এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৫
তানিশা সুলতানা
সাগর বেশ কয়েকদিন যাবত প্রস্তুতি নিচ্ছে তন্নিকে মনের কথা জানানোর। অকপটে বলে দিবে “তন্নি আই লাভ ইউ। উইল ইউ বি মাই মাইন”
তন্নি তখন রিজেক্ট করে দিলে কি হবে? কিভাবে নিজেকে সামলাবে? কিভাবে বোঝাবে?
শুকনো ঢোক গিলে সাগর। তন্নির ব্যাপারে সে ভীষণ সতর্ক। কোনো মতেই হারাতে চায় না মায়াবতীকে। ডাগর ডাগর চোখের অধিকারীনি শুধুমাত্র সাগরের হবে। হতেই হবে।
তন্নির ব্যাপারে সব থেকে বেশি সাহায্য কেউ করতে পারলে সে অথৈ। তন্নির কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায়। অথৈয়ের সামনে যদি সাগর নিজ মনের বক্তব্য পেশ করে অবশ্যই অথৈ তাকে সাহায্য করবে। তন্নিকে বোঝাবে।
এবার সব থেকে আগে অথৈয়ের মনে জায়গা করে নিতে হবে।।
নিজ কক্ষে পায়চারি করতে করতে ভাবছিলো সাগর। এই তো আর মাত্র চার দিন পরেই তার ভাইয়ের সাথে আর্থির বিয়ে। সেই বিয়েতে তন্নি অথৈ দুজনই উপস্থিত থাকবে। সাগর মন ভরে দেখতে পারবে তন্নি নামক মায়াবতীকে। আর বোঝাতে পারবে অথৈকে। প্রশান্তির হাসি হাসে সাগর। তন্নিকে শেষবার দেখেছিলো কলেজে। সেটার পাঁচ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে না মেয়েকে কলেজে এসেছে আর না দেখা দিয়েছে সাগরকে। মেয়েটা কেনো বোঝে না? তাকে না দেখলে সাগরের হৃদয় পুরে? হৃদপিন্ড ধকধক করে। অশান্তি লাগে।
পার্সোনাল ফোনও নেই মেয়েটার যে কল করবে। এই যুগের মেয়ে হয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটিভ নেই, একটা ফোন পর্যন্ত নেই। কোথায় যাবে সাগর এই মেয়েকে নিয়ে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তবে ভালোই হয়েছে এতোটা স্মার্ট নয়। স্মার্ট হলে সাগরেরই ঝামেলা হতো।
এতোসব ভাবনার মাঝেই সাগরের ফোন বেজে ওঠে। সাগর নিশ্চিত অথৈ কল করেছে। মেয়েটা মাঝেমধ্যেই কল করে সাগরকে। কেমন আছেন, কি করেন, বাসার সবাই কেমন আছে, এমন টুকটাক খবর বার্তা নিয়ে কল কেটে দেয়। সাগর ঠিক বুঝতে পারে না মেয়েটার কথার ধরন। কখনোই সাগরকে বেশি প্রশ্ন করবে না। সাগর করলেও উত্তর দেবে না। শুধু নিজে যে কয়টা প্রশ্ন করার জন্য কল করে সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেয়ে গেলেই হয়ে গেলো।
সাগর একটু সময় নিয়ে কল ধরে। এই রমনীর এটিটিউট আবার আকাশ ছুঁই ছুঁই। একদিন কল কেটে কল ব্যাক করেছিলো। সে কি রাগ মহারানীর। ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়েছে সাগরকে। একবার স্যরি বলারও সুযোগ দেয় নি।
তারপর থেকে দ্বিতীয় বার এমন ভুল করে না সে।
“ভালো আছেন সাগর ভাইয়া?
বেশ মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা। ফোনে তো তেমনই শোনায়। এই মেয়েটির সাথেও দেখা হয় না বেশ অনেকদিন হলো।
সাগর মৃদু হেসে জবাব দেয়
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
উত্তর দেয় না অথৈ। সাগরও দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করে না। কেটে যায় দুই তিন মিনিট। এবার অধৈর্য হয় সাগর। ভ্রু কুচকে বলে
” কথা বলছো না যে?
“মিট করতে চাই আপনার সাথে। ফ্রী আছেন কাল?
