মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৫

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৫
নুজাইফা নূন

-“সাইফান এক পা দু পা করে সিজদার দিকে এগিয়ে আসে।তাদের মধ্য এক ইঞ্চি সমান দূরুত্ব রয়েছে।সাইফান সেটুকু দূরুত্ব ঘুচিয়ে সিজদার কপালের দিকে নিজের ওষ্ট নিয়ে যায়।আর তখনি দরজায় কড়া ঘাত শোনা যায়।দরজার অপর প্রান্ত থেকে সামিরা বলছে,
-” ব‌উমণি আমার লাগেজ টা বোধহয় তোমাদের রুমে নিয়ে এসেছো।আমি চেঞ্জ করবো।আমার লাগেজ টা দাও । বাই দ্যা ওয়ে দিন দুপুরে দরজা বন্ধ করে দিয়ে কি করছো তোমরা?”
-” সামিরার কণ্ঠস্বর পাওয়া মাত্রই সিজদা সাইফান দুজনে দুদিকে ছিটকে পড়ে।সিজদার তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।সাইফান সিজদার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দরজা খুলে দিয়ে বললো,

-” কি হয়েছে বোন?”
-” সরি ভাইয়া। তোমাদের কে ডিস্টার্ব করাটা ঠিক হয় নি। কিন্তু আমার চেঞ্জ করতে হবে। আমার লাগেজ নিয়ে চলে এসেছো।”
-” দাঁড়া দেখছি আমি বলে সাইফান সামিরার লাগেজ নিয়ে এসে সামিরার হাতে দেয়।সামিরা
যেতেই সাইফান এসে বিছানায় সিজদার পাশে বসে।পুরো রুমে পিনপতন নীরবতা কাজ করছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই।সাইফান সিজদার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিতে গেলে সিজদা হাত সরিয়ে নেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঘোর কাটে সাইফানের।সে সিজদার উপর একটু বেশিই ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়ছে।সিজদার দিকে তাকালে সে যেন মানসিক শান্তি পায়।সিজদার আশেপাশে থাকলে ভালোলাগায় তার দেহ মন ছেয়ে যায়।যেটা সে চায় নি।সে রুম থেকে বেরিয়ে এসে তানশির নাম্বারে কল করে। কিন্তু কল রিসিভ হয় না। টেনশন হয় সাইফানের।তানশির কোনো বিপদ হলো‌ না তো? এমন প্রশ্ন উঁকি দেয় সাইফানের মনে। কিন্তু পরক্ষণেই সাইফানের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়ে তানশি কল ব্যাক করে।সাইফান তড়িৎ গতিতে কল রিসিভ করে অনেকক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বিনিময় করলো।প্রায় দশ মিনিট পর সাইফান কল কেটে ফোন পকেটে রাখতে গিয়েই দেখে তার পেছনে সালেহা বেগম দাঁড়িয়ে রয়েছে।সালেহা বেগম কে দেখে বুক ধুক করে উঠে সাইফানের।সালেহা বেগম তাদের পার্সোনাল কথাবার্তা শুনে নিয়েছে কিনা এই ভয়ে।যদি শুনে নেয় তাহলে তার সব প্ল্যান জলে যাবে।সাইফান শুকনো ঢোক গিলে বললো,

-” সালেহা খালা আপনি কখন এসেছেন?”
-” এই তো মাত্রই আইলাম।”
-” কিছু বললেন খালা?”
-” হ বাবা।নিচে আসো ।ভাইজান তোমাগো লাইগা অপেক্ষা করতাছে।জলদি আহো বলে সালেহা বেগম নিচে চলে যান।তিনি যেতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সাইফান।সাইফান দুষ্টু হেসে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বললো,
-” যাক বাবা।এই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে।এখন থেকে আরো বেশি এলার্ট থাকতে হবে।পান থেকে চুন খসলেই আমার বিপদ।যেটা আমি হতে দিবো না।কিছুতেই না।।”

-” সারজিস একটা ইম্পর্ট্যান্ট ফাইল খুঁজতে গিয়ে সিজদার সেই রক্ত মাখা রুমাল খানা পায়।রুমাল খানা হাতে নিতেই সিজদার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা টা সারজিসের চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়।সেই সাথে তার বুকে ব্যাথা বাড়তে থাকে। পুরোনো ক্ষত তাজা হয়ে যায়।সারজিস রুমাল খানা ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দেই।তখনি তাথৈ এসে সারজিস কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।তাথৈর এহেন কার্যে বিরক্ত বোধ করে সারজিস।তার ভেতরে যে কি চলছে সেটা একমাত্র সেই জানে।সব কিছুতেই বিরক্ত লাগছে তার।

একজন ডক্টর হয়েও মেজাজ খিটখিটে হয়ে গিয়েছে।সারজিস দাঁতে দাঁত চেপে বুক থেকে তাথৈর হাত সরিয়ে দিয়ে তাথৈ কে ঠাস ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দেয়।তাথৈ বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।সারজিস কে সে ছোট থেকে দেখে এসেছে।সে জানে সারজিস অনেক রাগি। কিন্তু সারজিস কে কখনোই কারো গায়ে হাত তুলতে দেখে নি। অকষ্মাৎ সারজিসের এতো রাগের কারণ বুঝতে পারে না তাথৈ।তার গায়ে কেউ কখনো একটা ফুলের টোকা ও দেয় নি।বড় আদরের মেয়ে সে।তাথৈ গালে হাত দিয়ে ভেজা কণ্ঠে বললো,
-” তুমি আমাকে থাপ্পড় দিলে সারজিস?”
-” সরি তাথৈ ।আমার মাথার ঠিক ছিলো না।আমি তোর গায়ে হাত তুলে ফেলেছি।আ’ম এক্সট্রিমলি সরি ফর দ্যাট।প্লিজ ফরগিভ মি।”
-” তাথৈ কিছু বলে না।বরং সারজিসের ফেলে রাখা রুমালের উপর দিয়ে হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে যায়।তাথৈ বেরিয়ে যেতেই সারজিস রুমাল খানা ফ্লোর থেকে তুলে পরিষ্কার করে রুমালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে আবারো সযত্নে রেখে দেয়।।।”

-”সামিরা লাগেজ নিয়ে তড়িৎ গতিতে নিজের রুমে এসে দেখে তার ফোন বাজছে।ফোনের স্ক্রিনে মাই লাভ নাম টা জ্বলজ্বল করছে।সামিরা এক মিনিট ও কালবিলম্ব না করে কল রিসিভ করে বললো,
-” কি হয়েছে তোমার? নতুন কাউকে পেয়েছো নাকি?আমাকে আর তোমার প্রয়োজন নেই তাই না? আসলে তোমরা সব ছেলেরা এ‌ক‌ই রকম‌।মন নিয়ে খেলতে তোমরা অনেক পছন্দ করো। তোমাদের প্রিয় খেলা হচ্ছে মেয়েদের মন নিয়ে খেলা।তোমাকে দুইদিন থেকে কলের উপর কল করেই যাচ্ছি। কিন্তু তোমার কোনো রেসপন্স নেই। তুমি একটা বার কল রিসিভ করার প্রয়োজনবোধ করছো না। কেন রামিম? তোমাকে মন দিয়ে কি আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি? এই দুই টা দিন জানো কিভাবে কেটেছে আমার।প্রতি মূহুর্তে তোমার কথা মনে পড়েছে। বাড়িতে বৌভাতের অনুষ্ঠান ছিলো। তুমি বিয়েতে আসো নি। ভেবেছিলাম বৌভাতের অনুষ্ঠানে আসবে।আমি তোমার পথ চেয়ে বসে ছিলাম। কিন্তু তুমি আসো নি।আমাকে একটা কল করার ও সময় হয় নি তোমার।তোমার জন্য যে একটা মেয়ের চিন্তায় পাগলপ্রায় অবস্থা হয়ে গিয়েছে।সে খেয়াল আছে তোমার?”

-” সামিরা একটু শান্ত হ‌ও।আমার কথা টা একটু শোনো প্লিজ।”
-” কি বলবে তুমি? কি বলার আছে তোমার?”
-” তোমাকে তো বলেছিলাম আমার বাবা অসুস্থ।আমার বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই সামিরা। শুক্রবারে আমার বাবা আমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে গিয়েছে।আমি এতিম হয়ে গিয়েছি সামিরা।”
-” বাবা নেই মানে? এতো বড় কথাটা তুমি আমাকে বলো নি ?এই তোমার ভালোবাসার নমুনা রামিম?”

-” আমি চাই নি আমার জন্য তোমার আনন্দ ফুর্তি মাটিতে মিশে যাক। আমার জন্য তুমি কষ্ট পাও ।আমি এটা চাই নি।জানো সামিরা আমি বাবা কে তোমার কথা বলেছিলাম।তোমার ছবি ও দেখিয়েছিলাম।বাবা অনেক খুশি হয়েছিলো।বাবা বলেছিলো আমার তো মেয়ে নেই।সামিরা আমার মেয়ে হয়ে এই বাড়িতে আসবে।বাবা বলেছিলো একটু সুস্থ্য হলেই তোমাদের বাড়িতে যাবে।তোমার বাবার সাথে কথা বলবে। প্রয়োজনে তোমাকে ভিক্ষা চাইবে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।বাবা নামক বটগাছের ছায়া টা আমার মাথার উপর থেকে সরে গেলো।আমি কি নিয়ে বাঁচবো বলো তো?”

-” চিন্তা করো না রামিম ‌।আমি তো আছি।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
-” কিছু ঠিক হবে না সামিরা।তোমার আর আমার মিলন অসম্ভব। তুমি আমাকে ভুলে যাও সামিরা।আমি তোমার যোগ্য না।আমি জানি আমি কখনোই তোমাকে পাবো না।আমার না আছে টাকা না আছে ভালো চাকরি।যে চাকরি টা ছিলো।সেটাও বোধহয় হারাতে হবে।আমি তো নিজেই চলতে পারবো না।সেখানে তোমাকে বিয়ে করে কি খাওয়াবো বলো? তার থেকে ভালো হয় তুমি আমাকে ভুলে যাও। তোমার বাবা তোমাকে অনেক বড়লোক হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে বিয়ে দিবে। তুমি অনেক সুখী থাকবে সামিরা।”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৪

-” ভুলে যাবো মানে কি? মামা বাড়ির আবদার নাকি? যখন প্রেম করছিলি তখন মনে ছিলো না।এখন ভুলে যেতে বলছিস কোন সাহসে?আমি কার সাথে ভালো থাকবো কি থাকবো না সেটা তুই ঠিক করে দিবি নাকি?”
-” তুমি বুঝতে পারছো না সামিরা।তোমার বাবা কখনোই আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবেন না।সারজিস স্যার আমাদের রিলেশনের ব্যাপারে
সবটা জানে।স্যার বলেছিলো সে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে দিবে।আমি ও স্যারের উপর ভরসা করেছিলাম। কিন্তু স্যার নিজেই তো কানাডা চলে যাচ্ছেন।”
-” হোয়াট? ভাইয়া কানাডা চলে যাচ্ছে মানে?কি বলছো এসব?”

মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৬