প্রণয়ের সুর পর্ব ৩১

প্রণয়ের সুর পর্ব ৩১
মহুয়া আমরিন বিন্দু

জীবনের গতিধারা বহমান। সময়ের সীমারেখায় মানুষ বরাবরই পরাজিত হয়,সময়ের সাথে পেড়ে উঠা সাধারণ মানুষের সাধ্য কেথায়!
অনেক গুলো দিন পাড় হয়েছে ইতিমধ্যে, সম্পর্কে নিস্তব্ধ ফাটল ধরেছে,মন থেকে মনের দুরত্ব বেড়েছে।সম্পর্ক গুলো নতুন রূপে সেজেছে,এক ডাকবাক্স ছেড়ে অন্য ডাকবাক্সে চিঠি ফেলার মতো ভুল করেছে!তবুও জীবন থেমে নেই চলছে আপন গতিতে।

রোজকার মতো আজ ভার্সিটি যাচ্ছে সাব্বির সাথে নেই তার চিরপরিচিত সেই মানুষটি।সাব্বির ইচ্ছে করেই মানুষটিকে এরিয়ে চলছে।যে পাখি যাওয়ার সে তো যাবেই,তবে কেমন এক শূন্যতা কাজ করে কি এক অদ্ভুত রকম অনুভূতির জালে ফেঁ’সে যায় রোজ।এই অনুভূতি কেনো এতো অচেনা?কেনো এরকম বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো তার মন?এতো এতো প্রশ্ন জাগে মনে উত্তর তো মিলে না,এই তিক্ত নিদারুণ বিরক্তির কারন কি কোনো দিন জানতে পারবে সাব্বির?নাকি সব কিছুই থেকে যাবে অজানা কোনো এক প্রহেলিকা হয়ে!বন্ধু হারিয়ে গেলেও বুঝি মানুষ এতোটা হৃদ’য় যন্ত্র”ণায় ভুগে?চিন চিনে এক ব্যাথা অনুভব হয় বুকে?সব কিছু জুড়ে হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে একটা মানুষের শূন্যতায়?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কেনো নিজেকে এতো শূন্য লাগে হাজারো ভীড়ে একলা লাগে!
কতো শতো চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে আছে সাব্বির,একজন যে তাকে গলা ফাটিয়ে তাকে ডাকছে সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ যেনো নেই।
জেরিন দৌড়াতে দৌড়াতে এসে সাব্বির হাত ধরে টেনে ওকে দাঁড় করালো।
সাব্বির হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নেয় সহসা!সাব্বিরের চঞ্চলতা দিন দিন কমে গেছে,সব সময় হাসতে থাকা অন্যকে হাসাতে থাকা ছেলেটা চুপসে গেছে যেনো সবার চোখের আড়ালে।নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার মতো যেনো কাউকে পাচ্ছেই না!

–,,কিরে কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাস না নাকি?মনোযোগ কই থাকে তোর?
–,,তুই এখানে?স্যার আসেনি তোকে নিতে?
জেরিনের মুখটা চুপসে গেলো তা দেখে সাব্বির বলে উঠলো–,,ঝ’গড়া করেছিস?
–,,না!তেমন কিছু না,কয়েক দিন হলো বুঝতে পারছি নিরব কেমন এরিয়ে চলছে আমাকে,কথায় কথায় রেগে যায়।নিতে আসলে নাকি তার সময় বেশি ব্যয় হয়,সে তো একটা কাজ করে তা রেখে আসতে পারবে না!একা একাই যেতে বলেছে।তিন দিন ধরেই তো আসে না।
সাব্বির ছোট করে বললো–,,ওহ!
কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে–,,তাই বুঝি আমার কথা মনে পড়লো?এখন একা যেতে হবে দেখে আমাকে সঙ্গী বানাচ্ছিস?

