প্রণয়ের সুর পর্ব ২৭
মহুয়া আমরিন বিন্দু
ভার্সিটির এই গাছ তলাটায় মানুষের ভীড় কম, আজ নেই বললেই চলে,দাঁড়িয়ে আছে সাব্বির পাশে জেরনি।ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো নিরব!
সাব্বির খোঁচা মেরে বললো–,,কিরে সত্যি সত্যি প্রেম নিবেদন করবে নাকি এই রসকষহীন প্রফেসর, বলা যায় না ভাইয়ার ফ্রেন্ড ভাইয়ার মতো হতেই পারে!
জেরিন নিশ্চুপ শুধু তাকিয়ে দেখছে নিরব কে,জেরিনের শুধু নিরবের ব্যক্তিত্ব ভালো লেগেছে মানুষটির চালচলন মার্জিত মনে হয়েছে এই থেকেই সামান্য ভালোলাগা ভালোবাসার মতো কঠিন সমীকরণে এখনো পৌঁছাতে পারেনি!
নিরব এসে দাড়ালো জেরিনের সামনে,জেরিনের মাঝে কোনো জড়তা নেই।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিরবের পানে।সাব্বির একবার নিরব কে দেখছে তো একবার জেরিন কে।
নিরব রয়েসয়ে বললো—,,কিছু কথা ছিলো জেরিন,তোমার কি সময় হবে!
জেরিন স্বাভাবিক কন্ঠে বললো–,,জ্বী বলুন কি বলতে চান?
নিরব সাব্বিরের দিকে তাকালো, জেরিন বুঝলো এই তাকানোর মানে সে এবার দুহাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে বললো–,,সাব্বির আমার বেস্টফ্রেন্ড যা বলার ওর সামনেই বলুন।নতুবা আমি শুনবো না!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাব্বির বড় বড় চোখ করে তাকালো এই ঘসেটিবেগমের সাথে কবে আবার বন্ধুত্ব হলো,শা’লা বিপ”দে পড়ে এখন মহিলা আমার মতো চির শ”ত্রুকে শুধু বন্ধু নয় সবচেয়ে ভালো বন্ধু বানিয়ে দিলো!ভাই বললেও তো মানা যেতো।এই মেয়ের তো প্রেম হওয়ার আগেই ভাঙ্গবে,নিজে থেকেই বয়ফ্রেন্ড কে বলকে ছেলে ফ্রেন্ড আছে,কপাল এগুলা যে কি করে ওর বইন হইলো!
সাব্বির মিন মিন করে বললো–,,জেরিন বইন তুই বিশ দিনের বড় ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে প্রেম করবি তোর কি ওট্টু লজ্জা ট’জ্জা করবে না?
নিরব হেসে বলে উঠলো–,,সিউর!আসলে জেরিন আমি বলবো বলবো করে বলা হচ্ছে না।এতো ভনিতা করতে পারি না আমি,আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে আই মিন আমি তোমাকে ভালোবাসি জেরিন!
সাব্বির অদৃশ্য কপাল চাপড়ালো অবশেষে কিনা এই রকম একটা প্রোপোজ ওর জেরিন বইনরে করতে পারলো এই লোক,পুরাই তো নিরামিষ এটা নিয়া কেমনে চলবে বাকি পথ!আসলেই পদার্থের শিক্ষক মানেই ওই ফর্মু’লা গুলার মতোই কঠিন।
সাব্বির ভাবছে জেরিন কি বলবে মহিলা কি এখন নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যাবে!
জেরিন তপ্ত একটা শ্বাস ছেড়ে বললো–,,বিয়ে করতে পারবেন?
নিরব নিজেই যেনো চমকালো,জেরিন বিয়ের কথা বলছে সরাসরি! সাব্বির ফাটা চোখে তাকালো অবিশ্বাস্য জেরিনের মতো বিয়ে বিদ্বে’ষি মহিলা নিজ থেকে বিয়ে করতে চাইছে আল্লাহ সূর্য কোন দিক দিয়া উঠলো আজ!
নিবরের শান্ত কন্ঠ হেসে বলে উঠলো–,,বিয়ে করতে প্রস্তুত আমি!
জেরিন হাসলো কিছুটা কাঠিন্যতা বজায় রেখেই বললো—,,ঠিক আছে আপনার পরিবার নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসবেন।আমার বাবা মা ভাই রাজি থাকলে আপনাকে গ্রহণ করতে আমার কোনো আপত্তি নেই!
নিরব হেসে ফেললো–,,দেখা হচ্ছে খুব শিগ্রই!
নিরব প্রস্থান করতেই সাব্বির সরু চোখে তাকালো,জেরিনের কপালে হাতে দিয়ে দেখলো এই মেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে কিনা!
সাব্বিরের কানে নিরবের কন্ঠস্বর আসতেই সাব্বির থমকে গেলো হঠাৎ ওর হাত আপনাআপনি সরে গেলো জেরিনের কপাল থেকে!
–,,সাব্বির তুমি জেরিনের ফ্রেন্ড ফ্রেন্ডের মতো থাকো,ওর কপালে হাত দেওয়া বা হাত ধরার কোনো অধিকার তোমার নেই!
