রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫৩

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫৩
সিমরান মিমি

_”একি!এই দুপুর বেলায় শুয়ে আছো কেন?কলেজ থেকে ফিরলে কখন?দেখলাম না তো।”
প্রেমা সাড়া দিলো না।বালিশের উপর উপুড় হয়ে মুখ গুঁজে শুয়ে রইলো।মন-মেজাজ বেজায় খারাপ তার।বারবার তখন কার দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসছে।ইশশ!কত মানুষ ছিলো।কি না কি ভেবেছে।লজ্জায় দুচোখে আবারো পানি এসে গেল।রাগে কাঁপতে লাগলো শরীর।দাঁতে দাঁত চেপে নিমিষেই বিছানা থেকে উঠলো।পড়ার টেবিলের কাছে কলেজ ব্যাগ’টা হাতড়ে গিফট ব্যাগ টা হাতে নিলো।বিছানার উপর ছুঁড়ে মেরে রাগে গিজগিজ করতে করতে বললো,

_”এই নাও তোমার জিনিস।আমি পারবো না এসব দিতে।আজকে অনেক অপমানিত হয়েছি।”
বিস্ময়ে হা হয়ে গেল আর্শি।প্রেমাকে টেনে বিছানায় বসালো।আশ্চর্যের রেশ ধরে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলো।বললো,
_”আল্লাহ!কি বলো?কে অপমান করেছে তোমায়?”
_”কে আবার করবে?তোমার খাটাশ ভাই।চরম লেভেলের খিটখিটে মেজাজের অভদ্র লোক। পুরো বাজারের মধ্যে সবার সামনে বসে আমায় চরিত্রহীন বলেছে।”
বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল আর্শি।মুখ দিয়ে যেন কোনো শব্দ উচ্চারণ’ই করতে পারছে না।বললো,
_”সোভাম ভাই বলেছে?কিন্ত উনি এমনটা কেন বলবেন?কি করেছিলে তুমি?”
রেগে গেল প্রেমা।খামখেয়ালি করে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

_”আমি কি করবো ওনার সাথে?ওনাকে কি চিনি?এর আগে তো কথাও বলি নি কখনো।উনি কোন সাহসে আমাকে এতসব বাজে কথা বললেন?তোমার কথামতো চিঠি আর ব্যাগ টা নিয়ে গেছিলাম।এমা!চিঠি টা এগিয়ে দিয়ে ব্যাগটা ধরতে বললাম মাত্র।এর মধ্যেই একদম তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো।আমাকে চরিত্রহীন,অসভ্য কত্তকিছু বললো।আমি নাকি ওনাকে প্রেমপত্র দিতে গেছি।নিজেকে কি নায়ক মনে হয় নাকি?দেখতে তো উরচুঙ্গার মতো।ভোতা মুখটাকে নিয়ে সারাক্ষণ তিতকুটে কথা বলতে পারে।যেখানেই দেখো,সাপের মতো ফনা তুলতে থাকে আর বিষ ছুঁড়তে থাকে।”

_”তুমি বলোনি ওটা প্রেমপত্র ছিলো না,ভাবি দিয়েছে।আর চিঠিটাই বা আলাদা করে দিতে গেলে কেন?ব্যাগে থাকতো।ব্যাগটাকে হাতে দিয়ে চলে আসতে।”
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো প্রেমা।বললো,
_”বলার আর সূযোগ দিয়েছে তোমার ভাই।উনি তো সেলিব্রেটি। চারপাশে একগাদা মানুষ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।আমি বলার আগেই তো উনি গাড়ির দিকে গেলেন আর একগাদা মানুষ ঘিরে ধরছিলো।নাগাল’ই তো পাই নি।নইলে আয়না বের করে মুখটাকে দেখিয়ে আসতাম।আর বলতাম,”দেখ ভাই, একবার নিজের চেহারা টা আয়নায় দেখ।মুখ টাকে সারাক্ষণ ভোতা বিলাইয়ের মতো করে রাখিস।নাক-মুখের আগায় রাগ তরতর করে জিইয়ে রাখিস।কোন মেয়ে তোকে লাভ লেটার দিতে যাবে। আর কোন দুঃখেই দেবে।ছেলের কি অভাব আছে নাকি?
থেমে মিনমিনে কন্ঠে আবারো বললো,