–,,আমার উপর রেগে আছিস তুই?
–,,রাগ করবো কেনো?তা আমার সাথে দেখলে নিরব বুঝি রাগ করবে না?তোদের সম্পর্কে এর প্রভাব পড়তে পারে তার থেকে ভালো তোকে রিকশা করে দেই তুই চলে যা!
–,,আমার সাথে যেতে তোর সমস্যা বলতেই পারিস!তোরা সবাই আমাকে এরিয়ে চলিস এখন,আমার খারাপ লাগে না নাকি?শুধু অনুভূতি, রাগ, অভিমান তো তোদেরই আছে!নিরব টার সাথে বিয়ে ঠিক না হলেই ভালো ছিলো,ছেলেটা অভ্যাস বানিয়ে দিয়ে এখন ইগনোর করছে।

–,,স্যার তৈরি করলো সামান্য কয়েকদিনের অভ্যাস,আর কেউ একজন তেইশ বছরের অভ্যাসে অভ্যস্ত করে মাঝপথে ছেড়ে চলে গেছে!ভাব একবার তোর বেশি কষ্ট নাকি সে মানুষটার?
–,,কয়েকদিন পর তো চলেই যাবো এখন তোরা ও আমাকে এভাবে পর করে দিবি?আগের মতো কথা বলবি না আমার সাথে?নিরব না হয় বাহিরের মানুষ কিন্তু তোরা?

সাব্বির জেরিনের মাথায় একটা মেরে বললো–,,গা’ভীদের মাথায় বুদ্ধি একটু কমই থাকে!নিরব কে তুই পাত্তা দিতি তাই তোর সাথে এমন করার সাহস পেয়েছে,প্রথম থেকে যদি একটু ভাব নিয়ে চলতি,নিজেকে একটু বেশি প্রাধান্য দিতি তো তোর সাথে এরকম করার আগে কয়েকবার ভাবতো নিরব।মনে রাখবি দুনিয়া উল্টে গেলেও নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে কিছু পাওয়ার চেষ্টা করবি না।যা তোর তা তুই যেকোনো মূল্য পাবি,কিন্তু যা তোর নয় তা হাজার চেষ্টা করেও পাবি না!নিরব তোকে পেয়ে বসেছে,নিজেকে ওর সামনে দুর্বল বানিয়েছিস তুই তাই এখন তোকে ভাঙ্গতে চাইছে।

বিয়ে বা অন্য যেকোনো সম্পর্ক দুজন মানুষের সমান গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে টিকে থাকে।একজন শুধু দিয়েই যাবে অন্য জন শুধু ভোগ করে যাবে এরকমটা হওয়া কখনো উচিত না।তোরা দুজন পরবর্তীতে সারাজীবন এক সাথে থাকবি,যদি তুই নিজেকে নিজে সম্মান না দিস সম্মানস পাওয়ার যোগ্য না করিস তো অন্য জন ও দিবে না।নিরব কে ও বুঝা তুই ও কম গুরুত্বপূর্ণ না।না বুঝলে বুঝিয়ে বলবি,এখন ও সময় আছে।বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিবি আমরা আগেও তোর পাশে ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকবো নিজেকে একা ভাবনি না কখনো!

জেরিন খুশিতে সাব্বিরের হাত চেপে ধরে বলে –,,তুই কতো ভালো সাব্বিরা কিন্তু বুঝলাম না ওই শা’লা নিরবের তোকে নিয়ে এতো কি সমস্যা, মন টা চায় মাথা ফা’টিয়ে দেই,এতোদিন কি সাধে কথা বলেছি এটার সাথে,এখন তো মনে হচ্ছে কি কি কথা হয়েছে তোদের কেও শুনালে ভালো হতো,কথায় কথায় ইমোশনাল ব্লাক’মেইল করতো।এমন ভাবে কথা বলতো যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না!বলতো তুমি তো সব শেয়ার কতো ভাই বোনদের, আমাদের ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করবা?এটা কেমন নিচু মানের কাজ!
–,,তুই কি চাস আমাদের সাথে আবার বন্ধুত্ব করতে?তুই নিশ্চিত তো?মনে রাখিস একবার আসলে কিন্তু সারাজীবন থাকতে হবে!

