রেড রোজ পর্ব ২৯

রেড রোজ পর্ব ২৯
ফারহানা নিঝুম

সকাল সকাল পুরো বাড়িতে উৎসা কে নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেল। উৎসা কে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,এই কথাটি ঐশ্বর্যের কানে আসতেই রাগে গজগজ করতে করতে আফসানা পাটোয়ারীর রুমে গেল ঐশ্বর্য।
কাল বিকেলের কথা, উৎসা কিচেনে ছিল। আফসানা পাটোয়ারী ভেতরে গেলেন, এদিকে ঐশ্বর্য কফির জন্য কিচেনে যাচ্ছিল। কিচেনের দরজার কাছে যেতেই আফসানা পাটোয়ারীর কাঠ কাঠ কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
“তুই আর তোর এই প্রেমিকের অস’ভ্যতামো কিন্তু এই বাড়িতে চলবে না উৎসা!”
উৎসা আফসানার কথা শুনে রেগে গেল।

“ভদ্র ভাবে কথা বলো মামী। তুমি আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছে বলতে পারো না।”
“একশো বার পারি,যদি বেশি তিড়িং বিড়িং করিস তাহলে জানে মে’রে ফেলব।কেউ কখনও খুঁজেই পাবে না।”
কথা গুলো মস্তিষ্কে হা’না দেয় ঐশ্বর্যের। আফসানা পাটোয়ারী রুমেই বসে ছিলেন, আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো ঐশ্বর্য।
“মিসেস মহিলা সত্যি করে বলুন উৎসা কোথায়?”
আফসানা পাটোয়ারী কিছুটা চমকে উঠেন।
“উৎসা কোথায় আমি কী করে বলব?”
ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দেখুন আপনার ফা’কিং ড্রামা বন্ধ করুন, বলুন উৎসা কোথায়?”
ঐশ্বর্যের চিৎকার শুনে ভয় পেয়ে গেলেন আফসানা পাটোয়ারী।
“ঐশ্বর্য আমি সত্যি বলছি,উৎসা কোথায় আমি জানি না।”
ঐশ্বর্য বেজায় রেগে গিয়ে পাশের ফ্লাওয়ার বাস তুলে ছুড়ে ফেলে দিলো।
“আই সোয়ের উৎসার কিছু হলে আপনাকে জীবিত কবর দেব।”
আফসানা পাটোয়ারী শুকনো ঢুল গিললো, সত্যি তিনি জানেন না উৎসা কোথায়? হয়তো বলেছিল সে, কিন্তু তা শুধু উৎসা কে ভয় দেখাতে।

ঐশ্বর্য পুরো বাড়ি থেকে শুরু করে আশেপাশে অনেক মানুষ কে উৎসার ছবি দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু কেউই বলতে পারছে না উৎসা কোথায়? ঐশ্বর্য ভয়ে সিঁ’টিয়ে গেল। জিসান ঐশ্বর্যের এমনতর অবস্থা দেখে বলে।
“রিক কাম ডাউন।মিস বাংলাদেশী চলে আসবে।”
ঐশ্বর্য জিসানের কলার চেপে ধরে।
“আর ইউ ম্যাড? উৎসা কে কেউ দেখেনি জিসান!রেড রোজ কোথায় আছে আমি সত্যি জানি না। আচ্ছা ওর কিছু হয়নি?”
জিসান আশ্চর্য হয়ে গেল ঐশ্বর্যের আচরণে।

“ব্রো আমাকে সত্যি করে বল তো ইউ লাভ মিস বাংলাদেশী অ্যাম আই রাইট?”
ঐশ্বর্যের মাথা কাজ করছে না,সে উ’ন্মা’দ হয়ে উঠেছে।
“উৎসা চাই আমার, কোথায় সে?”
রাস্তার মাঝখানে এমন চেঁচামেচি শুনে আশেপাশের মানুষ আড় চোখে তাকাচ্ছে ওদের দিকে। জিসান চিৎকার করে উঠল।
“আমার দিকে তাকা,লুট অ্যাট মি। তুই উৎসা কে ভালোবাসিস!”
ঐশ্বর্য প্রায় পাগল পাগল?কী বলবে না বলবে বুঝতে পারছে না!
“টেল মি রিক?তুই মিস বাংলাদেশী কে ভালোবাসিস?”
ঐশ্বর্য চিৎকার করে বলে।

