এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪১
তানিশা সুলতানা
তারেক এর স্মার্ট ফোনটা উধাও। গোটা রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ফোনের সন্ধান পাচ্ছে না। ঘুম কাতুরে ইতি বেগম ঘুমিয়ে পড়েছে বেশ অনেকক্ষণ আগেই। তাকে ডাকার সাহস নেই তারেকের। ডাকলে রণক্ষেত্র বাঁধিয়ে দিবে। রুমের লাইটটা পর্যন্ত অন করা যাবে না। এদিকে ফোনটা খুঁজে পাওয়াও জরুরি।
শেষবার তন্নির সাথে কথা বলে ফোনখানা রেখেছিলো বসার ঘরের টি-টেবিলের ওপর। তারপর খবরের কাগজ পড়ছিলো। পাশে বসেই তামিম দুধ খাচ্ছিলো। তার মানে তামিম নিলো কি?
মুহুর্তেই তারেকের মুখশ্রী শক্ত হয়ে আসে। ছেলে যদি ফোন নিয়ে থাকে দুই চারটা থাপ্পড় বসিয়ে দিবে গালে।
গতকালই তামিম ঘোষণা দিয়েছে তার আলাদা কক্ষ প্রয়োজন। বই খানা ব্যাগ পত্র সব নিয়ে তার অন্যের রুমে থাকার ইন্টারেস্ট নেই। বড় হয়ে গিয়েছে। এখন থেকেই আলাদা কক্ষ লাগবে। তারেকে দাঁতে দাঁত চেপে ছেলের আর্জি মেনে নিয়েছে। তাছাড়া উপায় আছে? লেজ ছাড়া বাঁদর ছেলে তার। যেটা বলবে সেটাই সই। তার কথার বাইরে এক পা নরবে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তারেক অন্ধকারে হাতরে রুম হতে বের হয়। ড্রয়িং রুমের আলো জ্বেলে পা টিপে হাজির হয় তামিমের রুমের সামনে। দরজা ভেড়ানো। অবশ্যই ভিড়িয়ে রাখতো না। কিন্তু দরজার ছিটকেনি ওপরে। নাগাল পায় না তামিম তার জন্যই। তার জন্যই আটকাতে পারে নি। নিঃশব্দে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে তারেক। যা ভেবেছিলো তাই। তামিম ফোনখানা কানে চেপে ফিসফিস করে কথা বলছে।
“জান আর একটু অপেক্ষা করো। এই তো পিএসসি পাস করলেই তোমার বাড়িতে প্রপোজাল দিবো বিয়ের। ওনারা না মানলে পালিয়ে যাবো। তারপর দুজন ভিক্ষা করে সংসার চালাবো।
ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেলো না। তার বিপরীতে তামিম পূণরায় বলে
” আহহহ জানু
আমি বড় হয়েছি ভিক্ষা করা তেমন কোনো কঠিন কাজ না। বাটি হাতে কলেজের সামনে বসে বলবো “আল্লাহর নামে যে যা পারেন দিয়ে যান। আমার বউ পুয়াতি। তার পেট কাটতে টাকা লাগবে।”
“এসব আমি শিখেছি। স্কুলের সামনে যে লোকটা ভিক্ষা করে তার থেকে। পাঁচ দিন ট্রেনিং নিয়েছি। তার জন্য অবশ্য একশো টাকা দিয়েছি তাকে। বিজনেসে ব্যয় করতেই হয়। ব্যয় না করল
বাকিটা শেষ করতে পারে না। তার আগেই তারেক ফোন টেনে নিয়ে যায়। তামিম হকচকিয়ে উঠে বসে। বাবার পানে নজর পড়তেই শুকনো ঢোক গিলে। মনে মনে আওড়ায়
” তামিমরে আজকে তোকে মে রেই ফেলবে। তোর আর বিয়ে করার শখ পূরণ হলো না”
তবে তামিমকে অবাক করে দিয়ে তারেক মৃদু হাসে। ছেলের পাশে বসে টেনে কোলের ওপর বসিয়ে নেয়। আদূর করে চুমু খায় কপালে। তারপর ধীর স্বরে বলে
“আব্বা আর একবার দুষ্টুমি করলে তোমাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দিবো। ভালো লাগবে?
তামিম গোমড়া মুখে তাকিয়ে থাকে বাবার মুখ পানে৷ কিসের দুষ্টুমি করলো? সে তো ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইলো শুধু। বিয়ে করা দুষ্টুমি হলে তো বাংলাদেশটা সিঙ্গেল থাকতো। তাই না?
” সাথী তুমি খেতে ভালোবাসো?
মাথার ওপরের ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের পানে তাকিয়ে ছিলো সাথী। আশিকের কথা শুনে ফিরে তাকায়। অকপটে জবাব দেয়
“ফুসকা
ভীষণ পছন্দ আমার। আপনার?
আশিক বিরবির করপ বলে ” তোমার ঠোঁট” কিন্তু খাওয়ার কপাল নেই।
ছোট ছোট নয়নে তাকায় সাথী।
“কিছু বললেন?
” বললাম আমারও
“তাহলে চলুন কাল আমরা ফুসকা খেয়ে আসি।
” ফুসকা খাওয়ালে আমাকে খেতে দিবা?
“কি?
আশিক গোমড়া মুখে জবাব দেয়
” ফুসকার টক।
“হ্যাঁ হ্যাঁ দিবো।
তাহলে পাক্কা
” হুমম পাক্কা
অতঃপর দুজনই নিরব হয়। আশিক উসখুস করছে। ঘুর তার আসবেই না। পাশে হালাল বউ রেখে ঘুমনো যায়? এটা অসম্ভব।
এদিকে বউ কি সুন্দর ডাকছে না। আরেহহহ বাচ্চা জামাই হই তো। একটু তো চুমু খেতে বল। আহারে কতো কাল হয়ে গেলে এই ঠোঁট দুটো মিষ্টি খায় না। শেষবার খেয়েছিলো ইন্টারে পড়াকালীন। ক্লাসমেট এক মেয়ের সাথে প্রেম হয়েছিলো। সেই মেয়েকে জোর করে ধরে খেয়ে নিয়েছিলো কতোগুলো চুমু। সেটাই শেষ চুমু ছিলো। নারীর ঠোঁটের স্বাদ জানা পুরুষের ঠোঁট কি আর স্থির থাকতে চায়?
আশিক এক লাফে উঠে বসে। হকচকিয়ে যায় সাথী। সেও বসে পড়ে। ভয়ার্তক দৃষ্টিতে আশিককে পর্যবেক্ষণ করে প্রশ্ন ছুঁড়ে
“কি হলো?
আশিক সময় নেয় না। কাতর স্বরে বলে
” সাথী
একটা চুমু খাবো প্লিজ। শুধু একটা। একটুখানি
এই ধরো ছুঁবো আর সরে আসবো। প্লিজ
সাথী কি জবাব দেবে ভেবে পায় না। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। নিরবতাকে সম্মতি ভেবে টুপটাপ ঠোঁটে চার পাঁচটা চুমু খেয়ে নেয় আশিক। সাথী চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। বুকটা কাঁপছে অস্বাভাবিক ভাবে। আশিক একটু সময় নেয়। পরপরই বলে
“টেস্ট ঠিক বুঝলাম না। আর একটু ঠিক আছে?
বলতে বলতে দুই হাত গলিয়ে দেয় সাথীর দুই গালে। ধীর গতিতে এগিয়ে যায় ওষ্ঠের পানে। আলতো করে পুরে নেয় নিজের ওষ্ঠের ভাজে। একদম ধীরে সুস্থে আলতো করে চুমু খায়। সাথীর একটুও খারাপ লাগে না। বরং ভালো লাগে। খাচমে ধরে আশিকের চুল।
ফজরের আজানের আগ মুহুর্তে তন্নি সময় পায় অর্ণবের নিকট যাওয়ার। সারা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারে নি৷ অথৈ তন্নিকে জাপ্টে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে। আর আমেনা বেগম কথার ফুলঝুড়ি খুলে বসেছিলো। একটার পর একটা কথা বলেই চলছিলো। খানিকক্ষণ আগেই কথা বন্ধ করে ঘুমিয়েছে। এখন নাক ডাকার আওয়াজ আসছে। এই সুযোগে চুপিচুপি কক্ষ ছাড়ে তন্নি। প্রথমেই দৌড়ে ছাঁদে ছাঁদে যায়৷ চিলেকোঠার ঘর দেখে নেয়। সেখানে নেই অর্ণব। তন্নি তো ভেবেছিলো তার অপেক্ষায় এখানেই ঘুমিয়ে পড়বে। পরপরই চলে যায় অর্ণবের জন্য বরাদ্দকৃত রুমে সামনে। সেখানে আশিকের বাবার সাথে ঘুমতে দেওয়া হয়েছে তাকে৷ তন্নি ভেবে পায় না কি করে জাগাবে অর্ণবকে? বা কিভাবেই রুমে ঢুকবে? পরে যদি আংকেল জেগে যায় তাহলে তো লজ্জায় মুখ লুকানোর জায়গা থাকবে না। তিনি নিশ্চয় তন্নিকে নিলজ্জ ভাববে।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে থাকে তন্নি৷ ইতোমধ্যেই কয়েকবার কল দিয়ে ফেলেছে অর্ণবের নাম্বারে। কিন্তু বেহায়া লোকটা কল রিসিভ করছে না। এতো রাগ পায় কোথায় লোকটা? মাঝেমধ্যে বিরক্ত লাগে তন্নির। পাষাণ একটা।
হঠাৎ নজর পড়ে কিনেচে। সেখানে বাতি জ্বলছে। সেই আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আশিকের বাবা রান্না করছে।
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে তন্নির। চটজলদি রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ফেলে। আর খুলবেই না। কেউ এসে ডাকলেও খুলবে না। ভাবলে ভাবলো নিলজ্জ। তাতে কি?
অর্ণব উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমচ্ছে। কোমর ওবদি কম্বল টানা। খালি গায়ে। ফর্সা পিঠ খানা সবুজ রংয়ের ড্রিম লাইটের আলোয় ঝলমল করছে যেনো। তন্নির ইচ্ছে করে টুপ করে একখানা চুমু খেয়ে নিতে। ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখা বোকামি।
তাই চটজলদি উঠে পড়ে খাটে। শুয়ে পড়ে অর্ণবের পাশে। উদাম পিঠে হাত বুলায়। সারা পিঠময় তন্নির হাতের বিচরণ। পরপরই মাথায় হাত রাখে। ঝাঁকড়া চুলের ভাজে ডুবিয়ে দেয় হাত। ধীর গতিতে টেনে দিতে থাকে চুল। অর্ণব বোধহয় আরাম পেলো। নরেচরে তন্নির দিকে ঘুরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। মৃদু হাসে তন্নি। আধশোয়া হয়ে বসে। চুমু খায় অর্ণবের কপালে। এই প্রথমবার স্বেচ্ছায় চুমু খেলো। ইসসস কি যে লজ্জা জনক ব্যাপার।
“জান আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। ভীষণ
বিরবির করে বলে ওঠে তন্নি।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪০
মুহুর্তেই চোখ খুলে অর্ণব। দুই হাতে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। তন্নি চমকায়। বড়বড় নয়নে তাকায়। অর্ণব। গলায় মুখ গুঁজে।
কেঁপে ওঠে তন্নির সর্বাঙ্গ।
কাঁপা স্বরে বলে
” ঘুমান নাই?
আলতো করে কামড় বসায় তন্নির গলায়। ঘুম ঘুম কন্ঠে জবাব দেয়
“তোমার চুমুতে ঘুম ভেঙে গেছে। এখন ঘুমবো। চুপচাপ থাকো
চুমাচুমি পরে হবে। ঘুমতে দাও।