এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৩

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৩
তানিশা সুলতানা

অতি দ্রুত মজলিস শেষ করে তারেক। আগামীকাল দেখবেন বলে সকলকে চলে যেতে বলে। অগত্য সবাই চলে যায়৷ এখনো অর্ণব বসে আছে তারেক রহমানের সামনে। মুখোমুখি। চোখে মুখে তার কুটিল হাসি। তারেক বিপাকে পড়েছে বেশ। এই ছেলে বাড়ি চিনলো কি করে এই ভাবনায় আপাতত বিভোর।
অর্ণব বাড়ি ফিরেছে সেই খবর পেয়ে তারেক ভেবেছিলো সবটা মেনে নিবে। বসে কথা বলবে অর্ণবের সাথে এবং মেয়ের হাত তাকে দিবে। কিন্তু গত পৌরসু কোর্ট থেকে ফেরার পথে দেখতে পায় রাস্তার ধারে বসে সিগারেট খাচ্ছে। আর তার ছেলেপুলে একটা ছেলেকে মারছে। তখুনি মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে তারেকের। সিদ্ধান্তও বদলে ফেলেছে মুহুর্তেই। মনে মনে পণ করেছে

“দরকার পড়লে মেয়ে গাঙ্গে ভাসিয়ে দিবো তবুও এই বেয়াদবের হাতে দিবো না”
“অনুমতি দিচ্ছেন তো শশুর মশাই?
অর্ণবের কথা শুনে নরেচরে বসে তারেক। হাতে থাকা কাগজপত্র গুছিয়ে রেখে ধীরে সুস্থ সুধায়
” এখানে আসলে কি করে?
“সিম্পল
পায়ে হেঁটে হেঁটে আর আপনার মাথায় চুল গজিয়েছে কি না ভাবতে ভাবতে
চোয়াল শক্ত করে ফেলে তারেক। এই ছেলের সাথে সোজা ভাষায় কথা বলা যাবেই না।
বিরবির করে বলে
” বেয়াদব একটা
অর্ণব মেকি হেসে উচ্চস্বরেই বলে ওঠে
“ঠিক আপনার মতো।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তারেক।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারো। পারমিশন দিলাম। আর বিয়ের খরচ আমি বহন করবো। ডিভোর্স পেপারও আমি নিজ দায়িত্বে বানাবো।
“এ বাবা
এতোদিনেও ডিভোর্স পেপার বানান নাই? মহা মুশকিল তো। বাই এনি চান্স মনে মনে জামাই হিসেবে মেনেছেন না কি?
তারেক জবাব দেয় না। দাঁড়িয়ে পড়ে। এক পলক অর্ণবের দিকে তাকিয়ে গটগট পায়ে রুমে চলে যায়। অর্ণব মুখ বাঁকায়। রীতিমতো অপমান করলো তাকে। কিন্তু কি আর করার? শশুর অপমান করেছে কিছু তো আর বলা যায় না।
তামিম দৌড়ে আসে অর্ণবের কাছে। পাশাপাশি বসে

” বসস তুমি এসেছো আমি অনেক খুশি হয়েছি।
অর্ণব তামিমের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে
“শা লা তোর টাকলু বাপ তো খুশি হয় নাই।
” কিন্তু বসসস বাবার মাথায় তো চুল আছে। টাকলু কেনো বলো?
“তোর চোখের ভিমরতি ধরেছে। তোর বাপ টাকলুই।
” আচ্ছা বাদ দাও।
শোনো তোমায় একটা বুদ্ধি দিচ্ছি আমি।
“কি বুদ্ধি?
” কান আগাও

অর্ণব কপাল কুঁচকে কান এগিয়ে দেয়। তামিম ফিস ফিস করে বলে
“আপিকে নিয়ে পালিয়ে যাও। আপি যেতে না চাইলে তুলে নিয়ে যাও। বাবা কিছু বললে তাকে বেঁধে রেখে যাও।
” কি বলছিস?
“একদম ঠিক বলছি। বড় হয়ে আমিও এমন করবো। বলে বলে মেয়ে তুলবো। প্রতি সপ্তাহে একটা করে বিয়ে করবো
” এতো বউদের খাওয়াবি কি?
“আমি কেনো খাওয়াবো?
ওরা চাকরি করে আমায় খাওয়াবে।
অর্ণব হেসে ফেলে। গুঁতো দেয় তামিমের পেটে
” শা লা তুই ই পারবি তোর বাপের মাথায় চুল গজিয়ে দিতে।

