পাতা বাহার পর্ব ২৭(২)
বেলা শেখ
ঘড়িতে বারোটা পেরিয়ে একটার ঘর ছুঁই ছুঁই। দিন নয় রজনী। পরিবেশ নিস্তব্ধ থাকার কথা থাকলেও বিয়ে বাড়িতে সেটা সম্ভব নয়। সরকার বাড়ির পরিবেশটাও উৎসব মুখর। নতুন বউ এসেছে বাড়িতে। সেই আনন্দ যেন বাড়িটাকে ভরিয়ে রেখেছে।
পাতা কিশোরী বয়স থেকেই স্বপ্ন দেখতো নিজস্ব বাড়ি, নিজস্ব ঘরের। অষ্টাদশে পদার্পণের পর থেকেই মন কুঠিবাড়ি স্বপ্ন বুনতে শুরু করে নিজস্ব সংসারের! আজ পাতা সেই নিজস্ব সংসারে পদার্পণ করেছে। পাতা এমন সংসারের স্বপ্ন দেখতো না। সে খুবই সাধারণ ঝঞ্জাট বিহীন মধ্যবিত্ত সুখের সংসারের প্রার্থনা করতো। কিন্তু উপর ওয়ালা হয়তো অন্যকিছুই লিখে দিয়েছে। কেমন হবে পাতার সংসার?
পাতার নিজস্ব রুমে অর্থাৎ অরুণ সরকারের রুমের বিছানায় বসে। বিছানা মোটেই ফুলে সজ্জিত নয়; একটা ফুলের পাপড়ি পর্যন্ত নেই। পাতা প্রথমে খানিকটা অবাক হয়েছিল। কিন্তু পরে তার অবাকতা আরেকটু বেড়ে যায়। বিছানায় ফুল সজ্জিত না হলেও রুম জুড়ে হরেক রঙের ফুলের সমাহার। যা আগে খেয়াল করে নি। ফুলদানিতে তাজা গোলাপ ; লাল, হলুদ গোলাপিসহ আরো কিছু কালারের,সব আলাদা ফুলদানিতে! বেশ লাগছে! রুমটা অনেক বড়।আর কারুকাজ খচিত কাঠের সব ফার্নিচার।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
পাতা পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নেয়। অনেক গুলো টব তাতে বিভিন্ন গাছ লাগানো; ফুল, ওষধি, সৌন্দর্য বর্ধক গাছ ইত্যাদি। সাদা দেয়ালে বিভিন্ন পেইন্টিং যেমন বাটারফ্লাই, সৌরমন্ডল, পাখি ইত্যাদি। কোনো মানুষের পেইন্টিং বা ছবি নেই এমনকি ভোরেরও নয়। তবে বিভিন্ন হ্যাঙ্গিং ক্রাফ্ট, ওয়ালমেট ফ্লাওয়ার, হ্যাঙ্গিং ওয়ালবক্স আছে দেয়ালজুড়ে। পাতা বিছানায় বসে গালে হাত দিয়ে সব খুঁটিয়ে দেখছে। নার্ভাসনেস দূর করার ভালো পন্থা মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখা। আদুরি, রুবি ভাবি সহ আরো অনেক মুরুব্বি গোছের মহিলা যারা পরিচায় দিলেও পাতার মস্তিষ্ক গুলিয়ে ফেলেছে সেই শুরুতেই; তারা পাতাকে এখানে বসিয়ে অনেক শলা পরামর্শ, দিয়ে, তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে খানিকক্ষণ আড্ডা দিয়ে চলে গেছে। চলে গেছে সেই আধা ঘন্টা হবে হয়তো। এখনো লোকটার আসার নাম নেই। তার একা একা ভয় করছে খানিকটা। সাথে নার্ভাসনেসে হাত পা বরফ হওয়ার উপক্রম। গলা শুনে কাঠ হয়ে আছে। ভয়, ভালোলাগা, অজানা আশঙ্কা, অস্বস্তি, ঘুম সব মিলিয়ে পাতা গুটিয়ে বসে থাকে।
-” ভোর! আজ রাতে আমি, তুমি, আনিকা, তোমাদের আদু ফুপ্পি একসাথে ঘুমাবো, আমার ঘরে। অনেক মজা করবো। ঠিকাছে?”
ভোরের হাত ধরে রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটতে হাঁটতে বলল আসমা বেগম। ভোর গাল ফুলিয়ে অনিচ্ছায় তার সাথে পা চালাচ্ছে। সে আজকে দাদির সাথে ঘুমাতে চায় না। সে তো আম্মু ও আব্বুর সাথে দুজনের মাঝখানে ঘুম দিতে চায়। আব্বু আম্মু দুজনই তাকে জড়িয়ে রাখবে ঘুমিয়ে গেলে। কিন্তু দাদি? সে ফুলো গাল আরেকটু ফুলিয়ে বলে,
-” দাদি তোমার কাছে কাল থাকি? আজ আমি আম্মুর..”
