রেড রোজ পর্ব ২৮
ফারহানা নিঝুম
“অ্যাম রিয়েলি স্যরি।নিকি প্লিজ আমার উপর অ্যাংরি হয়ে থেকো না!”
নিকি মুখ ঘুরিয়ে নিলো, জিসান আসার পর থেকেই তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিকি তেমন একটা পাত্তা দেয়নি। ইভেন জিসানের সামনে পর্যন্ত খুব একটা যায়নি।
এই তো কিছুক্ষণ আগেই রুম থেকে বের হতেই জিসান কে দেখতে পেলো সে।নিকি বরাবরের মতো নিজের পথ বদলে বাইরের দিকে চলে গেলো। জিসান ওর পিছু পিছু যায়,নিকি হাঁটতে হাঁটতে বাগানে এসে দাঁড়িয়েছে। জিসান গুটি গুটি পায়ে এসে নিকির পিছনে দাঁড়ালো।
“মাই অ্যাংরি বার্ড অ্যাম স্যরি।”
অ্যাংরি বার্ড শুনে ভ্রু কুঁচকে নেয় নিকি।
“আপনার সঙ্গে কথা বলব না আপনি। ইংরেজি সাহেব বলে নিজেকে সেলিব্রিটি ভাবা বন্ধ করুন।”
নিকির কথা শুনে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল জিসানের।সে সেলিব্রিটি ভাব নিয়ে ঘুরে?ও মাই গড!
“নো নো অ্যাংরি বার্ড তুমি ভুল বোঝচ্ছো।”
নিকি দুহাত বুকে গুজে বললো।
“ওহ্ তাই নাকি।তা কারো ম্যা’সেজের রি’প্লা’ই না দেওয়া,কল রিসিভ না করাকে কী বলে হ্যা? অবশ্যই সেলিব্রিটি,তাই তো এত ভাব নিচ্ছিলেন।”
জিসান অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নিকির দিকে।মলিন মুখে বলে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“অ্যাম স্যরি।”
নিকি গললো না, জিসান বুঝতে পারছে না এই অ্যাংরি বার্ডের রাগ কি করে ভা’ঙাবে?
জিসান ফট করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল,কান ধরে বাচ্চাদের মতো করে বলে।
“অ্যাম স্যরি অ্যাংরি বার্ড।”
নিকি চমকালো, ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার।এই ছেলেটা বোকা। ইশ্ কী সব করে?
“আরে কী করছেন? উঠুন।”
নিকি জিসান কে টেনে তুললো। জিসান সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
“অ্যাংরি বার্ড তোমাকে মিস করেছি।”
নিকির মুখশ্রী জুড়ে লজ্জারা বিড় জ’মা’লো।
“পাগল।”
“ইয়া অফকোর্স। তোমার জন্য অ্যাংরি বার্ড।”
নিকি ফিক করে হেসে উঠলো।
ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসে আছে ঐশ্বর্য। অনেক দিন ধরে অফিসের কাজ করেনি, আজকে কিছু কাজ এগিয়ে রাখবে বলে ভেবেছে। ঐশ্বর্যের পাশেই ফাইল নিয়ে বসে আছে জিসান।
“এই দেখ এই ফাইল গুলোতে কিছু ডিল এর ক’পি আছে।”
জিসান ঐশ্বর্যের দিকে ফাইল গুলো এগিয়ে দিলো, ঐশ্বর্য চোখ বুলিয়ে নেয় ফাইল গুলোতে।
“আচ্ছা তুই বরং যারা যারা আছে এই ফাইলে, ওদের একটা লিস্ট কর।আর ওইটা হ্যারেন কে পাঠিয়ে দে।”
জিসান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো।
“হ্যারেন তো ছুটিতে আছে।”
ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত হয়।
“আচ্ছা তুই আগে লিস্ট কর, এরপর বাকিটা দেখছি।”
“ওকে।”
“আসবো?”
মিহি কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে। ঐশ্বর্য শান্ত ভাবে বললো।
“হ্যা এসো।”
মিহি ধীর গতিতে রুমে প্রবেশ করেছে।
“স্যরি তোমাদের ডিস্টার্ব করছি।এই যে তোমাদের কফি।”
মিহি ঐশ্বর্য আর জিসান দুজনের হাতেই কফি দিলো। জিসান সৌজন্য মূলক হাসলো।
“ঐশ্বর্য তোমাকে কিছু বলতে চাইছি!”
ঐশ্বর্য কফি কাপে চুমুক দিয়ে বললো।
“হ্যা বলো।”
মিহি সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বললো।
” দেখো ঐশ্বর্য আমার বোন উৎসা কিন্তু খুবই সহজ সরল।ও ততটা প্যাঁ’চ বুঝে না। আমি যতটুকু শুনলাম তোমরা বিয়ে করেছো।”
ঐশ্বর্য সুঁচালো চোখ করে তাকালো।
মিহি ফের বলতে শুরু করলো।
“তুমি যদি সত্যি আমার বোন কে ভালোবাসো তাহলে আমার কোনো প্রবলেম নেই। কিন্তু যদি শুধু….. আমি কিন্তু চাই না আমার বোনের জীবন আমার মতো হোক।তাই আশা করি অন্তত একটু তুমি বুঝবে।”
ঐশ্বর্য মাথা দুলালো।মিহি বের হয়ে গেল, জিসানও নিজের কাজে বের হলো।
ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত, সত্যি কী সে উৎসার সঙ্গে অন্যায় করছে?উৎসা একদম সাধারণ, নিজেকে অন্যদের মতো করতে চায় না।এই ব্যাপারটা বেশ টানে ঐশ্বর্য কে,সে চায় উৎসা সবসময়ের জন্য তার সঙ্গে থাকুক।
কথা গুলো ভাবতেই ভেতরে থেকে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো। ঐশ্বর্য বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো, চোখ গুলো গেল বাগানের দিকে। দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সামনের মেয়েটির দিকে।উৎসা ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে,আশপাশটা পরিষ্কার করছে নিজে। ঐশ্বর্য এখানে আসার পরেই অনেক বার দেখেছে,মালি থাকতেও উৎসা নিজে গাছ গুলোর যত্ন নেয়।উৎসা জবা ফুলের কাছে গেল, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কী না? যখন দেখলো কেউ নেই তৎক্ষণাৎ টুক করে ফুলে একটা চুমু খেল সে। ঠোঁট টিপে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য উপরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখলো।সেও মৃদু হাসলো।
ঐশ্বর্য একটু হতাশ, সত্যি ভুল করেছে।উৎসার প্রতি ফিলিংস টা বোঝাতে পারবে না কাউকে।তবে এটার নাম কি ভালোবাসা দেওয়া যায়?
বাড়িতে নতুন অতিথি আসবে। আফসানা পাটোয়ারী বড় ভাইয়ের ছেলে মাহমুদ।সেই উপলক্ষে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে আফসানা পাটোয়ারী।
ঐশ্বর্য ওনার এইসবে সবসময় বিরক্ত বোধ করেন। অন্যের জীবন শেষ করে দিয়ে নির্ল’জ্জের মতো এখনও বেঁচে আছে।
রুমে প্রবেশ করতেই কপাল কুঁচকে নেয় ঐশ্বর্য। শহীদ আগে থেকেই ওর ঘরে বসে আছে।
“এ কি? আপনি এখানে কেন?”
শহীদ মিহি হাসলেন।
“তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।”
ঐশ্বর্য ডিভানের উপর গিয়ে বসলো।
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। এমনিতেই আপনার কোনো কথা শুনার ইচ্ছে বা আগ্রহ নেই।”
শহীদ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,তবে সত্যি তার কথা বলাটা জরুরি।
“আচ্ছা ঐশ্বর্য সত্যি করে বলবে মনিকা কোথায়?”
ঐশ্বর্য খানিকটা অবাক হয়, কিছুটা বিব্রত বোধ করে। কিন্তু তা প্রকাশ করেনি, বরংচ মুখে গাম্ভীর্য টেনে বলে।
“মাম্মা কে আপনার এত কিসের দরকার? না মানে বুঝতে পারছি না! হঠাৎ আমার মাম্মার খবর নিচ্ছেন!”
শহীদ কিছুটা বিব্রত বোধ করেন।
“দেখো ঐশ্বর্য,উনি তোমার মা হওয়ার আগে কিন্তু আমার ওয়াইফ।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,যা তাচ্ছিল্য বলে মনে হচ্ছে শহীদের কাছে।
“ওয়াইফ! সিরিয়াসলি! আমি সত্যি আজ অবাক হচ্ছি। আচ্ছা ওয়াইফ এটা আপনার আগে মনে ছিলো না? আমাকে একটা কথা বলুন যখন আমার মাম্মা কে ছেড়ে চলে এসেছিলেন, তখন ওয়াইফ হয় উনি। এটা কি মনে ছিলো না!”
“দেখো ঐশ্বর্য…….
“চুপ করুন। আপনার সঙ্গে অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না আমি।চলে যান এখান থেকে।”
“কিন্তু ঐশ্বর্য মনিকা সত্যি মা’রা গেছে?”
ঐশ্বর্য রাগে ফুসে উঠে।
“সেগুলো আপনাকে বলতে বিন্দু মাত্র ইন্টারেস্ট নেই আমার।”
শহীদ আর কিছুই বলতে পারলো না। রুম থেকে বের হতেই ঐশ্বর্য ডিভানে সজোরে ঘু’ষি মা’রলো।এই লোকটা কে আর মিসেস মহিলা কে একদম স’হ্য করতে পারে না সে।কেউই বা স’হ্য করবে?ওরা দু’জন মিলে ওর মাম্মার জীবন শেষ করে দিয়েছে। ঐশ্বর্য চাইলেও ওদের কখনও ক্ষমা করতে পারবে না।
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য।
“উঁহু..
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে মৃদু হাসলো ঐশ্বর্য।উৎসা এসেছে,তা বেশ বুঝতে পারছে ঐশ্বর্য।
“কী ব্যাপার জিসানের মিস বাংলাদেশী! হঠাৎ এত রাতে?”
রাত সাড়ে বারোটার কাছাকাছি।উৎসা কিছু জানতে চায় ঐশ্বর্যের কাছে থেকে তাই তো আসা।হাতে আছে দু কাপ কফি।উৎসা এগিয়ে গিয়ে ছাদে রাখা দোলনায় বসে পড়লো।
“এমনি ঘুম আসছিল না। তাই ভাবলাম ছাদে যাই! কিন্তু এখানে এসে তো দেখলাম আপনাকে,এই জন্য কফি নিয়ে এসেছি।”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“তাই!”
উৎসা উপর নিচ মাথা দুলায়।কফি কাপ এগিয়ে দেয় ঐশ্বর্য কে।
“সুগার ফ্রি।”
ঐশ্বর্য কফি কাপে চুমুক দেয়,উৎসা হাঁসফাঁস করছে।তার মনে হাজারো প্রশ্ন,সে গুলোর উত্তর চাই।
“বলছিলাম কী চলুন একটা গেইম খেলি!”
ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়।এই রাতবিরেতে গেইম?
“গেইম!”
উৎসা কফি কাপে চুমুক দিয়ে বলে।
“হুঁ হুঁ।দারুন একটা গেইম।খেলবেন আপনি?”
ঐশ্বর্য হা করে শ্বাস টেনে নেয়।
“ওকে।লেটস্ স্টার্ট।”
উৎসা খেলা বুঝিয়ে দেয়।
“ধরুন আমি আপনাকে প্রশ্ন করব! সেটার সত্যি সত্যি উত্তর দিতে হবে কিন্তু?আর আপনিও আমাকে প্রশ্ন করবেন,আমিও সত্যি সত্যি উত্তর দেব।”
ঐশ্বর্য বাঁ’কা হাসলো।
“ওকে।”
উৎসা কিছুটা স্বস্তি পেলো।যাক লোকটা অন্তত ঘাড় ত্যা’রামো করেনি।
“তো আপনি আগে প্রশ্ন করুন?”
ঐশ্বর্যের মাথা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।
“লাইফে কখনো কাউকে ফ্রেঞ্চ কিস করেছো?”
উৎসা বেজায় ক্ষে’পে গেল।কী শ’য়তা’ন লোক রে ভাবা!কী সব জিজ্ঞাস করে?
“কী হলো বলো?”
উৎসা ফুস করে উঠে।
“কখনও না। আমি কী কোনো ছেলেদের সঙ্গে মিশি নাকি? আশ্চর্য!”
ঐশ্বর্য উৎসা কে বিরক্ত করে বেশ মজা নিলো।
উৎসা বললো।
“এবার আমার টার্ন। আচ্ছা আপনার মা কোথায়?”
ঐশ্বর্য মিহি হাসলো।সে প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছে উৎসা তার সম্পর্ক জানতে চায়।তাই তো এই রাতবিরেতে খেলার কথা বলেছে।অথচ অন্য সময় হলে ঐশ্বর্যের কাছাকাছি আসলেই ভয়ে সিঁ’টিয়ে যেতো উৎসা।
ঐশ্বর্য কফি কাপ রেখে উৎসার দোলনায় এসে বসলো।
“আমাকে জানার এত ইন্টারেস্ট?”
উৎসা চুপসে গেল, মিনমিনে গলায় বলল।
“আমি তো কনফিউশন দূর করতে চাচ্ছিলাম।”
ঐশ্বর্য উৎসার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে টিপুনি কে’টে বলে।
“আহারে বেচারি!”
উৎসা মুখ বাঁকিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।উৎসা অন্য দিক তাকিয়ে বলে।
“বলবেন কি না বলুন? না হলে আমি আমার বিউটিফুল ঘুম টা নষ্ট করে এখানে আসতাম না।”
ঐশ্বর্য উৎসার বাচ্চামো গুলো দেখলো। আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে উৎসা কে।উৎসা চমকালো,ভ’ড়কালোও বটে।
রেড রোজ পর্ব ২৭
“রেড রোজ তুমি অন্তত থেকে যাও! সবাই চলে গিয়েছে,অ্যাট লিস্ট তুমি থাকো।”
ঐশ্বর্যের কথা সব মাথার উপর দিয়ে গেল উৎসার। সবাই চলে গেছে মানে? আচ্ছা ঐশ্বর্যের কী হয়েছে?সে কী সত্যি খারাপ?নাকি তার আশেপাশের মানুষ গুলো তাকে খারাপ বানিয়েছে?