“বলছো?
” একদম।
এখন যাই রে
“তোমাকে কিছু খেতে সাধতাম কিন্তু বাবা বকবে তাই সাধলাম না।
তবে আমার বউরা যখন চাকরি করে এনে টাকা আমায় দিবে তখন তোমায় খাওয়াবোনি।
” আচ্ছা সেই আশায় না খেয়ে থাকবোনি এতোদিন।
তামিমের সাথে কথাবার্তা শেষ করে বেরিয়ে যায় অর্ণব। এই-বাড়িতে আসার একমাত্র কারণ ছিলো তারেক রহমানের অনুমতি নেওয়া। এবার অর্ণব তার খেল দেখাবে। নাক উঁচু বাপ আর নাক উঁচু মেয়ের নাক কে টে থেঁতলে দিবে অর্ণব।

বাড়ি ফেরার পথে তন্নির মামাতো ভাই ইভানের সাথে দেখা হয়ে যায়। সে এক প্রকার জোর করেই তন্নিকে বাড়িতে নিয়ে যায়। তারেক এবং ইতি বেগমকে কল করেছিলো ইভান তারাও আপত্তি করে নি। বরং বলেছে জোর করে নিয়ে যেতে। তারেক মেয়ের মন পড়তে পারে। অর্ণবকে দেখলে ঠিক মন খারাপ হবে বা কোনো চিন্তা মাথায় আসবে। তাই তার মতে কিছুদিন তন্নির নানুবাড়ি থাকাই শ্রেয়।
মামা বাড়ি ভালো লাগে না তন্নির। কেমন একটা বন্দিখানা মনে হয়৷ সবাই ভালোবাসে আদর করে যত্ন নেয় সঙ্গ দেয় তবুও তন্নির মন টেকে না। তাছাড়া বহুদিন যাওয়া হয় না।

মামা বাড়ির সদর দরজায় পা রাখতেই তন্নি মনে পড়ে চার বছর আগের কথা। অর্ণবের সাথে গিয়েছিলো তার মামা বাড়ি৷ এক রাত থেকেও এসেছে। অনির কথা এখনো ভুলে নি তন্নি। এখন নিশ্চয় অনেক বড় হয়ে গিয়েছে?
তন্নির মামি বিলকিস দারুণ খুশি হয় তন্নিকে দেখে। নানু মতিয়ারার খুশি যেনো ধরছে না। বৃদ্ধা হয়েছে৷ হাঁটাচলা করতে পারে না তেমন৷ তবুও লাঠি ভর দিয়ে এগিয়ে এসেছে তন্নিকে দেখতে। বুকে জড়িয়ে খানিকক্ষণ আদরও করেছে। ছেলের বউকে তাড়া দিয়ে যাচ্ছে তন্নির জন্য ঠান্ডা পানি আনার জন্য। বিলকিস বেগম লেবুর শরবত গুলে আনে। মামাতো বোন ইভা কোলে চড়ে বসে আছে তন্নির। ইভার বয়স চার বছর।

অবশেষে রেস্ট নেওয়ার সুযোগ পায় তন্নি। তার জন্য এ বাড়িতে বরাদ্দকৃত একখানা রুম রয়েছে৷ রুমখানা মূলত ইতি বেগমের। তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই রুমে কেউ থাকে না। থাকতে দেয় না মতিয়ারা বেগম।
ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় তন্নি। ওড়নাখানা রাখে বালিশের পাশে। গরমে অতিষ্ঠ তন্নির কাছে ওড়না বোঝা মনে হচ্ছে। চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে অর্ণবের কথা। তাদের একান্তে কাটানো মুহুর্ত চোখের সামনে ভেসে ওঠে। চুম্বনের দৃশ্য মনে পড়তেই গা শিউরে ওঠে তন্নির। শুকনো ঢোক গিলে বসে পড়ে।

