পাতা বাহার পর্ব ১২
বেলা শেখ
দূর হতে কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক ভেসে আসছে। বাদুড়ের দল আম গাছের মগডালে ঝুলছে। উড়ে এ গাছ হতে ও গাছের বসে আম খাচ্ছে। কিছু পাখির বাচ্চার চেও চেও শব্দ ধ্বনিত হচ্ছে। ঝিঁঝিঁ পোকার ঝিঁঝিঁ শব্দে মাথা ভোঁ ভোঁ করার উপক্রম।ঘনঘটা তিমির রাত। জোৎস্নার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ গম্ভীর উদাসীন হয়ে আছে। অরুণ সরকার এমন সময় কিচেনে দাঁড়িয়ে রান্না করছে। নুডুলস কলিজাটা বেশ পছন্দ করে।তাই সেটাই বানাচ্ছে। ভোর বাবার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে চুপটি করে আছে। কিছু বলছে না।
অরুণ এটা ওটা বলছে তাতেও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে না। হ্যা না হু কিছুই না। অরুণ হাল ছাড়ে না। বলতেই থাকে। এক হাতে কড়াইয়ে পেঁয়াজ মরিচ কুচি দিয়ে তেল ঢেলে খুন্তি দিয়ে নাড়তে থাকে। অপর হাতে ছেলেকে জড়িয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে ব্যস্ত। পাতা বাহার কিচেনের কেবিনেটে অরুনের ফোনের উপর উঠে মিও মিও করছে। কখনো পেঁয়াজ নিয়ে খেলছে তো আলু নিয়ে ফেলে দিচ্ছে। অরুণ তার দিকে তাকালে পিট পিট করে চেয়ে মিও মিও করে।
-” ওই পাতাবাহার ওগুলো ফেলছো কেনো? কে তুলবে ওসব হুম? তোমাকেই তুলতে হবে! আব্বু দেখ তোমার পাতাবাহার আলু ফেলছে ওকে বকে দাও তো!”
ভোর তাকায় বিড়াল শাবকটির দিকে। সেটি নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার প্রেক্ষিতে কিউট করে চেয়ে সুর তুলে মিয়াও ডাকে। অরুণ চোখ বড় বড় করে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” দেখেছো আব্বু তোমার সামনে ইনোসেন্ট সাজছে। যেন কিছুই করে নি। তুমি ওর কথা বিশ্বাস করবে না ঠিকাছে? এই পাতাবাহার ও মিস পাতাবাহারের মতো! দুজনেই দুষ্টু! তবে তোমার সামনে ভোলাভালা সেজে থাকে!”
ভোর তবুও কিছু বলে না। অরুণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কড়াইয়ে সবজি ঢেলে দিল। ভোরের গালে চুমু দিয়ে বলে,
-” তোমার মা’র সাথে কথা বলবে? ফোন করবো? ভিডিও কল দিই?”
ভোর মাথা তুলে চায় পিট পিট করে।
-” মা কথা বলবে আমার সাথে? ”
অরুণ ভোরের দিকে চায় না। সবজি নেড়েচেড়ে ওতে নুডুলস ঢেলে দিল।
-” বলবে কি না সেটা বলো? আমি কল করছি দাঁড়াও!”
বলেই কেবিনেটের উপর থেকে বিড়ালটি সরিয়ে ফোন হাতে নেয়। ভোর বাবার দিকে আগ্রহ ভরা চোখে চেয়ে আছে। সত্যিই ফোন করবে বাবা? অরুণ সত্যিই কল করে। বর্ষার নাম্বার আছে এখনো। ব্ল্যাকলিস্টে নয়। সেভ কন্টাক্টেই আছে। ডিভোর্সের পরেও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে।ভোর মা যাবে যাবে বলে জেদ করলে, কাঁদলে কল করতো আগে। সারে তিন বছরের পর আর মা মা করে নি তেমন। তাই কল করাও হয়নি! হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়লো কেন? অরুণ কল করে। প্রথমবার কল করলে রিসিভ হয় না। দ্বিতীয়বারের বেলায় সাথে সাথেই রিসিভ হয়। অরুণ লাউড স্পিকারে দিয়ে ভোরের হাতে দেয়। অপাশ থেকে ভেসে আসে,
-” আই এম সারপ্রাইজড। অরুণ সরকার আমাকে কল করেছে! তাও প্রায় বছর দুই পর। প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। দ্বিতীয় বার এলে বিশ্বাস হলো! তা কেমন আছো? হঠাৎ মনে পড়লো?”
অরুণের হাত থেমে যায়। বুকটা জ্বলে ওঠে। হাহাকার ধেয়ে আসছে যেন! স্নিগ্ধ শোভন ভালোবাসার নারী! যাকে মনে প্রাণে ঊজাড় করে ভালোবেসেছিল!