–,,কতোগুলো দিন খুবই বিরক্তিতে কেটেছে আমার।বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত একটু শান্তি পেতে চাই,প্রাণ খুলে আগের মতো হাসতে চাই।জানিস কোথাও যেনো কিছু একটা নেই জীবনে, খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা নেই মনে হয়!নিরবের সাথে এতো দিন কথা বলতাম ও আমাকে স্পেশাল ফিল করাতে চাইতো,সবচেয়ে উপরে রাখতো প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও দিন শেষে কেনো জানি আমি মন থেকে হাসতে পারিনি,তোদের ছাড়া দূরে কোথাও গিয়ে কি আমি আদো ভালো থাকবো?এরকম প্রশ্নই শুধু মনে আসে বার বার!

–,,এ্যাহ আসছে,বিয়ের পর কি তোর ওই কানা জামাই কে ঘর জামাই রাখবো নাকি আমরা।তবে আমরা তোর মন ভালো করতে যেতেই পারি কিন্তু তোর জামাই তো আর আমাকে দু চক্ষে দেখতে পারে না!
–,,বাদ দে তো বিয়ের আগে আর এটাকে মাঝে আনিস না এখন সব বিরক্ত লাগছে আমার!
–,,নাক কম ফুলা তুই দেখতে এমনিতেই পে’ত্নীর মতো,এখন পুরা শাঁক”চুন্নি লাগতাছে!
জেরিন রেগে সাব্বির কে রেখে জোরে হাঁটতে থাকে।সাব্বির দূর থেকে বলে উঠে–,,জেরিন দেখ দেখ সামনে কালা কু’ত্তা!
জেরিন চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে যেভাবে পেরেছে দৌড়ে সাব্বিরের কাছে চলে আছে পেছনে লুকিয়ে গিয়ে বলে–,,ক…কই কুকুর!

সাব্বির হু হা করে হেসে দেয়–,,জেরিন তুই কি কোনো কিছু না দেখেই এভাবে চিৎকার করেছিস?যদি সত্যি সত্যি থাকতো তখন তো বেহুঁ”শ হইয়া মাঝরাস্তায় পইড়া থাকতি!আজকে বাসায় গিয়েই নেহা আর বৃষ্টি কে বলতে হবে তুই অদৃশ্য কু’ত্তার দৌড়ানি খেয়েছিস!
জেরিন সাব্বিরের সাথে মারা’মারি করছে,দৌড়াদৌড়ি করতে করতে ভার্সিটি গিয়ে পৌঁছালো দুজন।বেশ অনেক দিন পর দুজন কে একসাথে দেখে তাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই বলে উঠলো–,,কিরে জোড়া শালিক তাহলে আবার একসাথে?এতোদিন কি হয়েছিলো?
জেরিন রেগে বলে উঠলো–,,তোদের মাথায় সমস্যা হয়ে ছিলো!কেমনে অন্যের পিছনে লাগবি এটা ছাড়া কিছু পারিস নাকি।

তিন্নি নামক মেয়েটি এসে বললো–,,বাপরে তুই তো দেখছি আবার আগের রূপে ফিরে এসেছিস?নাকি সাব্বিরের সাথে থাকলে তোর সাহস বেড়ে আকাশে পৌঁছে যায়!কতো কিছু দেখতে হবে জীবনে।
সাব্বিরের মেজাজ খারাপ হলো বলে উঠলো –,,এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার?ওর পিছনে লাগছো কেনো,নিজের কাজ করো গিয়ে!
মেয়েটা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,ছেলেদের এতো ভাব নিয়ে থাকলে চলে না,এখন সবাই তোমাকে পাত্তা দিতে চাইছে আর তুমি তো কোনো মেয়েকে পাত্তাই দেও না।বুঝলে সময় থাকতে কোনো একজনকে পছন্দ করো না হয় কিছুই পাবে না শেষে!
–,,না পেলে নাই!জীবনে বিয়ে করবো না ঠিক করেছি।তোমার সাজেশন নিতে চাই না আমি কারন মেয়েদের বিরক্ত লাগে আমার,সবাই শুধু চকচকে জিনিসই খুঁজে পকেট ফাঁকা, বেকার ছেলের প্রেমিকা সবাই হতে চায় না আবার যারা হতে চায় তারা বউ হওয়ার সময় আসলেই হাত ছেড়ে দেয়।তার থেকে ভালো একাই থাকবো কাউকে দরকার নেই আমার!

