ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩৫
Arishan Nur
আয়না অনিচ্ছায় এক লোকমা খেতেই কেমন গা গুলিয়ে আসে, সে দ্রুত বাথরুমে চলে যায়।ডাইনিং টেবিলে বসা সবাই হা হয়ে যায়।
বাথরুমে পৌঁছেই আয়না হড়বড় করে বমি করে ফেলে। বেসিন ধরে দাঁড়িয়ে পরে৷ মনে হচ্ছে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাবে৷ সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত আয়নার দিকে ছুটে’।
ফ্যানের নিচে বসিয়ে ওকে জিরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলো। সমুদ্রও পাশে উদ্বিগ্ন হয়ে দাঁড়ায় থাকে। বাসার সবাই খাওয়া ছেড়ে উঠে আসে আয়নাকে সামলানোর জন্য।
ও ছোট্ট করে বলে, ” এখন ভালো লাগছে। তোমরা সবাই খেয়ে নেও। আমি কিছুক্ষণ রেস্ট করি।”
খাওয়ার মাঝে খাবার ফেলে ছুটে’ এসেছে সবাই। আয়না তাড়া দিয়ে বলে, ” তোমরা যাও, খাও প্লিজ। আমি ঠিক আছি এখন।”
খাওয়ার টেবিলে সবাই গেলেও সমুদ্র দাঁড়িয়ে থাকে। আয়না তির্যক দৃষ্টি ফেলে বলে, ” আপনাকে আলাদা করে বলতে হবে?”
সমুদ্রর চেহারা বাংলার পাঁচের মতো ভোতা হয়ে আসে। সে তার এটো হাতে আয়নাকে ধরতে গেলে,আয়না দূরে সরে এসে বলে, ” যান এখান থেকে৷ আপনার গা থেকে খাসির গন্ধ আসছে। প্লিজ সরুন৷ আমার নাহলে আবার বমি হবে।”
আয়না ওর ওড়না দিয়ে নাক চেপে ধরে যেন সত্যি সমুদ্রের গা থেকে স্মেল আসছে। সে একবার নাক নিয়ে শার্টের স্মেল নেয়। পারফিউমের গন্ধই ভকভক করেছে তাও যে কেন তার গায়ে স্মেল পাচ্ছে ও৷
সে বলে উঠে, ” আমার গা থেকে ছাগলের মতো গন্ধ আসছে? ”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–” হুম। রুম ছেড়ে যান৷ পুরো রুম খাসির গন্ধে ভরে যাবে।”
সমুদ্র বেশ অপমানিত বোধ করে, ঝগড়া হয়েছে তাই বলে এভাবে গা দিয়ে খাসির গন্ধ পায় বলে অপমান করবে?
সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসলো। আয়োজন অনেক করা হয়েছে। তার শ্বশুড় ফাহাদ সাহেব অতিথি আপ্যায়ন করতে খুব ভালবাসে। আর সেক্ষেত্রে যদি অতিথি মেয়ে-জামাই হয় তাহলে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যান উনি। আজও ব্যতিক্রম নয়। সমুদ্র খাবার নিয়ে নড়াচড়া করে৷ খাওয়া গলা দিয়ে নামছে না৷ অস্বস্তি লাগছে তার৷ রাতের ঝগড়াঝাঁটি আর আজকের করা আয়নার ইউশাকে জড়িয়ে বেখাপ্পা কর্ম-কাণ্ড তাকে ভাবিয়ে তুলছে। খাওয়ার টেবিলে আয়নাকে নিয়েই আলোচনা চলছে৷ ওকে ওর বাসার সবাই আয়ু বলে ডাকে৷
আয়নার দাদী সালেহা বানু বলে উঠে, ” আয়ু বুবু কিছু ই মুখে দিতে পারছে না।সব বমি করলো। আয়ু পো য়াতি হলো নাকি?”
সমুদ্র এক লোকমা খাওয়ার মুখে দিয়ে খাচ্ছিলো৷ ওর খেতে খেতেই কাশি উঠে যায়৷ খাবার গলায় গিয়ে বাজে ওনার কথা শুনে৷ দ্রুত ফাহাদ সাহেব ওর পিঠে হাত দিয়ে বুলাতে থাকে আর জিজ্ঞেস করলো, ” কি হলো? বাবা, ঠিক আছো?”