“উনি তো কল করতে বলেছিলো আমায়। কল না করলে তো আবার বাড়িতে চলে যাবে না?
শুকনো ঢোক গিলে তন্নি। ওড়না গায়ে জড়িয়ে দৌড়ে বের হয় রুম থেকে। ড্রয়িং রুমে কেউ নেইম মতিয়ারা নিজ কক্ষে শুয়ে আছে। বিলকিস রান্না চাপিয়েছে। তন্নি ইভানের কক্ষের দিকে অগ্রসর হয়। নক না করেই ঢুকে পড়ে। রুমে ইভান নেই। বিছানায় পড়ে আছে তার ফোন খানা। তন্নি চোরের মতো ফোন নিয়ে চটজলদি চলে যায়। কথা বলে ইভান দেখার আগেই আবার রেখে আসবে এমনটাই বুদ্ধি এঁটেছে।
পূর্ণরায় নিজ কক্ষে ফেরত আসে। দরজা বন্ধ করে ডায়াল কলে ঢুকে পড়ে। ভাগ্যিস লক করা ছিলো না ফোন। নাহলে তো ঝামেলায় পড়ে যেতো।

দু বার রিং হওয়ার পরেই কল কেটে দেওয়া হয়। তন্নি আশ্চর্য হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেটে কেনো দিলো? পরপরই উচ্চস্বরে বেজে ওঠে৷ কল ব্যাক করেছে। নাকের পাটা ফুলায় তন্নি। বড়লোকের বেটা সবাইকে কল ব্যাক করে?
রিসিভ করে কানে রাখে। কথা বলে না। ওপাশ থেকে ভেসে আসে অর্ণবের কন্ঠস্বর
” শা লা আজকে যাবো না। ভীষণ টায়ার্ড লাগছে।
কপালে ভাজ ফেলে তন্নি বলে
“পাগল হলেন না কি?
সবেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলো অর্ণব৷ তন্নির কন্ঠস্বর শুনে এক লাফে বসে পড়ে।
অবাক গলায়,জিজ্ঞেস করে

” তুমি?
“তাহলে কাকে আশা করেছিলেন?
” আমার দ্বিতীয় বউকে।
গাল ফুলিয়ে জবাব দেয়
“আমি নানু বাড়ি এসেছি। কল করতে পারবো না।
” তোমার কলের অপেক্ষায়ও থাকি না আমি।
বড্ড গায়ে লাগে তন্নির। কথাবার্তা ছাড়াই কল কেটে দেয়।
অর্ণব হাসে।
তখনই আশা বেগম আসে
“আব্বা খাবি না?
” খাবার বারো আসছি। আর অথৈকপ তৈরি হতে বলো। সারপ্রাইজ আছে ওর জন্য।
আশা বেগম চলে যায়। অর্ণব ভেবেছিলো একটু ঘুমাবে। তবে এবার ভাবনা বদলে ফেলে। কাবাড থেকে জামাকাপড় বের করে ঢুকে পড়ে বাথরুমে।

দেশে ফিরে তৃতীয় বার পরিবারের সাথে ডিনার করছে অর্ণব। এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করে পরিবারকে সময়ই দেওয়া হয় না। অথৈ সাজুগুজু করেই খেতে বসেছে।মনে মনে জানার আগ্রহ প্রবল “কি সারপ্রাইজ” তবে জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না।।
“পাপা অফিসে বসতে চাচ্ছি।
আনোয়ার খুশি হলেও সেটা প্রকাশ করে না। গম্ভীর স্বরে বলে
” কাল যেয়ো অফিসে।
“তোমার সাথে যাবো।
আর্থির বিয়ের ডেট ফিক্সড করো এবার। আমি আছি৷
” তুমি বলে কবে করবো?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩২

“ওনাদের দাওয়াত করো। বসে সবাই মিলে ডিসিশন নিলে ভালো হবে।
সায় জানায় আনোয়ার। আশা বেগম বেছে দিতে থাকে ইলিশ মাছের কাটা।
” ভাই অথৈকে নিয়ে কোথায় যাবি?
“উমম আশেপাশেই।
দেশে ফিরে ওকে তো সময়ই দিতে পারলাম না।
” আর আমি?
অভিমানী কন্ঠস্বর আর্থির।
“কাল তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৩৪