জেরিন নিজেও এমন কথায় ভরকে গেলো কি মিন করলো নিরব!সাব্বির আর জেরিন?জেরিন ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকালো সাব্বির নিজেও বিভ্রত হলো!এতোদিন তো ওরা কতো মারা’মারি হাতা”হাতি করেছে কই কেউ তো এর মাঝে খারা’প কিছু দেখেনি,জেরিন কেনো বৃষ্টি, নেহার সাথেও তো ওর এরকমই সম্পর্ক।যদি খারাপই লাগতো জেরিন ও তো না করতে পারতো?তবে কি একেক মানুষের নজরে এক একটা বস্তু একে ভাবে আখ্যায়িত হয়?সবার দৃষ্টিকোন এক নয়!
সাব্বিরের মুখ অপমানে থমথমে হলো। এই প্রথম জেরিনের মনে হলো সাব্বির বেশ চিন্তায় পড়ে গেছে, হাস্যউজ্জ্বল ছেলেটার কাছে এই কথাটার রেশ যেনো গভীর ভাবে ছড়ালো।আত্মসম্মানটা যেনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো তার।নিরব সরে পড়তেই সাব্বির কিছুটা এগিয়ে গিয়ে কাঁধে হাত রাখলো নিরবের সাব্বির চমৎকার হেসে চাপা ক্রো’ধ মিশ্রিত কন্ঠে হিসহিসিয়ে বললো
–,,মিস্টার নিরব আহমেদ,আজ না হয় অধিকার বিহীন ছুঁয়ে অপ”রাধ করেছি!নেক্সট টাইম এমন অধিকারের জোরে ছুঁয়ে দিবো যা দেখে আপনার আ”ত্মা ও কেঁপে উঠবে!মাইন্ড ইট,এটা সাব্বির জায়াদ চৌধুরীর ওয়াদা!
বলেই শিস বাজাতে বাজাতে এসে জেরিনের পাশে দাঁড়ালো, জেরিন নিরব কে খেয়াল করেনি।জেরিন সাব্বিরের পেটে গুঁতো মেরে বললো–,,কিরে শা’লা তুই কি স্যারের কথায় সেন্টি খাইলি নাকি?আর কি বলে আসলি কানে কানে?
সাব্বির নিরবের রাগী মুখের দিক তাকিয়ে চমৎকার হেসে বললো—,,কানা দুলাভাই কে বাড়িতে ইনভাইট করে আসলাম!
আচ্ছা জেরিন তুই কি নিরব কে ভালোবাসিস?
সাব্বিরের এমন কথায় এবার হু হা করে হেসে দিলো জেরিন।ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো
–,,তোকে বলবো কেনো?
সাব্বির হুট করে রেগে গেলো হন হন করে হেঁটে গিয়ে বললো–,,থাক তুই চশমাওয়ালা নিয়া আমরা তো আর কিছু লাগি না যে বলবি!
জেরিন বুঝলো না কিছুু এই ছেলে হঠাৎ এতো সিরিয়াস মুডে চলে গেলো কেনো?জেরিন পিছু ডেকে বললো
–,,আরে ভাই রাগ করছিস কেনো?আচ্ছা আমি বলছি দাঁড়া তুই!
সাব্বির থামলোই না,জেরিন বাধ্য হয়ে দৌড় দিলো আর বলতে লাগলো–,,আরে ভালোবাসা আসবে কই থাইকা শুধু একটু আকটু পছন্দ করতাম,এমন না যে বিয়ে করতে না পারলে কেঁদে কেটে বালিশ ভিজিয়ে ফেলবো।তুই দাঁড়া আমাকে ট্রিট না দেওয়ার ধা”ন্দা তাই না?ছেঁকা খাওয়া উপলক্ষে দুই দুইবার ট্রিট পানা হই আমি ভুলে যাবি না আমি তোর বড় ব্যাটা সম্মান দে বলছি!
সাব্বির মন ভরে হাসলো তবুও থামলো না জেরিনের কথায়!
ছুটতে ছুটতে হাঁপিয়ে উঠেছে জেরিন সাব্বির কে লাগিয়েছে কয়েক ঘা শয়’তান পোলা কতোটা দৌড় করালো!
সাব্বির জেরিনের দিক বাড়িয়ে দিলো একটা সেভেন আপের বোতল।জেরিন মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,বৃষ্টি আর নেহার কাছে তোর নামে বিচার দিতে হবে আজকে!
সাব্বির চুল গুলো ঠিক করতে করতে বললো–,,আমি গিয়ে ও বলবো কি করে তুমি বিয়ে করতে ছয়পায়ে লাফালাফি করছিলে!
এখন নে খা তোর প্রিয় সেভেন আপ।জেরিন হাত থেকে ছো মেরে নিয়ে খেতে লাগলো।
জেরিন অলস ভঙ্গিতে বললো–,,এতো দিন আজা’ইরা থাকতে থাকতে এখন তো গা হাত পা মেজ মেজ করতেছে ক্লাস করার ইচ্ছাই হইতাছে না!
–,,পরীক্ষায় তুই আ’ন্ডা পাইলে আরো একবছর বিয়ে করার যুদ্ধে আমি পিছিয়ে যাবো বইন,তুই বিয়েটা করলে আমার পথ পরিষ্কার দয়া করে গিয়া ক্লাস কর!