নিরব তুই নিখিলের সাথে বিশ্বাসঘা”তকতা কেনো করলি?তোর তো ভালো বন্ধু ছিলো!
নিরব তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো–,,কিসের ভালো বন্ধু? ওর জন্য ভার্সিটিতে কতো অপমা’ন অপদ’স্ত হতে হয়েছিলো আমাকে কিছুই ভুলিনি আমি।অপ’মানের বদলা তো নিবোই আমি!
সাহিল হেসে বললো–,,তাই তো তোকে কাজে নিয়েছি! তা কতদূর কাজ?
নিরব হেসে বললো–,,মেয়েটা ভীষণ রকম বোকা,এতো সহজে ফাঁ”দে পা দিয়ে দিলো।প্ল্যান মতো এখন থেকেই এরিয়ে চলছি। তোর কথা শুনতে গিয়ে এদিকে আমার গালফ্রেন্ড ভেগে যাওয়ার উপক্রম!

–,,মনে আছে তো পরে কি করতে হবে?বিয়ের কিন্তু আর পাঁচদিন বাকি!
–,,কিসের বিয়ে আমি তো বিয়ে করতে যাবোই না।নিখিল আর তার পরিবার কে অপমানিত হতে দেখবো এর থেকে শান্তির আর কি আছে!
সাহিল বক্র হেসে বললো–,,ওই শাহআলম চৌধুরী আমার মাকে সবার সামনে অপমা”নিত করেছে,বিয়ে করে ফেলে চলে গেছে,কোনো দিন আমার খোঁজ নেয়নি আমার মায়ের খোঁজ নেয়নি, ওর সম্মান যদি আমি সবার সামনে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে না মিশিয়ে দেই তো আমার নাম সাহিল না!
পেছন থেকে ইলিয়াস খান বলে উঠলো–,,সাব্বাশ!এই না হলে আমার ভাগনে!
–,,মামা তোমায় কথা দিয়েছিলাম।কথা রেখেছি আমি, এবার শুধু পরিণাম দেখার পালা তুমি খুশি তো?
–,,অনেক খুশি। আজ আমার বোনের আ”ত্নাও শান্তি পাবে!

বাড়িতে ফিরে এসে জেরিনের কান্ড নেহা, বৃষ্টি, রৌফের সামনে বলতেই তার পর থেকে সবাই মিলে জেরিন কে পচানি দিচ্ছে।কতোদিন পর তারা একসাথে আবার হয়েছে কিন্তু মনেই হচ্ছে না এদের মধ্যে এক ঘন্টা আগেও কতো অভিমান জমা ছিলো,একে অন্যের প্রতি একরাশ অভিযোগ পুষে রেখেছিলো,কিন্তু এই তো মুহুর্তেই যেনো সব ধোঁয়াসা কেটে গেছে,ঝলমলে রোদের ন্যায় সবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে!
ছেলেমেয়েদের আবার আগের মতো হাসতে দেখে যেনো বাবা মায়েরাও খুশি।

চৌধুরী বাড়ি আজ সেজেছে রঙিন সব লাল নিল বাতিতে।আত্নীয় স্বজনে ভরে উঠেছে সব গুলো ঘর!
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে মেতে উঠেছে ছোটরা।ছাদের উপর সবাই হাসি আড্ডায় মজেছে।জেরিনের পাশে বসে ফোন চালাচ্ছে সাব্বির।নেহা, বৃষ্টি সেজেগুজে হাজির।বিরস মুখে জেরিন বসে।
তাকে হাসানোর চেষ্টায় ব্যর্থ নেহা আর বৃষ্টি।বড়রা আসলো হলুদ ছোঁয়াতে সেই যে জেরিনের কান্না শুরু হলো এখন পর্যন্ত ফুপিয়েই চলেছে, একের পর এক টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছে সাব্বির আর বলছে–,,ভালো করে কেঁদে নে বইন!টিস্যুর চিন্তা করবিই না অনেক গুলো প্যাকেট অর্ডার দিয়েছি এটা আমার পক্ষ থেকে তোর বিয়ের গিফট। এমনিতেই জেরিন কাঁদছে তার উপর সাব্বিরের এমন কথায় কান্না যেনো বাড়ছে মেয়েটার।
নেহা,বৃষ্টি ধ’মকে বললো–,,থামবে ভাইয়া!কি শুরু করেছো হ্যাঁ।