এমন কথা আশা করে নি সাগর। তাই একটু চমকালো। মেয়েটি হঠাৎ দেখা করতে চাইছে কেনো? কিছু হয়েছে কি? জিজ্ঞেস করবে কি করবে না ভানতে ভাবতেই অথৈ আবারও বলে ওঠে
” কাল কলেজে অপেক্ষা করবো। সময় হলে একটু আসিয়েন।
বলেই কল কাটে। আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে সাগর। কি হলো এটা? অবশ্যই বরাবরই এমন হয়ে আসে। নিজ বক্তব্য শেষ করে কল কাটে অথৈ। নতুন কিছু নয়। তবুও আশ্চর্য হয়েছে সাগর।
দুই দিন এক টানা বৃষ্টি পড়ছে। সারা দিন রাত একই রকম বৃষ্টির ধাচ। না বেশি না কম। ঝিরিঝিরি শব্দে মাতোয়ারা চারিপাশ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির শব্দে হৃদয় নেচে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে। বাসা থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। কাঁদা পানিতে মাখামাখি। ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছে অর্ণব। মন মেজাজ তুরুঙ্গে। কেউ কিছু বললেই ছ্যাঁত করে উঠছে। মনটা পাগল পাগল।
আশা বেগম খিচুড়ি চাপিয়েছে চুলায়। গরুর মাংস রান্না হয়ে গিয়েছে আগেই৷ আর্থি শিলনোড়ায় কালো জিরে এবং শাক পাতা মিশিয়ে বেটে নিচ্ছে। এরপর বাটবে কুচো চিংড়ি। তারপরে চ্যাপা শুটকি।
ইতোমধ্যেই আলু ভর্তা বেগুন এসব শেষ হয়েছে।
অর্ণব সোফায় বসে ল্যাপটপ দেখছে। কারেন্ট যাচ্ছে আসছে। ফোনে চার্জ নেই। পাওয়ার ব্যাংক অথৈ নিয়ে নিয়েছে। বেজায় বিরক্ত অর্ণব।
আনোয়ার গিয়েছে তন্নিকে আনতে। এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই রওনা হয়েছে তারা। ইতোমধ্যেই খবর পেয়ে গিয়েছে অর্ণব।
মনে মনে মোটেও সে খুশি নয়৷ ওয়েদার খারাপ এর মধ্যে আপন বউ চারিপাশে ঘুরঘুর করলে নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়বে।
মেয়েটা এই ওয়েদারে এখানে এসে মোটেও ভালো কাজ করছে না। এর জন্য মাসুল দিতে হবে৷
আশিক মেসেজ দিচ্ছে অর্ণবকে। একটার পর একটা মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। কারেন্ট বাবাজিও চট করে চলে যায়। এই দশ মিনিট হবে এসেছিলো। ল্যাপটপের মেয়াদ শেষ। ঠাসস করে বন্ধ করে ফেলে অর্ণব। ছুঁড়ে মারে অন্য সোফায়। হাত বাড়িয়ে ফুলদানির পাশ থেকে ফোন তুলে নেয়। ত্রিশ পারসেন্ট চার্জ হয়েছে। দশ মিনিটে ত্রিশ। বাহহহ মোবাইল ভালো হয়ে গেছে।
ডাটা অন করতেই নোটিফিকেশনের ধুম পড়ে। সব টেক্সট আশিকের৷
এতো মেসেজ পড়তে ইচ্ছে করছে না অর্ণবের। তাই কল করে। কল ধরতে সময় নেয় না আশিক। চট করে ধরে ফেলে এবং ভয়ার্তক স্বরে বলে
“ভাই ওয়েদার খারাপ। বউ পাশ থেকে সরছেই না। অঘটন ঘটে যাবে। কি করবো বল?
চল কোনো ক্লাবে ট্লাবে গিয়ে সময় কাটিয়ে আসি।
অর্ণবের ইচ্ছে করে কঠিন কিছু গালি আওড়াতে। নেহাৎ অর্ণব ভদ্র পোলা তাই গালি গিলে ফেলে। শান্ত স্বরে বলে
” ক্লাবে তোর নানী “আজ ফের রাত মজা হু” এই গান গাইছে। আর তামান্নার মতো টাম্বি দেখাচ্ছে। চল দেখে আসি।
আশিক বলে ওঠে
“আমার নানী বুইড়া মানুষ। নাচতে পারবে না।
” শা লা মাথা গরম। ফোন রাখ।
“সলিউশন দে ভাই।
” বউ থা প্প ড়ে রুম থেকে বের করে দে শালা।
“ঠান্ডা তো। বউ ছাড়া ঘুম হবে না৷
” আই ফা*******
ফোন রাখ।
বা**ল নিজের জ্বালায় বাঁচি না।
কল কাটে অর্ণব। আশিক আহাম্মকের মতো খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। করলো টা কি ভাই? জাস্ট একটু সলিউশন চাইলো তাতেই এতো কঠিন গালি?