আদুরি এসে ভোরকে কোলে তুলে নেয়। ভোর কথা শেষ করতে পারে না। আদুরি তার গালে চুমু দিয়ে বলে,
-” কাল না আজই। আমিও থাকবো। মা নতুন রাজকুমারীর গল্প বলবে! মজা হবে তাই না রাজকুমার? আনিবুড়ি টাও আসছে!”
ভোর পিছনে তাকিয়ে দেখে আনি ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে পুতুল হাতে ছোট ছোট পায়ে হেঁটে আসছে। অনেক মজা হবে?
-” ফুপ্পি মনি আব্বুও রাজকুমারীর গল্প জানে আমি তার থেকে শুনবো!”
আসমা বেগম একটু শক্ত গলায় বোঝানোর সুরে ভোরকে বলে,
-” শুনিও । তবে আজ না। আজ তুমি আম্মু আব্বুর সাথে থাকতে পারবে না। কাল থেকো; আজ তোমার আম্মু অনেক টায়ার্ড তাই রেস্ট নেবে। আর কোনো কথা বলবে না।”
ভোরের নয়নজোড়ায় জল চিকচিক করে। সে মিনমিনে গলায় বলে,
-” আচ্ছা আম্মুর কাছে থাকবো না। কিন্তু আব্বুর কাছে থাকবো। আব্বুকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না।”
-” কি বললাম আমি?”
ভোর আদুরির কোল থেকে নামে।
-” তোমার কথা শুনবো না। আমি আব্বুর কাছে যাবো!”
বলেই দৌড় লাগায়। আদুরি আসমা ডাকে পিছু; ভোর শোনে না। দৌড়ে কয়েক কদম যেতেই বাবাকে দেখে ভোর তার পা জড়িয়ে ধরে। অরুণ ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।
-” কখন থেকে ডাকছিলাম কলিজা। কোথায় ছিলে?”
ভোর কিছু বলে না। ঠোঁট উল্টিয়ে বাবার গলা জড়িয়ে কাঁধে মুখ লুকায়। আব্বু কি এখন তাকে দাদির ঘরে থাকতে বলবে? সে একটুখানিও থাকবে না; হাতের বাঁধন শক্ত করে। অরুণের ললাটে ভাঁজ পড়ে। এর আবার কি হলো। তন্মধ্যে আসমা বেগম ও আদুরি আসে সামনে। আনিকা দাদির ঘরে গিয়ে বিছানায় উঠে ঘুমে শেষ। আসমা বেগম অরুণকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” ও আজ আমাদের সাথে থাকবে। তুমি যাও!”
অরুণের ললাটের ভাজ শিথিল হয়; চোয়াল দ্বয় কঠিন।
-” তোমরা কি শুরু করেছো বলোতো? আমার কলিজা আমার সাথেই থাকবে। আজকেও ও আগামী দিনগুলোতেও।”
-” মেয়েটার কথাও একটু ভেবো!”
আসমা বেগম গম্ভীর মুখে বলে চলে যায়। আদুরি বিড়াল ছানার মতো তার পিছু পিছু। অরুণ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে হাঁটা দেয়। সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। বর্ষার সাথে ডিভোর্সের পর একরাতেও কাছ ছাড়া করে নি। বুকে জড়িয়ে আগলেছে। কিছুদিন আগে পাতাবাহারের কাছে একরাত ছিল। অরুণের চোখে একফোঁটাও ঘুম নামে নি। সারারাত ছটফট করেছে! কখন ভোর হবে কলিজা তার বুকে আসবে। আর এরা আজকে নতুন সুর গাইছে। বন্ধু, বাড়ির সবাই মিলে আদা জল খেয়ে নেমেছে। সে ক্লিয়ারলি মানা করেছে তবুও এরা! সে গম্ভীর মুখে বড় বড় পা ফালায়। সামনে মুস্তাকিম, রাসেল সহ সব গুলোই দাঁড়িয়ে। সে পা থামিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,
-” এখন আবার শুরু হয়ে যাস না। আই’ম টায়ার্ড! অলসো কলিজা। রাত একটা বাজতে চলল!”
শুভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে জানে অরুণ সরকারকে বোঝানো ওত সহজ না। একেবারে একরোখা; যা বলবে তাই করবে। তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা সাপের পা দেখার মতো। সে তবুও বলে,
-” দেখ ভাই! তোর এটা প্রথম বিয়ে , প্রথম রাত না হলেও পাতার প্রথম। ওর ও নিশ্চয়ই বিয়ে স্বামী, প্রথম রাত নিয়ে স্বপ্ন আছে। থাকবে না কেন?সব মেয়েরই আছে। তোর যেমন ছিল বর্ষার বেলায়!!”
বর্ষার কথা ওঠায় ক্ষ্যাপা ষাঁড় ক্ষেপে যায়। গুঁতো মারল বলে, তখন রাসেল কথার বাণ ছোঁড়ে,
-” তুই স্বার্থপরের মতো করছিস! প্রতিদিনের কথা তো উঠছে না যাস্ট আজকের দিন। ভোরকে আমাদের কাছে দে আমরা ম্যানেজ করবো!”
ভোর বড়দের সব কথা না বুঝলেও এটা বুঝতে পারে যে আজকে তাকে বাবার কাছে থাকতে দেবে না কেউ! কিন্তু তার বাবাকে চাইই চাই!! সে ফুঁপিয়ে উঠে অরুণকে আরো শক্ত করে ধরে। অরুণ ছেলের মাথায় চুমু খায়।
-” সর সামনে থেকে। কলিজা আমার সাথেই থাকবে নইলে যাচ্ছি না ও ঘরে!”
ফয়সাল রেগে যায়। বাকি সবাইকে সরতে বলে অরুণকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” শালা যা! তুই তো জন্মত্রই জেদে ভরপুর কারো কথা শুনবি না।”
বলে সরে যায়। অরুণ পা বাড়ায়। দরজার কাছে যেতেই জীবন ডাক দেয়। অরুণ ভ্রু কুঁচকে পিছনে চায়। জীবন তড়িৎ বেগে সামনে আসে। অরুণের হাত ধরে মুঠোয় কিছু দিয়ে সরে যায়। অরুণ মুঠো খুলে জিনিসটা দেখে। মুখ দিয়ে ভয়ংকর একটা গালি বের হতে চায়; কিন্তু ছেলের উপস্থিতির জন্য বলতে পারে না। হাতের জিনিস বন্ধুদের দিকে ছুঁড়ে মারে। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ধরাম করে বন্ধ করে। ওর সকল বন্ধুদের রাগ উবে যায়; সবাই হাসিতে ফেটে পড়ে।
পাতা চমকে ওঠে দরজা বন্ধ করার শব্দে। কি হলো তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। সে খানিকটা না একটু বেশিই ভয় পেয়েছে। তবে দরজায় অরুণ সরকারকে দেখে স্বস্তি মেলে।
অরুণ দরজা লাগিয়ে পিছনে ফিরে। ভোরকে নামিয়ে দেয়। দেখতে পায় বিছানায় জড়সড় হয়ে বসে আছে পাতা। সে স্বান্তনার সুরে বলে,
-” রিল্যাক্স ইটস মি! এতো ভীতু তুমি জানতাম না তো!”
ভোর অরুণের কোল থেকে নেমেই পাতার কাছে যায়। পাতার সামনে বাবু হয়ে বসে গালে হাত রেখে তাকিয়ে থাকে। পাতা তার কিউট নাকটা টিপে অরুণের উদ্দেশ্যে বলে,
-” আমি মোটেও ভীতু নই!তবে একটু চমকে গেছিলাম!”
অরুণ এক ভ্রু উঁচিয়ে অবিশ্বাসী চোখে চায় পাতার দিকে। ভীতু নয়? সে পরণের পাঞ্জাবী খুলে সোফায় বসে গা এলিয়ে দেয়। পাতার দিকে তাকিয়ে কটাক্ষের সুরে বলে,
-” হুম! সে দেখা আছে!”