সমুদ্র কাশতে কাশতে জবাব দিলো, ” জি।”
এরপর কিছু পল সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে ফেলে। ও ভাবে শ্বশুড় মশাই যদি জানত সমুদ্রের তার মেয়ের সঙ্গে এমন বাজে ঝগড়া হয়েছে তাহলে মাটন খাওয়ার পরিবর্তনে তাকেই খা সি ভেবে জবা ই করে দিতো।
সমুদ্র স্বাভাবিক হলে দাদী ফের জিজ্ঞেস করলেন, ” দিদাভাই, কোনো খুশির সংবাদ আছে?”
সমুদ্র ভ্যাবাচেকা খায়। শ্বশুরের সামনে দাদী এসব কি বলেন? লাগাম টানেন না কেন উনি? ভারী লজ্জা লাগে সমুদ্রের। বমি করা থেকে কোন ভাবনায় পদার্পণ করলেন উনি। কতো রুগী বমি করছে, সবাই কি প্রেগন্যান্ট হয় নাকি। কি আজব থ্রট।
সে নম্র গলায় বলে, ” না। না দাদী। ওর শরীর ভালো না।কাল থেকে আজে-বাজে ফাস্টফুড বেশি খেয়েছে। আজকে আবার ঠিকমতো খায় নি। গ্যাস্ট্রিক হচ্ছে মনে হয়। আমি ঔষধ দিচ্ছি। তখন বাচ্চা চলে যাবে, না মানে গ্যাস্টিক চলে যাবে। ঠিক হয়ে যাবে আরকি।”
এক নাগাড়ে খুব এলোমেলো ভাবে কিছু মিথ্যা বলে সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করে। তাছাড়া তার ধারণা এমন কিছু ই না। তারা এখনো ফ্যামিলি প্লানিং এর পরিকল্পনা করেনি। আয়না কাল থেকে কান্নাকাটি করছে। নিশ্চয়ই প্রেশার ফল করে এ ‘অবস্থা। আয়না আবার কাঁদতে পারেনা। কাঁদলেই নাকি ওর মাথাব্যথা, অসুস্থতা বোধ হয়। এসব জানার পরও সমুদ্র ওকে কষ্ট দেয়!
খাওয়ার পর সমুদ্র ডাইনিং রুমেই বসে থাকে।ফোন চালায় বসে। বাড়ির পুরুষরা খেয়াল না করলেও শায়লা চৌধুরী বুঝে সমুদ্র আর আয়ুর মধ্যে বেশ ঝামেলা যাচ্ছে। সমুদ্রের চোখ-মুখ আর অভিব্যক্তি দেখেও ধারণা করা যাচ্ছে৷ তবে আগ বাড়ায় কিছু বলবে না সে। এ’বাসায় এসে বুঝেছে, ফাহাদ থেকে শুরু করে প্রতিটি সদস্য আয়নাতে চোখে হারায়। আয়নার সঙ্গে ঝামেলা বাড়ানো মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। একটু পর সালেহা বানু হাতে অনেক কিছু নিয়ে ফিরলেন। আয়ুর রুমে যাওয়ার আগে সমুদ্রকেও ডাকেন। সমুদ্র তাকে অনুসরণ করে রুমের ভেতর আসে৷ উনি দুটো ছোট ছোট কাঁথা আর ছোট্ট বাচ্চাদের দুই’সেট জামা এনেছেন। সাথে একটা ফিডার। একটা লাল রঙের খেলনা গাড়ি।
আয়না দাদীর হাতে বাচ্চাদের জিনিসপত্র দেখে হতভম্ব হয়। সে বুঝে পায় না কি বলবে? দাদী সব বাচ্চার জিনিসপত্র আয়নার হাতে তুলে দিলো।
দাদী বলে উঠে, ” এইগুলো খুব তাড়াতাড়ি কাজে লাগবে, তাই না বুবু?”
আয়না লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মুখ দিয়ে কিছু বের হতে চায় না। সমুদ্র তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তাদের সম্পর্কের এমন টানপোড়ন যাচ্ছে আর দুনিয়ার মানুষের কতো শখ তাদের নিয়ে! হাহ!