ভোর খুশি হয় মা’র কণ্ঠস্বর শুনে। সে অনুভব করে মায়ের আওয়াজ ভোলেনি এখনো।আগের মতোই আছে বোধহয়!
-” মা?”
বর্ষার ঠোঁটের হাসি গায়েব হয়ে যায় মা ডাকটা শুনে। বিছানায় শোয়া সাত মাসের ছেলে ও স্বামীর দিকে চায়। ঘুমিয়ে আছে তারা। সেও ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখনই অরুনের কল আসে । তাদের ডিভোর্স হওয়ার পর অরুণ হাতে গোনা কয়েকবার কল করেছিল। সেটাও ভোরের জন্য। অনেক সময় পর আজ দিল। বর্ষা ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
-” বরুণ? কেমন আছো সোনা?”
ভোর মাথা উঁচিয়ে বাবার দিকে চায়। অরুণ রান্নায় ব্যস্ত! ছেলেকে নামিয়ে দিল। একটু স্পেসে কথা বলুক দু’জন। তার সামনে জড়তা না করে। ভোর একটু দূরে যায়। হাসিমুখে বলে,
-” আমি ভালো আছি মা! তুমি কেমন আছো?”
বর্ষা মুচকি হেসে বলে,
-” ভালো আছি সোনা! তোমার আব্বুর ফোন থেকে লুকিয়ে কল করছো কি? আব্বু বকবে না?”
-” না না। আব্বুই কল দিল। আমি বলেছিলাম! তুমি কি করছো?”
-” এই তো ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম!এখন তো অনেক রাত! তুমি ঘুমাও নি?”
ভোরের মুখ মলিন হয়ে যায়।
-” ঘুম আসছিল না। তোমার কথা মনে পড়ছিল!”
বর্ষার বুকটা ধ্বক করে ওঠে। তাকে প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ দিয়েছে এই ছোট বাচ্চাটিই। তবে বরুণের তাকে মনে পড়ছিল শুনে খানিকটা ভালো লাগে।
-” বরুণ তোমার যখনি মনে পড়বে কল দিও কেমন? আমার ভালো লাগে তোমার সাথে কথা বলতে! আগে কল দিতে মাঝে মাঝেই এখন দাও ই না”
-” মা তুমিও তো দাও না। তোমার আমাকে মনে পড়ে না? আমাকে আর ভালোবাসো না তাই না?”
বর্ষার ভিতরটা কেঁপে ওঠে। এ কেমন অনুনয়ের কণ্ঠস্বর। কতটা মায়াময় শোনা যায়! বর্ষা খানিকটা আমতা আমতা করে বলল,
-” পড়ে তো! আমি কল করলে তোমার আব্বু যদি বিরক্ত হয় তাই করি না! বরুণ সোনা ভিডিও কল দেই? একটু দেখি তোমায়?”
ভোর খুশি হয়। মা’ কে দেখা যাবে ভিডিও কলে ।সে আচ্ছা বলে অরুণের কাছে যায়। অরুণ পাতাবাহারকে কোলে নিয়ে আদর করছে। নুডুলস রান্না শেষ সে ডিম সিদ্ধ দিয়েছে। সাথে দুধ চড়িয়েছে। গরম এক গ্লাস দুধ খেলে যদি ছেলেটার ঘুম হয়!! ভোর বাবার কাছে এসে হাসিমুখে বলে,
-” মা ভিডিও কল দিবে বলল। আমাকে দেখবে!”
অরুণ শান্ত চোখে ছেলের হাসিমাখা মুখ খানি দেখে। তার ভিতরটা এতো জ্বলছে কেন? ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াই ফাই কানেক্ট করে হোয়াটসঅ্যাপে যায়। সাথে সাথেই কল আসে বর্ষার নাম্বার থেকে। অরুণ রিসিভ করে ছেলের হাতে দিয়ে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিমের বক্স বের করে রাখে। ঠান্ডা কমুক একটু মেল্ট হোক!
ভোর ফোন মুখের সামনে ধরে একটু দূরে দাঁড়ায়! ফোনের স্কিনে মায়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে তার মুখশ্রীতেও হাসি ফুটে ওঠে। ছোট ভোর ভুলে যায় মা তাদের ছেড়ে চলে গেছে। বর্ষা ভোরকে দেখে নিয়ে ভোরের পিছনে কিচেনে অবস্থানরত তার প্রাক্তন স্বামীকে দেখে আড়চোখে। এত রাতে কিচেনে? নিশ্চয়ই ভোরের জন্য রান্না করছে! অরুণের হাতের রান্না অসাধারণ। তার জন্য কত রেঁধেছে! অরুণ ঘার ফিরিয়ে ফোনের দিকে চায়। বেশি দূরে নয়। স্পষ্টতই দেখতে পায় প্রাক্তন স্ত্রীকে। দুজনের চোখাচোখি হয়। বর্ষা চোখ ফিরিয়ে নিলেও অরুণ নেয় না। কিছু পল সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
ভোর মা কে দেখে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে,
-” মা তুমি দেখতে খুব সুন্দর!”