“ইয়েস,আই লাভ হার। ভালোবাসি ওকে,উৎসা কে ভালোবাসি আমি। অনেক ভালোবাসি,উৎসা কে এনে দে তুই। জিসান আই নিড…
“আমি জানি উৎসা কোথায় আছে!”
ঐশ্বর্য উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“ককোথায় আমার রেড রোজ?টেল মি জিসান?”
“চল আমার সঙ্গে।”
ঐশ্বর্য দ্রুত গাড়িতে বসে গেল। জিসান বাড়ির দিকে যেতে বলে, ঐশ্বর্য বুঝতে পারছে না জিসান আবার কেন বাড়িতে যেতে বলছে?

বাড়িতে পৌঁছানোর পর পরই স্টোর রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো ওরা।
নাসারন্ধ্রে কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ আসতেই নড়েচড়ে উঠে উৎসা।সে বুঝতে পারে ঐশ্বর্য স্টোর রুমের দিকেই আসছে। কিন্তু ভেতরে আসার পর ঠিক কী হবে তার সঙ্গে?তা মোটেও আন্দাজ করতে পারছে না সে।
“তুই স্টোর রুমে নিয়ে এলি কেন?”
জিসান সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বলে।
“ভেতরে গেলেই দেখতে পাবি।”

জিসান নিকির থেকে চাবি এনে দরজা খুলে দেয়, ঐশ্বর্য উঁকি দিতেই হালকা মেরুর রঙের সালোয়ার কামিজ পরিহিত মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐশ্বর্য উৎসা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঐশ্বর্য পাগলের মতো গিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরে।
“জান জান কোথায় ছিলে?ম্যাড হয়ে যাচ্ছিলাম।”
ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার মুখশ্রী হাতের আঁজলায় তুলে এলোপাথাড়ি চুমু খেতে লাগল। উৎসা ঐশ্বর্যের পাগলামি দেখে তম্বা খেয়ে গেল।

“আই লাভ ইউ সুইটহার্ট ,আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ।”
উৎসার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী তাকে ভালোবাসে!
“আমাকে ভালোবাসেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার কপালে গাঢ় চুমু এঁকে দেয়।
“অনেক ভালোবাসি। অনেক অনেক অনেক,আই লাভ ইউ।”
ভালোবাসা কথা গুলো শুনে হৃদয় স্পন্দন বেড়ে গিয়েছে উৎসার। লজ্জায় মিহিয়ে যাচ্ছে সে, সত্যি ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে! ইশ্ কী লজ্জা?
“ইয়ে ইয়ে ফাইনালি।”
হৈ হৈ করতে করতে ভেতরে ঢুকে এলো কেয়া,নিকি, রুদ্র।মিহি বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখছে।
ঐশ্বর্য ফাইনালি ভালোবাসার কথা বলেছে,এটা শুনে সবাই অন্তত খুশি।
নিকি ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে বললো।

“ভাইয়া সত্যি তুমি আজ অবশেষে বললে।”
ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়। এতক্ষণ আবেগের ব’শে বললেও এখন হুঁ’শে ফিরেছে।
“ও এখানে কী করেছে? আমি তো বাড়ির প্রত্যেকটি রুম চেক করেছি। তাহলে ও এখানে কী করছে?”
ঐশ্বর্যের প্রশ্ন শুনে সবাই চুপ করে গেল। সবাই মিলে প্ল্যান করেছিল উৎসা কে লুকিয়ে রাখবে,যাতে ঐশ্বর্য স্বীকার করে সে উৎসা কে ভালোবাসে। জিসান প্ল্যান করে ঐশ্বর্য বাড়ি থেকে বের হতেই উৎসা কে স্টোর রুমে থাকতে বলে।
“কী হলো বলো? উৎসা তুমি বলো এখানে কী করে এলে?আর আমি যখন পাগলের মতো খুঁজছিলাম তখন কী কেউ একবারের জন্যও বলেনি তোমাকে?”