আধভেজা হয়ে শশুর বাড়িতে প্রবেশ করে তন্নি। জামাকাপড়ের ব্যাগটা শুধু অক্ষত আছে। সেটা বাঁচাতেই আনোয়ার এবং সে ভিজেছে। গাড়ি হর্ণ বাজতেই অথৈ নিজ কক্ষ থেকে দৌড়ে বেড়িয়েছে।
তন্নি জামাকাপড় টেনে মাথা ঘোমটা দিয়ে এগিয়ে আসে। অর্ণব তাকিয়ে থাকে। তন্নির চোখ এখনো অর্ণবের দিকে পড়ে নি৷
অথৈ দৌড়ে এসে তন্নিকে জড়িয়ে ধরে।
“জান তুই তো ভিজে গিয়েছিস৷ চল চল চেঞ্জ করবি।
” আন্টির সাথে দেখা করে আসি।
“পরে করিস। ঠান্ডা লেগে যাবে।
অগত্য অথৈয়ের সাথে চলে যায় তন্নি৷ আনোয়ারও নিজ কক্ষে চলে যায় চেঞ্জ করতে। অধৈর্য অর্ণবও অথৈদের পেছন পেছন যায়। তন্নি বাথরুমে ঢুকে পড়ে প্রয়োজনীয় জামাকাপড় বিয়ে। অথৈ তন্নির বাকি জামাকাপড় বের করতে থাকে ব্যাগ থেকে। তখনই অর্ণব আসে।
মাথা নিচু করে সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বলে
” মাম্মাম ডাকছে তোকে৷ এখুনি যেতে বললো।
“যাচ্ছি। তোর পাওয়ার ব্যাংক কারেন্ট না আসা পর্যন্ত পাবি না বলে দিলাম।
” লাগবে না তুই যাহহ।
অথৈ চলে যায়। রুম থেকে অথৈ বের হতেই অর্ণব ঠাসস করে দরজা আটকে দেয়। দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে৷ বৃষ্টির বেগ বোধহয় বাড়লো এখন। এতোক্ষণ ঝিরিঝিরি শব্দ আসলেও এবার ঝমঝম শব্দ হচ্ছে। শুকনো ঢোক গিলে অর্ণব। বড়বড় পা থেকে এগিয়ে যায়। বাথরুমের দরজায় দুবার টোকা দেয়।
ভেতর থেকে তন্নি বলে
“জামাকাপড় এনেছি আমি। তোয়ালে আনতে ভুলে গিয়েছি। এনে দে তো।
অর্ণব আবারও টোকা দেয়। তন্নি দরজা খুলে দেয়। মুহুর্তেই অর্ণব দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। বড়বড় নয়নে অর্ণবের পানে তাকায় তন্নি পরপরই নিজের দিকে তাকায়৷ ওড়না সরিয়ে ফেলেছে আগেই। ভিজে জবুথবু কামিজটা লেপ্টে আছে দেহের সঙ্গে। হাত বাড়িয়ে ওড়না খানা ধরতে যায় তন্নি। অর্ণব বাঁধা দেয়। ধরে ফেলে তন্নির হাত। একটানে কাছে নিয়ে আসে। ফিসফিস করে বলে
” উমমমম জান
এভাবেই ভালো লাগছে। ওসব ঝামেলার দরকার নেই।
লজ্জায় কান গরম হয়ে ওঠে তন্নির। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। হাত পা ও মৃদু কাঁপছে৷ এটা ঠান্ডায় না কি অর্ণবের ছোঁয়ায় বুঝতে পারে না তন্নি। কম্পনরত তন্নির অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে অর্ণব চট করে কামিজের ফাঁকে এক হাত গলিয়ে দেয়। অপর হাত রাতে তন্নির গালে। একটু চাপ প্রয়োগ করে মুখটা ওপরে তোলে। এবং ওষ্ঠের ভাজে ওষ্ঠ পুরে নেয়। ছটফটিয়ে ওঠে তন্নি। মুখ এদিক ওদিক নারিয়ে সরে আসতে চায়। অবাধ্য অর্ণব হাত গলিয়ে দেয় স্পর্শ কাতর স্থানে। ধামচে ধরে শক্ত করে। “উমমম উমমম” শব্দ করে ওঠে তন্নি৷ স্থির হয়ে দাঁড়ানো বাদে আরও বেশি ছটফট করতে থাকে।