বর্ষা অরুণের দিকে আড়চোখে আরেকবার চায়। এখনো চেয়ে আছে। সে খানিকটা অস্বস্তি বোধ করে। তারপর ভোরের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” তাই? থ্যাংক ইয়ু! তুমিও অনেক বড় হয়ে গেছো। এত কিউট দেখতে! তুমি কোথায়?
-” কিচেনে! আব্বু নুডুলস রান্না করছে আমার জন্য! ”
বর্ষা অরুনের দিকে চায় আবার।নাহ আর তাকিয়ে নেই।
-” তাই? ইশ তোমার আব্বুর হাতের রান্না কিন্তু সেইরকম! আমার তো এখন লোভ হচ্ছে!”
-” তাই? তাহলে চলে আসো না আমাদের কাছে! আব্বু আমি তুমি একসাথে থাকবো!আসবে?”
বর্ষার মুখশ্রীতে অন্ধকার হানে।সে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
-” বরুণ তুমি স্কুলে যাও?”
ভোর উৎসাহের সাথে জবাব দেয়,
-” যাই তো! আমি নার্সারিতে পড়ি মা! রোজ স্কুলে যাই!”
-” ভেরি গুড! মন দিয়ে পড়াশোনা করবে কেমন?”
ভোর মাথা নাড়ে। টুকটাক ভালোই কথা বলে ভোর ও বর্ষা। অরুণ কেবিনেটের উপর বসে আইসক্রিম খাচ্ছে পা দুলিয়ে। পাশে পাতাবাহার মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। অরুণ তার গালে টোকা দিয়ে এক চামুচ আইসক্রিম তার সামনে কেবিনেটের উপর রাখে। বিড়াল শাবকটি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখে। অরুণ চোখ ছোট ছোট করে চায়।
-” ভাব দেখ! খেলে খাও! আমি সাধতে পারবো না! না আদর করে বলবো, মিস পাতাবাহার খেয়ে নাও সোনা! তাই ভং বাদ দাও, ওকে?”
বিড়াল শাবকটি অরুণের দিকে আড় চোখে চেয়ে আইসক্রিম শুকে খাওয়া শুরু করে। অরুণ বেশি করে মুখে আইসক্রিম পুরে ছেলের দিকে চায়। হাসতে হাসতে কথা বলছে মায়ের সাথে! এখনো এতো ভালোবাসা! একটু বুঝতে শুরু করলেও থাকবে তো!
তার ভাবনার মাঝেই ভোর আসে। তার দিকে ফোন বাড়িয়ে দেয় গোমড়া মুখে। অরুণ ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নেয়। কল এখনও কাট হয় নি। কানে ধরতেই ওপাশ থেকে বর্ষার আওয়াজ আসে।
-” হ্যালো! অরুণ? কেমন আছো?”
অরুণ ছেলের দিকে চায়। ভোর আগ্রহ ভরা চোখে চেয়ে আছে। সে কথা বলতো না এই নারীর সাথে যদিনা সামনে ভোর থাকতো!
-” আলহামদুলিল্লাহ! তুমি?”
বর্ষা খানিকটা হেসে বলে,
-” ভালো! রান্না করছো? ছেলের জন্য! কি রেঁধেছ?”
অরুণের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। এত কিছুর পরেও হাসিমুখে নরমালি কথা কি করে বলতে পারে মানুষ ! তার তো ইচ্ছে করছে ফোনের ওপাশ গিয়ে চুলের মুঠি ধরে ঠাস ঠাস কয়েকটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়ালে ঠুকে দিতে। স্বার্থপর নারী! তার হাতের মুঠো শক্ত করে আইসক্রিমের বাটি ধরে রাখে। হাতের কপালের শিরা উপশিরা সহ দৃশ্যমান। রাগে নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে বারংবার। দাঁতে দাঁত লাগিয়ে বলে,
-” রেঁধেছি কিছু! তুমি বাংলাদেশেই?”
-” হুম! অরুণ? শুনলাম তুমি বিয়ে করনি? করবে না? জানি অরুণ বলাটা অনঅধিকার চর্চা হবে তবুও বলছি, ইউ সুড মুভ অন! বরুণের জন্যে হলেও! নাকি আমাকে এখনো মনে রেখেছো?”
অরুণ ছেলের দিকে চায়।
-” লিসেন! বারো কি তেরো বছর বয়সে আমাকে একটা কুকুর কামড়িয়ে ছিল! একেবারে হাতের মাংসও তুলে নিয়েছিল! সেই কুকুরটিকেও এখনো মনে রেখেছি আমি। সাথে ব্যথা সহ সাতটা ইনজেকশন। দেখলেও চিনতে ভুল হবে না কুকুরটিকে। যদিও বেঁচে নেই।”
বর্ষার বুঝতে একটুও অসুবিধে হয় না যে কতটা জঘন্য ভাষায় তাকে অপমান করেছে অরুণ সরকার।
-” ইউ ইনসাল্ট মি!”
অরুণ ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-” যাক ঘটে বুদ্ধি আছে তাহলে!”
বলেই খট করে কল কেটে দেয়। অরুণ আইসক্রিমেরবাটি পাশে রেখে কেবিনেট থেকে নেমে ফোন ট্রাউজারের পকেটে পুরে।
-” বলিয়ে দিলাম তো মায়ের সাথে কথা! এখনো গাল ফুলে আছে কেন? হুম?”
ভোর আইসক্রিমের বাটি থেকে আইসক্রিম মুখে পুরে বলে,
-” আরো কথা বলতে ইচ্ছে করছিল তো!”
-” বলতে! আমি তো মানা করি নি! তোমার মা! তাকে ভালোও বাসো! কথাও বলবে! আমি মানা করার কে?”
ছোট্ট ভোর বাবার অভিযোগ বুঝতে পারে না।
-” মা বললো রাত অনেক হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়তে! আবার পরে কথা বলবে!”
অরুণ কিছু বলে না। ডিম সিদ্ধ ছিলে নুডুলসে রাখে। গরম দুধ গ্লাসে ঢেলে সব ট্রেতে নিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ভোর আইসক্রিমের বাটি হাতে নিয়ে মুখে পুরতে পুরতে বাবার পিছু পিছু হাঁটে। বিড়াল শাবকটি দৌড়ে একবার অরুনের পায়ের কাছে যায় তো ভোরের কাছে। রুমে সব রেখে অরুণ জগ হাতে নিয়ে বলে,
-” পানি আনছি! চুপচাপ বসে যেন থাকা হয়!”
ভোর ফ্লোরে রাখা বিড়ালের বাটিতে কিছু আইসক্রিম ঢেলে দিয়ে বিছানায় বসে নুডুলস ফু ফু দিয়ে খাওয়া শুরু করে। অরুণ নিচে যায়। জগে পানি ভরে পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগায়। বেশ সময় নিয়ে রিসিভ হয়। অরুণ কানে ফোন ধরে বলে,
-” হ্যালো! মিস পাতাবাহার?”
-” এই পাতাবাহার টা কে?”
অরুণ ফোন চেক করে! নাম্বার তো ঠিকই আছে! তাহলে কল কে ধরেছে?
-” মিস পাতা কে কল করেছি! হু আর ইউ?”
-” আমি পাতার বোন লতা! আর আপনি কে? এত রাতে পাতার কাছে কল করেছেন? এই আপনি ওর বয়ফ্রেন্ড টয়ফ্রেন্ড নন তো!”
আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করে লতা! মেয়ে রুম্পা ঘুমুচ্ছে না। টেও টেও করছে। তাই লতা জেগে আর এদিকে পাতা হা করে মরার মতো ঘুমিয়ে আছে।
অরুণ বিরক্তিকর শ্বাস ছেড়ে বলে,
-” আমি অরুণ সরকার! ভোরের বাবা! ভোর একটু তার সাথে কথা বলবে! ছেলেটা কাঁদছে ঘুম আসছে না তার!”
লতার চিনতে একটুও দেরি হয় না।সে হেসে বলে,
-” ওই ভাইয়া আপনি! আপনি হোল্ড করুন আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি! কুম্ভকর্ণের মতন ঘুম তার ঢাক ঢোল পিটিয়ে ডাকতে হয়!”
-” ওকে”
অরুণ ফোন হোল্ড করে না। বরং স্পিকারে দেয়।
লতা ফোন পাশে রেখে পাতাকে ঠেলে ডাক দেয় বেশ কয়েকবার।পাতা হু হা করে শুধু ওঠে না। লতা বিরক্ত হয়ে চিমটি কাটে গালে। পাতা ঢুলু ঢুলু চোখে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে,
-” আশ্চর্য! ডাকছো কেন? ঘুমুচ্ছি না! ভালো লাগে না বা*ল!”
বলেই বালিশে মুখ গুঁজে দিল। অরুণের পদচারণা থেমে যায়। কি বলল?
লতা পাতার চুল ধরে টানে।
-” কল করেছে! ধর কথা বল?”
পাতা বিরক্ত হয়ে উঠে বসে।
-” জামাই মরছে আমার? যে এভাবে ডাকো? আরে শালার জামাই ই নাই মরবে কেমনে!”
লতা চোখ রাঙিয়ে ধমকে বলে,
-” এক থাপ্পড় দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিব আজীবনের জন্য! জামাই পাগল কোথাকার! নে ধর কথা বল?”
পাতা ফোন কানে ধরে বলে,
-” আমার আদরের জামাই! বা*ল কল করার আর সময় পাস না?”
অরুণ গলা খাঁকারি দেয়। এই মেয়ে পাবনা ফেরত পাগল!
লতা পাতার গালে আস্তে এক থাপ্পড় মেরে বলে,
-” ঘুমের ঘোরে কি আবোল তাবোল বলছিস! তোর জামাই না! ভোরের বাবা অরুণ সরকার কল দিয়েছে! কথা বল? ”
পাতা ড্যাব ড্যাব করে লতার দিকে চায়। গালে হাত দিয়ে চোখ বড়বড় করে বলে,
-” আমায় মারলে আপু?”
লতার চোখ রাঙানিতে পাতা গাল থেকে হাত সরিয়ে ফোনের দিকে চায়। ঘুমের ঘোর কেটে গেছে।
-” হ্যালো?”
অরুণ এক হাতে জগ ও অপর হাতে ফোন কানে ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
-” ঘোর কেটে গেছে?”
পাতা বোনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-” তা আর বলতে! তবে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি!”
অরুণের কপাল কুঁচকে যায়। পাতা বত্রিশ পাটি বের করে বলে,
-” আসলে আপনি মানুষের বাচ্চা হয়ে ব্যাঙের থুরি বিড়ালের বাচ্চাকে কিভাবে কল করলেন?এই এই আপনিও ব্যাঙের থুরি বিড়ালের বাচ্চা নন তো?নাকি চলতি ফিরতি ষাঁড়?”
অরুণ বিরক্ত হয়ে যায়।এখন মজা করার সময়!
-” মিস পাতাবাহার! ফালতু কথা বলার সময় বা মুড একটাও নেই আমার। আমার একটা ফেবার চাই?”
পাতা বোনের দিকে চায়। কান খাঁড়া করে এদিকেই চেয়ে পারলে ফোনের ভিতরে ঢুকে যায়।
-” দেখুন মি. ভোরের আব্বু!”
-” দেখার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। আপনার আদরের জামাইকে দেখাবেন!”
পাতার চোখ কপালে! এই ম্যানারলেস লোকটা তো ভারি বজ্জাত! শালা বখাটে কোথাকার।
-” আপনার ফেবারের গুষ্টি কিলাই! ফোন রাখুন!”
বলেই কল কাটতে নিলে অরুণের গাম্ভীর্যে ভরাট কণ্ঠস্বর ভেসে আসে,
-” ভোরের মন খারাপ! ঘুমুচ্ছে না ,বলছে ভালো লাগছে না। মায়ের কথা মনে পড়ছে। তার সাথেও কথা বলিয়েছি! তবুও মুখ গোমড়া করে বসে আছে! ওর সাথে একটু কথা বলবেন ব্যস।”
পাতার নরম মনটা আরো নরম হয়ে আসে। ইশ ছোট ছেলেটা মায়ের জন্য কাঁদছে! লতারও মায়া হয় বেশ! মা থাকতেও মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত ছেলেটা! সে পাতার দিকে চায়। সে জানে পাতা ছেলেটার মন ভালো করেই ক্ষ্যান্ত হবে। ভালোবাসার কাঙালিনী অপর কাঙালকে সাহারা দিতে অস্তাদ। পাতা হাত বাড়িয়ে জানালাটা খুলে দেয়,
-” দিন ওকে আমি কথা বলছি। ”
-“হুম! ওয়েট আ মিনিট!”
অরুণের গাম্ভীর্যে ঘেরা ভরাট কণ্ঠস্বরে পাতা ভেংচি কেটে বলে,
-” শুনুন ফ্রিতে একটা এডভাইজ দিই! কারো কাছে ফেবার চাইলে একটু নরম হয়ে বলতে হয়। অনুনয় বিনয় করে! সিধে ভাষায় পাম মেরে! রাজা মহারাজার মতো গম্ভীর মুখে হুকুম দিলে ফেবারের ফ-ও মিলবে না! নেহাতই আমি দয়ালু তাই!”
অরুণের অধরকোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। মেয়েটাকে দেখলে শান্ত শিষ্ঠ মনে হলে কি হবে, বেশ ছটফটে চঞ্চলতায় ঘেরা! তবে নরম মনের!
-” আমি এভাবেই বলব! আগে আপনার মর্জি!”
-” ওত ভাব ভালো না! হুহ!”
লতা পাতার কান টেনে ধরে চোখ রাঙায়। পাতা ছাড়িয়ে বোনের দিকে কটমট করে চায়। লতা ফোন নিয়ে লাউডে দেয়।
অরুণ রুমে এসে দেখে ভোর গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সামনে নুডুলসের বাটি। পাতা বাহার খেয়েদেয়ে চিৎপটাং! অরুণ জগ রেখে বিছানায় বসে ছেলের দিকে ফোন বাড়িয়ে বলে,
-” তোমার মিস পাতাবাহার! কথা বলো?”
ভোর বিশ্বাস করে না।
-“মিস ? উনি তো এখন ঘুমিয়ে হয়তো! আমার সাথে কথা বলবেন কিভাবে?”
অরুণ ফোন বিছানায় রাখে। লাউডে থাকায় ভোর শুনতে পায় তার কথা!
-” ভোর সরকার? তোমার নাকি মন খারাপ? ঘুম আসছে না? ”
ভোর বাবার দিকে চায়! অরুণ নুডুলসের বাটি কোলে নিয়ে কাটা চামচ দিয়ে মুখে তুলতে ব্যস্ত! ভোর মিসকে সালাম দেয়,
-” আসসালামুয়ালাইকুম মিস! কেমন আছেন মিস?”
লতা পাতা দুজনে হেসে দেয়। অরুণও হালকা হেসে ছেলের মুখে নুডুলস দেয়। লতা হাসি থামিয়ে বলে,
-” তোমার মিস ভালো আছেন! এই তুমি নাকি কাঁদছো?”
ভোর বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
-” ইনি কে?”
-‘ এতো জলদি ভুলে গেলে? আমি তোমার মিসের বোন লতা! ইউ ক্যান কল মি আন্টি! ”
-” স্যরি!”
পাতা বিছানায় শুয়ে বলে,
-” ভোর তোমার মায়ের কথা মনে পড়ছে?”
ভোরের মুখটি মলিন হয়ে যায় পুনরায়। ছোট্ট করে জবাবা দেয়,
-” হুম!”
লতা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বলে,
-” ভোর তোমাকে কে খাইয়ে দেয়? গোসল করিয়ে দেয়?”
-” আব্বু।”
-” আর স্কুল ড্রেস পড়িয়ে দেয় কে? তোমার সব আবদার পূরণ করে কে?”
-” আব্বু!”
-” তোমাকে বেশি ভালোবাসে কে? বেশি বেশি আদর করে কে? বকাই বা কে দেয়?”
অরুণ ছেলের দিকে তাকিয়ে।ভোর ভেবে বলে,
-” আব্বুইতো!”
লতা হেসে বলে,
-” তো তোমার আব্বু তোমাকে খাইয়ে দেয়,গোসল করায়, স্কুল ড্রেস পড়িয়ে দেয়, হোমওয়ার্ক করিয়ে দেয়, তোমার সব আবদার পূরণ করে, বকে আবার সবচেয়ে বেশি আদর করে,ভালোও বাসে! তাহলে আব্বুকে বেশি মনে পড়ার কথা! মা কে কেন মনে পড়বে হুম? এতে তোমার আব্বুর তো মন খারাপ হবে তাই না? যে ছেলের সব খেয়াল আমি রাখি অথচ মা কে মনে পড়ে তার!”
ভোর বাবার দিকে চায়। অরুণ তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। সহজ ভাষায় বাচ্চাদের বোঝাতে অস্তাদ লতা! হবে না ওস্তাদ দুই বাচ্চার মা আবার টিচারও।
পাতা বোনকে খোঁচা দিয়ে ধীরে ফিসফিসিয়ে বলে,
-” এই আপু কি বলিস? মায়ের ভালোবাসা আর বাবার ভালোবাসা এক নাকি! আর ওর বাবা ওর সাথেই থাকে সবসময় তাহলে মনে পড়বে কিভাবে?”
লতা বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলে,
-” জানি সেটা! ওর বাবার ভালোবাসাও তো কম না! জান হারায় হয়তো ছেলের উপর! ওর মায়ের সব দায়িত্ব নিজেই পালন করে! তোকে কেন বলছি! চুপ থাক মায়ের বাচ্চা!”
পাতা বালিশে মাথা দিল।
ভোর বাবার গলা জড়িয়ে ধরে চুমু দিয়ে বলে,
-” আব্বু তুমি রাগ করেছো?”
অরুণ নুডুলস সরিয়ে রেখে ভোরকে জড়িয়ে বলে,
-” নাহ আব্বু! আব্বুদের রাগ করতে নেই!”
লতা ফোনের ওপাশ থেকে হেসে বলে,
-” ভোর মিথ্যে কথা! তোমার আব্বু অভিমান করেছে তবে স্বীকার করতে নারাজ! তাকে ফটাফট আদর করো দেখ হাসবে!”
ভোর বাবার গালে মুখে নাকে ঠোঁটে চুমু খায়।
-” থ্যাংকস আন্টি! কিন্তু আব্বু তো হাসছে না! তাহলে কি এখনো রেগে?
পাতা ভেংচি কেটে বলে,
-” ভোর তোমার নাক উঁচু আব্বু ওইটুকুতে হাসবে না! কাতুকুতু দাও হাসলেও হাসতে পারে! গ্যারান্টি নেই! ”
ভোর ছোট ছোট আঙ্গুল নাড়িয়ে বাবার পেটে কাতুকুতু দিতে দিতে বলে,
-” মিস কতবার বলবো আব্বুর নাক উঁচু না! ওটা বললে আমার কষ্ট হয়!”
অরুণের কাতুকুতুতে হাসি না এলেও ভোরের এই কথাতে হাসি আসে। ছেলের হাত জোরা সামনে ধরে অধর ছোঁয়ায় বেশ কয়েকবার।
-” আব্বু রেগে নেই কলিজাটা! না অভিমান করছে!”
ভোর খুশি হয়।
-” লাভ ইউ ইনফিনিটি আব্বু কলিজা।
-” এত লাভ কোথায় রাখবো ইয়া আল্লাহ!”
লতা মুচকি হাসে। বাবা ছেলের কথোপকথন শুনে। কি মিষ্টি বন্ধন। তার মনটাই ভরে গেল! মেয়ের দিকে চাইতেই দেখে তার বুকে ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশ ফিরিয়ে পাতার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর শ্বাস ছাড়ে। ঘুমিয়ে পড়েছেন তিনি। এই মেয়েটা এত জলদি ঘুমোয় কিভাবে?
জুমার দিন। মুসল্লিদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। প্রতি সাপ্তাহের এই দিনে জোহরের নামাজে যে সব ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা একত্রিত হয়ে জামায়াতের সঙ্গে নামাজ পড়ে। নামাজের আগে ইমাম সাহেব খুতবা পাঠ করেন। দিনের পথে চলার আহ্বান জানান। নামাজ শেষে কোলাকুলি করে তবারক ,জিলেপি , মিষ্টি ইত্যাদি বিতরণ করে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। লাবিব ,লুবমান ও আতিকুর ইসলাম মসজিদ থেকে ফিরেন। হাতে তবারকের প্যাকেট। তবারক বলতে মাংসের খিচুড়ি। আবার আতপ চাউলের নাস্তাও দেয় সাথে। লাবিব প্যাকেট উঁচিয়ে বলে,
-” মামু? নানু? তোমাদের এখানে নামাজ পড়লে তো অনেক লাভ হবে! ইশ আমাদের ওখানে তো কিছুই দেয় না। মাঝে মাঝে জিলেপি দেয় একটা দুটা! এখন থেকে প্রতি শুক্রবারে এখানে এসে নামাজ পড়বো!”
লুবমান হেসে ভাগ্নের পিঠ চাপড়ায়। আতিকুর ইসলাম বলে,
-“তুমি এসবের আশায় নামাজ পড়বে? লাভের জন্য? শোন লাবিব! তুমি যদি মন থেকে নামাজ পড় পাঁচ ওয়াক্ত বেঁধেই তাহলে আল্লাহ খুশি হবে! ”
লাবিব হেসে বলে,
-” আল্লাহ খুশি হয়ে তখন বিরিয়ানীর প্যাকেট দিবে?”
আতিকুর ইসলাম মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। লুবমান তার মাথায় চাটি মেরে বলে,
-” লোভী কোথাকার! এই তোর বাপ খাওয়ায় না তোকে বিরিয়ানি? এতো টাকা কামিয়ে কি করে শুনি?”
লাবিব মুখ ফুলিয়ে বলে,
-” সব তোমার বড় বোনের কাছে দেয়!সে ব্যাংকে জমা করে!”
লুবমানের ফেস চুপসে যায়। বিয়ে করলে এই এক জ্বালা সব কিছুর কেফিয়ত হোম মিনিস্টারকে দিতে হয়! সে সিঙ্গেল আছে বেশ আছে! কথা বার্তা চলতেই থাকে। মামা ভাগ্নে একটা মধুর সম্পর্ক। চাচা ভাতিজার সম্পর্ক আজকাল ফর্মালিটিজ হলেও মামা ভাগ্নে সম্পর্ক এখনো দেখা যায়। মামা ভাগ্নের খুনশুটির মাঝে তারা বাড়িতে ফেরে। লতা ও লাবনী আক্তার রান্না করছে। পাতা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। বাড়িতে বড় বোন থাকলে ছোট বোন যে অকর্মার ঢেকি হয় তার জলজ্যান্ত প্রমাণ পাতা। মা বাবার দায়িত্ব হলেও বড় বোন ভাইয়ের ভালোবাসা ষোলো আনাই পেয়েছে সে। লতা ঘরের সব কাজেই হাত বাটাত। পাতাকে ধারের কাছেও আসতে দিত না। বলতো ‘ আগে আমি বিদায় নি তারপর তুই করবি! তার আগে না!’ পাতা খুশি মনে মাথা দোলাতো। আহা বাড়ির কাজ করতে কোন মেয়ের ভালো লাগে। পাতা টিভির দিকে হা করে চেয়ে আছে। লুবমান এসে তার মুখের ভিতর রিমোট দিতে নিলে পাতা সরে যায়। ভাইকে চোখ দিয়েই শাষায়। লাবিব হাসতে হাসতে বলে,
-” মায়ের বোন মুখে মাছি ঢুকবে তো! এই দেখো এটা কি? আমাকে দিয়েছে। তুমি গেলে তোমাকেও দিতো! হুম!”