উৎসা অসহায় চোখে তাকায় জিসানের দিকে। জিসান ঐশ্বর্য কে বললো।
“ব্রো চিল,তুই আম খা আঁটি নিয়ে কেন টানাটানি করছিস? হোয়াই?”
ঐশ্বর্য তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
“কেয়া আমি তোর থেকে জানতে চাই,তুই অ্যাটলিস্ট সবটা বল।”
কেয়া ঐশ্বর্যের রাগ দেখে গড়গড় করে সব বলে দিলো। ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকাতেই,উৎসা চুপসে গেল।
“দদেখুন আমি তো শুধু….
“চুপ,যা কথা হবে রুমে।”
ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার হাত চেপে ধরে টানতে টানতে রুমের দিকে এগুতে লাগলো।

“ভাইয়া কী করছো?”
নিকি রুদ্র কে বললো আটকাতে। রুদ্র চেষ্টা করে, কিন্তু ঐশ্বর্য থামলো না।
“কেউ আমাদের রুমে আসবে না।”
উৎসা ভয়ে কেঁদে উঠলো, সেদিন রাতে ঐশ্বর্যের থাপ্পড় খেয়ে ঘন্টার মতো বে’হুঁ’শ হয়ে ছিলো
“আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনার সঙ্গে যাবো না। জিসান ভাইয়া আমাকে বাঁচাও। প্লিজ প্লিজ।”
ঐশ্বর্য অগ্নি চক্ষুদয় জ্ব’ল’জ্ব’ল করছে,উৎসা আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।কেউ আসার পূর্বেই ঐশ্বর্য ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।

রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা।
বিছানার এক পাশে আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা।হাত পা থরথর করে কাঁপছে তার।
“দেখুন আমি কিন্তু কিছুই……
“হুস কোনো কথা না।”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো, ঐশ্বর্যের কথা গুলো ভয়ংকর শুনাচ্ছে উৎসার কাছে। ঐশ্বর্য এক পা এগুতেই উৎসা আ’তং’কিত স্বরে বলল।
“অ্যাম স্যরি।”
ঐশ্বর্য উৎসার খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো।সফটলি উৎসার গালে হাত রাখলো,উৎসা ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার গাল চেপে ধরে, ব্যথায় কঁ’কি’য়ে উঠলো উৎসা।

“আহ্..
“এত টা ষ্টুপিড তুই? ভালোবাসার কথা শুনতে এভাবে গেইম খেললি আমার সঙ্গে?”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত সরানোর চেষ্টা করছে, ঐশ্বর্যের শক্ত হাত নড়াতে পারছে না।
“ব্যথা…
“হোক ব্যথা,যখন আমি কষ্ট পাচ্ছিলাম তখন?হাউ ডেয়ার ইউ?এসব করার সাহস হলো কী করে তোর?”
উৎসা ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়। ঐশ্বর্য ছেড়ে দেয় উৎসা কে। উৎসা ফ্লোরে বসে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।
“যা করেছি বেশ করেছি। একশো বার বেশ করেছি।”
উৎসার বেশ করেছি কথা টা আ’গু’নে ঘি ঢেলে দেওয়ার কাজটা করলো। ঐশ্বর্য এসে উৎসার কাঁধে সজোরে কা’ম’ড় বসিয়ে দেয়।