নিখিল,মিহিরের ঘাড়ে পড়েছে সব কাজের ভার।তাদের তো ফুরসৎই মিলছে না একটু দেখা দেওয়ার।
সাব্বির বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই পে”ত্নী থামবি তুই?মনে হচ্ছে তোকে একবারে তাড়িয়ে দিচ্ছি কাল তো তোর সাথে আমরাও যাবো তাও ফ্যাচ ফ্যাচ লাগিয়ে রেখেছিস!বড় মা,মা,ছোট মা ও কাঁদছে সমান তালে। চারজনের কান্নায় তো বন্যা হয়ে যাবে এখন!
জেরিন সাব্বির কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললো–,,আমি বিয়ে করবো না।তোদের কে ছেড়ে যাবো না।ওখানে থাকতে পারবো না আমি!
নেহা, বৃষ্টি, রৌফ এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো জেরিন কে।অশ্রুসিক্ত হলো সবার আঁখি!
জেরিন ফুপিয়ে উঠে বললো–,,আমি তোদের কে অনেক মিস করবো!অনেক অনেক বেশি।
সাব্বির জেরিনের মাথায় হাত রেখে বলে–,,বড় হয়ে এভাবে কাঁদছিস জেরিন সবাই তাকিয়ে আছে দেখ।যখন আমাদের মনে পড়বে তখনই ডাকবি আমরা চলে যাবো না হয় তুই চলে আসবি।নিরব টা মাঝে আসলে ওটাকে ও বেঁধে নিয়ে আসবো!

জেরিন হেসে ফেললো বলে উঠলো–,,, তোকে তখন তোকে ছেলেধরা ভেবে জে’লে ভরে দিবে মানুষ!
–,,দিলে দিবে।তবুও আমি আমার জেরিনের চোখে পানি দেখতে চাই না।তার মুখে হাসি ফুটাতে আমরা সব করতে পারি!
নেহা, বৃষ্টি, রৌফ ও মাথা নাড়লো তারা তাদের জেরিন আপুর জন্য সব করতে পারে!

সকাল থেকে ব্যস্ততায় কাটছে সবার।হামিদা বেগম মেয়ের সাথে ছিলেন এতোক্ষণ, মেয়েটাকে আজ বিদায় দিতে হবে ভেবেই তার হৃদ”য়টা ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।তবুও নিজেকে শক্ত করে রেখেছেন।না হয় মেয়েটা কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিবে!রাত থেকে কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
জেরিনের নানা বাড়ি থেকে তার মামারা এসেছে। ছোটরা এসেছে শুধু,বাকিরা আসেনি।আশেপাশের প্রতিবেশিদের দাওয়াত করেছেন শাহআলম চৌধুরী সবাই ইতিমধ্যে চলে এসেছে।

খুশি মনে জেরিন কে সাজাতে ব্যস্ত বোনেরা।লাল কমলার মিশ্রনে লেহেঙ্গাটায় ভীষণ মানিয়েছে মেয়েটা কে।কানে সজ্জিত সোনালী ঝুমকা গুলো ঝকঝক করছে। বউ রূপে অসাধারণ লাগছে জেরিন কে,মুগ্ধ চোখে দেখলো নিখিল নিজের বোনকে,আজ ছোট জেরিন টার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে! পরের বাড়িতে চলে যাবে তার আদরের মনিটা।নিখিল দরজা থেকে সরে যেতেই নেহা রুম থেকে বেড়িয়ে তার পেছনে গেলো।
নিখিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে,নেহা গিয়ে কাঁধে হাত রাখতেই পেছন ফিরলো না মানুষ টা, নেহা হাতের ফাঁক দিয়ে ঢুকে সামনে গেলো নিখিলের চোখ দুটি লাল হয়ে গেছে।
নেহা ডাকলো–,,নিখিল আপনার কি মন খারাপ?আপু চলে যাবে তাই কষ্ট পাচ্ছেন আপনি?
নিখিল কথা বললো না নেহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সে।নেহা দু হাতে আগলে নিলো তাকে,শক্ত মানুষ গুলোও কখনো কখনো খুব বা’জে ভাবে ভেঙ্গে পড়ে নিজেদের শক্ত খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে নরম কোনো স্বত্তায়!

