ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩১

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩১
Arishan Nur

রাতে খাওয়ার সময় সবাই আয়নার হাতের রান্নার এতো প্রশংসা করলো। ফাহাদ সাহেব দু’বার পোলাও নিলেন। খুব তৃপ্তি করে খেয়ে বলে, ” আমার মেয়ে তো একদম শেফ হয়ে গেছে। বিশ্বাস হচ্ছে না এতোকিছু আয়ু রান্না করেছে।”
আয়না তখন রান্নাঘরে কাজ করায় ব্যস্ত। ডিম কোরমা গরম করে সার্ভ করে। পিউ এদিকেই আসছিলো। ওকে ডাক দিলো সে৷ পিউ হাসিমুখে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে বলে, ” ভাবী তোমার হাতে জাদু আছে। এত্তো মজা হয়েছে রান্না গুলো।”

আয়না ট্রেতে করে দই সার্ভ করে বলে, ” আমার আব্বুকে একটু দই টা সার্ভ করে দিতে পারবে প্লিজ?”
পিউ বলে, ” কেনো না। দিচ্ছি।”
পিউ কিছু জিজ্ঞেস না করে ডাইনিং টেবিলের সামনে দই নিয়ে যায়। আয়নার বাবার দই খুব পছন্দ এজন্য পিউকে দিয়ে দই পাঠালো৷ সবার রাতের খাওয়া শেষ হয়। রোদেলা অনেক জোর করছিলো কিন্তু আয়না খেল না। ও নিজের রুমে যায়৷

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাত দশটায় ফাহাদ সাহেব যখন ফিরে যাবে বলে উঠবে ওইসময় সমুদ্রের গাড়ি গ্যারেজে ঢুকে। ও বাসায় ফিরলো। আজ বাসায় শ্বশুড়বাড়ির লোকজন দেখে একটু অবাক হলেও আয়নার বাবাকে দেখে খুশি হলো। বাপ-মেয়ের অভিমান ভাঙ্গলেই ভালো। সে সবাইকে সালাম দিয়ে কথা বলে৷ ওকে দেখেই কেমন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত লাগছে। পিউ বার কয়েক ইশারায় তাকে ডাকে। আয়না উপস্থিত ছিলো না আসরে।
সমুদ্র বোনের ডাকে সাড়া দিয়ে পিউয়ের রুমে যেতেই পিউ আর আলিয়া তাকে প্রশ্ন করে, ” ভাইয়া কই ছিলা তুমি?”
সমুদ্র বলে, ” আজকে গাজিপুর গিয়েছিলাম৷ কেন কি হয়েছে?”
পিউ বলে, ” তুমি ভাবীকে নিয়ে একটুও কনসার্ন না, ভাই৷ মানে দিজ ইজ সো ব্যাড৷”
আলিয়া অবশ্য দুলাভাইকে কিছু বলতে পারছিল না। তবে পিউ ইচ্ছামত কথায় শুনাতে লাগে ভাবীর হয়ে৷
সমুদ্র বলে, ” এতো রেগে আছিস কেন আমার উপর? ”

–” তুমি লেটে কেন এসেছো তাও প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর। ভাবী কতো আপসেট জানো তুমি? ”
–” কিসের অনুষ্ঠান, পিউ?”
–” ভাবীর বার্থডে। ডোন্ট সে তোমার মনে ছিলো না?”
সমুদ্র ভিন্ন এক প্রতিক্রিয়া দেখায়। ও মুখ কালো করে বলে, ” তোর ভাবীর আজ জন্মদিন?”
আলিয়া-পিউ দু’জনেই আকাশ থেকে পড়ে৷ ভাইয়া জানেই না কিছু! মাই গড!
পিউ রাগান্বিত গলায় বলে, ” এসব কি বলো ভাইয়া? মানে তুমি ভাবীর বার্থ ডেট জানোই না! লাইক সিরিয়াসলি?”
সমুদ্র মুখ গোমড়া করেই সাফাই গায়,” আসলে বিয়ের সময় বায়োডাটায় ডেট খেয়াল করি নি। আর ফেসবুকও এক্টিভ না আমি। ওর ও দোষ আছে৷ আমাকে বলে নি কোনোদিন।”