পাতা কটমট করে চায় অরুণের দিকে। লোকটা কি তার সাথে ঝগড়া করতে চাইছে। মানছে সে একটু ভীতু ;বেশিই না, এই এই টুকু! সেটা ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে ভোরের সামনে।ভোর তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে; ঘুমোয় নি। অরুণ উঠে আসে সোফা থেকে, বিছানার পাশে রাখা এসির রিমোট নিয়ে তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। রিমোট ঢিল দিয়ে পরনের গেঞ্জিটা খুলে ছুঁড়ে মারে। পাতার চোক্ষুযুগল কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম! এই লোক জামা কাপড় খুলছে কেন? চেঞ্জ করবি তো ওয়াশ রুমে যা না? এরকম নিজের বডি শেপ দেখিয়ে পাতাকে দূর্বল করার ধান্দা তাই না? পাতা অরুণের দিকে তাকিয়ে থাকে ড্যাব ড্যাব করে। ঝলমলে সাদা লাইটের আলোয় স্পষ্ট সব। অরুণের বলিষ্ঠ পেটানো শরীর। হাতের মাংসল পেশি ফুলে আছে। ফর্সা বুক কালো লোমে আবৃত। সিনা টান টান করে তার দিকেই তাকিয়ে। পাতা ঢোক গিলে! অরুণের ভ্রু যুগলে ভাঁজ পড়ে। পাতার কোলে মাথা রাখা ছেলেকে দেখে সে গম্ভীর গলায় বলে,
-” ভোর নিত্যরাতের মতো আজকের রাতেও আমাদের সাথে থাকবে! তোমার কোনো সমস্যা? স্পষ্ট এবং সত্যি কথা বলবে, জড়তাহীন।”
পাতার চাহনি বদলে যায়। অরুণের থেকে নজর সরিয়ে কোলে শুয়ে থাকা ভোরের দিকে চায়। ছোট্ট ভোরও চোখ উল্টিয়ে তার দিকে তাকিয়ে জবাবের আসায়, আম্মু কি মানা করবে? পাতা ঝুঁকে ভোরের কপালে চুমু খায়। চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে ভোরের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-” আমার কোনো সমস্যা নেই।”
ভোরের গোমড়া মুখে হাসি ফুটে ওঠে। অরুণের অধরকোণে ক্ষীন হাসির রেখা। সে বাইরে যেতে যেতে পাতার উদ্দেশ্যে বলে,
-” ধন্যবাদ পাতাবাহার!”
পাতা অরুণের দিকে চায়। আবারো ফর্সা বলিষ্ঠ পিঠ নজর কারে। অরুণ দরজা খুলে।
-” পাতাবাহার এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আগে কখনো ছেলে দেখো নি? চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছো যেন?”
বলে থামে না বেরিয়ে যায় দরজা ভেজিয়ে। বাইরে বের হতেই নজরে আসে বন্ধুদের দল। এখনো যায় নি! তার খালি গা দেখিয়ে মিট মিট হেসে আঙ্গুল উঁচিয়ে অল দা বেস্ট বুঝিয়ে কেটে পরে। অরুণ বিরক্তিকর শ্বাস ছাড়ে।
অরুণ যাওয়ার পর পাতা হা করে দরজার দিকে তাকিয়ে। ভোর পাতার কোল থেকে উঠে বসে চিন্তিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করে,
-” আম্মু? চোখ দিয়েও খাওয়া যায়?”
পাতা অসহায় চোখে ভোরের দিকে চায়।
-” কি জানি! আমি তো পারি না। তুমি পারো?”
ভোর মাথা নাড়ল। সে পারে না। পাতা ভোরের কিউট মুভমেন্ট দেখে ভোরের গাল টিপে দেয়। ভোর মুচকি হেসে বলে,
-” আম্মু তোমাকে অন্নেক সুন্দর লাগছে।”
পাতা ভোরকে কোলে বসিয়ে দিয়ে গালে মুখে আদর করে। ছেলেটা এই কথাটা অনেকবার বলেছে আজকের এ বেলায়। এত্তো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে!! শুনতে শুনতে তার ডায়াবেটিস না হয়ে যায়। এরইমধ্যে অরুণ আসে । পাতা সেদিকে তাকায়। হাতে একটা খাঁচার মতো ঝুঁড়ি। কি আছে ওতে? অরুণ দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢোকে। খাঁচাটা কাঠের টি টেবিলে রেখে সেটার দরজা খুলে দেয়। ভেতর থেকে মিও মিও করে অভিযোগ করতে করতে বের হয় পাতাবাহার। তার অভিযোগ তাকে কেন সারাটাবেলা বন্দি করে রাখা হলো। সে অরুণের দিকে বড় বড় করে চেয়ে মিও মিও করে; যেন বকছে। অরুণ হাত বাড়িয়ে বিড়াল শাবকটির কান ধরে পাতার দিকে ঘুরে দেয়।
পাতা হা করে তাকিয়ে অরুণ সরকার ও বিড়ালছানার কান্ড দেখছে। নাক উঁচু লোকটা আবার বিড়াল পোষে নাকি! পাতার নাক সিঁটকায়। তার বিড়াল ভালো লাগে না তেমন না । তার ধারনায় বিড়াল কিউট বাট গা ঘেঁষে; দূর থেকেই এদের ভালো লাগে। বিড়াল শাবকটি নতুন মেহমান ও ভোরকে দেখে মিও মিও করে শরীর দুলিয়ে এগিয়ে যায় তাদের দিকে। পাতা চোখ বড় বড় করে । ভোরকে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বিছানার উপর। পাশ থেকে ছোট্ট টেডি টাইপ কুশন বিড়ালের দিকে তাক করে বলে,
-” শু শু এই যা! এই এদিকে আসছিস কেন? শু শু! ভোরের বাবা সরান এটাকে! খামচি দিবে তো? ভোর তুমি কোথায় যাচ্ছো?”
অরুণ মুখ টিপে হাসে অগোচরে। ভোর এসে বিড়ালটিকে কোলে তুলে নেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
-” আম্মু এটা খামচি দিবেনা। দেখ? সুন্দর ও কিউট। একদম তোমার মতো?”
পাতা শাড়ি সামলিয়ে বিছানা থেকে নামে। বিড়ালছানা তার মতো দেখতে? আশ্চর্য। ভোরের কোল থেকে নেমে পাতার দিকে এগিয়ে আসে; তার সাথে কুশল বিনিময় করতে। বোকা পাতা বুঝলোই না। সে অরুণের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।
-” সরান তো এটাকে। আমার পিছনে আসছে কেন?”
অরুণ বিড়াল শাবককে দেখিয়ে বলে,
-” পাতাবাহার? মিট অ্যানাদার পাতাবাহার!”
পাতা মাথা এলেবেলে যায়। কি বললো?
-” কি সব ছাতার মাথা বলছেন?”
বিড়াল শাবকটি লাফ দিয়ে পাতার পরনের শাড়ি খামচে ধরে; আর পাতা অরুণের বাহু খামচে ধরে শু শু করে। এদিকে ভোর হেসে কুটিকুটি। পাতা তার দিকে তাকিয়ে বলে,
-” এটা কিন্তু ঠিক না ভোর! ওই বিড়ালের বাচ্চাটাকে সরাও?”
অরুণ ঝুঁকে বিড়াল শাবকটিকে কোলে তুলে নেয়। ব্যস পাতা অরুণ ছেড়ে সরে দাঁড়ায়। অরুণ বিড়ালটির গায়ে হাত বুলিয়ে বলে,
-” এটার নামও পাতাবাহার!”
পাতা অবাকেল চুড়ান্ত পর্যায়ে। বিড়ালের নাম পাতাবাহার! হতেই পারে। কিন্তু লোকটা তাকেও পাতাবাহার সম্বোধন করে। এর মানে টা কি দাঁড়ালো? পাতা কোমড়ে হাত রেখে কটমট করে বলে,
-” ওহ্ ভালো! খুউব ভালো! তা নামকরণ, আকিকা আগে কারটা করেছেন শুনি?”
বিড়াল নামক পাতাবাহার মিও মিও করে পাতার দিকে তাকিয়ে। পাতা তাকে চোখ রাঙায়। ভোর হামি তুলছে বারংবার। অরুণ সেটা লক্ষ্য করে বলে,
-” আপনারটা আগে করা হয়েছে। কলিজা বলল ওকে নাকি আপনার মতো দেখতে তাই ওর নামকরণ আপনার নামেই করা হয়। আর কোনো আর্গিও নয়? ছেলেটার ঘুমে চোখ ছোট ছোট হয়ে এসেছে। আপনিও চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পড়ুন!”
পাতা প্রথম কথা শুনে ঝগড়া করার প্রস্তুতি নিলেও শেষের কথায় দমে যায়। তবে সে জবাবদিহিতা ঠিকই চাইবে!
পাতা অরুণের কোলে বিড়াল শাবকির দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটে। তার বর ওরফে জামাই; তার জামাইয়ের কোলে তার থাকার কথা অথচ বিড়ালের বাচ্চা বসে আছে। পাতা তোর কপালটা আসলেই ফুটো! হঠাৎ কিছু মনে পড়ায় পাতা মিনমিনে গলায় বলে,
-” দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে বলেছিল সকলে! এখন?”
অরুণ পাতার দিকে চায়,
-” ওহ্। আমি ওযু করে আসছি! আপনি করবেন না?”
-” হুম!”
-” আলমারিতে আপনার সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে। যান চেঞ্জ করুণ!”
তাদের কথোপকথনের মাঝে ভোর বলে ওঠে,
পাতা বাহার পর্ব ২৭
-” আব্বু আমিও নামাজ পড়বো তোমাদের সাথে।”
অরুণ ছেলেকে কোলে নিয়ে ওয়াশ রুমে যেতে যেতে বলে,
-” ওকে কলিজা!”