আয়নার হাতে খেলনা গাড়ি আর ফিডার দেখে সমুদ্রর বুকের মধ্যে উত্থাল-পাতাল শুরু হয়৷ কোথায় জানি চিনচিন ব্যথা অনুভব লাগে।
দাদী চলে গেলে সমুদ্র বলে, ” বাচ্চাদের জিনিসপত্র দেখতে খুব কিউট তো! যত্ন করে রেখে দেও কাজে আসবে৷”
আয়না এতোক্ষণে ওর সাথে কথা বললো। বলে উঠে, ” আপনার তো বাচ্চা এনোয়িং লাগে?”
সমুদ্র আমতা-আমতা করে বলে, ” হ্যাঁ, তা লাগে৷ কিন্তু…. ”
আয়না না শুনেই উঠে দাঁড়ায়। আলমারির দিকে আগায়। সমুদ্র বুঝে না, কোথা থেকে শুরু করবে। কিছু ভাবতে চাইলে সে সবার আগে সিগারেট ধরায়। প্রথমই রঙ্গনের বিষয়টা ক্লিয়ার করতে হবে৷ রঙ্গন ওর কলেজ জুনিয়র। নটরডেমের জুনিয়র। নটরডেমের পোলারা মাক্সিমাম বুয়েট-ঢাবিতেই যায়। তার আরেক জুনিয়রও ঢাবিতে আছে সেই সুবাদে ওর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলো ওদের ব্যাচে নাকি সবাই আয়নাকে রঙ্গনের হাফ গার্লফ্রেন্ড বলে ডাকত। কেন ডাকে বা ডাকত এটা জানতে পারেনি সে। তবে রঙ্গন আয়নার বাসায় এসেছিলো এটা খেয়াল ছিলো। কোনোদিন জিজ্ঞাসা করেনি আয়নাকে এ নিয়ে। কারণ তার নিজেরও অতীত আছে৷ কিন্তু কাল রাতে আয়না অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছিলো। ইতিমধ্যে তাকে চরিত্রহীন বানায় দিচ্ছিলো। আয়নার ধারণা সমুদ্র অফিসের নাম করে সবটা টাইম মেয়েদের সঙ্গে কাটাচ্ছে।
আয়নাকে টাওয়াল হাতে নিতে দেখে ও বলে, ” এ সময় গোসল করো না। পরে ঠান্ডা লেগে যাবে। এমনিতেই গ্যাস্টিকের জন্য বমি করছো। আমি গ্যাস্টিকের ঔষধ দিচ্ছি।”
–” আমার গ্যাস্টিকের সমস্যা হয়েছে এটা আপনাকে কে বললো?”
–” আমাকে কে বলবে? আমি ভালো বুঝি।”
সমুদ্র কাজ থামায় না। সাদা কাগজে কলম দিয়ে সময় নিয়ে কিসব লিখে।এরপর আয়নার হাতে দিয়ে দেয়। আয়না পড়েও না। সে সিগারেট হাতে নিতে ধরলেই আয়না বাঁজখাই গলায় বলে, ” আমার রুমে সিগারেট ধরাবেন না। তাহলে পাঁচতলা থেকে ফেলে দিবো।”
সমুদ্রের আর সি গারেট ধরানোর সাহস হয় না। সে বলে উঠে, ” তাহলে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি। তোমার সাথে কিছু কথা আছে৷ লেট আস টক এন্ড গিভ মি টাইম ফর এক্সপ্লেনেশন।”
আয়না টাওয়াল ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, ” আপনি গোসল করে আসেন। পুরা রুম গোয়াল ঘর গন্ধ করছে।”
–” এখনো গা থেকে খাসি-খাসি গন্ধ আসছে?”
আয়না জবাব না দিয়ে নাক চেপে ধরে কাগজের লিখা পড়তে শুরু করে। সমুদ্র একটু হেসে গোসলে চলে যায়৷ এই রাতের বেলাও গোসল করলো। ইচ্ছামত গায়ে ডলে ডলে সাবান মাখে যেন গায়ে কোনো গন্ধ না থাকে। সে বেরিয়ে এলো। রুমে তখন আয়না বাদেও দাদী ছিলেন সঙ্গে শায়লা চৌধুরীও। সে বিরক্ত হলো। বারবার একাকী সময় চাচ্ছে কিন্তু একটু পরপর কেউ না কেউ এসে ডিস্টার্ব করছে। কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না কেউ।
সমুদ্রকে এই রাতে গোসল সেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখে দাদী আর শায়লা চৌধুরী একে অপরের দিকে তাকায়।
এরপর মুচকি হাসেন। সমুদ্র ওনাদের কীভাবে বুঝাবে তাদের দু’জনের মধ্যে রোমান্টিক কিছু ঘটেনি বরং আয়নার অভিযোগ তার গা থেকে নাকি বিশ্রী গন্ধ আসছে। আয়নার জন্য এক গ্লাস দুধ রেখে ওনারা চলে গেলে, সমুদ্র বলে উঠে, ” শুনো, আমি কয়েকদিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া…… ”
আয়না পুরাটা অব্দি শোনে না। তার আগেই চিৎকার দিয়ে বলে, ” এতোক্ষণ আপনার গা থেকে খাসির গন্ধ আসছিলো। এখন গরুর গন্ধ আসছে।”
সমুদ্র চোখ গোল গোল করে তাকালো। কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। আয়নার চিৎকারে বাসার সবাই চলে এসেছে। উঁকিঝুঁকি মারছে। অসুস্থ মানুষ দাদাও এসেছেন। ফাহাদ সাহেব ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছেন। সবার দৃষ্টি সমুদ্রের দিকে যেন সে জেলখানার পালানো আসামী।
সমুদ্র আমতা-আমতা করে বলে, ” আমার গা থেকে নাকি গরুর মতো গন্ধ আসছে। বাবা, টেনশন করবেন না৷ আমি আবার শাওয়ার নিয়ে আসছি।”
সে ফের বাথরুমে ঢুকে। মনে মনে আয়নাকে একগাদা গালি দিলো। বাসার সবাই তাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো সোজা পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়েছে৷ সবার সামনে ইজ্জতের বারোটা বাজায় দিলো।
রাতের বেলা সমুদ্র জিজ্ঞেস করলো, আয়না, সাদা কাগজটা পড়েছো?”
আয়না অন্যদিকে ফিরে বলে, ” হ্যাঁ। ”
–” তারপরও কথা বলবে না? তোমার নীরবতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছ? কাগজটা কোথায়?”
আয়না ভ্রু কুচকে থেকে বলে, ” ওটা দারোয়ান কে দিয়েছি।”
–” হুয়াট! তুমি এতোকিছু করার পরও আমি আগ বাড়ায় ইগো বিসর্জন দিয়ে সর্যি লিখে দিলাম। আর ওটা কোন আক্কেলে দারোয়ান কে দাও তুমি? ”
আয়না বলে, ” আমি ভেবেছি ওখানে কোনো মেডিসিনের নাম লিখা আছে। এজন্য ফার্মেসী গিয়ে কিনে আনতে পাঠিয়েছি।”
সমুদ্র রাগে নিজের চুল ছিঁড়তে মন চাইলো। ও বলে, ” আমি সর্যি লিখে দিলাম আর তুমি সেটা ফার্মেসী পাঠালে?”
–” প্রেশক্রিবশন ভেবেছিলাম।”
সমুদ্র থ হয়ে যায় তবে আয়না তাকে আরোও অবাক করে দিয়ে বলে, ” আপনাকে নিয়ে আমি বেডে শু’বো৷ আপনি সোফায় শুয়ে পড়েন নাহলে দাদার সঙ্গে ঘুমান।”
সমুদ্র হা হয়ে যায় পুরা। আয়না একটা বালিশ ছুঁড়ে মারে তার গায়ে। কিন্তু সমুদ্র তোয়াক্কা করে না৷ একদম আয়নার গা ঘেঁষে বসে বলে, ” খবর শুনেছো?”
আয়না নিশ্চুপ থাকলে সমুদ্র বলে উঠে, ” আমি একটা কনফারেন্সের জন্য সিলেক্ট হয়েছি৷ আমার ব্যাচ থেকে মাত্র দু’জনকে সিলেকশন করেছে তার মধ্যে আমি একজন। আগামী সপ্তাহেই যেতে হবে অস্ট্রেলিয়া। আয়না, এই সেমিনার এটেন্ড করা আমার জন্য অনেক জরুরি। ট্রাস্ট মি, এক মাস আগে জানলেও আমি তোমার জন্য ভিসার কাজের প্রোসেস শুরু করতাম। মাত্র একমাস থাকবো।”
আয়না ওর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলে, ” আমাকে বলছেন কেন?”
–” অনুমতি নিচ্ছি। তুমি রাজী থাকলে, আমি যাবো। মানা করলে যাবো না।”
আয়না আবারো নিশ্চুপ থাকলে, সমুদ্র ওর ভেজা চোখ জোড়ায় চুমু একে দিয়ে বলে, ” এম সর্যি। অন্য কাউকে নিয়ে তোমাকে খোটা দেওয়া খুব বড় অপরাধ আমার। অনেক বড় ভুল হয়েছে। অনেক রেগে ছিলাম ওই সময়।”
কিন্তু আয়না ওর সর্যি গ্রহণ করে না। মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে বেরিগেড দিয়ে শুয়ে পরে৷
সমুদ্র বলে, ” ধরে নিবো রাজী আছো?”
আয়না মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলো। উনি বলে উঠে, ফ্লাইট বুক করে ফেলবো।”
সমুদ্র গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে। তার মতো লম্বা মানুষের পক্ষে সোফায় শোয়া বিশাল কঠিন কার্য। সে মনে মনে ঠিক করে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফেরত আসার আগ অব্দি আয়না বাপের বাড়ি থাকলে থাকবো। সম্পূর্ণ তার ইচ্ছা। তার নিজের পরিকল্পনা ছিলো ইউশাকে নিয়ে সব ক্লিয়ার করার কিন্তু আয়না অসুস্থ তার উপর এতো পরিমাণ জেদ যে কিছু শুনতে চাইছে না৷ মাথা ঠাণ্ডা হলে বুঝাতে হবে ইউশার সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো কিন্তু অনেক বড় কারণে সম্পর্কে ইতি টেনেছে সে।
সমুদ্রর তিনদিন পর ফ্লাইট ছিলো। এ তিনদিনের মধ্যে আয়না একবারও সমুদ্রের বাসায় আসেনি। সমুদ্রের আজকে দুপুর ফ্লাইট। বের হবে, রেডি হয়েছে। কালো রঙের টি-শার্ট পরেছে৷ শায়লা চৌধুরী আসবেন তাকে বিদায় জানাতে তখন আয়নারও আসার কথা। যাওয়ার আগে শেষ বার দেখা করে নিবে। কিন্তু শায়লা চৌধুরী একাই এলেন। সঙ্গে আয়নাকে আনেন নি।
সমুদ্র জিজ্ঞেস করলে জানালেন আয়না আসবে না। সমুদ্রের ভীষণ রকমের রাগ হলো। সে বলে, ” লাগেজ গাড়িতে করে এয়ারপোর্টে পাঠায় দিও। আমি সোজা এয়ারপোর্টে যাব।”
কথাটা বলেই বেরিয়ে যায় ও আয়নার বাসার উদ্দেশ্যে। সে যখন আয়নার রুমের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো তখন আয়না পড়ছিলো। সমুদ্র বইটা হাতে তুলে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং বললো, ” আমি বিদেশে যাচ্ছি। তুমি আমার সঙ্গে দেখা করা বাদ দিয়ে পড়ছো কেন?”
আয়না ভাবলেশহীন থাকে। সমুদ্র রাগান্বিত গলায় বলে, ” সমস্যা কী মেয়ে তোমার? তোমার পাল্লায় পরে আমার নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন লাগে।”
আয়না বই কুড়িয়ে নিতে ধরলে সমুদ্র ওর বাহু চেপে ধরে বলে, ” সেদিন নিজেই অনুমতি দিলে আর আজকে এমন নাটক কেন করছো? এজ ইফ আমি তোমার থেকে সম্মতি না নিয়েই যাচ্ছি?”
–” আমি আপনাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিয়েছি। ”
–” কিহ?”
–” হ্যাঁ। আপনি অস্ট্রেলিয়া ইউশার কাছে যাচ্ছেন তাই না? যান। আর কষ্ট করতে হবে না৷ সেকেন্ড ম্যারেজ করার অনুমতি দিয়ে দিলাম।”
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ৩৪
আয়নার ভাবমূর্তি দেখে মনে হচ্ছে ও ভীষণ সিরিয়াস। সমুদ্র অবাক নয়নে তাকিয়ে বলে, ” আমি তো ভীষণ সৌভাগ্যবান। আমার বউ আমাকে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি দিচ্ছে। ওয়াও!”
আয়না তাকে ইগনোর করে পড়ার টেবিলে বসলে, সমুদ্র রাগে গজগজ করতে করতে বলে, ” ঠিক আছে। তোমার এতো ইচ্ছা সতীন দেখার। তোমার ইচ্ছাটা পূরণ করি।”