আলিয়া বলে, ” আপা, জন্মদিনের কথা কাউকে বলে না৷ আমরাই মনে রাখি সবসময়ই।”
পিউ বলে, ” আমার জামাই যদি এমন করত আমি শিউর ওর মাথা ফাটাতাম। তুমি লাকি যে ভাবী এখনো তোমার মাথা ফাটায় নি। কতো বড় অপদার্থ বউয়ের জন্মদিনের তারিখ জানো না।”
সমুদ্র বলে, ” তাইলে তো বিধবা হবি তুই।”
এরপর ও বিড়বিড় করে বলে, ” ওর নিশ্চয়ই অনেক মন খারাপ হয়েছে৷”

পিউ আরোও কিছু কথা শুনালো। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলে আলিয়া শান্ত করার উদ্দেশ্য বলে, ” ভাইয়া গিল্ট তো৷ এখন ঝগড়া না করে আপার অভিমান ভাঙ্গানোর ট্রাই করি?”
সমুদ্র চিন্তা করে বলে, ” তোমরা আমাকে একটু হেল্প কর, প্লিজ।”
পিউ বলে, ” যারা বউকে প্রায়োরিটি দেয় না, জন্মদিনই মনে রাখে না তাদের আমি হেল্প করি না।”
ও বলে, ” আর কতো খোটা মারবি। চুপ কর, ছোট মরিচ।”
সমুদ্র বলে, ” কি করলে ও খুশি হবে এনি আইডিয়া?”
পিউ বলে, ” ভাবীকে নিয়ে লং ড্রাইভিং এ যাও।”

সমুদ্র বলে, ” আসার পথে খারাপ লাগছিল, এজন্য প্যারাসিটামল আর একটা নিউ ঘুমের মেডিসিন নিসি। একটু পরই মেডিসিনের রিয়্যাকশন শুরু হবে। ড্রাইভিং করলে সিউর এক্সি ডেন্ট হবে। ”
পিউ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে, ” তোমার সব ভালোতে বাম হাত ঢুকানো লাগবে। ধ্যাত। মেডিসিন নিতে কে বলেছে?”
সমুদ্র বলে, ” আমি যাই গিয়ে ওকে উইশ করি। দেরি হয়ে যাচ্ছে৷”

যাওয়ার আগে লেফট ওভার কেক থেকে এক পিস কেক সুন্দর করে সাজিয়ে ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে ভেতরে ঢুকে সমুদ্র।
আয়না তখন আলমারির কাপড় ভাঁজ করছিলো। সমুদ্রকে আসতে দেখে ও কিঞ্চিৎ নড়ে উঠে কাজে ফোকাস করে।
সমুদ্র ওর সামনে দাঁড়িয়ে কেকের প্লেট হাতে ধরে বলে, ” সর‍্যি আই মিন হ্যাপি বার্থডে, বউজান।”
আয়না হাল্কা হাসলো। ও বলে, ” ইটস ওকে আই মিন থ্যাঙ্কিউ।”
সমুদ্র কেক টেবিলে রেখে ওকে নিজের কাছে টেনে ওর বুকে কাত হয়ে মাথা রেখে বললো, ” তুমি আমাকে আগে বলো নি যে?”