“আমি তো ব্যাস ব্যাগের মধ্যে চিঠিটা আছে কিনা চেক করছিলাম।এরপর আর ব্যাগে রাখা হয় নি।হাতে করেই নিয়ে আসছিলাম।কে ভেবেছে ওতোকিছু।তোমায় ভাইয়ের যে শিরায় শিরায় ক্ষুত কে জানতো? তাহলে তো ব্যাটার ধারে কাছেও যেতাম না কক্ষনো।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর্শি।মাথায় হাত দিয়ে বললো,
_”হয়েছে,অনেক সাহায্য করেছো।আমায় উদ্ধার করে ফেলেছো একেবারে।দাও ব্যাগ দাও।আর ঘরে বসে না থেকে গোসল করে নিচে আসো।”

দিনের মধ্যভাগ।ঘড়ির কাঁটায় তখন দেড়টা।সূর্যের অবস্থান তখন মাথার উপর।রৌদ্রের তপ্ততা সর্বোচ্চে স্থান নিয়েছে।এই তপ্ত গরমের মধ্যে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে বাড়ি ফিরলো দুভাই।চোয়াল তাদের শক্ত,মেজাজ তখন খিটখিটে। ভয়ঙ্কর এই মুখভঙ্গি নিয়ে সদর দরজা দিয়ে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই হুংকার ছুঁড়লো।হাঁক ছেড়ে চিৎকার করে প্রেমাকে ডাকলো।থমকে গেল প্রেমা।চমকে গিয়ে আরেকবার কান পাতলো নিচের দিকে।সদ্য গোসল সেরে বিছানায় বসেছিলো ফোন নিয়ে।বড় ভাইয়ের এমন হুঙ্কার শুনতেই পিলে চমকে উঠলো।দ্রুতপায়ে বিছানা থেকে নেমে জুতো পড়ে নিলো।বলাবাহুল্য ডান পায়ের জুতোটা বাম পায়ে উলোটপালোট করে পরা হয়েছে।ছুটতে গিয়ে বুঝতে পারলেও সেই জুতো ঠিক করে পড়ার মতো ধৈর্য্য বা সময় কোনোটাই পায় নি।ওভাবেই ছুটে নেমেছে একতলায়।আর্শি ইতোমধ্যে নিচে নেমে এসেছে।এসব ঝগড়াঝাটি, রাগ-অভিমান বরাবরই ভয় পায় সে।বাড়িতে বসেই যখন মা আপুকে বকতো তখন রুমের এককোনায় দাঁড়িয়ে থরথর কাঁপতো সে।পাছে বোনকে ছেড়ে আবার তাকে না ধরে বসে।এমনিতেও আর কোনো বিষয়ে দোষ না থাকলেও পড়ালেখা নিয়ে মা একপায়ে অভিযোগ করতে পারবেন।তাও গড়গড়িয়ে।

_”কি হয়েছে?এভাবে চিৎকার করছিস কেন?প্রেমা আবার কি ক্ষতি করলো তোর?”
মায়ের কথা গুলো শুনতেই মেজাজ পুনরায় বিগড়ে গেল পাভেলের।দাঁতে দাঁত চেপে প্রেমার দিকে তাকিয়ে বললো,
_”সেটা তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো।কি করেছে আজ?”
ঘাবড়ে গেল প্রেমা।মায়ের দিকে তাকিয়ে আমতা-আমতা করে বললো,
_”আমি কিচ্ছু করি নি।”
পরশ ক্ষোভ ভরা দৃষ্টি নিয়ে বোনের দিকে তাকালো।এরপর নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বললো,
_”এখানে আসো।সোফায় বসো।”
প্রেমা তাই করলো।ভয়ে ভয়ে সোফায় বসে ফ্লোরের দিকে তাকালো।পরশ সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রেমার দিকে।কিছুক্ষণ পর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বললো,