একটা মেয়ে এসে সাব্বিরের সামনে দাঁড়ালো লাজুক হেসে একটা চিরকুট এগিয়ে দিলো সাব্বির নেওয়ার আগেই জেরিন চট করে নিয়ে নিলো গোটা গোটা অক্ষরে লিখা —,,আপনি অনেক সুন্দর আমার মনের শ্যামপুরুষ!আমি আপনাকে ভালোবাসি।
জেরিন ঠোঁট টিপে হাসলো,এতো সুন্দর একটা মাইয়া এই গা’ধার প্রেমে কেমনে পড়লো?রুচি টেস্ট দুইটাই খা’রাপ মাইয়ার!
জেরিন কে চিরকুট টা নিতে দেখেই মেয়েটা তেলেবেগুনে জ্ব”লে উঠলো চাপা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো–,,আপনি এটা নিলেন কেনো আপনাকে দিয়েছি আমি?
জেরিন ভাব নিয়ে বলে উঠলো–,,এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো বলছি আমি ওর বড় বোন হই বুঝলে, তাই দেখার অধিকার ও আছে আমার!
জেরিন সাব্বিরের দিকে চিরকুট এগিয়ে দিয়ে বললো–,,নে তোর টা তুই পড় ভাই!
জেরিন চুমুক বসালো বোতলে,তখনই সাব্বির বিস্ফো”রণ ঘটিয়ে বললো–,,ও মিথ্যা কথা বলছে আপু!ও আমার বোন না বউ হয়!
খুক খুক করে কেশে উঠলো জেরিন চোখ উল্টে যাবার উপক্রম হঠাৎ এমন হওয়ায় চিবুক গড়িয়ে পড়লো কিছুটা কোমল পানিয় সাথে জামার ওড়নায়।
মেয়েটির হৃদয় ভঙ্গুর হলো।কাঁপা হাতে চিরকুট টা নিয়ে দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।জেরিন বলে উঠলো–,,কি বললি এটা মেয়েটা দেখতে শুনতে কতো সুন্দর ছিলো,ব্যাটা তুই তো মাইয়াই পাইতি না তাও একজন হেঁটে হেঁটে স্বেচ্ছায় আসলো আর তুই কিনা আমার মতো সহজসরল বইনটারে বউ বানাইয়া দিলি আল্লাহ ঠা’ডা ফালাও!তোর বউ হইবো কোন মেয়ে তারে আল্লাহ হেদায়েত দেক মেয়ে বিয়ের দিন ভেগে যাক!
সাব্বির পকেট থেকে সফেদ রঙা রুমাল টা বের করে জেরিনের চিবুক ওড়না কিছুটা মুছে দিলো।পরক্ষণেই রুমাল টা পকেটে রেখে বললো–,, আরে পিছু ছুটানোর জন্য বলেছি,তোকে তো ওই চশমাওয়ালার সাথেই মানায়!
বিকাল গড়িয়েছে বৃষ্টি, নেহা একটু বেরিয়েছিলো হাওয়া খেতে,রিকশা থেকে নামতেই চোখ বড় বড় করে মিহিরদের বাড়ির গেইটের দিক তাকালো বৃষ্টি।
একটা মেয়ে হুট করে এসে মিহিরের হাত জড়িয়ে ধরেছে দাঁত বের করে হেসে মিহিরের সাথে কথা বলছে।হঠাৎ মিহিরের চোখ পড়লো বৃষ্টির দিকে, অ”গ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। মিহির শুকনো ঢোক গিললো এতোদিন পর প্রেয়সীর মুখ টা দেখলো মিহির,তাও এমন একটা পরিস্থিতিতে না জানি বৃষ্টি এবার কি করে,মেয়েটা যা অভিমানী দেখা গেলো কথা বলা বন্ধ করে দিবে! মিহির রাগে ফেটে পড়ছে তার ফুফাতো বোন টা এতো গায়ে পড়া,এমন ভাবে হাত চেপে ধরবে বুঝতেই পারেনি!
মিহির তিশা কে রেগে এক ধম’ক দিলো এতে কাজ হলো বটে মেয়েটা দূরে সরে গেলো।কিন্তু বৃষ্টি সে ততক্ষণে হনহনিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেলো নেহা শুধু দেখলো বুঝতে পারলো মিহির ভাইয়ের কপালে দূর্ভোগ আছে!
বসার ঘরে গোল মিটিং করছে রৌফ, জেরিন, সাব্বির, বৃষ্টি, নেহা।
নেহা নাস্তার বাটিতে হাত ডুবিয়ে রেখেই বললো–,,রৌফ তুই নাকি বিয়ে বাড়িতে গিয়ে টাং”কি মেরে’ছিস?
সাব্বির মুখে সমুচা পুরতে পুরতে বললো–,,ইয়া খোদা তুমি কি মনের আশা পূ্রণ করলে অবশেষে আমার ভাই টা একটু মেয়ে নিয়ে ভাবছে,এই তোরা খা মাকে ডেকে গুড নিউজ টা দেই যে তিনি শিগ্রই দাদু হচ্ছেন!
বৃষ্টি মুখ তেঁতো করে বললো—,, বুঝলাম না সাব্বির ভাই তোমার সব টপিক গিয়া বাচ্চাকাচ্চায় শেষ হয় কেনো?
