প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৫
মারশিয়া জাহান মেঘ
তোহা থতমত খে’য়ে বসে আছে কাজী অফিসে। চোখে -মুখে কেবল বিস্ময় আর বিস্ময়। এইটা কি করছে ফারাবী? তোহা ফারাবীকে কাজী সাহেবের সামনে মিনমিন স্বরে বলল,
“এইসব কি হচ্ছে? আপনি আমাকে এইখানে এনেছেন কেন? আমাদের কথাতো এইটা ছিল না। চলুন এইখান থেকে।”
ফারাবীর চেহারা আগের মতই স্বাভাবিক। তোহা যতটা অবাক হয়ে সব কেবল ছলছল চোখে দেখছে, ফারাবী তার বিন্দুমাত্রও দেখাচ্ছে না। তার কাছে সব স্বাভাবিক। যেন এইটাই সে চাইছিল। ফারাবী সাইন করে তোহাকে বলল,
“সাইন করো।”
“কি সাইন করব? আর ইউ ম্যাড? কি করছেন এইসব? আমাকে ছাড়ুন বলছি, আমি ভাইয়াকে এক্ষুনি কল দিব।”
ফারাবী তোহার হাত আরও শ’ক্ত করে চে’পে ধরল। তোহার চোখ ছলছল করছে। এই ফারাবী কি করতে চাচ্ছে? তাদের কথা ছিল, “বাইরে থেকে তোহা আর ফারাবী গিয়ে লারাকে বলবে, নিচক একটা এক্সিডেন্টলি তাদের বিয়েটা হয়ে গেছে৷ কিন্তু ফারাবী এখন এইটা কি করছে? মিথ্যে বিয়ের বদলে সত্যি সত্যি ফারাবী তাকে বিয়ে করে ফেলবে? তার ভাই কি জানতো এইটা? জেনেশুনে এইভাবে, এই অবস্থায় তাকে ফেলতে পারলো তাশরীফ! আর ভাবতে পারলো না তোহা। সাথে সাথেই সেন্সল্যাস হয়ে যায় সে।
ফারাবী চমকে উঠে তোহার গালে হাত রেখে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” তোহা, এই তোহা… উঠো, এই তোহা।”
কাজী থতমত খেয়ে বসে আছে। বলল,
“জোরপূর্বক বিয়ে আমি করাতে পারব না।”
ফারাবীর মেজাজ গ’র’ম হয়ে গেল। বলল,
“জোরপূর্বক বিয়ে কোনটা? আপনি জানেন? যে আমি জো’র করে ওকে বিয়ে করছি। মতামত নিয়েই আমরা বিয়ে করতে এসেছি। আমি কি সিনেমার ভিলেন? যে তুলে এনেছি আর জো’র করে বিয়ে করলাম।”
“পাত্রীকে ঠিক করুন জলদি, সাইন লাগবে।”
ফারাবী বলল,
“পানি হবে কাজী সাহেব?”
পানির ছিটা দিলো ফারাবী তোহার মুখশ্রীতে। মুহুর্তেই ছোট ছোট চোখে তাকালো তোহা। চমকে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনি আসলে কি চান ফারাবী?”
“তোমাকে।”
“ফারাবী এখনো আসছে না কেন? কল কেন ধরছে না?”
মনে মনে অস্থির হয়ে পায়চারী করছে লারা। আভা রান্নাঘর থেকে কেবল দেখে যাচ্ছে এসব। কখন যে এই ঝামেলা শেষ হবে। এই ঝামেলার জন্য, তার আর তাশরীফের বিয়ের রিসেপশন আ’ট’কে আছে। আজ সকালেই তাশরীফ ফারাবীকে বলছে শুনলো, “এই ঝামেলাটা মিটমাট করে আমাদের বিয়ের সব অনুষ্ঠান কম্প্লিট করে ফেলব।”
“এই, তুমি তোমার ননদকে একটা কল দাওতো।”
আভাকে লারা কথাটি বলতেই আভা বলল,
“ক্লাসে কল দিলে তোহা বিরক্ত ফিল করবে।”
“কে ডিস্টার্ব ফিল করলো না করলো, ওইগুলো আমার দেখার বিষয় না। আমার ফারাবী কোথায় আছে, ওইটাই দেখার বিষয়।”
“তোমার ফারাবী গিয়েছে কেন আমার ননদকে নিয়ে? কেউ কি ইনসিস্ট করেছে?”
লারা ভীষণ রা’গ দেখিয়ে বলল,
“না, অনেক হয়েছে। আজকে এইটার একটা রফাদফা আমি করেই ছাড়ব। এই বাংলাদেশে ওকে আমি থাকতে দিব না।”
“বাংলাদেশেইতো তোমাদের বাড়ি শুনেছি। বিদেশের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে এখন ভুলেই গেছ? এইটা তোমার মাতৃভূমি।”
“এই মেয়ে তুমি এত কথা বলার কে হুম?”
“আমি এই বাড়ির বউ। এই যে গোটা বাড়িটা যে দেখছ? এইটা আমার হাসবেন্ডের বাড়ি। আর তুমি, এই বাড়িতেই অবস্থান করছ।”
লারার মুখ কালো হয়ে গেল। সে এখন বের হবে গাড়ি নিয়ে। দেখতে হবে, ফারাবী আসলেই কোথায় গিয়েছে।
তোহা আর ফারাবী একে অপরের পাশাপাশি বসে আছে খো’লা আকাশের নিচে। যেইখানে কেউ নেই তোহা আর ফারাবী ছাড়া। নির্জন একটা জায়গা। অদূরে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট একটা খাল। দুই সারিতে গাছ, মধ্য জায়গা। তোহার চোখে পা’নি। ম’রে যেতে ইচ্ছে করছে তার। কি থেকে কি হয়ে গেল! এমনটাতো হওয়ার কথাই ছিল না।
“তোহা…”
“খবরদার, আপনি আমার নাম আপনার মুখে উচ্চারণ করবেন না। আমাকে এইখানে এনেছেন কেন? আমাকে বাড়ি নিয়ে চলুন। নয়তো আমি একাই চলে যাব।”
“অনেক রাগ হচ্ছে আমার উপর?”
“রাগ? আপন মানুষদের উপর রাগ করা যায়। রাগ, অভিমান, ভালোবাসা এই তিনটা ভীষণ মূল্যবান শব্দ।”
“আমি জানি, তুমি তোমার ভাইয়াকেও ভুল বুঝতেছ। আসলে, তাশরীফ এই বিষয়ে কিছুই জানে না।”
তোহা অবাক হয়ে তাকালো ফারাবীর দিকে। একটু আগ অবধিও সে ভাবছিল, তাশরীফ সবটা জানে। তোহা ফারাবীর শার্টের কলার চে’পে ধরে। বলল,
“আমার ভাইয়ার বিশ্বাস নিয়ে খেলতে আপনার একবারও খারাপ লাগলো না? আপনি জানেন? আপনি কি করেছেন?”
“জানি।”
তোহা চিৎকার করে বলল,
” না, না আপনি জানেন না। জানলে এই কাজটা করতেন? আমার ভাইয়া জানতে পারলে কি হবে ভাবতে পারছেন আপনি? আপনাকে মে’রে লা’শ পাঠাবে আপনার মা-বাবার কাছে। বন্ধুত্ব নামক শব্দটা আপনাদের মাঝে আর থাকবেই না।”
“তুমি যদি চাও আমাদের বন্ধুত্বটা থাকুক, তাহলে তুমি এইসব তাশরীফকে জানাবে না তোহা।”
দৃঢ় দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে মুখ গম্ভীর করে কথাটি বলল ফারাবী। তোহা চোখ বড় করে তাকালো ফারাবীর দিকে। বলল,
“আপনি এত নিচু মন-মানসিকতার ফারাবী? এত্ত বড় কিছু হয়ে গেছে, আর সেইটা আপনি জানাতে না করছেন? তাও আমার ভাইয়াকে? আমার ভাইয়া আমার কাছে সব। আমার মা-বাবা সব আমার ভাইয়া। এত বড় সত্য তার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার প্রশ্নই আসে না। আমি এক্ষুনি গিয়ে ভাইয়াকে সব বলব।”
কথাটি বলেই তোহা উঠে দাঁড়ালো। চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে ফারাবী বলল,
“সত্যটা জানলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট তোমার ভাইয়াই পাবে তোহা।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৪
থেমে যায় তোহা’র পা। শ’রী’র আর এত মানসিক যন্ত্রণা নিতে পারছে না। নিঃশক্তি হয়ে বসে পড়ল আগের জায়গায়। হঠাৎই কান্না করে উঠে তোহা। চিৎকার করে ফারাবীকে বলল,
“আমি একজনকে ভালোবাসিইইইই, আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না ফারাবী ভাই, পারেন নাহহহহহ।”