প্রণয়ের সুর পর্ব ৩৬
মহুয়া আমরিন বিন্দু
সাব্বির কে দেখে যেনো দেহে প্রাণ এলো জেরিনের, সাব্বিরের সাথে আর একটু মিশে গিয়ে কোমরের দিকের শার্ট চেপে ধরলো জেরিন!ভয়ে থরথর করে কাঁপছে মেয়েটা।সাব্বির ভরসার হাতে জেরিনের বাহু জড়িয়ে ধরে কানের কাছে অতি ধীর কন্ঠে বলে–,,ভয় পাচ্ছিস কেনো?আমি আছি তো!এর সামনে নিজেকে কঠোর দেখাতে হবে জেরিন,দেখিয়ে দে তোকে কেউ ভাঙ্গতে পারেনি এতো সহজে,তুই মুভ অন করেছিস ভালো আছিস!
জেরিন অপলক তাকিয়ে উজ্জ্বল শ্যামলা মুখশ্রীর পানে কতোদিন পর দেখছে এই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে!
সাব্বির কে দেখে নিরব হেসে বলে উঠলো–,,বাহ্!বেস্টফ্রেন্ডের বডিগার্ডের কাজও করছো দেখছি।নাকি ভাই হিসেবে নিজের চাচাতো বোন কে পাহারা দিচ্ছো?
সাব্বির হাসলো ঠোঁট এলিয়ে –,,যা মনে করেন তাই!
তা আপনি এখানে যে?নিজের গালফ্রেন্ডের উপর থেকে রুচি উঠে গেলো বুঝি?অবশ্য যারা এতো নিখুঁত প্রেম সংঘটিত অভিনয় করতে পারে,তারা কাউকে আদো সত্যিকারের ভালো বাসে কিনা সন্দেহ! নাকি অন্য কোথাও মুখ দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তাই মুখে থু থু ছিটিয়ে চলে গেছে,যদি মেয়েটি চলে যায় তো ভাববো সত্যি তার কপাল ভালো না হয় বুদ্ধিমতি!একটা লম্প’ট ধান্ধা”বাজ মানুষের সাথে থাকার চাইতে ভালো সারা জীবন একা থাকা!
একটা কথা আছে না__”দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য”
মুখোশধারী একটা শয়”তান আপনি,শিক্ষক হয়ে মানুষ গড়ার বদলে আপনি কিনা মিথ্যা বলে প্রতার’ণা করে আমার পরিবারের সম্মানের দিক হাত বারিয়েছেন!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একটা মেয়ের সাথে এতো বড় একটা জ”ঘন্য খেলা খেলতে একবারও বিবেকে বাঁধলো না আপনার!
নিরব রাগে ফোঁস করে উঠে বললো–,,এই তোমার সাহস তো কম না,আমার ভালোবাসা নিয়ে কথা তোলো!
জরিনের দিক হাত বাড়িয়ে যেই বলতে যাবে –,,আসলে জেরিন,,,,,,,
সাব্বির ব”জ্র কন্ঠে বলে উঠলো–,,আমার ওয়াইফের থেকে দূরে থাকুন প্রফেসার!নয়তো যে হাত এদিকে বাড়িয়েছেন সে হাত আর আস্ত থাকবে না।ভেঙ্গে গলায় ঝুলিয়ে দিবো।
সাব্বিরের কথায় বিষ্মম ভরা নয়নে তাকালো নিরব।ভ্রুকুটি করে বললো–,,ওয়াইফ মানে!
সাব্বির চমৎকার হাসলো।তার মুগ্ধতায় ভরপুর হাসি যেনো নিরবের বুকে আগু’ন ধরাতে সময় নিলো না।
সাব্বির বলে উঠলো–,,উফ!প্রফেসর আপনাকে আমার কেনো যেনো থ্যাংস দিতে মনে চাচ্ছে।আপনি আপনার প্রতি”দ্বন্দি কে নিজের ভুলের মাধ্যমেই জিতিয়ে দিয়েছেন,আশা করি ওইদিনের কথা ভুলে যাননি!