রাগ হয় অর্ণবের।
“বা**** একটু শান্তি পেতে দাও। এমন ব্যাঙের মতো লাফালাফি করলে হাত বা বেঁধে দিবো
বলেই আবারও পুরু ওষ্ঠের ভাজি ঘর্ষণ এবং বেহায়া হাতের অসহ্য বিচরণ বাড়িয়ে দেয়। ভালো করে শ্বাস টানারও সুযোগ দেয় নি। কেঁপে ওঠে তন্নির ছোট্ট সত্তা। লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো? এতো উম্মাদের মতো করছে কেনো? ভালো লাগা খারাপ লাগার গতিবিধে বাঁধা পড়ে যায়। ছটফট থামিয়ে আশকারা দিতে গিয়েও পারে না। চিনচিন ব্যাথা করে উঠছে। ফের আর্তনাদ করে ওঠে। বৃষ্টির শব্দে তন্নির আর্তনাদ অর্ণবের কান ওবদি পৌঁছায় না। যখন চোখের কুর্ণিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে তখন অর্ণব তাকায় তন্নির মুখ পানে।। অসহায় দৃষ্টিতে অর্ণবকে থামতে বলছে তন্নি। অর্ণব ওষ্ঠ ছেড়ে দেয়। দুজনই হাঁপাচ্ছে পাল্লা করে।
হাত সরায় না অর্ণব।
বরং অধৈর্য স্বরে বলে
“আর একটু সহ্য করে নাও জান।
সাগর বেশ কয়েকদিন যাবত প্রস্তুতি নিচ্ছে তন্নিকে মনের কথা জানানোর। অকপটে বলে দিবে “তন্নি আই লাভ ইউ। উইল ইউ বি মাই মাইন”
তন্নি তখন রিজেক্ট করে দিলে কি হবে? কিভাবে নিজেকে সামলাবে? কিভাবে বোঝাবে?
শুকনো ঢোক গিলে সাগর। তন্নির ব্যাপারে সে ভীষণ সতর্ক। কোনো মতেই হারাতে চায় না মায়াবতীকে। ডাগর ডাগর চোখের অধিকারীনি শুধুমাত্র সাগরের হবে। হতেই হবে।
তন্নির ব্যাপারে সব থেকে বেশি সাহায্য কেউ করতে পারলে সে অথৈ। তন্নির কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায়। অথৈয়ের সামনে যদি সাগর নিজ মনের বক্তব্য পেশ করে অবশ্যই অথৈ তাকে সাহায্য করবে। তন্নিকে বোঝাবে।
এবার সব থেকে আগে অথৈয়ের মনে জায়গা করে নিতে হবে।।
নিজ কক্ষে পায়চারি করতে করতে ভাবছিলো সাগর। এই তো আর মাত্র চার দিন পরেই তার ভাইয়ের সাথে আর্থির বিয়ে। সেই বিয়েতে তন্নি অথৈ দুজনই উপস্থিত থাকবে। সাগর মন ভরে দেখতে পারবে তন্নি নামক মায়াবতীকে। আর বোঝাতে পারবে অথৈকে। প্রশান্তির হাসি হাসে সাগর। তন্নিকে শেষবার দেখেছিলো কলেজে। সেটার পাঁচ দিন পেরিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে না মেয়েকে কলেজে এসেছে আর না দেখা দিয়েছে সাগরকে। মেয়েটা কেনো বোঝে না? তাকে না দেখলে সাগরের হৃদয় পুরে? হৃদপিন্ড ধকধক করে। অশান্তি লাগে।
পার্সোনাল ফোনও নেই মেয়েটার যে কল করবে। এই যুগের মেয়ে হয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় একটিভ নেই, একটা ফোন পর্যন্ত নেই। কোথায় যাবে সাগর এই মেয়েকে নিয়ে?