_”আজ তোমার কলেজ চলাকালীন,আনুমানিক সাড়ে নটার উপর বাজে তখন।তুমি কলেজ থেকে বেরিয়েছ।এরপর গেটের সামনের লেফট সাইডে মানিক মিয়ার শপিং মলের সামনে সোভাম সরদারকে দেখে সেখানে গেছো।শত শত লোকজনের ভীড়ের মধ্যে সোভাম সরদারকে প্রেমপত্র আর গিফট দিয়েছো।আর সেটাকে পুরোপুরি রিজেক্ট করে তোমার চরিত্র নিয়ে অসংখ্য, অসহ্যকর কথা বলে অপমান করে চলে গেছে সোভাম সরদার।ঘটনা কি সত্যি?”
কথার তোড়ে কেঁপে উঠলো প্রেমা।এসব কথা না জানি কতদুর গড়িয়েছে।ছিহঃ!লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে বড় ভাইদের সামনে।ছলছল চোখে আর্শির দিকে তাকালো।আর্শি অসহায় চোখে তাকালো প্রেমার দিকে।দুপা সামনে এগিয়ে বললো,

_”ওর কোনো দোষ নেই ভাইয়া।আমিই ওকে বলেছিলাম…….”
পুরো বাক্য শেষ করতে পারলো না আর্শি।এর আগেই ধমকে উঠলো পাভেল।কড়া কন্ঠে বললো,
_”তোমাকে কথার মাঝে ওকালতি করতে কেউ ডাকেনি।চুপ থাকো।”
থমথমে মুখ নিয়ে আর্শি পাভেলের দিকে তাকালো।এরপর চুপ করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে পায়ের নখ খুটতে লাগলো।
_”আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি প্রেমা।”পিপাসা কিছু বলার উদ্যত হতেই পরশ আবারো গর্জে উঠলো।বললো,”মা প্লিজ!তুমি এর মধ্যে এসোনা।”

ফুঁসে উঠলো প্রেমা।মনের মধ্যে ক্ষোভ জন্মাতে লাগলো তড়তড় করে।অসভ্য লোক টা যদি আজ তাকে অপমান না করতো তাহলে আশেপাশের লোকজন ব্যাপার টাকে এতোটা আমলে নিতো না।চোখ বন্ধ করে বললো,
_”সব মিথ্যা।এরকম কিছুই হয়নি।লোকজন বানিয়ে বানিয়ে বলছে।ভাবিকে ওর বাবা ফোন গিফট করেছিলো।সেটাই ফেরত দেওয়ার জন্য আমাকে সেই ফোন টা,চার্জার আর সাথে আংকেলের জন্য লেখা একটা ছোট্ট চিরকুট দিয়েছিলো।বলেছিলো ও বাড়ির কারো সাথে দেখা হলেই দিয়ে দিতো।সে এই ফোন রাখতে চায় না।তোমরা চাইলে ভাবির কাছ থেকে দেখে নিতো পারো চিঠিটা।ওকে ফেরত দিয়ে দিয়েছি।আমি তো ভাবি যেটা বললো সেটাই করছিলাম।কিন্তু বুঝতে পারেনি হিতে বিপরীত হবে।বুঝতে পারিনি সরদার বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের মানসিকতা এতটা বিকৃত।বেয়াদব লোকটা চিঠিটা একবার খুলেও দেখলো না ওটাতে কি লেখা আছে।বরংচ প্রেম পত্র-প্রেমপত্র বলে লাফাতে লাগলো।পুরো বাজারের সবার সামনে বসে আমাকে অপমান করেছে।বিশ্রী একটা লোক!জঘন্য!”
বলেই থমথমে পায়ে উপরে চলে গেল।পাঞ্জাবির বুকের কাছ থেকে বোতাম দুটো খুলে আয়েষ করে বসলো পরশ।পাভেল দুপা উঠিয়ে হেসে বললো,