সাব্বির এবার ভার্সিটির কাহিনি খুলে বলতেই।নেহা মুখ কুঁচকে ফেলে বললো–,,এই দুলাভাই আমি মানি না মানবো না!বিয়ে টিয়ে তো দূর এরে দু চক্ষে দেখতে ভাললাগতাছে না আমার,মানলাম ভালোবাসে তাই বলে কিছু যাচাই না করেই উল্টো পাল্টা ভেবে যা তা বলে দিবে নাকি মানুষ কে!
জেরিন চিন্তিত হয়ে বললো–,,এখন কি হবে?যদি সত্যি সত্যি বিয়ে করতে চলো আসে,তখন কি করেবো,এই সাব্বিরের বাচ্চা আইডিয়া দে তো ভাই! নিরব ফিরব কে বিয়ে করবো না আমি।
—,,,তখন তে বিয়ে করবো বলতে বলতে মাথা ধরিয়ে দিয়েছিলি এখন কর বিয়ে আবার ভাইয়ার ফ্রেন্ড বড় আব্বু তো এক কথায় রাজি হয়ে যাবে।
জেরিন বলে উঠে—,,মিহির ভাইয়ের,,,,,
বৃষ্টি তেতে উঠে বলে–,,ওই লোকের নাম নিবা না আমার সামনে, অন্য মেয়ের হাত ধরে হেসে হেসে কথা বলা না এক বার পাই সামনে গলা চে’পে ধরবো!
জেরিন মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,তোরা দুইটায় এমন ডা’কাত কেন?
নেহা বলে উঠলো–,,নিজে কারো প্রেমে পড়ো ভালোবাসো তখন বুঝবা,দেখবা তুমি তখন এর থেকেও বেশি কিছু করছো!
সাব্বির দুঃখী দুঃখী ফেইস বানিয়ে বললো–,,তাও তো ভালো পুরুষ নির্যা”তনের কোনো মা”মলা নেই।কিন্তু বউরে একটা টোকা দিলেই তো পরের দিন আমি থাকবো জে”লে! আল্লাহ এ কি অবি”চার অনা”চার!
সাব্বির উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে উঠলো –,,তা যাই হোক দুইদিন পর যে অর্ধেক স্পেশাল একটা দিন তোদের কি মনে আছে?
নেহা বলে উঠলো–,,কিসের আবার স্পেশাল দিন,তোমাদের কারো জন্ম হইছিলো নাকি?আমার আবার ভাই এসব কিছু মনে থাকে না আগে ভাগেই বলে রাখছি শুভ জন্মদিন, রাত বারোটায় ঘুম রেখে উইশ করার কোনো মানেই হয় না!
সাব্বির বলতেই যাবে জেরিন থামিয়ে দিয়ে বলে–,,আরে এর কথা কেন শুনছিস তুই?যা তো গিয়ে পড়তে বস তোরা দুইজন কি এডমিশন দিবি না নাকি?পড়াশোনা চাঙে তুলে ঘুরে বেড়াস কেনো টই টই করে!
সাব্বির বললো –,,আমিও সহমত যা তো গিয়ে পড় শুধু একা একা আমরা তিনজন কেনো পড়াশোনা করে মর’বো!
নেহা,বৃষ্টি মুখ লটকিয়ে বসে থাকে—,,পড়তেই হবে?
নিখিল সদর দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো–,,হ্যাঁ পড়তেই হবে অনেক হয়েছে ঘুরাঘুরি এবার থেকে শুধু পড়াশোনা।সাব্বির, জেরিন পাবলিকে পড়ে তোদের দুইজন কেও চান্স পেতে হবে।এই জেরিন,সাব্বির ব”দ দুইটাকে পড়াবি আজ থেকে!আবার আড্ডা দিতে যেনো না দেখি!
সাব্বির বলে উঠলো–,,আমিই তো পাশ করতে পারি না আমারে শিক্ষক বানাইলে এরা দুইটায় ফেইল নিশ্চিত!
নিখিল সরু চোখে তাকালো,সাব্বির এতো ভালো স্টুডেন্ট কিন্তু সব সময় নিজের বদনা’ম করে বেড়ানোটা যেনো এবার ছেলেটার রো’গ হয়ে দাড়িয়েছে!ছোট থেকে আন্টিদের তোপের মুখে পড়ার ভয়ে গুটিয়ে থাকতো আর বলতো তেত্রিশ পেয়ে কোনো রকম পাশ করি আন্টি!
নিখিল রাম ধম ‘ক দিয়ে বললো–,,চুপ! আমাকে জানাতে হবে না কে ফেইল করে আর কে করে না।যা বলেছি করবি!
সব গুলোতে মুখ ফুলিয়ে গিয়ে বসলো পড়ায়!যতই দুষ্টুমি হাসি আড্ডায় মজে থাকুক পড়ার সময় কোনো ফাঁকি দেয় না তারা।
ছেলেমেয়েদের পড়তে দেখে একটু পর পর কিছু না কিছু খাবার, পানিয় নিয়ই যাচ্ছেন তিন গৃহিণী!
