অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ২০
ইরিন নাজ
রাতে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ দ্রুতই বাড়ি ফিরল আদ্রিশ। রুমে ঢুকামাত্র তার নজর আটকাল আয়ানার উপর। আয়ানার অঙ্গে এখনো দুপুরে পরা সেই কালো শাড়িটাই শোভা পাচ্ছে। পড়ার টেবিলের উপর বইপত্র রেখে দুলে দুলে, মৃদু শব্দ তুলে কিছু একটা মুখস্ত করছে সে। সম্পূর্ণ মনোযোগ পড়ার মধ্যে থাকায় আদ্রিশের উপস্থিতি টের পেলো না আয়ানা। আদ্রিশ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগল আয়ানা কে। মেয়েটার সবকিছু তাকে কেমন মুগ্ধ করে! এই যে আয়ানা এখন মনোযোগ সহকারে দুলে দুলে পড়ছে, এটাও তাকে কেমন মুগ্ধ করছে! নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করছে। নিঃশব্দে অধর কামড়ে হাসল আদ্রিশ। অতঃপর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে চলল ফ্রেশ হতে।
পড়ার মাঝে সামনে রাখা বই টা ঠাস করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চমকাল আয়ানা। মাথা উঁচু করে পাশে তাকাল। আদ্রিশ কে দেখামাত্র অধর প্রসারিত হলো তার। মিষ্টি করে হাসল সে। ওই হাসিটুকু দেখে যেনো প্রাণ জুড়িয়ে গেল আদ্রিশের। এক নিমিষেই সারাদিনের সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। হৃদয় এবং চক্ষুদয় শীতল হলো। আয়ানা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে পাঁজাকোল করে শূন্যে তুলে ফেলল আদ্রিশ। ভরকাল আয়ানা। অবাক কণ্ঠে শুধাল,
— “এটা কি হলো?”
নীরব রইল আদ্রিশ, কোনো জবাব দিলো না। আয়ানা কে বিছানায় শুইয়ে রুমের লাইট অফ করে ফেইরি লাইটস জ্বালিয়ে নিজেও বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ল। আয়ানা পুনরায় কিছু বলার পূর্বেই তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। আয়ানা এবার খানিকটা অস্থির কণ্ঠেই শুধাল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— “আরে, আরে করছেন টা কি?”
আদ্রিশ শান্ত কণ্ঠে বলল,
— “একটু ঘুমাতে চাচ্ছি। নাও ডোন্ট ডিসটার্ব।”
আদ্রিশ ডিসটার্ব করতে বারণ করলেও থামল না আয়ানা। আদ্রিশ কে খানিকটা ঝাঁকিয়ে চিন্তিত স্বরে বলল,
— “আপনার কি খারাপ লাগছে? মাথায় য’ন্ত্র’না করছে? আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই? আচ্ছা, আপনি আগে কিছু খেয়ে তো নিন! আমি তো তাও নাস্তা করেছি কিন্তু আপনি তো কিছুই খান নি বোধহয়। আমি খাবার নিয়ে….”
আয়ানার অধরে আঙুল চেপে ধরে থামিয়ে দিলো আদ্রিশ। ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
— “হুঁশ, শ্বাস তো নাও! আমার একটুও ক্ষুধা লাগে নি। আর না খারাপ লাগছে। জাস্ট একটু টায়ার্ড লাগছে, খুব ঘুম পাচ্ছে। তাই ঘুমাতে চাচ্ছি। এবার চুপ। আর কথা না।”
আদ্রিশের জবাবে গাল ফুলাল আয়ানা। বলল,
— “আপনার ঘুম আসছে, আপনি ঘুমান। আমাকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছেন কেনো? আমার তো এখন ঘুম পাচ্ছে না।”
অধর বাকিয়ে হাসল আদ্রিশ। স্লো ভয়েসে বলল,
— “আচ্ছা ঘুম যখন আসছে না আর আমাকেও যেহেতু ঘুমাতে দিচ্ছ না তাহলে অন্য কিছু করা যাক।”
— “অন্য কিছু মানে?”
বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেঁসে গেল আয়ানা। আদ্রিশ কে নিজের অতি নিকটে আবিষ্কার করে তার কথার মানে বুঝতে বাকি রইল না আর। ঈষৎ রক্তিম আভা ফুটে উঠল আয়ানার মুখশ্রীতে। আদ্রিশের হাত ততক্ষনে শাড়ি ভেদ করে আয়ানার উন্মুক্ত উদর ছুঁয়েছে, ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে অধরের স্পর্শ এঁকে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সে। আদ্রিশের এমন স্পর্শ মুহূর্তেই কাঁপিয়ে তুলল আয়ানা কে। ছটফটিয়ে উঠল সে। আদ্রিশের টি-শার্ট শক্ত করে খা’ম’চে ধরে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,
— “আমার খুব ঘুম পাচ্ছে, আমি ঘুমাবো। আপনিও ঘুমান।”
আয়ানার ঘাড় থেকে মুখ উঠাল আদ্রিশ। মিটমিটিয়ে হাসল। বললো,
— “এই না একের পর এক প্রশ্ন করছিলে? আর মাত্রই তো বললে তোমার ঘুম আসছে না!”
আয়ানা তাড়াহুড়ো করে বলল,
— “তখন ঘুম আসছিল না। কিন্তু এখন খুব ঘুম আসছে। এখন আমি ঘুমিয়ে যাব। আর একটা প্রশ্নও করব না, প্রমিজ।”
— “এসব বলে এখন কোনো লাভ নেই বউ। নেশা যেহেতু লাগিয়ে দিয়েছো, সেহেতু নো ছাড়াছাড়ি।”
ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে উঠল আদ্রিশ। আয়ানা কিছু বলার পূর্বেই তার অধরযুগল নিজের দখলে নিয়ে নিল সে। অধরে আদ্রিশের অধরের গভীর স্পর্শ পাওয়ামাত্র চোখ বন্ধ করে ফেলল আয়ানা। খা’ম’চে ধরল আদ্রিশের পিঠ। বেশ অনেকটা সময় পর আয়ানার অধর ছাড়ল আদ্রিশ। ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে আয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল আয়ানার ফর্সা মুখটা ঘেমে গিয়েছে, ঈষৎ রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে চেহারায়। চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। আদ্রিশ হাসল। চোখ খুলে আদ্রিশ কে হাসতে দেখে রাগ হলো আয়ানার। নাক ফুলাল সে। বিড়বিড় করে বলল,
— “অসভ্য ডাক্তার।”
আয়ানার কথায় শব্দ করেই হেসে উঠল আদ্রিশ। নাকে নাক ঘষে বলল,
— “অসভ্য যখন বলেই দিয়েছো তবে আরেকটু অসভ্যতামি করি!”
সাথে সাথে আদ্রিশের বক্ষে মুখ লুকাল আয়ানা। ওভাবে থেকেই জবাব দিলো,
“না, প্লিজ।”
হাসতে হাসতেই আয়ানাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো আদ্রিশ। ওর মাথায় পরপর দুটো চুমু খেলো। চুলে বিলি কাটতে কাটতে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল,
— “আমি অসভ্য। কেবল তোমার জন্য, কেবল তোমার কাছে।”
রাগ গলে গেল আয়ানার। নিঃশব্দে হেসে আদ্রিশের বক্ষে নাক ঘষল সে, আদুরে বিড়াল ছানার ন্যায় লেপ্টে রইল। বাহিরে বেশ জোরেশোরে বৃষ্টি পড়ছে। সারাদিন বৃষ্টির কারণে আজ আবহাওয়া একেবারে শীতল। এতক্ষন ঘুম না আসলেও আদ্রিশের দেহের উষ্ণতায় এবং মাথায় আদুরে স্পর্শে চোখের পাতা ভারি হয়ে আসলো আয়ানার। কিছু সময়ের মাঝে গভীর তন্দ্রায় নিমজ্জিত হলো সে।
শীত, শীত অনুভূতি হওয়ায় ঘুমের মাঝেই উষ্ণতার খোঁজ করতে লাগল আয়ানা। ফলস্বরূপ ঘুম কিছুটা হালকা হয়ে আসলো তার। আয়ানার মনে হলো শূন্যে ভাসছে সে। মুহূর্তেই কপাল কুঁচকাল তার। ঘুমের ঘোরে ব্যাপারটাকে স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু শীত, শীত অনুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ায় এক পর্যায়ে ঘুম ভেঙে গেল আয়ানার, বুঝতে সক্ষম হলো সে সত্যিই শূন্যে আছে। কেউ তাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে হাটছে। আর সেই মানুষ টা যে আদ্রিশ সেটাও বুঝতে পারছে সে। কোনোমতে ঘুমে জড়িয়ে থাকা আঁখি জোড়া টেনেটুনে মেলে পিটপিট করে চাইল আয়ানা। কিন্তু আলো স্বল্পতার কারণে ঠিকঠাক না আদ্রিশের মুখটা দেখতে পেলো, আর না হুট করে বুঝতে পারল আদ্রিশ তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তাই ঘুম জড়ানো কণ্ঠে শুধাল,
— “কি করছেন ডাক্তার সাহেব? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
কোনো জবাব এলো না। আরও দুই-চার কদম এগোনোর পর আয়ানা কে কোনো এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিলো আদ্রিশ। পা মাটিতে পড়ামাত্র ভেজা ঘাসের উপস্থিতি অনুভব করল আয়ানা। সর্বাঙ্গ শিউরে উঠল তার। সে চেষ্টা করল কোথায় আছে তারা সেটা দেখার। কিন্তু আবছা অন্ধকার হওয়ায় এবং হুট করে ঘুমভর্তি চোখ মেলার কারণে কিছুই দেখতে পেলো না। দুহাতে চোখ ডলল আয়ানা। পুনরায় প্রশ্ন করার জন্য পেছন ফিরছিলই এমন সময় লাইট জ্ব’লে উঠল সেই স্থানে। অনেকগুলো কণ্ঠ সমস্বরে বলে উঠল,
— “হ্যাপি বার্থডে আয়ানা…”
অতঃপর প্রেমের আগমন সিজন ২ পর্ব ১৯
চমকাল আয়ানা, কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখল অনু বেগম, অনামিকা বেগম, মাহমুদ সাহেব, প্রীতি, আহিলের বাবা, আহিল, মীরা, আনিকা, দ্বীপ, মিথি, রিয়া সবাই একত্রে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের সকল প্রিয় মানুষ কে একত্রে দেখে স্তম্ভের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইল আয়ানা। আয়ানার অবস্থা দেখে মৃদু হাসল আদ্রিশ। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
— হ্যাপি বার্থডে মাই লাভ, মাই গুলুমুলু লেডি।