নিরবের কপালে ভাজ পড়লো রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো–,,এই বোকা জেরিনের মতো মেয়ে আসলে তোকেই সুট করে আমার সাথে এর যায় না!
জেরিন ক্ষে’পা বাঘি’নীর মতো গিয়ে ঠাস করে পর পর দুইটা চ’ড় মার’লো নিরব কে!জেরিনের রাগে নাক মুখ লাল হয়ে এসেছে।আঙুল উঁচিয়ে নিরব কে শাসানোর ভঙ্গিতে বলে–,,তুই কি করে ভাবলি তোকে আমার সাথে মানাবে?একটা থার্ড ক্লাস নিচু মনমানসিকতার মানুষ, নর্দ’মার কীট ও তোর থেকে ভালো,আমার তো ভাবতেও ঘৃ’ণা হচ্ছে তোর মতো মানুষের নাম আমার নামের সাথে কখনো জড়িয়ে ছিলো।সাব্বিরের একটা নখের যোগ্য ও না তুই,তার সাথে নিজের তুলনা দিস কোন মুখে?আমার মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে তোকে গলা টি’পে খু’ন করি!আমাকে বিনা কারনে এতো এতো ক’টূ কথা শুনতে হয়েছে তোর কারনে,একটা মেয়ের সম্মান”হানি করেছিস তুই,আমার প্রতিটা দীর্ঘ শ্বাস তোর পরবর্তী জীবনের সব সুখ শান্তি কেঁ”ড়ে নিবে।আমি চাইলেই শা”স্তি দিতে পারতাম কিন্তু আমি পঁচা ডোবাতে আরেকবার হাত ডুবাতে চাই নি তাই চুপ ছিলাম।মেয়েদের দুর্বল মনে করাটা বোকামি,তারা সময়ে প্রয়োজনে নিজের জন্য লড়”তেও পারে!তোর পা”পের ফল তুই বেঁচে থাকতে না পেলেও মরা’র পর হলেও পাবি তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই আমার।আমি আমার জীবন নিয়ে অনেক ভালো আছি সুখে আছি শান্তিতে আছি।এর পর কোনো দিন যদি তুই আমার সামনে আসিস তো বেশি ভালো হবে না!
সাব্বির বলে উঠলো–,,তার মানে প্রফেসর আপনি নিজেও স্বীকার করেন জেরিন কে আমার সাথেই বেশি মানায়, মানে আপনি নিজেই বললেন আপনার থেকে বেশি যোগ্য আমি।হায়,,!শ’ত্রুর মুখে নিজের প্রশংসা মোটেও মন্দ লাগেনি শুনতে।
নিরব যেনো রাগে ফেটে পড়ছে, এই মেয়েটা তাকে এভাবে অপমান করলো?সাব্বিরের এরকম ঠান্ডা মেজাজে কথা বলা সুক্ষ্ম ভাবে অপমান টা যেনো আরো বেশি জ্বা’লাচ্ছে নিরব কে।
নিরব হঠাৎ বলে উঠলো–,,ওহ তাই বুঝি জেরিন?তুমি যদি এতোই নিজেকে নিয়ে ভালো থাকো তো এখনো আমার দেওয়া চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছো কেনো?
জেরিন কিছুই বুঝলো না,হতবাক চোখে চেয়ে আছে,তা দেখে যেনো নিরব মজা পেলো সে জেরিনের হাতের দিক ইশারা করে বললো–,,আমার দেওয়া রিং টা এখনো পড়ে আছো যে?এখনো ভালোবাসো আমায়!
নিরবের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে রাগে ঘৃ”ণায় গা রি রি করে উঠলো জেরিনের, এই ছেলেটিকে একদমই চোখের সামনে আর সহ্য হচ্ছে না তার, তবে এই বোকামি টা কি করে করলো জেরিন?আংটি টা খুলতে ভুলে গেছে এতোদিনে একবারও নজরে পড়েনি তার নিজেকে কষি”য়ে এক চ’ড় মার’তে মন চাইলো এখন।
জেরিন করুন চোখে তাকালো সাব্বিরের দিকে,কিন্তু ছেলেটার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই।
নিরব আবার বললো–,,কি মিস্টার সাব্বির তোমার একমাত্র বউ তো দেখছি তোমার শত্রু”র দেওয়া রিং হাতে নিয়ে ঘুরছে এতে তোমার লাগছে না বুঝি!
সাব্বির পকেটে এক হাত রেখে অপর হাতে জেরিনের হাত টেনে ধরলো আংটি টার দিক তাকিয়ে বলে উঠলো–,,সাব্বির জায়ান চৌধুরীর বউ এর হাতে শুধু তার স্বামীর দেওয়া অলংকারই শোভা পায়।যা এখনো পাচ্ছে,কোনো ফালতু মানুষের চিহ্ন অন্তত আমার জেরিন বয়ে বেড়ায় না।আপনি তো চশমা পড়েও চোখে কম দেখেন প্রফেসর!
সাব্বির জেরিনের হাত থেকে আংটি টা খুলে নিরবের হাতে দিয়ে বললো–,,দেখুন প্রফেসর ভালো করে দেখুন এটা শুধু একটা সামান্য আংটি না!
এটার মাধ্যমে আমি নিজেকে সপে দিয়েছি জেরিনের কাছে,নিজের নামে আবদ্ধ করে নিয়েছি জেরিনের অনামিকা আঙুলের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা অসীম অধিকারবোধ কে!
সাব্বির হেসে বললো–,,কি হলো প্রফেসর মুখটা চুপসে গেলো কেনো?দেখুন ভালো করে ওই আংটির মাঝে আপনার কোনো চিহ্ন ও নেই যা আছে পুরোটাই আমার নাম আমার আধিপত্য!
হকচকিয়ে তাকালো জেরিন,এই রিংটা সাব্বির কবে দিলো?সে তো কি়ছু জানেই না।
সাব্বির আংটি টা নিয়ে জেরিনের হাত টা নিজের হাতের ভাঁজে নিলো, আলতো হাতে আংটিটা পড়িয়ে দিলো আবার জেরিনের অনামিকায়!
পর পর শুধু অবাকই হচ্ছে জেরিন,কি থেকে কি হচ্ছে!
নিরবের মুখ অপমানে থমথমে হলো,সে প্রস্থান করতে পা বাড়ালো সেখান থেকে।
সাব্বির পেছন থেকে বললো–,,আবার যদি জেরিনের আশেপাশে দেখি তো বাঁচা মুসকিল করে দিবো তোর কানা কোনখানের!
জেরিনের এবার হাসি পেয়ে গেলো।মৃদু হেসেও ফেললো সাব্বির তা দেখেও কিছু বললো না,হাতের ইশারায় একটা রিকশা থামিয়ে রাশভারি কন্ঠে বললো–,,উঠ!
জেরিন উঠে বসতেই সাব্বির চলে গেলো,জেরিন বলে উঠলো–,,তুই যাবি না সাব্বির?
সাব্বির পেছন ফিরেও তাকালো না,রিকশা ছেড়ে দিলো চালক,জেরিন তাকিয়ে পিছনের রাস্তায় ছেলেটি এভাবে চলে গেলো?এতো কিসের রাগ সাব্বিরের জেরিনের উপর!
বাড়ির কাছটায় আসতেই জেরিন মোবাইল বের করে নেহা কে কল দিলো নেহা ফোন রিসিভ করতেই বলে উঠলো–,,নেহা সাব্বির কি বাড়ি ফিরেছে?
নেহা তখনই দেখলো সদর দরজা দিয়ে সাব্বির আসছে,সাব্বির ইশারায় নেহা কে বলতে বললো যাতে জেরিন কে বলে–,,সে আসেনি!
নেহা তাই করলো।যা শুনে জেরিন ওহ বলে ফোন কেটে দিলো,নিজ মনেই ভাবতে থাকলো তবে কি একটু আগে সাব্বিরের সাথে দেখা হওয়াটা সবটাই ভুল ভ্রম!কিন্তু কি করে হতে পারে একটা জল’জ্যান্ত মানুষ কি করে মিথ্যা হতে পারে!
ততক্ষণে বাড়ির গেইটে রিকশা থামলো ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে ঢুকলো জেরিন।দেখলো নেহা,বৃষ্টি, রৌফ,সাব্বির বসে কিছু একটা নিয়ো হাসাহাসি করছে!