বলেই প্যাকেট ছিড়ে মুখে পুরে। পাতা হাসে। লুবমান তার হাতের প্যাকেট পাতার দিকে বাড়িয়ে দিবে তার আগেই আতিকুর ইসলাম নিজের টা পাতার হাতে দিয়ে বলে,
-” নামাজ পড়ে নাও! আর এটা দুই বোন মিলে খেও!”
পাতা খিচুড়ি হাতে নিয়ে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুদিন হলো বাবার বিহেভিয়ার পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো না দেখা করে চলে যায়না। কিছুটা হলেও কেয়ার করে। কথা বলে! হঠাৎ এমন পরিবর্তন? সেদিনের কথার জন্য? নাকি বিয়ে দিয়ে বিদায় করবে! সেজন্যই একটু ভালোবাসা! যেটাই হোক পাতা এটাকেই অনেক মনে করে। যেটাই মনে করে কেয়ার করুক পাতার জন্য কেয়ার করাটাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
পাতা প্যাকেটটা হাতে নিয়ে কিচেনে যায়। প্যাকেট ছিরে ছোট বাটিতে নিয়ে লতার সামনে রেখে বলে,
-” আব্বু এনেছে আমার জন্য। আমি একটু উদার তো তাই তোমাকেও দিচ্ছি! ধর? বেশি নেবে না কিন্তু?”
লতা হেসে অল্প তুলে মুখে দেয়। পাতা মাকেও নিতে বলে। লাবনী আক্তার অল্প নিয়ে রুমের দিকে চলে গেল। লতা পাতার দিকে তাকিয়ে বলে,
-” নামাজ পড়বি না শয়তান? যা নামাজ পড়!”
পাতা খিচুড়ি মুখে দিয়ে বলে,
-” পড়ছিতো!”
-” পড়ছিতো পড়ছিতো বলে পড়ে পড়িস? শয়তান মেয়ে! নামাজের সময় শত বাহানা তাই না? এক ওয়াক্ত পড়িস তো বাকি ওয়াক্ত না!”
পাতা মুখ ছোট বানিয়ে বলে,
-” আলসি লাগে! আর শয়তান ঘারে চেপে বসে। ফজরের সময় এমন ঘুম ধরে! উঠতেই পারি না। ফজরের নামাজ না পড়লে বাকি গুলোতেও আলসেমি আসে!”
লতা শক্ত করে বলে,
-” ঝাটার পিটুনি দিলে ঠিকই হবে। দুনিয়ার জীবন ক্ষনিকালয়! আখিরাত অনন্তকাল। হাসরের ময়দানে কি জবাব দিবি? হুম? নামাজ নিয়ে কোনো অজুহাত চলবে না। যাহ?”
পাতা নিজের রুমে যায়। আপু ঠিকই বলেছে তো! দুনিয়া একটি পরিক্ষা ক্ষেত্র মাত্র! যার ফলাফল হাসরে দেয়া হবে। আর ফলাফল প্রকাশের পর পুরষ্কার নাকি তিরষ্কার সেটা আমলনামার উপর নির্ভরশীল! আর নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি স্বরূপ!
অপরাহ্নের খাওয়া দাওয়া শেষ করে লতা পাতা লুবমান বসে আলাপ আলোচনা করছে শপিং করতে যাবে। লাবিব রুম্পা ভাত ঘুম দিয়েছে। সেই সুযোগে তিন ভাইবোন শপিং করবে ও ঘুরবে। বাচ্চাদের নিয়ে কোথাও যাওয়ার মানে আস্ত প্যারা কাঁধে ডিঙিয়ে বেড়ানো! লুবমান হাই তুলে বোনকে বলে,
-” লতাপু শপিং করবি তুই আমরা গিয়ে কি করবো? তোর শপিং ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ঘুরবো? যাইতাম না বইন! তবে শর্ত মানলে যেতেও পারি!”
লতা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
-” আচ্ছা যা তোদেরকে একটা টিশার্ট আর ফ্রক কিনে দেবনি!”
পাতা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
-” আপু তুমি কত কিপটে? সব দুলাভাইয়ের সঙ্গদোষে। শুধু এইটুকুতে আমরা মানছি না! আমাদের আরো দাবি আছে!”
লতা সন্দেহ নজরে ভাই বোনের দিকে চায়। লাবিব বত্রিশ পাটি দেখিয়ে বলে,
পাতা বাহার পর্ব ১১ (২)
-” বেশি কিছু না। শপিং শেষে খাওয়া-দাওয়া করাতে হব..”
-” সেটা তোরা না বললেও হবে! চল রেডি হয়ে নি!”
লাবিব লতার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
-” পুরোটা তো শোন? খাওয়া দাওয়া আনলিমিটেড চলবে। মানে আমরা যা খুশি অর্ডার করতে পারি এবং যত খুশি! ডিল ফাইনাল!”