প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৭
মারশিয়া জাহান মেঘ
“তাশরীফ, আভাকে তুই মানিয়ে নিয়েছিসতো?”
তাশরীফ তাকালো ফারাবীর দিকে। উদাস হয়ে বলল,
“মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিতো ফারাবী। মন বার বার আ’ট’কে দিচ্ছে।”
“তাহলে এতো আয়োজন কেন?”
“নিয়মের অজুহাত।”
“তোর মনে হয় না? আভা তোর প্রতি দিন দিন উইক হয়ে যাচ্ছে?”
“আভাকেও কন্ট্রোল করতে হবে ওর ইমোশন। এত তাড়াতাড়ি সবটা হয়ে গেছে, যে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট পাচ্ছি।”
“তাহলে সেইদিনই অনুষ্ঠান করিস, যেইদিন সত্যি সত্যি মেয়েটাকে তুই ওয়াইফের অধিকার দিতে পারবি।”
আভা পেছন থেকে সব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে আছে। আর একমুহূর্তও সে দাঁড়ালো না সেইখানে। নিজের রুমে চলে এলো। গাল বেয়ে নোনা চোখের পানি পড়ছে তার। অথচ সে ভেবেছিল, তাশরীফও তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তাহলে কি তার ভাবনা এতদিন ভুল ছিল! এত বড় ভুল!
এইদিকে ফারাবী কিছু একটা ভেবে বলল,
“তাশরীফ, তোকে একটা কথা বলব ভাবছিলাম…”
তাশরীফ ফোনে দৃষ্টি রেখে বলল,
“হ্যাঁ, বল।”
“আমি তোহাকে বিয়ে করতে চাই।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফারাবীর কথা শুনে চমকে উঠল তাশরীফ। ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দ্রুত ফারাবীর চোখে চোখ রাখলো সে। এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে কেবল। ফারাবী বেশ বুঝতে পেরেছে যে, তাশরীফ তার কথায় টোটালি শকড। তাই সে তাশরীফের দু হাত মুঠো করে ধরে বলল,
“কেউ না জানলেও অন্তত তুই জানিস, তোর বোন আমার কাছে কতটা হ্যাপি থাকবে। পৃথিবীর সব সুখ তোর বোনকে আমি এনে দিব। দরকার হলে নিজে আঘাত পাব তাও তোহাকে আঘাত স্পর্শ করতে দিব না।”
তাশরীফ নিশ্চুপ। সে আগের মতই তাকিয়ে আছে ফারাবীর দিকে। ফারাবী জবাবের আশায় তাকিয়ে আছে তাশরীফের দিকে।
“তাশরীফ…”
তাশরীফ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
“ফারাবী, আর ইউ সিরিয়াস?”
“কি দেখে তোর মনে হচ্ছে? আমি সিরিয়াস মুডে নেই।”
“কফি খাবি?”
ফারাবী অবাক হলো। সে বলল কি? আর তাশরীফ জবাব দিলো কি?
“চল.. ছাঁদে যাই।”
তাশরীফ ফারাবীকে নিয়ে ছাঁদের দিকে গেল। দুজনের হাতেই দুই কাপ কফি। তাশরীফ কফিতে চুমুক দিয়ে দৃষ্টি নগরীর দিকে রেখে বলল,
“তোহা আমার জীবনের সব। মা-বাবা মা’রা যাওয়ার পর ওকে ভালো রাখার জন্যই, দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। বোনকে ভালো রাখার জন্য, পরিশ্রমে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, যে ওকে প্রকৃতভাবে ভালোই রাখতে পারিনি।”
ফারাবী তাশরীফের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তাশরীফ, তুই নিজের সবটা দিয়ে চেষ্টাতো করেছিস। তোর মত হয়তো আমি ওকে ভালো রাখতে পারব না, কিন্তু অনেক ভালোবাসতে পারব।”
তাশরীফ শব্দহীন হাসে। বলল,
“আমি চাই, আমার মত ভাল না রাখ। স্বজন হারানোর শোকে আমি এতটাই কাতর ছিলাম যে, “তোহাকে সময় দিতে পারিনি কখনো। ওর স্কুল, কলেজে গার্ডিয়ান মিটিংয়ে জয়েন হতে পারিনি নিজের পেশেন্টদের জন্য। সারাদিন শেষে রাতে ফিরে দেখতাম, তোহা খাবার টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়েছে আমার অপেক্ষা করতে করতে। আমি ডাকলে সাথে সাথে চোখ মেলতো। তাকিয়েই বলতো,
“ভাইয়া খাবে না?”
আমি যখন বলতাম, “তুই খেয়ে নে, বাইরে থেকে আমি খেয়ে এসেছি।”
সাথে সাথেই আমার বোনের ক্লান্ত চেহারা আমি দেখতাম। ঘুম চোখে না খেয়ে বসে থাকা ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ের জন্যতো কঠিনই। ছোট থেকে একা একা বড় হয়েছে অনেকটা।
তাশরীফ এক নিশ্বাসে উপরোক্ত কথাগুলো বলে, ফারাবীর দিকে তাকালো। ফারাবীর হাত দুটো নিজের হাতের আয়ত্তে এনে বলল,
“আমি জানি, তুই কেমন। আমি এইটাও জানি, আমার পর যদি কেউ তোহাকে অনেক ভালোবাসে সেইটা তুই। সেই আমেরিকা থাকতেই সেইটা আমি জানি।”
ফারাবী চমকে উঠল তাশরীফের কথায়। তার মানে তাশরীফ আগে থেকেই জানতো?
তাশরীফ আবারও বলতে শুরু করলো,
“তোর হাতে তোহাকে তুলে দিতে আমার কোনো সংকোচ নেই। বরং আমি নিশ্চিন্ত হতে পারব। তুই শুধু কথা দে, তোহাকে সারাজীবন হ্যাপি রাখবি। এক ফোঁটা পা’নিও চোখ থেকে পড়তে দিবি না।”
ফারাবী তাশরীফের হাত শ’ক্ত করে ধরে বলল,
“কথা দিলাম…”
ভাইয়ের দিকে অবাক পানে চেয়ে আছে তোহা। সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না, তার ভাই কি করে বলছে? ফারাবীকে বিয়ে করতে সে! বিয়ে করবে কি? তার ভাইয়াতো জানেই না বিয়ে হয়ে গেছে। এই অজানা বিয়েটাকে আবার জানা বিয়ে করানোর জন্য ফারাবী গেইম খেলছে?
তাশরীফ তোহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আমি ছাড়া যে তোকে ভালো রাখতে পারবে, সে হচ্ছে ফারাবী। আমি জানি, ফারাবী কেমন। ওর মত ছেলে হয় না তোহা।”
“ভাইয়া, আমি এই মুহুর্তে বিয়ে নিয়ে ভাবছি না।”
তাশরীফ মুখ গম্ভীর করলো। বসা থেকে উঠে, অন্যদিকে তাকিয়ে বোনের উদ্দেশ্যে বলল,
“তুমি না ভাবলেও, আমি ভাবছি। আশা করি তুমি তেমন বড় হওনি, যেমন বড় হলে আমার কথার অবাধ্য হবে।”
ভাইয়ের কঠিন কথা তোহার ভীষণ মনে লাগলো। কান্না পাচ্ছে তার। একটা বার তাশরীফ তাকে জিজ্ঞেস করলো না? আসলে সে কি চায়? মনে ভীষণ অভিমান হলো তোহার। একইতো ফারাবী আজ এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়েছে সবার আড়ালে, এখন প্রকাশ্যে নাম দিতে চাইছে? ওই ছেলেটা কি শুনেনি? সে কাব্যকে ভালোবাসে। ভীষণ রাগ হলো ফারাবীর উপর তোহার। তার ভাইয়াকেও ফারাবী হাত করে নিয়েছে। একমাত্র আভাই পারে তাকে বাঁচাতে। তোহা বলল,
“ভাইয়া, আমি পড়াশোনা করতে চাই।”
“ফারাবী করাবে।”
“আমি আমেরিকায় যেতে চাই না।”
“ফারাবী তাহলে বাংলাদেশে সেটেল্ড হবে।”
“ভাইয়া, আমি তোমাকে ছেড়ে থাকব কিভাবে?”
কথাটি বলেই কান্না করে ফেলে তোহা। এতক্ষণ সে নানান অজুহাত দেখিয়েছে। কিন্তু, মনের কথাটা পরিশেষে বলেই দিয়েছে। তাশরীফের ভেতর কেঁ’পে উঠল। বোনের দিকে ফিরে তাকালো না এক মুহূর্তের জন্যও। রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। তখনি সে অনুভব করলো, চোখ টলমল করছে। ‘বোনটা যে তার বড্ড আদরের।’ সে জানে ফারাবী বিয়ের পর পরই আমেরিকায় চলে যাবে তোহাকে নিয়ে। বোনকে ছাড়া এই বিশাল বাড়িতে সে ঘুমাবে কি করে? তোহার জন্যইতো বাড়িটাকে তার ফুলের বাগান মনে হতো।
তাশরীফ রুমে এসে দেখে, আভা ঘুমাচ্ছে। ঠিক ঘুমাচ্ছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না, কিন্তু চোখ আবদ্ধ করে আছে। তাশরীফ গলা ঝেরে বলল,
“নুডলস খেতে ইচ্ছে করছে।”
আভা ঘুমায়নি। চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল। তাশরীফ যে রুমে প্রবেশ করেছে, তা সে অনুভব করতে পেরেছে। তাশরীফের কথা শুনে বিছানা থেকে নেমে রুম ত্যাগ করার জন্য পা বাড়ালো সে। এমনিই, পেছন থেকে তাশরীফ উঁকি দিয়ে বলে উঠল,
“গাল ফোলা কেন? টমেটোর মত লাল হয়ে আছে। বনের মত ফোলে আছে।”
আভা জবাব দিতো না। কিন্তু অনেকটা রাগ থেকেই জবাব দিলো,
“গাল ফুলিয়ে রেখেছি। অন্তত কারোর মত, আবেগ নিয়ে খেলা করিনি।”
আভার কথা বুঝতে অনেক অসুবিধা হলো তাশরীফের। আভার রাগের কারণ যে সে তা বেশ বুঝতে পেরেছে। আভা যেই চলে যাবে, দ্রুত পায়ে গিয়ে আভার হাত চে’পে ধরলো তাশরীফ। একদম নিজের কাছে এনে বলল,
“কি হয়েছে? গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?”
“ছাড়ুন আমাকে, নিচে যেতে হবে।”
“আমি চাই না, নুডলসে তোর এই টমেটোর মত লাল রাগ ঢালিস। কি হয়েছে বল?”
“বলার প্রয়োজন নেই।”
“প্রেমিকের সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি?”
আভার রাগ আকাশ সমান হয়ে গেছে। তার প্রেমিক আসবে কোথা থেকে? আজব কথা কেন তাশরীফ তাকে বলবে। তাই জেদ নিয়ে বলল,
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ২ পর্ব ১৬
“আপনার মত সুন্দর না আমি, যে আমার প্রেমিক পুরুষ থাকবে।”
“আমার মত সুন্দর হবি কেন? তুইতো গোলাপের মত সুন্দর। আজকাল ফুলের দোকানে গোলাপ দেখলে আর সুন্দর লাগে না। কারণ, আমার ঘরেইতো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গোলাপ ফুল আছে।”