জেরিন যেনো ধপ করে জ্ব’লে উঠলো, এতোদিন দূরে থেকে তাকে কষ্ট দিয়ে ছেলেটার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই!দিব্যি হাসছে, হাসিটা যেনো সহ্য হলো না ওর,রাগে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে দ্রুত পা ফেলে চলে গেলো রুমে।
এর মধ্যে সাব্বির পড়লো সেতারা বেগমের খপ্প”রে।একে একে বলছেন তিনি রাগ জি”দ হইলেও দূরে থাকা ভালা কথা না দাদু ভাই,কাছে থাইকা বুঝতে হয়, অভিমান ভাঙ্গাইতে হয়।রাইতে বুকে জড়াইয়া ধইরা ঘুমাইতে হয় এতে বন্ধন মজবুত হয় সম্পর্কে কোনো দিন ফাটল ধরে না!
সাব্বির চোখ বড় বড় করে তাকালো,জেরিন কে কিনা সে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে?এর থেকে ভয়া”বহ দৃশ্য আর কি হতে পারে, পরে দেখা যাবে ওরা নিজেরাই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে দু পাশে!
সাব্বির সব কথা শুনে শুধু মাথা দুলাচ্ছে,সেতারা বলে উঠলো–,,যা দেখা করে আয়,তোর উপর মেলা চেত”ছে।কি করে সামলাবি তুই জানস!
সাব্বির নেহা বৃষ্টির দিক তাকালো এই দুই বোন তাকে ফাঁসি”য়ে কেমন দাঁত কেলিয়ে হাসছে!জেরিন সত্যি সত্যি এবার না তার কি”মা বানিয়ে ফেলে।
সাব্বির রুমে গেলো জেরিন নেই,জেরিনের রুমের ভিতরেও খুঁজে এলো মেয়েটা নেই।সাব্বির হতাশ হয়ে নিজের ঘরে গেলো ভাবলো হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়বে।ঠিক তখনই বারান্দা থেকে জেরিন বেরিয়ে আসলো।দু হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে সে।
সাব্বির বুঝলো জেরিন তাকে এবার আচ্ছা মতো দিবে!
সাব্বির আমতা আমতা করে বললো–,,দেখ জেরিন আমার আসলে,,,,
কথা বলা শেষ করার আগেই আকষ্মিক কান্ডে থতমত খেয়ে গেলো সাব্বির জেরিন এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে তাকে!
সাব্বির যে নিজেকে ছাড়াবে সেটাও যেনো ভাবতে ভুলে গেছে হৃদ যন্ত্র টা কোলাহল করে কিছু একটার জানান দিচ্ছে যা ঠাহর করতে অপরাগ সাব্বির।
জেরিনের কান্নার শব্দে বিচলিত হলো সাব্বির,জেরিন কে ছাড়িয়ে মুখটা নিজের দুহাতের মধ্যে নিলো,চোখের পানি মুছে দিয়ে আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,,কাঁদছিস কেনো বোকা?
জেরিন ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আবার অগোছালো ভাবে সাব্বির কে জড়িয়ে ধরলো। পিঠের দিকের শার্ট কিছুটা আঁকড়ে ধরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো–,,আমাকে ছেড়ে কেনো চলে গিয়েছিলি তুই?আর ছেড়ে যাস না প্লিজ, আমি স্যরি আর কখনো ওরকম ভাবে কথা বলবো না।আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না,অনেক কষ্ট হয় আমার!জানি তুই আমাকে ছাড়া থাকতে পারবি,কিন্তু আমি পারবো না।
প্রণয়ের সুর পর্ব ৩৫
সাব্বির হাসছে,তার পর দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে বললো–,,তুই যেহেতু ভাবিস আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো তাহলে তো আমারও উচিত এটাই মনে করা।যেহেতু তোকে ছাড়া থাকতে পারবো তাহলে এখানে থাকবোই বা কেনো?
জেরিনের ঝটপট জবাব –,,আমি বলেছি তাই থাকবি তুই!