“আহ্.. রাক্ষুসে মানুষ ছাড়ুন.. ব্যথা পাচ্ছি আমি!”
ঐশ্বর্য ছাড়লো না, দাঁত বসিয়ে দেয় নিজে। চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে হিসহিসিয়ে বলল।
“যা করেছি বেশ করেছি। এরপর আমার সঙ্গে ষ্টুপিড কাজকর্ম করতে আসলে ফলাফল খুব খারাপ হবে।”
“আপনার মত ক্যারেক্টারলেস মানুষ এসব ছাড়া আর কী পারে?”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,উৎসার সামনাসামনি ফ্লোরে বসে।
“আমি না হয় ক্যারেক্টারলেস। আমি মানি এটাই।বাট ইউ…. ক্যারেক্টারলেসের কাছ থেকে আই লাভ ইউ শুনতে ম’রিয়া হয়ে উঠেছে সুইটহার্ট!”
উৎসা ফুঁসে ওঠে।

“কখনও না। ওইটা তো জিসান ভাইয়া বলেছিল বলে। আমি এখুনি গিয়ে সবাই কে বলছি আপনি আমাকে মে’রেছেন!”
উৎসা ত্বরিতে উঠে দাঁড়ালো, ঐশ্বর্য উৎসার ওড়নার শেষ অংশটুকু টান দিয়ে নিজের উপর এনে ফেলল তাকে।
“পা ভে’ঙ্গে দেব। ট্রাস্ট মি সুইটহার্ট যা বললাম এখন তাই করব।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কোলে বসে আছে,রাগে দুঃখে ঠাস করে বলে উঠে।
“ছাড়ুন আমায়, অস’ভ্য রিক চৌধুরী। আমি আপনার সঙ্গে থাকব না।”
ঐশ্বর্য উৎসার ফুলে যাওয়া নাকের ডগায় আলতো করে নিজের নাক ঘষে বলে।
“উই আর ম্যারেড সুইটহার্ট, এখন চাইলেও আমার সঙ্গে থাকতে হবে। না চাইলেও থাকতে হবে।আর হ্যাঁ যখন ভালোবাসি কথাটা বলিয়েই নিয়েছো, তাহলে ইটস্ মাই টার্ন।”
উৎসা লাফ দিয়ে কোল থেকে উঠে বসলো।

“মানি না আপনার জার্মানির বিয়ে। আমি কখনও আপনার মত ক্যারেক্টারলেস কে বিয়েই করিনি।”
উৎসা সাফ সাফ বিয়েটা অস্বীকার করছে। ঐশ্বর্য উঠে উৎসার হাত দুটো পিছন থেকে চেপে ধরলো।
“দরকার হলে আবার বিয়ে করব। তোমার দেশী স্টাইলে, ওকে সুইটহার্ট! কিন্তু কিন্তু কিন্তু।এই বিয়ে শেষে কিন্তু এক মিনিটের জন্যেও ছাড় নেই তোমার রেড রোজ।”
উৎসা চমকে উঠে, অন্তর আ’ত্মা শুকিয়ে আসছে।
“করব না বিয়ে, সত্যি সত্যি বিয়ে করব না।”
ঐশ্বর্য উৎসার চুল থেকে স্মেল টেনে নেয়, অদ্ভুত সুবাস।নে’শা ধরে যাওয়ার মতো।

সন্ধ্যার দিকে ড্রয়িং রুমে বড়সড় সমাবেশ বসেছে। বিশেষ করে শহীদ বেশ আগ্রহ নিয়ে বসে আছে, ঐশ্বর্য নিজ থেকে তাকে বলেছে থাকার কথা।সবার সামনে কিছু জরুরী কথা বলবে।
উৎসা কিছুই বুঝলো না,কই ঐশ্বর্য কে দুপুরে দেখে তো বোঝাই গেল না তার কোনো জরুরি কথা আছে কী না?
অদ্ভুত মানুষ, মূহুর্তে মূহুর্তে রূপ বদলায়।
সবাই বেশ আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছে ঐশ্বর্যের। মিনিট দশেক পরেই সদর দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ঐশ্বর্য।

রেড রোজ পর্ব ২৮

ঐশ্বর্য কে দেখে চোখ আটকে গেল উৎসার,লোকটা সুদর্শন মানতেই হবে। দশ পুরুষের মধ্যে একজন,উৎসার ভাবতেই লজ্জা লাগে এই লোকটা তাকে বিয়ে করেছে!

রেড রোজ পর্ব ৩০