মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৬
নুজাইফা নূন
-“ভাইয়া কানাডা চলে যাচ্ছে মানে?কি বলছো এসব?”
-” তুমি যেটা শুনেছো সেটাই।স্যার আর বেশিদিন আমাদের মাঝে থাকবেন না। তিনি খুব তাড়াতাড়ি কানাডা পারি জমাবেন।
-” ভাইয়া কানাডা চলে যাচ্ছে।অথচ আমি জানি না।আসলে ভাইয়া কখনোই আমাকে নিজের বোন ভাবতে পারে নি।তাই তো এতো বড় একটা কথা লুকিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভাইয়া হঠাৎ কানাডা যাচ্ছে কেন?তোমাকে কিছু বলেছে কি?”
-”না।স্যার এই ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলেন নি।
হুট করে স্যারের কানাডা যাওয়ার ব্যাপার টা আমি ও ঠিক বুঝতে পারছি না।তবে আন্দাজ করতে পারছি কিছু টা।আমি যেটা সন্দেহ করছি সেটা যদি ব্যাটে বলে মিলে যায়।তাহলে স্যার …
-” তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না রামিম?প্লিজ হেঁয়ালি না করে একটু ক্লিয়ার করে বলো।”
-”ভালোবাসলেই সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না। ভালোবেসে না পাবার যন্ত্রণা যে বড্ড কঠিন।
ভালোবাসার যন্ত্রনা সহ্য করার থেকে দূরে চলে যাওয়া অনেক ভালো।”
-” মানে? কি সব আবোল তাবোল বকছো? ভাইয়া আবার কাকে ভালোবাসলো?”
-” ও কিছু না।রাখছি আমি। একদম ই কান্নাকাটি করো না।পারলে আমাকে ভুলে যেও বলে ফোন রেখে দেয় রামিম।রামিম ফোন রাখতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সামিরা।।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” সিজদা সাইফান দুজনে খেতে বসেছে।বিথী চৌধুরীর অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজে হাতে সব রান্না করেছেন।রান্নার সময় তার ইচ্ছে করছিলো খাবারে বিষ মিশিয়ে সিজদা কে খাইয়ে দিতে।এই মেয়েটা কে কোনো কালেই পছন্দ ছিলো না তার। কিন্তু সে পারেন নি।রাদেশ চৌধুরী বলেছেন,
সিজদা সাইফানের আদর আপ্যায়নে যদি বিন্দুমাত্র ক্রুটি হয় তিনি ঐশ্বর্য কে পুলিশ কাস্টডি থেকে ছাড়িয়ে আনার কোনো চেষ্টাই করবেন না। ঐশ্বর্য কে জেলে পচে মরতে হবে।মেয়ের কথা চিন্তা করে মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বিথী চৌধুরী
সিজদা সাইফানের আদর আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের প্লেটে এটা ওটা তুলে দিচ্ছেন।সিজদা সাইফান দুজনেই তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।এমন সময় পাশের ফ্ল্যাট থেকে পাড়া প্রতিবেশীরা নতুন জামাই দেখতে আসে।সালেহা বেগম তাদের কে দেখা মাত্রই কুশলাদি বিনিময় করে সাইফানের নিয়ে আসা মিষ্টি, দই নাস্তা দেন।সাইফান কে দেখে সকলে খুশি হন। তাদের
মধ্যে থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো,
-” মাশাআল্লাহ। জামাইবাবাজি তো অনেক সুন্দর দেখতে । আমাদের সিজদার সাথে খুব ভালো মানাইছে।সিজদা কে নিয়ে টেনশন হতো আমাদের।বাবা ,মা ছাড়া এতিম মেয়ে।কার সাথে বিয়ে হবে কি না হবে?মেয়েটা সুখী হতে পারবে কিনা ? বড্ড চিন্তা হতো। কিন্তু তোমাদের দুজনকে এক সাথে দেখে সেই চিন্তা দূর হয়ে গিয়েছে। দোয়া করি অনেক সুখী হও তোমরা। মুরব্বি হয়ে একটা কথা বলতে পারি ।যদি সিজদা কিছু মনে না করিস।”
-” না না দাদি।আমি কিছুই মনে করবো না। তুমি বলো কি বলবা?”
-” এখনকার যুগের মেয়েরা বিয়ের পর বছর বছর চলে যায়। কিন্তু বাচ্চাকাচ্চা নিতে চায় না।এটা কিন্তু ঠিক না। বাচ্চাকাচ্চা না থাকলে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বাড়ে নাকি? আর না বাচ্চা ছাড়া সংসার পরিপূর্ণ হয়। তুই তাড়াতাড়ি একটা বাচ্চা নিয়ে নে।দেখবি তোর বর থেকে শুরু করে শ্বশুর শ্বাশুড়ি সবাই তোকে মাথায় করে রাখবে।সংসার পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।”
-” বাচ্চার কথা শুনে কাশি শুরু হয়ে যায় সাইফানের।সিজদার লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠেছে।লজ্জায় সাইফানের দিকে তাকাতেও পারছে না। এদিকে সাইফানের কাশি থামছেই না । সিজদা নিজের লাজ লজ্জা সাইডে রেখে সাইফানের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।সাইফান এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি শেষ করে।সাইফানের এই অবস্থা দেখে রাশেদ চৌধুরী এগিয়ে এসে বললো,
-” কি হয়েছে বাবা? তুমি ঠিক আছো তো?”
-” জ্বি মামা।”
-” তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া বাবা।আমার মেয়েটা কে তুমি কষ্ট দিও না। ছোটবেলা থেকে মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করে এসেছে।”
-” সিজদা যেমন আপনার ভাগ্নি।তেমনি আমার ও স্ত্রী।সিজদা কে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।আমি সিজদার অতীত জানতে চাই না।সিজদার বর্তমান কে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা আমার দায়িত্ব।আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি মামা। তিন কবুল বলে যখন সিজদার হাত ধরেছি। মৃত্যু ছাড়া সেই হাত কখনো কেউ আলাদা করতে পারবে না।”
-” সাইফানের কথা শুনে সিজদার খুশিতে চোখ ছলছল করে উঠলো।এই মানুষ টাকে যতোটা ভালো ভেবেছিলো তার থেকেও শতগুণ ভালো সে।সাইফান কে স্বামী রুপে পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছে সিজদা।।”
-”ছেলে হয়ে তোমার কাছে একটা আবদার করলাম সেটাও পূরণ করতে পারলে না বাবা?”
-” আমি বুঝতে পারছি না তোর কানাডা যাওয়ার এতো তাড়া কিসের? তুই তো গতকালই আমাকে বললি।একটু সময় তো দিবি না কি? বাংলাদেশ থেকে বাইরের দেশে যাওয়া হাতের মোয়া নয় যে এক রাতের মধ্যে পেয়ে যাবি।আমাকে একটু সময় দে বাবা।আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করছি।”
-” আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গিয়েছে বাবা।তোমার কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার।আমার ব্যাপার আমি নিজেই হ্যান্ডেল করবো।”
-” তুই একদম তোর মায়ের মতো হয়েছিস।তোর মা যেমন আমাকে কখনো বুঝতে চায় নি। তেমনি তুই ও আমাকে কখনোই বুঝতে চাস না।”
-” কথায় কথা বাড়ে বাবা। তুমি আমাকে মুখ খুলতে বাধ্য করো না বাবা।মা যখন আমাকে ছেড়ে চলে যায়।আমি যথেষ্ট বড় ছিলাম।সবটা বুঝতে ও শিখেছিলাম। সেদিন তোমার সাথে মায়ের তুমুল ঝগড়া হয়।মা রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তোমার ইগো , অহংকার এতোটাই বেশি ছিলো যে তুমি একবার ও মাকে আটকানোর চেষ্টা করো নি।আমি দৌড়ে গিয়েছিলাম মায়ের পিছু পিছু। কিন্তু মাকে পাই নি।মা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।তার কয়েক ঘণ্টা অতিক্রম হতেই খবর এলো রোড এক্সিডেন্টে একটা মহিলা মারা গিয়েছে।যার মুখ অত্যন্ত বাজে ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।যার পরণে সেই শাড়ি রয়েছে যে শাড়ি আমার মায়ের গায়ে ছিলো। তুমি নিজের মানসম্মান রক্ষার্থে একটা বারো ইনভেস্টিগেশন করে দেখো নি সেটা আদৌ আমার মা ছিলো কিনা?তুমি আমার থেকে আমার মাকে কেড়ে নিয়েছো।আমার কৈশোর কেড়ে নিয়েছো।মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেছে। হ্যাঁ এসব কিছুর জন্য তুমি দায়ি।ইউ আর রেসপন্সসিবেল ফর এভরিথিং।”
-” ফারুক মির্জা যেন পাথর হয়ে গিয়েছে।তার মুখ থেকে কোনো কথায় বের হচ্ছে না।তাকে নিয়ে তার ছেলের অনেক অভিযোগ।এ রকম অভিযোগ তার স্ত্রী যমুনার ও ছিলো।তিনি স্ত্রী, সন্তান কে সময় দিতে পারেন নি। শুধু টাকার পিছনে ছুটেছে। ফারুক মির্জাকে চুপ থাকতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে সারজিস।তার ভেতরে কষ্টটা কেউ কোনদিন ও বোঝার চেষ্টা করে নি।সারজিস ফারুক মির্জার দিকে এগিয়ে আসতেই তার ফোন বেজে ওঠে।
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩৫
হসপিটাল থেকে কল করা হয়েছে।সারজিস কোনো কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।পথিমধ্যে একটা জটলা দেখে সারজিস গাড়ি থামিয়ে জটলার দিকে অগ্রসর হয়।তখনি সারজিসের ফোন বেজে ওঠে।আবারো হসপিটাল থেকে কল করা হয়েছে।সারজিস ফোন কানে নিয়ে জটলা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই যেন সারজিসের পা থেমে যায় ।কলিজা মোচড় দিয়ে উঠে।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের সৃষ্টি হয়। কণ্ঠনালী শুকিয়ে আসে।হাত থেকে ফোন পিচঢালা রাস্তায় পড়ে খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায়।।”