_”দেখলি?তোকে বললাম না প্রেমা এটা জীবনেও করবে না।আমার বোনের রুচি এতো খারাপ না যে সোভাম সরদারকে প্রেমপত্র দিতে যাবে।”
চোখ দুটো কুঁচকে তাকিয়ে রইলো আর্শি।কথাটা পুরোপুরি ভাবে গায়ে লেগেছে তার।দাঁত মুখ খিঁচে ক্ষোভ নিয়ে বললো,
_”এখানে রুচির প্রশ্ন আসলো কোথা থেকে?আমার ভাই কি খারাপ?উনি দেখতে খারাপ?নাকি চরিত্র খারাপ?ওকে যদি প্রেমা প্রেম পত্র দিয়েও থাকে তাতেও খারাপ টা কোথায়?আমার ভাই যথেষ্ট ভালো।ওর মতো হতে হলে যোগ্যতা লাগে।”

মাথায় বজ্রপাত পড়লো পাভেলের।পরশ পেছনে তাকিয়ে একবার আর্শিকে দেখে নিলো।এরপর কিছু না বলেই পাভেলের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো।
_”বাব্বাহ!ভাইয়ের জন্য টান লাগছে নাকি?”
গা জ্বলে উঠলো আর্শির।তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো,

_”তো টান লাগবে না?আমি কি ভেসে আসছি?আমার কোনো পরিবার নাই?মা-বাবা,ভাই-বোন নাই?একটু আগেই প্রেমা বলে গেল সরদার বাড়ির প্রত্যেক টা মানুষের মানসিকতা বিকৃত,জঘন্য।যা -তা বলে গেল।মানছি পরিস্থিতি অনুযায়ী সোভাম ভাইয়া ওকে অপমান’ই করেছে।তার সেই ক্ষোভে ও অনেক বাজে কথা বলছে।কিন্তু আপনি কি করে বলতে পারেন?আপনার বোন কোনো প্রেমপত্র দেয় নি এখনো জাস্ট নাম উঠেছে এতেই আমার ভাই আমার ফ্যামিলির উপর ক্ষোভের শেষ নেই।এতোকিছু বলছেন।অথচ সোভাম সরদারের বোন যে সরদার বাড়ির মান সম্মান ডুবিয়ে আপনার হাত ধরে পালিয়ে আসছে এতে ওদের কোনো ক্ষোভ থাকবে না?ওরা রাগের মাথায় কিচ্ছু বলতে পারবে না।তাহলে রুচি,মানসিকতা নিয়ে কথা উঠবে।আরে ওদের তো ভুল হয়েছে।শুধুমাত্র রাগের মাথায় বাজে কথা নয় আমাকে জুতাপেটা করা উচিত ছিলো।ভদ্র বলেই আপনাদের কিছু বলে নি।যা বলার আমাকে বলেছে।”
চোখ গরম করে তাকালো পাভেল।আর্শির উদ্দেশ্যে বললো,

_”একদম চুপ।রুমে যাও। অনেক বলেছো।এতই যখন দরদ তখন পালাইছিলা কেন?”
পিয়াশা দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো।ক্লান্ত কন্ঠে বললো,
_”আহ!চুপ করবে তোমরা।কি সব নিয়ে ঝগড়া শুরু করছো।”
আর্শি চোখের পানি মুছে নিলো।মুখটাকে গোমড়া করে বললো,
_”এখানে ঝগড়ার কি দেখলেন আম্মু?উনি যে আমার ভাই,আমার পরিবার নিয়ে বাজে কথা বললো তখন তো বারন করলেন না।কিছু হলেই পরিবার টেনে কথা বলে।বাপ তুলে কথা বলে।ওরা আমার পরিবার না?ওদের নিয়ে কথা বললে আমার খারাপ লাগে না?”
এতক্ষণে মুখ খুললো পরশ।গম্ভীর কন্ঠে বললো,

_”পাভেল তোমার পরিবার নিয়ে বাজে কথা বলেনি।তুমি বুঝতে ভুল করেছো।ও শুধুমাত্র এটা বোঝাতে চাইছে সোভাম সরদারের সাথে আমার বোনকে জড়িয়ে কোনো সম্পর্ক কল্পনা করাই বোকামি।শুধু বোকামিই না অসম্ভব ও।ওদের এইজ গ্যাপ ই তো অনেক।”
পাভেল সায় জানালো। বললো,
_”এক্সাটলি!কোথায় সোভাম সরদার এর বয়স ৩০ আর কোথায় প্রেমার ১৮ বছর।প্রায় বারো বছরের গ্যাপ।”
_”তো?আমার আর আপনার বয়সের ই তো প্রায় নয় বছর গ্যাপ।এটা নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন করেন নি।বরং ঢ্যাং ঢ্যাং করে বিয়ে করেছেন।তখন তো বলেননি মেয়ে আপনার থেকে অনেক ছোট।আপনার বোনের বেলায়’ই কেন এতো ক্ষুত।নিজের বোনকে রাজপুত্র খুঁজে বিয়ে দেবেন আর আমার ভাই মগার সাথে বিয়ে দেবে।”
পরশ অগোচরে হাসলো।এরপর চুপচাপ দোতলায় উঠে গেল।পাভেল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।আশ্চর্যের রেশ নিয়ে বললো,

_”তুমি কি আমাকে মগা বললে?”
_”হ্যাঁ বললাম।কারন আপনি মগা।”
_”আমি মগা হলে তোমার ভাই মদন।আর তুমি মদনের বোন।”
_”আমার ভাই মদন হতে যাবে কেন?আমার ভাই কি আপনার মতো ছ্যাঁচড়া যে মেয়েদের পেছন পেছন ঘুরবে।আমার ভাই যথেষ্ট ভদ্র এবং সভ্য।মেয়েদের পেছন তো দূর আশপাশেও যায় না।অন্তত আপনাদের মতো না।আপনারা দু-ভাই আমাদের দু-বোনের পেছনে পড়লেও আমার ভাই জীবনেও আপনার বোনের পিছে পড়বে না।ঘুরেও তাকাবে না।”
ক্ষেপে গেল প্রেমা।দোতলায় বসে চেঁচিয়ে বললো,
_”ওহহো!তোমার ভাই আমার দিকে ঘুরে তাকাচ্ছে না বলে তো আমি মরে যাচ্ছি।হাত পা ধরে অনুরোধ করে আমার দিকে তাকাতে বলছি।যত্তসব!মেয়েদের পেছনে ঘুরে তাদের প্রেমে ফেলাটাও একটা আর্ট।যেই যোগ্যতা তোমার ভাইয়ের নেই।আদৌ বিয়ে হবে না কি না সেটাই সন্দেহ।কোন মেয়ে যে-চে গিয়ে নিজের কপাল পুড়বে?”

টানা তিনবারের মতো রিং বাজতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো পরশ। কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যাওয়ায় মেজাজ বেজায় খারাপ।ফোন রিসিভড করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে এক নমনীয় কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
_”নেতামশাই!”
শিউরে উঠলো পরশ।দুহাতে ফোন আঁকড়ে ধরে বিছানা থেকে বাইরে এলো। ক্রমাগত অতি উৎসাহী হয়ে বললো,
_”হ্যাঁ বলো।আমি শুনছি।কি হয়েছে তোমার?কন্ঠ এমন কেন তোমার?”
ওপাশ থেকে নিরবতা ভেসে আসলো।বেশ কিছুক্ষণ পর বললো,
_”আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাইছি।আপনি কি আসবেন?”

কোনোরকম উত্তর না দিয়েই ফোন রেখে শার্ট এর কাছে ছুটলো পরশ।গায়ে পড়ে কোনোরকমে রেডি হয়ে ছুটলো বাইকের দিকে। অর্ধপথ যাওয়ার সাথে সাথেই ব্রেক কষলো পরশ।সামনেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শী।বাইক রেখে কোনোরকমে নেমেই স্পর্শীর কাছে এলো।মুহুর্তেই কলিজাটা মোঁচড় দিয়ে উঠলো।স্পর্শীর চুলগুলো অনেক ছোট।ঘাড় অবধি রয়েছে সেগুলো।পরশ কাঁপা হাতে চুল গুলো ধরে জিজ্ঞেস করলো
_”একি!!তোমার লম্বা চুল কোথায় স্পর্শীয়া।চুল এতো ছোট কেন?কেন কেঁটেছো?”
বিনিময়ে কোনো উত্তর না দিয়ে হাসলো স্পর্শী।পরশ অবাক হলো।স্পর্শীর ভ্রুঁ, পিসি থেকে শুরু করে গায়ের কোনো লোমই নেই।বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে কিছু বলার প্রয়াস করতেই দেখলো মাথার যেটুকু চুল ছিলো তাও নেই।কোনো চুল নেই স্পর্শীর শরীরে।চিৎকার করে উঠলো পরশ।বললো,

_”এসব কি হচ্ছে?এসব কি?”
স্পর্শী এগিয়ে আসলো।জড়িয়ে ধরলো পরশ কে।কাতর কন্ঠে বললো,
_”আজ এতোগুলো বছর পর কেন এলেন আপনি?এর আগে কেন আসলেন না?আমার কথা কি একটুও মনে ছিলো না আপনার?আমি কত বছর ধরে অপেক্ষা করছি আপনার জন্য।কতটা অসুস্থ ছিলাম।কেন একটুও আসলেন না।”
পরশ দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।উফফফ!এতোগুলো বছর কিভাবে হয়ে গেল।কেন সে আসলো না স্পর্শীর কাছে।কাতর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

_”কি হয়েছে তোমার?আমাকে বলো।”
_”আমার ক্যান্সার নেতামশাই।লাস্ট স্টেইজ এ আছি আমি।ডাক্তার বলেছে আর কয়েকদিন বাঁচবো।”
_”মিথ্যে। মিথ্যে বলছো তুমি।আমার সাথে ছলনা করছো।যদি বিয়ে করবেই না তো যাও।বাধা দেব না।কিন্তু এরকম ভয়ংকর কথা বলো না।প্লিজ!বলো না।বলো না।বলো না!”
আচমকাই লাফিয়ে উঠলো পরশ। সারা শরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।আতংকে মুখ পাংশুটে হয়ে গেছে।দুহাত দিয়ে দেয়াল হাতরে লাইট জ্বালিয়ে নিলো।এরপর রুমের মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসে রইলো কতক্ষণ।বিছানা থেকে ফোন নিয়ে অনবরত কল করতে লাগলো পরিচিত নাম্বার টিতে।প্রায় পাঁচ ছয়বার কল করার পর রিসিভড হলো।ওপাশ থেকে কেউ ঘুমঘুম কন্ঠে বলে উঠলো,

_”উমমম!বলুন।”
_”আমি দেখা করবো।আমি এক্ষুণি দেখা করবো স্পর্শীয়া।তুমি কোথায় আছো?আমি আসছি।”
চমকে উঠে বসলো স্পর্শী।বিরক্ত কন্ঠে বললো,
_”আরে আজব তো।কেন আসবেন আপনি।আর কি কারনে?ফোন রাখুন।”
চিৎকার করে উঠলো পরশ।হুঙ্কার ছেড়ে বললো,

_”বললাম না দেখা করবো তোমার সাথে।আর এক্ষুণি।তুমি বাইরে আসলে আসো নইলে আমি তোমার বাড়ির মধ্যে ঢুকে যাবো।সবার সামনে।ঝামেলা হলে হোক।আই ডোন্ট কেয়ার।কিন্তু আমি দেখা করবোই।তুমি আসবে কি না?”
বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল স্পর্শী।ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাতে আরো ঘাবড়ে গেল।শান্ত কন্ঠে বুঝিয়ে বললো,
_”আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?রাত চার টা বাজে এখন।এখন কিসের দেখা করবেন?”
হুশ ফিরলো পরশের।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কিছুটা শান্ত হলো।বললো,
_”আচ্ছা,সকালে দেখা করবো তাহলে।তুমি কোথায় আসবে বলো?তুমি কি বাইরে আসবে নাকি আমি তোমাদের বাড়িতে আসবো?কোনটা পছন্দ হচ্ছে তোমার?”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫২

_আরে মহা মুশকিল তো।ঠিক আছে করবো দেখা সকালে।আপনি কোথায় আসবেন না।আমি ফোন করে দেব।খবরদার!বাড়ির আশেপাশেও আসবেন না।চুপচাপ এখন ঘুমাতে দিন তো।রাখছি।পাগলামি ছেড়ে নিজেও ঘুমান।”
_”আসবে তো সকালে?”
_”ওকে ফাইন!আসবো সকালে।বায়!”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫৪