তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৭
তানিশা সুলতানা

বাচ্চা কোলে রাখা যতটা ভালো লাগার ঠিক ততোটাই কষ্ট জনক। দীর্ঘ ক্ষণ একই ভঙ্গিমায় বসে থাকলে হাত পা সহ কোমর ঝিম ঝিম করে। আদ্রিতারও তেমন হয়েছে। এই মুহুর্তে মনে হয়েছে কোমর খানা ভেঙেই গিয়েছে। বাবুটা কোলের মধ্যে আরামসে ঘুমচ্ছে। পিঠ চুলকানোর অভাবে সয়ে গিয়েছে।
সেই যে অহনা এবং আতিয়া বেগম ঢুকেছে কক্ষে আর বের হওয়ার নামই নিচ্ছে না। বিরক্ত আদ্রিতা বির বির করে বলে

“তোকে আমি কখনোই কোলে নিবো না রে বাচ্চা। তোর মা নানু আর মামা বড্ড পাষাণ। তারা কি আমাকে রোবট ভাবে? আশ্চর্য।
তখনই সেখানে উপস্থিত হয় সিয়াম৷ সে মূলত ডিনার করতে নেমেছে। এভাবে আদ্রিতাকে একা বসে থাকতে দেখে যেনো হাতে চাঁদ পেয়ে গেলো। টিশার্ট খানা টেনে টুনে ঠিক করে এগিয়ে যায় আদ্রিতার পাশে।
” আদ্রিতা কি করছো?
এতোক্ষণ হতাশায় ডুবে থাকা আদ্রিতার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। সে একটু সরে সিয়ামকে বসার জায়গা করে দেয় এবং বলে
“সিয়াম ভাই বসুন আমার পাশে।
সিয়াম হাসি মুখে বসে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ওকে একটু কোলে নিন ভাইয়া। আমার হাত পা কোমর ভেঙে যাচ্ছে।
সরল সিয়াম আদ্রিতার থেকে নিয়ে নেয় বাবুকে। প্রথমবার নয়। এর আগেও হাসপাতালে গিয়ে কোলে নিয়েছে কয়েকবার তাই খুব একটা অসুবিধা হলো না।
আদ্রিতা দাঁড়িয়ে পড়ে। হাত পা নেরে একটু ব্যায়াম করে নেয় তারপর বলে
“ওরেহহ সিয়াম ভাই
আমি কোন কসাই এর আস্তানায় এসে পড়লাম। এখানকার কারোরই মানবিকতা নেই। মানবিক শব্দটার মানেও বোধহয় তারা জানে না।
সিয়াম নিজেও চেষ্টা করে মানবিকতা মানে কি? শব্দটা কেমন নতুন নতুন লাগছে তার কাছে। চতুর আদ্রিতা কপাল কুঁচকে কোমরে হাত দিয়ে সিয়াম এর সামনে দাঁড়ায়। এবং বলে

” বাই দ্যা ওয়ে আপনি জানেন মানবিকতার মানে?
শুকনো ঢোক গিলে সিয়াম। অনবরত ঘাড় নেরে জানায় সে জানে না। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিতা। সিয়াম এর পাশে বসে সিরিয়াস ভঙ্গিমায় বলে
“আপনি খুব ভালো সিয়াম ভাই।
লাজুক হাসে সিয়াম। লজ্জায় তার মুখ খানা লাল হতে থাকে। আদ্রিতা তাকে ভালো বললো? মানে গলে যাচ্ছে? পটে যাচ্ছে? সিয়ামকে পছন্দ করছে? খুব তাড়াতাড়ি তাদের প্রেম হবে? তারপর বিয়ে?
উফফ আর ভাবতে পারছে না সিয়াম। লজ্জায় মাটিতে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।

” এভাবে বলিস না আদ্রিতা আমার লজ্জা লাগে।
“লজ্জা তো লাগবেই। আপনি বড্ড সরল সোজা এবং বলদ।
মানবিকতার মানে জানেন না। ছিহহহ ছিহহ
লজ্জা পাওয়াই উচিত আপনার। সুইসাইডও করতে পারেন।
সিয়াম এর হাসি মাখা মুখ খানা মুহুর্তেই কালো হয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো নয়নে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার মুখ পানে।
আদ্রিতা গালে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বলে

” মানবিকতা জানে হচ্ছে আমার আসিফ আদনান। কি যে কিউট উনি?
জানেন কয়েকদিন আগে আমার হাত খানা ধরে নাম্বার লিখে দিয়েছিলো।
কতোটা মানবিক একবার চিন্তা করুন।
সিয়াম চিন্তা করে। হাত ধরে নাম্বার লিখে দিলেই মানবিক হওয়া যায়? তাহলে তো আজকে থেকে সিয়াম মানবিক হওয়ার যুদ্ধে লেগে পড়বে। প্রতিটা মেয়ের হাতে তার ফোন নাম্বার লিখে দিয়ে আসবে। তারা নিশ্চয় বীর পুরুষ ভাববে সিয়ামকে।
“আসিফ আদনান কে আদ্রিতা?