সেতারা বেগম সোফায় বসে পুরনো আমলের এক সিনেমা দেখতে ব্যস্ত।
দুইদিন কাটলো রোজকার নিয়মে।পড়া শেষে নেহার চোখ এবার ঘুমে ঢুলু ঢুলু বৃষ্টি বিরক্তিতে বার বার ফোন কেটে দিচ্ছে মিহিরের, মিহির ও যেনো নাছোরবান্দা কল দিচ্ছে তো দিচ্ছেই!
নেহা বলে উঠলো–,,যা তো ভাই তুই গিয়ে কথা বল একটু হাত ধরেছে তাও তো ভাইয়া ধরেনি।মিটমাট করে না সোনা!আমি গেলাম ঘুমাতে,দুইদিন ধরে তোর ভাইয়ের সাথে একমিনিট কথা বলার সুযোগ ও হচ্ছে না আজও মনে হয় হবে না ঘুম পাচ্ছে আমার!
বৃষ্টি ফোন কানে তুলে বলে উঠলো–,,না না নেহা তুই ঘুমালে কি করে হবে।
নেহা ভ্রুকুটি নিভু নিভু চোখে তাকালো
বৃষ্টি আবার বলে উঠলো–,,না মানে মাত্ররো রাত নয়টা বাজে,তার উপর ভাইয়া বললো তোকে নিয়ে নাকি ডিনারে যাবে!
নেহা বিরক্তি নিয়ে বললো–,, সকালের খাবার,দুপুরের খাবার রেখে রাতের টা কেনো খেতে হবে ভাই?আমি গেলাম ঘুমাতে!
মিহির বৃষ্টি কে বলে উঠলো–,,কি হয়েছে আবার?
বৃষ্টি তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,কি আর হবে আজ নেহা আর ভাইয়ার বিয়ের ছয় মাস পূর্ণ হলো কিন্তু মেয়েটা ভুলে বসে আছে,ভাইয়া ওটাকে সারপ্রাইজ দিবে আর মেয়ে নাকি ঘুমাবে!
–,,এতো রাগ আমার উপর টানা দুই দিন ধরে ইগনোর করছো?তোমাকে ছাড়া আমি ভালো নেই তো বৃষ্টি! কেনো বুঝো না তুমি?
–,,হুহ্! এসব বলবে না একদম, ওই মেয়েটা হাত ধরলো সময় কোথায় ছিলো এতো প্রেম?
–,,হাত ধরার অধিকার তো শুধু তোমাকে দিয়েছি স্বেচ্ছায়,আমৃত্যু সে অধিকার কেউ নিতে পারবে না কথা দিলাম!
–,,মিস ইউ মিহির!
–,,ছাদে আসবে এক্ষুনি,না শুনতে চাই না আমি!
বৃষ্টি হেসে বললো –,,আসবো না!
–,,ওকে ফাইন আমি আসছি,পরে উল্টো পাল্টা কিছু হলে তুমি সামলাবে,আমাকে দোষ দিতে পারবে না!
বৃষ্টি সিঁড়ির শেষ মাথায় দাড়িয়ে বললো–,,সাহস কতো, পারলে আসো!
কিছু একটা ধাপ করে পড়ার শব্দ হওয়ায় ভয় পেয়ে যায় বৃষ্টি কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে –,, মিহির তুমি ঠিক আছো?মিহির,,,!
বৃষ্টি তাঁরা ভরা আকাশের নিচে ফাঁকা ছাদটায় মিহির কে খুঁজতে ব্যস্ত ঠিক তখনই কিছু একটা বৃষ্টি কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মিশিয়ে নেয় একদম নিজের বুকের মাঝে!
বৃষ্টি শ্বাস যেনো আঁটকে আঁটকে আসছে,এতো টা কাছে মিহির কখনো আসেনি হাত ব্যতিত কখনো ছুঁয়ে ও দেখেনি তবে কেনো আজ এতো উতলা হচ্ছে ছেলেটা!
মিহিরের পিঠে এক হাত রেখে বৃষ্টি জিজ্ঞেস করে–,,মিহির তুমি ঠিক আছো?
–,,না! কিচ্ছু ঠিক নেই তুমি ছাড়া কিভাবে ঠিক থাকবো আমি?সপ্তাহ খানেক পর আসলা কতোদিন তোমায় দেখি না,আবার রাগ করে দুইদিন কথা বলা বন্ধ করে দিলে, জানো তুমি দ’ম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো আমার।
কেনো এতো দুরত্ব বাড়াও মেঘকন্যা?
ভালোবাসি তো মেঘবালিকা কেনো বুঝো না!
বৃষ্টির চোখ ছলছল করে উঠলো মানুষ টা তাকে এতো কেনো ভালোবাসে,তাই তো বার বার আহ্লাদী হয় বৃষ্টি দুরত্ব বাড়ায় অভিমান করে,মুখ ফুলিয়ে রাখে।বৃষ্টি তো জানে এই একটা মানুষ তার কাছে সব ছেড়ে ছুঁড়ে এসে তার রাগ ভাঙাবে আদরে যত্নে আগলে নিবে ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবে!
বৃষ্টি মিহির কে সরিয়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়।মিহির বুঝলো না এখনো কি রাগ কমেনি নাকি?
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,ভালোবাসি মিহির!