–” বার্থডে তেমন স্পেশাল কিছু না।”
সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে কেক হাতে নিয়ে বলে, ” হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার।”
আয়না চামচ দিয়ে কেক তুলে সমুদ্রকে খাওয়াতে চাইলে, ও আগে আয়নাকে খাইয়ে দেয়৷ আয়না খেতে চায় না। জোর করে খাওয়ায় ওকে সমুদ্র।
সে বলে, ” আপনি কেক খান। আমি খেয়েছি আগে।
সমুদ্র দুষ্টু হেসে বলে, ” আমি তো এভাবে কেক খাই না।”
–” তাহলে কিভাবে খাবেন? অন্য চামচ আনবো?”
সমুদ্র ওকে টান মেরে এনে নিজের কোলে বসায়। আয়না এটার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না। চোখ বড় করে ফেলে ও।

এরপর কেকের ক্রিম হাতে নিয়ে আয়নার গালে, ঠোঁটে লাগায়। সে শিউরে ওঠে, ভেতর থেকে কেঁপে উঠে। লজ্জায় চোখ বুজে ফেলে।
সমুদ্র বলে, ” বিয়ের পরও, তিনমাস সংসার করেও কেউ এতো লজ্জা পায়?”
আয়না ওর কলার খামচে ধরে বলে, ” ছাড়ুন।”
সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র ওর ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। কথাবার্তা বলতে দেয় না। একদম থামিয়ে দিলো অন্যভাবে। ক্রিম লেগে থাকা ডান হাত দিয়ে আয়নার টসটসে গাল দু’টোয় স্লাইড করতে লাগে সমুদ্র। দু’মিনিট পর আয়না নিজ থেকে সরে আসে। সরে আসতেই সমুদ্র দ্বিতীয় দফায় আক্রমণ চালায় ওর গালে। ঠোঁটের পাতা দিয়ে গালে লেগে থাকা ক্রিম সাফ করতে থাকে৷ আয়না ওর সম্পূর্ণ ভার সমুদ্রের উপর ছেড়ে দিলেই ওকে নিয়ে বিছানায় শু’য়ে পরে। নিজের প্রশস্ত ছাতিতে জায়গা হলো আয়নার৷ ঠে–সে ধরে একদম ওকে আটকে নেয়। চোখের পাতায় ঠোঁট ছু’য়ে দেয়। হাতে হাত রেখে আয়নাকে বিছানায় শুইয়ে ফেলে, ওর উপর উঠে আবেশে কেবল গলায় মুখ ডুবিয়েছে, এমন সময় দরজায় ঠকঠক আওয়াজ পরে। সমুদ্র একপ্রকার রেগে যায়। বলে উঠে, ” বিয়ের পর কোন আক্কলে ম্যারিড কাপলের রুমে ঢুকে মানুষ? প্রাইভেসি দেয় না কোনো।”

–” আপনার এতো প্রাইভেসির দরকার কীজন্য?”
–” রুমের সামনে ডু নট ডিস্টার্ব লাগায় রাখব।”
আয়নাকে ওকে ধাক্কাধাক্কি করে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গাল পরিষ্কার করতে করতে বলে, ” আমাকে পেয়েছেন কী আপনি? ক্রিম লাগিয়ে একদম যা-তা অবস্থা! সবার সামনে কীভাবে যাই?”
সমুদ্র হাই তুলে নিয়ে বলে, ” তোমাকে কেকের নরম অংশ পাইছি এজন্য ক্রিম লাগিয়ে ডেকোরেশন করছিলাম। তুমি আমার ভ্যানিলা কেক।”

সমুদ্রর বুকে একটা কিল মেরে ও দরজা খুলে দেয়। দরজায় মিসেস রোদেলা দাঁড়িয়ে।
উনি বলে, ” তোরা কি খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে আমাকে জ্বালিয়ে শেষ করতে চাচ্ছিস ?”
আয়না সমুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আসুন, খেয়ে নিন।”
সমুদ্র বলে, ” আমি খেয়ে এসেছি তো। আমি খাবো না ”
আয়না একটু মন খারাপ করে বলে, ” মামনি, তুমি ময়নার মাকে সব খাবার ফ্রিজে তুলে রাখতে বলো।”
মিসেস রোদেলা বলে উঠে, ” তোরা দু’জন না খেলে খাবার ঢুকিয়ে রাখি কীভাবে ? আয়ু দুপুরেও ঠিকঠাক খায় নি। এতো রাত হতে চললো। ও এখনো খায়নি।”
সমুদ্র রাগী চোখে তাকিয়ে বলে, ” কি তুমি খাও নি! কেন খাও নি। এক্ষুনি আসো। আমার সামনে বসে খাবে।”
সে আয়নাকে একপ্রকার টেনে ডাইনিং রুমে নিয়ে যায়। মিসেস রোদেলা দাঁড়িয়ে থেকে ছেলের কাণ্ড দেখে মুচকি হাসে কেবল।

তখনো ফাহাদ সাহেব চলে যায় নি। ইশরাকের সঙ্গে গল্পে মজেছে। আয়নাকে বসিয়ে সমুদ্র এক প্লেট বিরিয়ানি আর রোস্ট তুলে দেয় এরপর বলে, ” খাও।”
–” খেতে মন চাচ্ছে না।”
সমুদ্র কথা বাড়ায় না, নিজেই বিরিয়ানি মাখিয়ে আয়নার মুখে তুলে দেয়। ও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে, ‘ আশেপাশে বড়রা আছে না?এসব কি করছেন?”
–” দুপুর থেকে তুমি খাও নি সেটা ফ্যাক্ট না? ফ্যাক্ট হলো কেউ দেখে ফেলবে। চুপচাপ খাও।”
আয়না ভদ্র বাচ্চার মতো খাবার মুখে তুলে নেয়৷ সমুদ্র বলে, ” পুরা প্লেট শেষ করবে৷”

–” পাগল আপনি! আমি এমনি অল্প খাই।”
সমুদ্র রাগী গলায় বলে, ” সব শেষ করতে হবে৷”
পরের লোকমা খাওয়াতে গেলে আয়না ওর হাতের আঙুলে কামড় বসায়। সমুদ্র ব্যথা চেপে সহ্য করে বলে, ” বাহ! বাহ! সবার সামনে খাইয়ে দিচ্ছি তাতেই কতো বাঁধা আর এখন যে সবার সামনে লাভ বাইট দিলেন তার বেলায় কী?”

আয়না লজ্জায় মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়, সমুদ্র ওর থুতনিতে হাত রেখে এদিকে ঘুরিয়ে খাইয়ে দেয়৷
ফাহাদ সাহেব বিদায় নিলেন সবার সঙ্গে। আলিয়া আয়নাকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলো। যাওয়ার আগ মুহুর্তে ফাহাদ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে, ” অনেক সুখী হও, আমার মা।” এরপরে সমুদ্রের হাতে আয়নার হাত তুলে নিয়ে কণ্ঠে কোমলতা এনে বলে, ” তোমরা দু’জন এখন সবচেয়ে বেশি আপন একে-অপরের৷ সবসময় একসাথে থাকো।”

আয়নার বাড়ির লোকরা যাওয়ার পর সমুদ্র ঘোষণা দিলো ও আয়নার জন্য নিজ হাতে কেক বানাবে৷
রোদেলা বলে, ” তোদের যা ইচ্ছা কর। আমি গেলাম ঘুমাতে৷”
পিউও চলে যায় নিজের রুমে। ডাইনিং রুমে কেবল আয়না আর সমুদ্র রয়ে যায়৷
আয়না প্রশ্ন করে, ” জীবনে কোনোদিন রান্নাঘরে গিয়েছেন?”
–” আজ যাবো।”

সমুদ্র রান্নাঘরে ঢুকে ইউটিউব এ কেক বানানো দেখল। যা যা বলছিল ইউটিউব এ ওইসব সামগ্রী জোগাড় করতেই হিমশিম খায় উনি। ওনার কাণ্ড দেখে আয়নার এতো হাসি পাচ্ছিলো। বেচারা আটা আর ময়দা চেনে না। ভুলে আটা নিতে ধরছিলো। কতো কিউট লাগছিলো ওনাকে দেখতে যখন ময়দা ভেবে আটা নাড়ছিলো!
আয়না আটকিয়ে বলে, ” আরে আটা নিচ্ছেন যে, ময়দা নেন।”
সমুদ্র আবার ময়দা চেনে না। ওকে ময়দার ডিব্বা বের করে দেয়। ময়দা বাটিতে ঢালতে গিয়ে সমুদ্রের চোখে-মুখে ময়দা ছিটকে পরে। পুরা নাজেহাল অবস্থা ওর। টি-শার্ট আর চুল সাদা হয়ে গেছে। আয়না এবারে হাসি আটকাতে পারে না। ওর সব অভিমান কোথায় জানি অজানা ঠিকানায় হারিয়ে যায়। সে ফিক করে হেসে ফেলে।
সমুদ্র নাড়াচাড়া দিয়ে গা থেকে ময়দা সরায়৷

আয়নার হাসির শব্দে থমকে দাঁড়ায় ও। এরপর বলে, ” হাসছো কেন?”
–” আপনাকে একদম সাদা বাদড়ের মতো লাগছে৷ হুয়াইট মানকি।”
সমুদ্র ময়দা চুল থেকে ঝারতে ঝারতে বলে, ” তোমাকে তাহলে একটু সাদা বান্দরনী বানাই।”
কথাটার মানে বোধগম্য হতেই আয়না রান্নাঘর ছেড়ে পালায়। সমুদ্র ওর পিছে ময়দা নিয়ে ছু’টে আর বলে, ” থামো, বলছি।”

–” পাগল আপনি! আপনি বরং থামুন। প্লিজ।”
সমুদ্র ওকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে ধরে ফেলে একদম বড় সোফায় বসে, এরপর অর্ধ শোয়া করে নিজে ওর দিকে ঝুঁকে এসে বলে, ” সুন্দরী, আপনার পালানোর সব পথ বন্ধ।”
এরপর হাতে মুঠো করে রাখা ময়দা ওর চুলে লাগিয়ে দেয়,আয়না চোখ বন্ধ করে খিটমিট করে বলে, ” আমার শ্যাম্পু করা চুলগুলো নষ্ট করলেন।”
বাকি ময়দা হাতে নিয়ে সরাসরি ওর শাড়ি ভেদ করে পে৷ টে আস্তে করে ছু’য়ে দেয়। এরপর চোখের পাতায় ঠোঁট ছু’য়ে দিয়ে বলে, ” আমার কেক খাওয়ার সব সাধ ভরে গেলো। এক জীবন আর কেক না খেলেও চলবে৷”
–” সমুদ্র, এটা আপনার বেডরুম না। সবসময় এতো খামখেয়ালি কেনো আপনার?”
সমুদ্র খুব সংক্ষেপে বলে, ” কে বা আসবে এখন?”

আয়নার গলার ঠিক বাম পাশে ছোট্ট একটা তিল আছে। সেখানটায় হাত বুলায় সমুদ্র। এরপর নিজের গালে লেগে থাকা ময়দা আয়নার গালে ঘঁষে। সময় কোনদিক দিয়ে যাচ্ছে কেউ টের পায় না।কেবল দু’জনের হার্টবিটের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঠিক গলা বরাবর ওর প্রিয় তিলটায় চুমু খেতে ধরলে ড্রয়িং-ডাইনিং রুমের মাঝ বরাবর শব্দ ভেসে আসে।
–” ভাইয়া! আমি কিছু দেখিনি।”