” কে আবার আমার ফিউচার বাচ্চার বাবা। বর্তমান বয়ফ্রেন্ড। আমার ক্রাশ, আমার হিরো, আমার সুপারস্টার, আমার কলিজার টুকরো, আমার ভালোবাসা, আমার ফুসফুস, আমার কিডনি, আমার নাড়িভুড়ি, আমার হৃদয়, আমার
“বুঝেছি বুঝেছি বুঝেছি
আদ্রিতা মুচকি হেসে থেমে যায়। গাল ফুলায় সিয়াম। মানে এই টুকুনি মেয়ে এখনো নাক টিপলে দুধ পড়বে তার না কি বয়ফ্রেন্ড আছে। আবার বিয়েও হয়েছে।
কি একটা অবস্থা। এইসব মেয়েদের জন্যই সমাজটা উচ্ছনে চলে যাচ্ছে। দামড়া দামড়া ছেলে গুলো বিয়ের জন্য মেয়ে খুঁজে পাচ্ছে না। এদের একটা বিহিত করা দরকার।
সিয়াম এর ভাবনার মাঝেই বাবুটা উচ্চস্বরে কেঁদে ওঠে। আদ্রিতা কোলে তুলে নেয় এবং অহনার কক্ষের দিকে পা বাড়ায়। অসহায় সিয়াম মুখ গোমড়া করে বসে থাকে।

ক্লাবে ড্রিংক এর গ্লাস হাতে বসে আছে আবরার। একটা চুমুকও দেয় নি এখন পর্যন্ত। সিয়াম অনবরত চুমুক দিয়ে যাচ্ছে। ইভান মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছে ড্যাপড্যাপ করে। আবরারের ভয়ে এখানে থেকে সরতে পারছে না।
আমান গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। আর আহাদ একটু পর পর হাই তুলছে। মারাক্তক ঘুম পাচ্ছে তার। এখানে আসার মোটেও ইচ্ছে ছিলো না। শুধুমাত্র ওরা এসেছে বলেই সে এসেছে।
দীর্ঘক্ষণ নিরবতা পালন করে সিয়াম বলে ওঠে
” ভাই জীবনটা বাপ্পারাজের মতো হয়ে গিয়েছে। যার দিকে তাকাই তারই বিয়ে হয়ে যায়।
ইভান বলে

“লাস্ট বার আদ্রিতার দিকে তাকিয়েছিলি। আর সে আগে থেকেই ম্যারিড ছিলো। তো?
” শুধু ম্যারিড?
বয়ফ্রেন্ড আছে তার। আসিফ আদনান। সে না কি আবার সুপার স্টার।
আহাদের ঘুম ছুটে যায়। ইভান মনোযোগ দেয় সিয়ামের পানে। আর আমান চেয়ার থেকে পড়েই যাচ্ছিলো প্রায়।

“কি বলছিস মামা?
সিয়াম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এবং তখনকার ঘটনা ওদের বলে।
এবার আবরাম ড্রিংক এর গ্লাসে চুমুক। দেয়। এক চুমুকে গোটা গ্লাস ফিনিশিং করে।
ইভান গালে হাত দিয়ে বলে
” ঘটনা তো বুঝলাম না। আবরার বললো সে তার বউ। সে বলছে তার বয়ফ্রেন্ড আছে।
দুই দুই চার না হয়ে আট কেনো হয়ে যাচ্ছে? বুঝতে পারছি না কিছু।
সিয়াম বলে

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৬

“ঘটনা হচ্ছে আবরার আর আদ্রিতার বিয়েটা একচুয়েলি হয় নি। ওরা
হাতে থাকা গ্লাসটা শক্ত করে মুঠো করে ধরে আবরার। মুহুর্তেই কাঁচের গ্লাস ভেঙে গুড়িয়ে যায়। কিছু সংখ্যক কাঁচ ঢুকে পড়ে আবরারের হাতে। গল গল করে র ক্ত ঝড়তে থাকে।

তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৮