তবে ভালোই হয়েছে এতোটা স্মার্ট নয়। স্মার্ট হলে সাগরেরই ঝামেলা হতো।
এতোসব ভাবনার মাঝেই সাগরের ফোন বেজে ওঠে। সাগর নিশ্চিত অথৈ কল করেছে। মেয়েটা মাঝেমধ্যেই কল করে সাগরকে। কেমন আছেন, কি করেন, বাসার সবাই কেমন আছে, এমন টুকটাক খবর বার্তা নিয়ে কল কেটে দেয়। সাগর ঠিক বুঝতে পারে না মেয়েটার কথার ধরন। কখনোই সাগরকে বেশি প্রশ্ন করবে না। সাগর করলেও উত্তর দেবে না। শুধু নিজে যে কয়টা প্রশ্ন করার জন্য কল করে সেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পেয়ে গেলেই হয়ে গেলো।
সাগর একটু সময় নিয়ে কল ধরে। এই রমনীর এটিটিউট আবার আকাশ ছুঁই ছুঁই। একদিন কল কেটে কল ব্যাক করেছিলো। সে কি রাগ মহারানীর। ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়েছে সাগরকে। একবার স্যরি বলারও সুযোগ দেয় নি।
তারপর থেকে দ্বিতীয় বার এমন ভুল করে না সে।
“ভালো আছেন সাগর ভাইয়া?
বেশ মিষ্টি করে কথা বলে মেয়েটা। ফোনে তো তেমনই শোনায়। এই মেয়েটির সাথেও দেখা হয় না বেশ অনেকদিন হলো।
সাগর মৃদু হেসে জবাব দেয়
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
উত্তর দেয় না অথৈ। সাগরও দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস করে না। কেটে যায় দুই তিন মিনিট। এবার অধৈর্য হয় সাগর। ভ্রু কুচকে বলে
” কথা বলছো না যে?
“মিট করতে চাই আপনার সাথে। ফ্রী আছেন কাল?
এমন কথা আশা করে নি সাগর। তাই একটু চমকালো। মেয়েটি হঠাৎ দেখা করতে চাইছে কেনো? কিছু হয়েছে কি? জিজ্ঞেস করবে কি করবে না ভানতে ভাবতেই অথৈ আবারও বলে ওঠে
” কাল কলেজে অপেক্ষা করবো। সময় হলে একটু আসিয়েন।
বলেই কল কাটে। আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকে সাগর। কি হলো এটা? অবশ্যই বরাবরই এমন হয়ে আসে। নিজ বক্তব্য শেষ করে কল কাটে অথৈ। নতুন কিছু নয়। তবুও আশ্চর্য হয়েছে সাগর।
দুই দিন এক টানা বৃষ্টি পড়ছে। সারা দিন রাত একই রকম বৃষ্টির ধাচ। না বেশি না কম। ঝিরিঝিরি শব্দে মাতোয়ারা চারিপাশ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির শব্দে হৃদয় নেচে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে। বাসা থেকে বের হওয়ার উপায় নেই। কাঁদা পানিতে মাখামাখি। ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছে অর্ণব। মন মেজাজ তুরুঙ্গে। কেউ কিছু বললেই ছ্যাঁত করে উঠছে। মনটা পাগল পাগল।
আশা বেগম খিচুড়ি চাপিয়েছে চুলায়। গরুর মাংস রান্না হয়ে গিয়েছে আগেই৷ আর্থি শিলনোড়ায় কালো জিরে এবং শাক পাতা মিশিয়ে বেটে নিচ্ছে। এরপর বাটবে কুচো চিংড়ি। তারপরে চ্যাপা শুটকি।
ইতোমধ্যেই আলু ভর্তা বেগুন এসব শেষ হয়েছে।
অর্ণব সোফায় বসে ল্যাপটপ দেখছে। কারেন্ট যাচ্ছে আসছে। ফোনে চার্জ নেই। পাওয়ার ব্যাংক অথৈ নিয়ে নিয়েছে। বেজায় বিরক্ত অর্ণব।
আনোয়ার গিয়েছে তন্নিকে আনতে। এই বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই রওনা হয়েছে তারা। ইতোমধ্যেই খবর পেয়ে গিয়েছে অর্ণব।
মনে মনে মোটেও সে খুশি নয়৷ ওয়েদার খারাপ এর মধ্যে আপন বউ চারিপাশে ঘুরঘুর করলে নিজেকে সামলানো দায় হয়ে পড়বে।
মেয়েটা এই ওয়েদারে এখানে এসে মোটেও ভালো কাজ করছে না। এর জন্য মাসুল দিতে হবে৷
আশিক মেসেজ দিচ্ছে অর্ণবকে। একটার পর একটা মেসেজ দিয়েই যাচ্ছে। কারেন্ট বাবাজিও চট করে চলে যায়। এই দশ মিনিট হবে এসেছিলো। ল্যাপটপের মেয়াদ শেষ। ঠাসস করে বন্ধ করে ফেলে অর্ণব। ছুঁড়ে মারে অন্য সোফায়। হাত বাড়িয়ে ফুলদানির পাশ থেকে ফোন তুলে নেয়। ত্রিশ পারসেন্ট চার্জ হয়েছে। দশ মিনিটে ত্রিশ। বাহহহ মোবাইল ভালো হয়ে গেছে।
ডাটা অন করতেই নোটিফিকেশনের ধুম পড়ে। সব টেক্সট আশিকের৷
এতো মেসেজ পড়তে ইচ্ছে করছে না অর্ণবের। তাই কল করে। কল ধরতে সময় নেয় না আশিক। চট করে ধরে ফেলে এবং ভয়ার্তক স্বরে বলে
“ভাই ওয়েদার খারাপ। বউ পাশ থেকে সরছেই না। অঘটন ঘটে যাবে। কি করবো বল?
চল কোনো ক্লাবে ট্লাবে গিয়ে সময় কাটিয়ে আসি।
অর্ণবের ইচ্ছে করে কঠিন কিছু গালি আওড়াতে। নেহাৎ অর্ণব ভদ্র পোলা তাই গালি গিলে ফেলে। শান্ত স্বরে বলে
” ক্লাবে তোর নানী “আজ ফের রাত মজা হু” এই গান গাইছে। আর তামান্নার মতো টাম্বি দেখাচ্ছে। চল দেখে আসি।
আশিক বলে ওঠে
“আমার নানী বুইড়া মানুষ। নাচতে পারবে না।
” শা লা মাথা গরম। ফোন রাখ।
“সলিউশন দে ভাই।
” বউ থা প্প ড়ে রুম থেকে বের করে দে শালা।
“ঠান্ডা তো। বউ ছাড়া ঘুম হবে না৷
” আই ফা*******
ফোন রাখ।
বা**ল নিজের জ্বালায় বাঁচি না।
কল কাটে অর্ণব। আশিক আহাম্মকের মতো খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। করলো টা কি ভাই? জাস্ট একটু সলিউশন চাইলো তাতেই এতো কঠিন গালি?
আধভেজা হয়ে শশুর বাড়িতে প্রবেশ করে তন্নি। জামাকাপড়ের ব্যাগটা শুধু অক্ষত আছে। সেটা বাঁচাতেই আনোয়ার এবং সে ভিজেছে। গাড়ি হর্ণ বাজতেই অথৈ নিজ কক্ষ থেকে দৌড়ে বেড়িয়েছে।
তন্নি জামাকাপড় টেনে মাথা ঘোমটা দিয়ে এগিয়ে আসে। অর্ণব তাকিয়ে থাকে। তন্নির চোখ এখনো অর্ণবের দিকে পড়ে নি৷
অথৈ দৌড়ে এসে তন্নিকে জড়িয়ে ধরে।
“জান তুই তো ভিজে গিয়েছিস৷ চল চল চেঞ্জ করবি।
” আন্টির সাথে দেখা করে আসি।
“পরে করিস। ঠান্ডা লেগে যাবে।
অগত্য অথৈয়ের সাথে চলে যায় তন্নি৷ আনোয়ারও নিজ কক্ষে চলে যায় চেঞ্জ করতে। অধৈর্য অর্ণবও অথৈদের পেছন পেছন যায়। তন্নি বাথরুমে ঢুকে পড়ে প্রয়োজনীয় জামাকাপড় বিয়ে। অথৈ তন্নির বাকি জামাকাপড় বের করতে থাকে ব্যাগ থেকে। তখনই অর্ণব আসে।
মাথা নিচু করে সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বলে
” মাম্মাম ডাকছে তোকে৷ এখুনি যেতে বললো।
“যাচ্ছি। তোর পাওয়ার ব্যাংক কারেন্ট না আসা পর্যন্ত পাবি না বলে দিলাম।
” লাগবে না তুই যাহহ।
অথৈ চলে যায়। রুম থেকে অথৈ বের হতেই অর্ণব ঠাসস করে দরজা আটকে দেয়। দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানে৷ বৃষ্টির বেগ বোধহয় বাড়লো এখন। এতোক্ষণ ঝিরিঝিরি শব্দ আসলেও এবার ঝমঝম শব্দ হচ্ছে। শুকনো ঢোক গিলে অর্ণব। বড়বড় পা থেকে এগিয়ে যায়। বাথরুমের দরজায় দুবার টোকা দেয়।
ভেতর থেকে তন্নি বলে
“জামাকাপড় এনেছি আমি। তোয়ালে আনতে ভুলে গিয়েছি। এনে দে তো।
অর্ণব আবারও টোকা দেয়। তন্নি দরজা খুলে দেয়। মুহুর্তেই অর্ণব দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। বড়বড় নয়নে অর্ণবের পানে তাকায় তন্নি পরপরই নিজের দিকে তাকায়৷ ওড়না সরিয়ে ফেলেছে আগেই। ভিজে জবুথবু কামিজটা লেপ্টে আছে দেহের সঙ্গে। হাত বাড়িয়ে ওড়না খানা ধরতে যায় তন্নি। অর্ণব বাঁধা দেয়। ধরে ফেলে তন্নির হাত। একটানে কাছে নিয়ে আসে। ফিসফিস করে বলে
” উমমমম জান
এভাবেই ভালো লাগছে। ওসব ঝামেলার দরকার নেই।
লজ্জায় কান গরম হয়ে ওঠে তন্নির। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। হাত পা ও মৃদু কাঁপছে৷ এটা ঠান্ডায় না কি অর্ণবের ছোঁয়ায় বুঝতে পারে না তন্নি। কম্পনরত তন্নির অস্বস্তি বাড়িয়ে দিতে অর্ণব চট করে কামিজের ফাঁকে এক হাত গলিয়ে দেয়। অপর হাত রাতে তন্নির গালে। একটু চাপ প্রয়োগ করে মুখটা ওপরে তোলে। এবং ওষ্ঠের ভাজে ওষ্ঠ পুরে নেয়। ছটফটিয়ে ওঠে তন্নি। মুখ এদিক ওদিক নারিয়ে সরে আসতে চায়। অবাধ্য অর্ণব হাত গলিয়ে দেয় স্পর্শ কাতর স্থানে। ধামচে ধরে শক্ত করে। “উমমম উমমম” শব্দ করে ওঠে তন্নি৷ স্থির হয়ে দাঁড়ানো বাদে আরও বেশি ছটফট করতে থাকে।
রাগ হয় অর্ণবের।
“বা**** একটু শান্তি পেতে দাও। এমন ব্যাঙের মতো লাফালাফি করলে হাত বা বেঁধে দিবো
বলেই আবারও পুরু ওষ্ঠের ভাজি ঘর্ষণ এবং বেহায়া হাতের অসহ্য বিচরণ বাড়িয়ে দেয়। ভালো করে শ্বাস টানারও সুযোগ দেয় নি। কেঁপে ওঠে তন্নির ছোট্ট সত্তা। লোকটা কি পাগল হয়ে গেলো? এতো উম্মাদের মতো করছে কেনো? ভালো লাগা খারাপ লাগার গতিবিধে বাঁধা পড়ে যায়। ছটফট থামিয়ে আশকারা দিতে গিয়েও পারে না। চিনচিন ব্যাথা করে উঠছে। ফের আর্তনাদ করে ওঠে। বৃষ্টির শব্দে তন্নির আর্তনাদ অর্ণবের কান ওবদি পৌঁছায় না। যখন চোখের কুর্ণিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে তখন অর্ণব তাকায় তন্নির মুখ পানে।। অসহায় দৃষ্টিতে অর্ণবকে থামতে বলছে তন্নি। অর্ণব ওষ্ঠ ছেড়ে দেয়। দুজনই হাঁপাচ্ছে পাল্লা করে।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৪
হাত সরায় না অর্ণব।
বরং অধৈর্য স্বরে বলে
“আর একটু সহ্য করে নাও জান।