জেরিনের রুমে আসলো একে একে তাহমিদা,সাহারা, হামিদা বেগম।মেয়ে কে দেখলেন মুগ্ধ চোখে!চোখ ভরে আসলো সবার।
সাব্বির এসে বললো–,,তোমরা কি এখানেই থাকবে নাকি?বর আসার সময় হয়ে এসেছে বড় আব্বু তোমাদের ডাকছে নিচে।
ওনারা যেতেই সাব্বির বলে উঠলো–,,বাহ্ বাহ্ জেরিন বইন আজকে তো তোকে পে”ত্নীর রানী লাগছে।
জেরিন মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিক তাকালো সাব্বির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,সদ্য ফোঁটা শিশির ভেজা স্নিগ্ধ এক টকটকে লাল গোলাপের মতো লাগছে তোকে! মাশা-আল্লাহ কারো নজর না লাগুক এই ফুলে,কেউ ক”লঙ্ক না ছিটাক এই পবিত্র কায়ায়!সব সময় সুখে থাক যেখানেই থাকিস খুব খুব ভালো থাক।যদি সাধ্য থাকতো তো নিজের জীবন দিয়ে তোর নামে পৃথিবীর সব সুখ কিনে এনে দিতাম!
জেরিন কিছু বলার আগেই বাহির থেকে সাব্বির কে ডাকলো মিহির।সাব্বির বেরিয়ে গেলো। রেখে গেলো
একজন সদ্য বধূ সাজা বিমুঢ় রমনীকে, যার কানে এখনো বাজছে নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোর নামে পৃথিবীর সব সুখ কিনে এনে দিতাম!

আত্মীয় স্বজন খেয়ে বিদায় নিয়েছে কয়েকজন রয়ে গেছেন বিকেল চারটা বেজে গেলো কিন্তু এখনো বরের দেখা নেই।চিন্তিত বাড়ির প্রতিটি মানুষ এর মধ্যেই লোক মুখে নানা কথা শোনা যাচ্ছে।বৃষ্টি, নেহা জেরিন কে সামলাতে ব্যস্ত।মেয়েটার মুখ চুপসে গেছে ইতিমধ্যে কয়েকজন বলে ও গেছে মেয়ের কি কোনো সমস্যা আছে নাকি?যার জন্য ছেলে বিয়ে করতেই আসলো না!
বিকেল গড়িয়ে এবার সন্ধ্যা নামার পালা ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে জেরিনের হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।

প্রণয়ের সুর পর্ব ৩০

জেরিন চিরকুট হাতে বসে খোলার শক্তি টুকু যেনো অবশিষ্ট নেই! নেহা, বৃষ্টি ও ভাবছে কি করবে।তার মধ্যে দরজার বাহিরে উপস্থিত হলো নিখিল, সাব্বির।সাব্বির রুমে ঢুকেই নেহা, বৃষ্টি কে কিছু নিয়ে কথা বলতে দেখে, জেরিনের হাত কাঁপছে অনবরত, হাত থেকে কাগজ টা খসে পড়ার আগেই ওটা নিয়ে নেয় সাব্বির!
চিরকুট টা পড়ে রাগে মাথায় আগু”ন ধরে গেলো ওর।
চেঁচিয়ে বলে উঠলো—,,আই উইল কি’ল ইউ প্রেফেসর!

প্রণয়ের সুর পর্ব ৩২