মিহির আবার জড়িয়ে ধরতে আসলেই চোখ পাকিয়ে তাকায় বৃষ্টি।
–,,একদম কাছে আসবে না।আগে বিয়ে করো পরে আসবে লিমিট ক্র”স করবে না,না হয় তোমার মাথা ফাটা”বো আমি!
মিহির বৃষ্টির হাত দুটি খপ করে ধরে বললো–,,তাই?আমি সীমা অতিক্রম করি?আর তুমি কি করো হ্যাঁ?
বৃষ্টি বলে উঠলো–,,দেখো মিহির একদম দুষ্টুমি করবা না হাত ছাড়ো যাও এখান থেকে কেউ দেখে ফেলবে!
–,,দেখুক, আমি এই আকাশ, বাতাস,মাটি,পৃথিবীর প্রতিটি দেখা অদেখা বস্তুকে আজ বলতে চাই তুমি শুধু আমার শুধুই আমার মেঘবালিকা!
তীব্র অন্ধকারেও নিখিলদের বাড়ির ছাদের উপরের কপোত-কপোতী কে দেখে একজন নিরবে চোখের জল ফেললো!সে ঠিক নিজের প্রিয় মানুষ টিকে চিনে ফেললো!এতোটা কাছে এসেও সে থেকে যাবে অধরা,ভালোবাসায় কেউ না কেউ তো হারবেই এটাই নিয়ম।একজন জায়গা না ছেড়ে দিলে অন্য জন যে প্রাপ্য সম্মান পায় না।যে সম্মান পাবার সে শত বাঁধা বিপত্তি শেষ হলেও পাবে।অযথা ইচ্ছে পুষে লাভ কি?কিছু জিনিস দূর থেকেই সুন্দর!
নেহা কে ঘুমাতে দিলো না মানে দিলোই না মুখ বাংলার পাঁচ করে খাবার খেতে বসেছে সে।
শাহআলম চৌধুরী কে বলেছে–,, বড় আব্বু বলে রাখছি তোমায়, তোমার এই ডাকা’ত মার্কা বাচ্চাগুলা যদি পরের বার আমার ঘুমে ব্যাঘা’ত ঘটায় তো এদের আমি পঁচা নালায় ফেলে দিবো!
শাহআলম চৌধুরী হেসে বললো–,,মা এমন করে কেউ না খেলে অসুখ করবে না?আমার মা তো ভালো মা এভাবে রাগতে নেই আমি ওদের বকে দিবো!
নিখিল তপ্ত শ্বাস ছাড়লো, সে জানতো এমনটা হবে যে মেয়ের নিজের জন্মদিন মনে থাকে না সে আবার মনে রাখবে বিয়ে করার দিন!
খাওয়া শেষ হতেই রুমে যাবে নেহা,নিখিলের সাথে কোথাও যাবে না সে,আজকে নিজের ঘরে দরজা আটকে থাকবে দেখবে কে এসে নিতে পারে!
কিন্তু কি আর করার বৃষ্টি, জেরিন দাঁত কেলিয়ে হাজির,এক প্রকার টেনে নিয়ে গেলো নিজেদের সাথে।
একটা লাল রঙা সিল্কের শাড়ি!নেহা দেখেই ভ্রু কুঁচকালো মুখ ফুলিয়ে বললো–,,এটা কোনো কথা এমন একটা ফিনফিনে পাতলা শাড়ি পড়ে আমি বাহিরে যাবো?তোমাদের মাথা গেছে?নিখিল ভাই আমাকে আস্ত চিবি’য়ে খা’বে যখন দেখবে শরীরের বিভিন্ন অংশ উন্মু’ক্ত আর সারাজীবনের জন্য আমার শাড়ি পড়া বন্ধ হবে!
জেরিন বলে উঠলো –,,উফ চুপ থাক তো কিছু বলবে না।সাজাতে দে!
নেহা বিরক্তি নিয়ে বসে রইলো রাতে দশটার পর কোন মানুষ ডেটে যায়?
নেহা কে ঠেলেঠুলে নিখিলের রুমের কাছে দিয়ে গেলো দুজন।বৃষ্টি টি”প্পনি কেটে বললো–,,যা যা আজকে এমনিতেও ভাইয়া তোকে নিজের ডি”নার বানাবে!
নেহা বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রুমে দরজায় হাত দিতেই হাতে জোরে একটা টান পড়লো।
নেহা টাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পড়লো একটা শক্তপোক্ত পুরুষালি বুকে!
নিখিলের অধৈর্য কন্ঠ–,,এতো সময় লাগে আসতে?দুই দিন ধরে তুই আমাকে পাত্তা দিচ্ছিস না আজ এর শো’ধ তুলবো আমি!
নেহা নিখিল কে ছাড়িয়ে দাঁড়ালো,অন্ধকার রুম নেহা দুকদম পেছাতেই মৃদু আলোয় আলোকিত হতে থাকলো ঘরটি,ছোট ছোট প্রদীপ জ্বালানো হয়েছে মোমবাতি দিয়ে সাজানো পুরোটা রুম!নেহা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো
নিখিল এগিয়ে এসে নেহার মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে বললো–,, বিবাহিত জীবনের ছয় মাস আজ পূর্ণ হলো আপনার মিসেস চৌধুরী! অনেক অনেক শুভকামনা বউজান আমার মতো একটা কাটখোট্টা, রাগী, অশান্ত বেসা”মাল স্বামীকে সামলানোর জন্য, দোয়া করি মৃত্যু আগপর্যন্ত তুমিই আমাকে সামলে যাও, এভাবেই নিরবে নিভৃতে যত্ন করে ভালোবেসে আগলে রাখো!
তুমি ছাড়া আমি শূন্য তোমাতেই আমি পূর্ণ জান!
বলো এভাবে কি আগলে রাখবে বাকিটা জীবন?
নেহার মন খুশিতে ভরে উঠলো মুহুর্তে। সে তো ভুলেই গেছিলো সব কিছু উল্টো মানুষ টা অভিমান না করে কোনো প্রকার অভিযোগ ছাড়া তাকে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো?
নেহা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো–,,আগলে রাখবো নিখিল!
নিখিল নেহার কপালে অধর ছোঁয়ালো।জড়িয়ে নিলো অতি আদরে!নেহা নিখিলের বুকের উষ্ণতায় নিজেকে মিশিয়ে নিলো অনেকটা গভীর ভাবে!
নিখিল একটু পর মুখ অন্য দিক ফিরিয়ে নিয়ে বললো–,,নেহা তোর উপর আমি রাগ করেছি।বিয়ের ছয় মাস হয়ে গেলো এখনও বাসর টা করা হলো না!
নেহা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,অসভ্য লোক এখনো বাসর করা বাকি আছে?কতোবার বাসর করে মানুষ?
নিখিল মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে–,,রোজ!
নেহা কোমড়ে দু হাত রেখে বলে –,,কিহ্!আবার বলেন তো
নিখিল পিছিয়ে যেতে যেতে বললো–,,এমন করছিস কেনো নেহা,বউকে আদর করা কি দোষের নাকি?বউকে আদর করলে ভালোবাসলে আল্লাহ খুশি হয়!
নেহা একটা বালিশ হাতে তুলে নিয়ে বলে–,,তাই না?আসেন আদর করাচ্ছি আপনাকে!ব’দ লোক,আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে আপনি এসব বলেন?
,,তুই জানি আমার দু রাতে ঘুম হারাম করেছিস তার বেলা?
নেহা পা হড়কে হঠাৎ পড়ে যায়,নিখিল এসে নেহার কোমর জড়িয়ে ধরে,নিখিলের শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠে নেহা।
নিখিল কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে–,,এখনো কাঁপা কাঁপিটাই বন্ধ হয়নি তোর!উফ নেহা তোকে তো আমি
নেহা নিখিলের ঠোঁটে হাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে
–,,চুপ!যখন দেখো অস”ভ্য কথা শুরু!
নিখিল নেহার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে টুপ করে চুমু খায়।
–,,জান তুই কি আমাকে একবারও নিজ থেকে আপন করে নিবি না?একটুও ভালোবাসবি না আমায়!আনরোমান্টিক কেনো তুই এতো?শুধু আদর নিতে পারিস দিতে তো পারিস না কিপ্টুস মহিলা!
নেহা তেতে উঠে বলে–,,আমি কিপ্টুস আনরোমান্টিক?
নিখিল উপর নিচ মাথা নাড়লো।নেহা নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বললো–,,তাই না?এখনই মজা বুঝাচ্ছি আপনাকে!
নেহা নিখিলের দু গালে হাত রেখে পর পর অসংখ্য চুমু তে ভরিয়ে দিলো নিখিলের মুখ!নিখিলের ঠোঁট জুড়ে প্রশান্তির হাসি আজকে তো এই মেয়ের লুকিয়ে রাখা ভালোবাসা নিখিল যেভাবেই হোক বের করে আনবে।একটা মাত্ররো বউ তার এক ফোঁটা ও ছাড় দিবে না!সব টুকু ভালোবাসা শুধু নিখিলের এবং তার পুরোটাই চাই!নেহা কে তা দিতেই হবে!
নেহা নিখিলের ঠোঁটের কাছে এসে থেমে গেলো তা দেখে নিখিল ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি?দৌড় এতটুকুই?
নেহা রেগে যাচ্ছে দেখে নিখিল ঠোঁট কামড়ে হাসলো বোকাটাকে রাগানো কতো সহজ!
নেহা রাগে ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বললো–,চোখ বন্ধ করুন!
–,,,না!যা করার সরাসরি করবি কোনো লুকোচুরি আজকে আমি মানবো না প্রশয় ও দিবো না!আমার ভাগের ভালোবাসা আমার চাই নেহা দিবি মানে দিবি তুই।
নেহা এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো,তার পরও নিখিল তার কথায় অনড়।
নিখিল নেহা দু গালে হাত রাখলো মধ্যকার দুরত্ব খুবই নগন্য।নেহার চোখের পাতা বার বার পড়ছে!লজ্জায় লাল হয়ে উঠেছে বদন,লাজুক বউ কে দেখে মুচকি হাসলো নিখিল।নিখিলের তো মন চায় সারাদিন চোখের সামনে বসিয়ে দেখতে!মেয়েটা তার মাথা ন’ষ্ট করে দিতে এতো উতলা।
নিখিলের অধৈর্য কন্ঠ–,,জান আমি কি ভুল কিছু চেয়ে ফেলেছি বল?তুই দিতে না চাইলে জোর করবো না!
নিখিল মন খারাপ করার ভান ধরলো বোকা নেহা বুঝতেই পারলো না প্রাণপুরুষের ছলচা”তুরী! ছেলেটা যে প্রেয়সীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এসব করছে ঘুনাক্ষরে ও টের পেলো না।
নিখিল দূরে সরে যেতেই নেহা নিখিলের হাত চেপে ধরে।
নিখিলের ঠোঁট জুড়ে বিস্তর হাসি!
নেহা নিখিলের চোখের দিক চোখ রাখলো, দু পা উঁচু করে নিখিলের কপালে গভীর ভাবে ঠোঁট ছোঁয়ালো।কাঁপা কন্ঠে বললো–,,ভালোবাসি নিখিল।নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।শুধু আপনাকেই ভালোবাসি।আপনি আছেন দেখেই আমি এখনো এতো শান্তিতে ভাসি রোজ,আপনি ভালোবাসেন দেখেই আমি আজ পূর্ণ আপনার সম্পূর্ণ হতে পেরে আজ আমি একজন পরিপূর্ণ নারী নিখিল!আপনার ভালোবাসা পাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তী নিখিল!
আপনাতেই তো আমি নিজেকে খুঁজে পাই,কি করে ভাবেন আপনার থেকে দূরে গিয়ে ভালো থাকবো।আপনি আগলে রাখেন দেখেই তো আমি এতোটা আহ্লাদ করি, আপনি ছাড়া আমাকে আর কেউ সহ্য করতেই পারবে না নিখিল।আপনি আদরে রাখেন তাই আমি ভালো থাকি নিখিল!আপনার বুক আমার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।এই পুরোটাই আপনি শুধু আমার নিখিল!বিশ্বাস করুন ভীষণ রকম ভালোবাসি আপনাকে!
নিখিল নেহাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে!তুই না বললেও আমি বিশ্বাস করি জান তুই আমাকে ভালোবাসিস।
আমি শুধু তোর নিজেকে সপে দিলাম তোর কাছে যেভাবে তুই আমাতে বিলীন হতে চাস ঠিক তেমনই আমিও নিজেকে খুঁজে পাই তোর মায়ায়!তোর হাসিতে,তোর চোখের তারায় তোর ভালোবাসায়।
“আমি বার বার দিক ভুলে হারিয়ে যেতে চাই শুধু তুমি নামক দিগন্তে।”
“আমি বার বার ডুবতে চাই তুমি নামক অতল সমুদ্রে।”
“আমি মিশে যেতে চাই তোমার অস্তিত্বে!”
অনুম——!
নিখিল আর কিছু বলার আগেই নেহা নিখিলের অধরের মিলিয়ে দিলো নিজের কম্পমান অধর।
বেশ কিছুক্ষণ পর নিখিল নেহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে–,,পরের বার থেকে এরকম ভাবেই সম্মতি চাই আমি জান!
এবার আমি প্রেম জোয়ারে ভাসবো জান একদম বিরক্তি করবি না!
এই শোন না নেহা
—,, হুম!
—,,আজ আমি নক্ষত্রের রাত উপহার চাই কিন্তু। দেখ বাহিরে আকাশে ছড়িয়েছে জ্বল”জ্বলে নক্ষত্র! তাঁরারা ও চায় তুই আমাকে নক্ষত্রের রাত উপহার দিস পুরোই স্পেশাল ওয়েতে!দিবি তো
নেহা বরাবরে মতোই মুগ্ধতা নিয়ে হাসলো।বলে উঠলো—,,দিবো!
আরো একটি রাত কাটলো ভালোবাসায় মুড়ানো। প্রকৃতিরা থমকে গেলো ওদের ভালোবাসায়।লজ্জায় মুখ লুকালো চাঁদ তিমির রঙা অম্বরে!যেভাবে নিখিলের ব্যক্তিগত চাঁদ মুখ লুকালো নিখিলের প্রসস্ত বুকে!
প্রণয়ের সুর পর্ব ২৬
ভাইজান আপনি না করবেন না আমার মিহিরের জন্য তিথির চেয়ে আর ভালো মেয়ে কোথায় পাবো বলেন?আমি চাই এই চার হাত এক করে দিতে!আপত্তি করবেন না প্লিজ!
তিথির মনটা অন্য দিন হলে খুশিতে ভরে উঠতো তার ভালোবাসার মানুষটি তার হবে এই খুশিতে কিন্তু আজ?সে পারছে না খুশি হতে, যেখানে মানুষ টা সম্পূর্ণ অন্য কারোর সেখানে সে কিভাবে স্বার্থপরের মতো ভালোবাসার কথা প্রকাশ করবে?ভালোবাসার অপমান করতে চায় না সে আর না চায় কারো সুন্দর মার্ধুযতায় ঘেরা ভালোবাসার মাঝে দেয়াল হতে।
মিহিরের মায়ের কথায় মিহিরের ফুফু ফুফা খুশিতে আত্নহারা হলেন।কি চায় এই ভাগ্য কেনো এতো পরীক্ষায় ফেলে হাসিখুশি হৃদয় কে কেনো সে বিষন্নতা দিতে এতো ব্যকুল?