সমুদ্র তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে লজ্জায় বোনের দিকে তাকাতে পারে না৷
ও মিনমিনে গলায় বলে, ” কি বা দেখবি? মানে কিছু করলে তো দেখবি!”
পিউ বলে, ” সেটাই ভাইয়া। তুমি যে ভাবীকে কি৷ স দিচ্ছিলে ওটা একদম আমি দেখি নি।”
সমুদ্র রেগেমেগে বোনকে মারার জন্য তেড়ে এসে বলে, ” যা ভাগ।”
কিন্তু সরে গিয়ে পিউ বলে, ” কালকে ফ্রেন্ডদের সাথে হ্যাংআউটে যাবো। দুই হাজার টাকা দেও।”
আয়না দুই ভাই-বোন এর কাণ্ডে তাজ্জব বনে যায়। সে চোখ গরম করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। সমুদ্র টাকা বের করে পিউকে দিয়ে বলে, ” ভাগ নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।”
টাকা নিয়ে পিউ চলে যায়৷

এরপর আয়না ওকে একদম কাছে ঘেষতে দিলো না। কেক বানানোর সময় কোনোরকম দুষ্টুমি করেনি সমুদ্র। ওভেন থেকে বের করে ও কেকটা আয়নার সামনে ধরে, ” হ্যাপি বার্থডে, ওয়াইফ।”
তখন এগারোটা ছাপ্পান্ন বাজছিলো ঘড়িতে। কেক কেটে আয়না মুখে নিলে, ওটা এতো পরিমাণ শক্ত যে চাবানো যাচ্ছিলো না।
সমুদ্র আশায় বুক বেঁধে জিজ্ঞেস করলো, ” জীবনে প্রথম কেক বানালাম। কেমন হয়েছে?”
–” মজা।”
আয়নার হাতে থাকা বাকি অংশে সমুদ্র কামড় দেয়, সে’সময় সে ইচ্ছা করেই আয়নার আঙুলে আস্তে কামড় বসায়। কেক মুখে নিয়েই ও ফেলে দিয়ে বলে, ” ইয়াক থু! এতো বাজে। কিভাবে এই শক্ত, পোড়া, তিতা কেক খেয়ে মজা বলো? এখুনি ডাস্টবিনে ফেলে দিবো।”

আয়না হেসে বলে, ” ইটের মতো শক্ত কিন্তু তাও আমার জন্য অনেক বেশি স্পেশাল।”
সমুদ্র হেসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে পা বাড়ায়। এরপর দু’জনে ফ্রেশ হয়ে ময়দা সরায় গা থেকে।
সমুদ্র দুঃখী মুখ করে বলে, ” কিছু ই করলাম না। তার আগেই ফ্রেশ হতে হচ্ছে। কয়লায় বাঁধা কপাল আমার।”
আয়না তখন চুল মুছছিলো। সমুদ্র ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে টাওয়াল টেনে নিয়ে ফেলে দিলো, এরপর গোসল করা ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে কিছুক্ষণ ওর চুলের ঘ্রাণ নিয়ে, পেছনে থেকে জড়িয়ে নিয়ে সমুদ্র বলে, ” বলো, আয়না, কী উপহার নিবে?”

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩০

আয়না দু’দণ্ড ভেবে, নিজেকে প্রস্তুত করে, লজ্জায় নুইয়ে পড়লেও, ঘুরে দাঁড়িয়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে, ” আই ওয়ান্ট টু বিকাম দ্যা মাদার অফ ইউর কিডস।”
সমুদ্র চকিত উঠে বলে,” একবছরও হলোও না এর আগেই!”
–” কেন, আপনার বেবি পছন্দ না?”
–” না, মানে এখন আমি প্রস্তুত নই। ক্যারিয়ার গুছানো বাকি। এরমধ্যে দু’দিক ম্যানেজ করা সম্ভব না। তাছাড়া মাত্র বিয়ে হলো। এখনি এসব নিয়ে ভাবতে চাইছি না। মোরওভার, আই ডোন্ট লাইক কিন্ডস ইটস ট্রু। বাচ্চারা প্রচুর এনোয়িং হয়। ”

ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩২