁট টিপে হাসলো পিয়াশা।ভয় পেয়েছে নিশ্চয়ই।পাভেল বাড়িতে নেই সেই সন্ধ্যা থেকে।হয়তো তার অনুপস্থিতিতেই দিশেহারা হয়ে নেমে এসেছে ঘর থেকে।নানা অসস্তিতে জড়িয়ে এলোমেলো হয়ে মাথা বের করে উঁকি মেরে তাকিয়েছিলো রান্নাঘরে।ভেতরে ঢোকার সাহস পায় নি।কি আশ্চর্য! অথচ এই মেয়ের’ই বোন কি না বোনের খোঁজ নিতে এই বাড়িতে এসে তুলকালাম পাঁকিয়ে ফেলেছিলো।কতই না দুঃসাহসী কাজ ছিলো সেটা।এমনকি পরশের রুমে পর্যন্ত গিয়ে তাকে ক্রমশই ধমকে-ধামকে হয়রানি করেছে।সস্তি নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করলো পিয়াশা।যাক বাবা,তার ঘরের বউ তার মতই নরম হয়েছে এটাই তো অনেক।পাভেলের যে ওই বড় মেয়েকে চোখে পড়েনি এটাই বা কম কিসে?

“ওদিকে কোথায় যাচ্ছো ভাবি?ওখানে তো স্টোর রুম।এখানে আসো।”
দ্বিতীয়বারের মতো চমকালো আর্শি।লজ্জাও পেলো।ইশশ!অচেনা বাড়ি,বার বার এদিক সেদিক গিয়ে বাধা পাচ্ছে।কেউ না কেউ আছেই ধমক দেওয়ার।কি জন্য যে রুম থেকে বের হলো সে।লজ্জায় চোখের কোণ টা ভরে এলো।পেছন ফিরে অসস্তি নিয়ে বললো,
“কোথাও যাচ্ছি না তো।এমনিই দেখছিলাম।”
এগিয়ে এলো প্রেমা।হাত ধরে নিয়ে এলো নিজের কাছে।হেসে বললো,
“দেখবে?চলো তোমাকে ঘুরে দেখাই বাড়িটা।”
“না থাক।লাগবে না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শুনলো না প্রেমা।গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“আরে সমস্যা নেই।তুমি লজ্জা পাচ্ছো কেন?আচ্ছা তোমার মনে আছে আমাদের একদিন দেখা হয়েছিলো।ওই যে ফুচকার স্টলের পাশে বসে।”
সাড়া দিলো আর্শি।”হ্যাঁ, মনে আছে।”
“এটা আমাদের গেস্টরুম।যদিও তালা দেওয়া।কিন্তু সমস্যা নেই।আমি ডিটেইলসে বলতে পারবো।এটা তো ভি আইপি রুম।ভাইয়ার ভি আইপি পার্টনার দের জন্য।এর মধ্যে একটা বাথরুম আর দুইটা রুম আছে।নির্বাচনের সময়ে এখানে বড় বড় নেতা-কর্মীরা আসে।বাকি সময়ে তালা দেওয়াই থাকে।ঢোকা নিষেধ তো তাই।”
প্রেমা আর্শির দিকে তাকালো।বুঝতে পারলো এখনো স্বাভাবিক নয় আর্শি।এ পর্যায়ে আবারো হেসে তাকে সাথে নিয়ে সদর দরজায় এলো।বাইরের দিকে বের হয়ে বললো,

“আমাদের আরো গেস্টরুম আছে।ওই যে উঠানের ডান কোণের যে বিল্ডিং টা না,ওটা।ওখানে প্রায় আট/দশটার মতো রুম আছে।দূর থেকেই দেখো।কাছে যাওয়া যাবে না।এখনো প্রায়ই ছেলে-পুলে থাকে ওখানে।বড় ভাইয়ার কড়া নিষেধ, গেস্ট রুমের যেন আশেপাশেও না যাই।তাই এই ব্যাপারে আর জানি না।তাই তোমাকে বলতেও পারলাম না”
এবারে সামান্য হাসার চেষ্টা করলো আর্শি।বললো,
“কোনো সমস্যা নেই।”

হাসলো প্রেমা।পুনরায় আর্শির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো বাড়ির ভেতরে।একে একে সবার রুম সহ পরিচয় জানালো।প্রথমে একটু অসস্তি হলেও ধীরে ধীরে সেটা স্বাভাবিক ভাবে কাটিয়ে উঠলো আর্শি।এ পর্যায়ে তারা সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে।নিজেদের প্রিয় সকল কার্টুন,সিরিজ নিয়ে আলোচনা করছে।পিয়াশা রান্না শেষ হয়েছে আরো আগেই।এইতো আর মিনিট তিরিশের মধ্যে খাওয়াও হয়ে যেত।কিন্তু যেহেতু পাভেল,পরশ এখনো বাড়িতে আসে নি তাই আপাতত কোনো জোগাড় হচ্ছে না।হয়তো আরো ঘন্টাখানেক দেরি হবে ডিনার করতে।এতক্ষণ মেয়েগুলো না খেয়ে থাকবে?ভাবতেই কেমন লাগছে।আমজাদ শিকদার এখনো রুম বন্ধ করে বসে আছেন।

খাওয়ার কথা বলায় বেজায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন পিয়াশার উপরে।নিশ্চয়ই জেদ ধরে সারারাত না খেয়ে থাকবেন।ছেলেরা এলে তো আর খাওয়ার নাম গন্ধ ও শুকতে রাজী হবেন না।পিয়াশা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।একবার ভাবলো খাবার টা রুমে রেখে আসবে তার অগোচরে।হয়তো ক্ষিদে পেলে খেয়ে নিবেন।পরক্ষণেই চুপসে গেলেন।নতুন বউয়ের সামনে যদি ধমক মেরে বসে?যদি খাবার প্লেট ছুঁড়ে দোতলা ড্রয়িংরুমে মারে?তাহলে?না না, তার থেকে বরং না দেওয়াই ভালো।কিন্তু মন মানলো না।

মিনিট খানেক যেতেই পরাণ কেমন অস্থির হয়ে উঠলো।বয়স্ক লোকটা সারারাত না খেয়ে থাকবে।এমনিতেই টেনশনে প্রেশার বেড়ে যাবে হয়তো।হাই প্রেশারের মানুষ টা রেগে মেগে যদি না খেয়েই ওষুধ খেয়ে নেয়?না না তার থেকে বরং খাবার টা রেখেই আসুক।খেল না একটু-আধটু ধমক।তাতে কি আসে যায়?ভাবনা মতই খাবার বেড়ে ট্রে হাতে উপরের রুমে গেল। দরজা ঠেলে ট্রে টা টেবিলে রেখে স্বামীর দিকে তাকালো।তিনি অন্যদিকে গোমড়ামুখে তাকিয়ে আছে।পিয়াশা চুপচাপ চলে এলো বাইরে।পরক্ষণেই উঁকি মেরে টিপ্পনী কেঁটে বললো,

“ছেলেরা কেউই এখনো বাড়িতে আসে নি।খাবার টা খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন।কেউ দেখেনি।আমি সবাইকে বলে দিবো আপনি রেগে না খেয়েই ঘুমিয়েছেন।দেখুন,রাগারাগি করেন ভালো কথা।কিন্তু শরীর খারাপ হলে তো আর এই রাগ বেশিক্ষণ জিইয়ে রাখতে পারবেন না।আমিও খেয়ে নিচ্ছি।আসার আগেই ঘুমিয়ে পড়বো রাগ দেখিয়ে।”
আমজাদ শিকদার কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন স্ত্রীর দিকে।কতটা ধুরন্দর মহিলাকে বিয়ে করেছে সেটা প্রতি কদমে কদমে বুঝতে পারছে।নাক ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।পিয়াশা আর দাঁড়ালো না।চলে গেল নিচে।ড্রয়িংরুমে নেমে গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“ওদের আসতে দেরী হবে।তোদের কি খেতে দিবো?”
থম মেরে তাকিয়ে রইলো আর্শি।মাথা নিচু করে প্রেমার দিকে তাকালো।পিয়াশা আর দাঁড়ালো না।ডাইনিং এর প্লেট গোছাতে গোছাতে বললো,
“প্রেমা!ওকে নিয়ে খেতে আয়।”
শুনলো প্রেমা।রিমোট ফেলে দাঁড়িয়ে আর্শিকে বললো,
“তোমার কি ক্ষিদে পেয়েছে?”
মুঁচড়ে উঠলো আর্শি।আমতা-আমতা করে বললো,
“নাহ!সবাই আসুক।তারপর না হয় খাওয়া যাবে।”
“আম্মু,ভাবি ভাইয়ার সাথে খাবে।”
চমকে উঠলো আর্শি।দ্রুত মুখ চেপে ধরলো প্রেমার।করুন কন্ঠে বললো,
“ছিহঃ!কি বলছো এসব?আমি সবার কথা বলেছি।
” থাক থাক।এতো লজ্জা পেতে হবে না।আমি বুঝি।”

প্লেট গুলো পুণরায় উপুড় করে সাজিয়ে রাখলো পিয়াশা।ঠোঁট টিপে হেসে আর্শির দিকে তাকালো।সে এখনো মাথা নিচু করে পায়ের নখ খুটছে।পিয়াশা হাঁক ছেড়ে প্রেমার উদ্দেশ্যে বললো,
“ঠিক আছে।তুই ও তখন খেয়ে নিস ওদের সাথে।”
মাথা নেঁড়ে পুণরায় টিভির উদ্দেশ্যে বসলো দুজন।

রাত তখন বারোটা।আশেপাশে ধু ধু অন্ধকার।ভয়ংকর নিস্তব্ধতা ঘেরা পরিবেশের মধ্যে মিনিটের ব্যবধানে কুকুরের অভিশপ্ত ডাক টা ভীষণ ভুতুরে ঠেকছে।মধ্যরাতের রাস্তায় হেডলাইট জ্বালানো গাড়িটা এসে গতি কমালো গেটের কাছে।দারোয়ান ত্রস্ত গতিতে গেট টা খুলতেই পুনরায় ঢুকে গেল ভেতরে।গ্যারেজের সামনে গিয়ে গাড়ি পার্ক করে থামালো।দু-ভাই দুপাশ থেকে বেরিয়ে এলো চিল মুডে।আজ অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়েছি পাভেল।প্রায় কতগুলো দিন পরে আবারো সেই পুরোনো অনুভূতি। একটু আড্ডা,একটু মাস্তি যেন মুহুর্তেই ভুলিয়ে দিয়েছে সে বিবাহিত।শিষ দিতে দিতে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।আশ্চর্য! লাইট জ্বালানো।এখনো কি ঘুমায় নি কেউ।পরশ ত্রস্ত পায়ে সোফায় বসলো।হেলান দিয়ে পাভেলের উদ্দেশ্যে বললো,

“যা বলেছি মনে থাকে যেন।কাল সকালের মধ্যে তোর শাশুড়ীর ফোন নাম্বার দিবি।”
চমকালো পাভেল।এতক্ষণে হুস ফিরলো যেন।দ্রুতপায়ে দোতলায় উঠলো।আর্শি যে বাড়িতে একা আছে সেটা বেমালুম ভুলেই গেছিলো।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে কিভাবে যে এতটা রাত হয়ে গেল টের ই পাওয়া গেল না।দরজা চাপানো।ধাক্কা মেরে খুলে ভেতরে ঢুকতেই ঢোক গিললো।নাহ,রুমে নেই আর্শি।জোরপায়ে বারান্দায় গেল।একটা চেয়ারে বসে আছে নিরবে।ইশশ!একা একা না জানি কতটা কষ্ট পেয়েছি।এমনিতেই এ বাড়িতে নতুন।কাউকেই ঠিক সেভাবে চেনে না।তার উপরে বাড়ির কেউই এখনো মেনে নেয় নি।পাভেলের উচিত ছিলো ওকে সঙ্গ দেওয়া।আলতো পায়ে পাশে গিয়ে হাটু গেরে বসলো।কোলে মাথা গুঁজে মিনতি করে বললো,

“সরি সোনা।অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখেছি তাই না?আসলে ফ্রেন্ডরা ভীষণ জোর করছিলো থাকার জন্য।তার উপর সামনে নির্বাচন তো তাই জমানো অনেক কাজ ছিলো।একসাথে চাপ পড়েছে তো তাই দেরি হয়ে গেছে।বিশ্বাস করো,কাজের চাপে আমি ফ্রেন্ডদের সাথে একটু ভালো করে কথাও বলতে পারি নি আড্ডা তো দুরের কথা।আর কোনোদিন দেরী হবে না।”

আর্শি এখনো নিরব।পাভেল চমকালো।উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে তার দিকে তাকালো।কোনো নড়াচড়া নেই।চুপ করে কাত হয়ে আছে।ভালো করে খেয়াল করতেই হা হয়ে গেল।আর্শির চোখ বন্ধ।সে ঘুমিয়ে আছে।নিজের উপর বিরক্ত হয়ে গা ঝাড়া দিলো।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“ধুর! এতো ঘুমিয়ে আছে।আর আমি কিনা শুধু শুধু এতো মিথ্যা বলে পাপের বোঝা বাড়ালাম।আর আশ্চর্য! আমি কেন এতো কৈফিয়ত দিতে যাবো। এইটুকু বউ কি ভয় পাওয়ার মতো নাকি। সারাদিন ঘুরবো ফিরবো,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবো।রাত হলে বিড়াল ছানার মতো ঝাপটে ধরে ঘুমিয়ে থাকবো।ব্যাস!”

“আমি ঘুমাই নি।আপনার কথা গুলোই শুনছিলাম।”
লাফিয়ে আর্শির দিকে চাইলো পাভেল।কলিজাটা যেন ধড়াস করে উঠলো।
“আপনি কি ভেবেছিলেন আমাকে যা বোঝাবেন তাই বুঝে বসে থাকবো।মিথ্যা বানিয়ে টানিয়ে গল্প বানাবেন আর সেগুলো শুনে মেনে নিবো।সেই ছয়টায় বেরিয়েছেন আর এখন বাজে বারোটা।আমাকে কি মানুষ মনে হয় না?বাড়ি আনলেন,ছুঁড়ে এক কোনায় ফেলে দিয়ে যা খুশি করলেন। আবার নিজের সময় মতো এসে টেনে ধরে বুকে নিয়ে ঘুমাবেন।তাই তো?”
হাসি পেল পাভেলের।নিজেকে সামলে অবাকের সুরে বললো,

“এইই তুমি আবার তোমার বোনের সাথে কন্টাক্ট করছো না তো?দেখেছো,আমার সহজ সরল বউটার মাথায় কিভাবে ক্রিমিনাল বুদ্ধি-সুদ্ধি ঢুকিয়ে দিয়েছে ওই স্পর্শীয়া সরদার।এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না।আরে সোনা,তুমি বুঝতে চাইছো না কেন?বাড়ি এসেছি এখন যদি সারাক্ষণ তোমার সাথে বসে থাকি তাহলে তো হাসাহাসি করবে সবাই।বলবে,” এইটুকু একটা বউ,তার সাথে সারাক্ষণ চিপকে, লেপ্টে বসে থাকে।শেষে তো তুমিই লজ্জা পাবে বলো।”
আর্শি কিছু বললো না।অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো মুখ ফুলিয়ে।এমনিতেও সে খুব একটা রাগ ও না।কারন প্রায় সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত প্রেমার সাথে আড্ডা দিয়েছে।সময়গুলো দারূন কেটেছে।পাভেল আর্শিকে নিশ্চুপ দেখে হতাশ হলো।বললো,

“তুমি কি খেয়েছো?দেখো আমার খুব খিদে পেয়েছে।নিচে চলো।”
আর বাকবিতন্ডায় জড়ালো না আর্শি।পাভেলকে নিয়ে নিচে এলো।ইতোমধ্যে খেয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছে পরশ।আর্শি কিছুটা অসস্তিতে পড়লো।মাথা নিচু করে রান্নাঘরে গেলো জগে পানি ভরতে।পরশ হাসলো।টিসু দিয়ে মুখ -হাত মুছতে মুছতে পাভেলের উদ্দেশ্যে বললো,
“দেখেছিস বিয়ে করে ঠিক কতটা পিছিয়ে গেছিস তুই।আমার খাওয়া শেষ। আর তুই এতোক্ষণ ধরে বউয়ের কাছে ক্ষমা-টমা চেয়ে মানিয়ে নিয়ে মাত্র খেতে আসলি।ভাবতেই করুনা হচ্ছে।এ নাকি আমার ভাই।”
পাভেল দাঁত কেলিয়ে চেয়ারে বসলো।প্লেট নিতে নিতে বললো,

“আমিতো তাও খেতে পারছি।কিন্তু তুই যাকে বিয়ে করার প্লান করছিস;আদৌ রাতে কখনো খাবার জুটবে কি না সেটাই সন্দেহ।ভীষণ খারাপ লাগছে ভবিষ্যৎ দিন গুলোর কথা ভেবে।ইশশশ!বেচারা।”
মুহুর্তেই মুখটা থমথমে হয়ে গেল পরশের।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“স্টুপিড!আমার টা আমি বুঝে নিবো।চুপচাপ যা বলেছি সেটা কর।সকালের মধ্যে নাম্বার না পেলে তোর খবর আছে।”
আর্শিকে আসতে দেখেই পরশ চলে গেল।পাভেল স্বাভাবিক হয়ে খেতে আরম্ভ করলো।আর্শিও খাচ্ছে।বেশ কিছুক্ষণ নিরবতার পর পাভেল আদুরে কন্ঠে বললো,

“ডার্লিং!
ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো আর্শি।খেতে খেতে বললো,
” এতো ঢং করার প্রয়োজন নেই।সম্ভব নয়।”
হাসলো পাভেল।বললো,
“হুসসস!তোমার যত্ত বাজে ইঙ্গিত।আমি বলছিলাম আর কি শাশুড়ীর নাম্বার টা লাগতো।দেওয়া যাবে মাই সুইটহার্ট! ”

চমকালো আর্শি।বাড়ির কথা মনে পড়তেই মুখ চোখ শুকিয়ে গেল মুহুর্তেই।নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,
“কি করবেন?ওদের কে ফোন দিতে বারন করছে।আপু খুব রাগারাগি করে।”
“আরে তুমি চিন্তা করো না।মানাতে তো হবে শশুর -শাশুড়ীকে।নাম্বার টা দাও।”
মাথা নাড়ালো আর্শি।ঘাড় কাত করে বললো,
“ঠিক আছে।সকালে নিয়েন।”

ঘড়ির কাঁটায় তখন মাত্র সাতটা।সূর্য উঠে গেছে ইতোমধ্যে।তার প্রকান্ড আলোতে ধরনীও উজ্জ্বল হয়েছে। রোদের তপ্ততা এখনো গায়ে পড়ার মতো না হলেও এই গরমের মধ্যে একাধারে মিনিট পাঁচেক দাঁড়ালেই পিঠ পুড়ে যায়।বারান্দা থেকে সরে এলো পরশ।রোদ টা গায়ে লাগছে বেশ।হাতের নাম্বার টা নিয়ে সারা রুমে পায়েচারি কাঁটছে।কি বলা যায় ভদ্রমহিলাকে?কি বললে স্পর্শীর কাছে দিবে কথা বলতে?অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর ভাবলো ভার্সিটির প্রফেসর সাজবে।স্পর্শীর তো সেকেন্ড ইয়ারের এক্সাম শেষ।

এই বিষয়েই কিছু কথা বললেই হয়তো দিয়ে দিবে ফোন।যেই ভাবনা সেই কাজ।কল দিয়ে মুখের সামনে ফোন টা আনলো।বুক টা কেমন ধুকপুক করছে।শরীর টা উত্তেজিত হচ্ছে নানা চিন্তায়।সাজানো কথাগুলোও জড়িয়ে যাচ্ছে।ইশশশ!সব এলোমেলো করে ফেলেছে পরশ।ওপাশ থেকে ফোন রিসিভড হলো।মুহুর্তেই ভদ্র ভাবে শান্ত গলায় সালাম জানালো।চোখ-মুখ কুঁচকালো স্পর্শী।ফোনের কর্কশ এই রিংটোন টা তার ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছে।মা পাশেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সারারাত ঘুম হয়নি।কিভাবেই বা ঘুমাবে?হস্পিটালে বসে কি আর ঘুমানো যায়?অনেক বলে কয়ে শেষ রাতে সিংগেল বেড টার একপাশে গুটিশুটি মেরে শুইয়ে দিয়েছে স্পর্শী।ফোনের ওপ্রান্তের সালামের উত্তর দিয়ে ঘুমন্ত কন্ঠে বললো,

“কে?আম্মু তো ঘুমাচ্ছে।”
চমকালো পরশ।এটা স্পর্শী।ওফফফ!যাক বাঁচা গেল।তাও এতো মিথ্যা কথা আর বলতে হবে না।ওপাশ থেকে কোনোরুপ সাড়া না পেয়ে স্পর্শী আবারো তাড়া দিলো।
“আরে কে বলছেন?”
গলা পরিস্কার করে নিলো পরশ।শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমি বলছিলাম।আসলে ওই হয়েছে কি, লোকমুখে শুনেছিলাম বিয়ের আগে আগে প্রাক্তনের দোয়া নিতে হয়।নইলে নাকি সম্পর্কে অভিশাপ লাগে।সে জন্যই কল করলাম।দ্রুত একটু দোয়া টোয়া করে দাও।একটু পরেই বরযাত্রী নিয়ে বউ আনতে যাবো।আর মজার কথা কি? তোমার ভাগ্যটা অতি প্রসন্ন।এই দেখো আজ তোমার বোনই আমার বউকে বরণ-টরণ করে ঘরে উঠাবে।কি দারুণ ব্যাপার!তাই না?তোমার তো গর্ব হওয়া উচিত।দ্রুত দোয়া করে দাও তো।”
চোয়াল শক্ত করে ফেললো স্পর্শী।দাঁত-মুখ খিঁচে কিছু অশ্রাব্য গালি দিলো।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৬

“তোকে আমি দোয়া চিবিয়ে খাওয়াবো।ভর্তা করে মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিবো অস*ভ্যের বা*চ্চা।তুই……….”
আর শুনলো না পরশ।কেটে দিলো ফোন।কারন এরপরের ভয়ংকর শব্দগুলো দাবানলের মতো পড়বে।সেই শব্দের চিৎকারে যদি ফোনের স্পিকার সহ কানটাও যায়?তাহলে?যাক!আজ অনেক দিন পর একটু শান্তি পেল।আপাতত জ্বালানো শেষ। পরবর্তী দোয়া সে গায়ে হলুদের আগে চাইবে।এবং নিশ্চয়ই স্পর্শীয়া সরদার দোয়া করবে।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৮