রেড রোজ পর্ব ৩৩
ফারহানা নিঝুম
ছোট ছোট লাইটের আলোয় পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে উঠেছে। গুটি কয়েক আত্মীয় স্বজন এসেছে পার্টিতে,আজ ঐশ্বর্যের সঙ্গে উৎসার আংটি বদল।
ঐশ্বর্য বরাবরই স্যুট পরে রেডি হয়ে গেছে, রুদ্র বার কয়েক বলেছিল ফতুয়া বা পাঞ্জাবি পড়তে। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
ঐশ্বর্য সেই কালো রঙের স্যুট পড়ল, রুদ্র জিসান,আড্ডা দিচ্ছে।নিকি মিহি দু’জন মিলে কেয়া আর উৎসা কে রেডি করে দিচ্ছে।
কেয়া একদম বাঙালিদের মতো সালোয়ার স্যুট পড়েছে।তাকে গর্জেস করে সাজিয়ে দিয়েছে নিকি, এদিকে উৎসা কে সাজিয়ে দিচ্ছে মিহি।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে উৎসা,পরণে তার লাল গাউন। পিটপিট চোখ করে তাকাচ্ছে আশেপাশে, জিসান চোখের ইশারা করলো ঐশ্বর্য কে। ঐশ্বর্য ঘাড় ঘুরিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকালো, মৃদু হাওয়া হৃদয় দোলা দিয়ে গেল।
লাল গাউন,হাতে ব্রেসলেট,গানে আর গলায় ম্যাচিং করা নেকলেস এবং ইয়ার রিং।চুল গুলো পাম্প করা, অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ঐশ্বর্যের কাছে সদ্য ফোঁটা এক লাল গোলাপ মনে হচ্ছে।
“অ্যা #রেড_রোজ।”
উৎসা নিচে আসতেই ঐশ্বর্যের দিকে দৃষ্টি গেল, ইশ্ কী সুদর্শন পুরুষ। মানতে হবে, মেয়েরা এমনি এমনি পাগল নয় এই ছেলের জন্য!
কিন্তু এখন থেকে এই পুরুষ তার ব্যক্তিগত।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
উৎসা আসতেই ঐশ্বর্য ওর হাত স্পর্শ করলো, উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকালো।কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়,একে অপরকে রিং পড়িয়ে দেয়। উৎসা চমকালো,তার আঙুলে ডায়মন্ডের রিং। ঐশ্বর্যের দিকে তাকাতেই চোখ টিপলো সে, উৎসা মনে মনে হাসলো। অস’ভ্য রিক চৌধুরী, আসলেই অস’ভ্য।
জিসান উৎসার কানে ফিসফিসিয়ে বলে।
“আজকে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
উৎসা চমকালো।
“কিসের?”
কেয়া উৎসার বাহু ধরে বলে।
‘কাম,সিট।”
উৎসা কে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসায়, এদিকে ঐশ্বর্য মাঝখান বসলো।সবার মধ্য মনি সে, জিসান গিটার এগিয়ে দিলো। উৎসা থতমত খেয়ে গেল,এই অনুষ্ঠানে এখন ঐশ্বর্য ইংলিশ গান গাইবে? ব্যস হয়ে গেল!
উৎসা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে, সবাই কী বলবে?বলবে অবশ্যই ছেলের মাথায় সমস্যা!
ঐশ্বর্য গিটারের সুর তোলে।
Teri Nazar ne yeh kya kar Diya
Mujhse hi Mujhko juda kar Diya
Main rehta hoon tere paas kahin
Ab mujhko mera Ehsaas Nahi
Dil kehta hai bas Mujhe
উৎসা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, ঐশ্বর্যের মুখ হিন্দি গান শুনে। কিন্তু এখন? ঐশ্বর্য তো থেমে গেল,তবে কী পরের লাইন ভুলে গিয়েছে?
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke Zyada bhi hoga tumhi se
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Teri Nazar ne yeh kya kar Diya
Mujhse hi Mujhko juda kar Diya
Main rehta hoon tere paas kahin
Ab mujhko mera Ehsaas Nahi
Dil kehta hai bas Mujhe
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke Zyada bhi hoga tumhi se
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke Zyada bhi hoga tumhi se
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
সবাই বেশ প্রশংসা করে ঐশ্বর্যের,তার গানের গলা দারুন। উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,এই লোকটা হিন্দি গান কবে শিখলো?এত সুন্দর গেয়েছে, আচ্ছা প্র্যাকটিস না করলে বুঝি পারবে?
“সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?”
জিসানের কথায় আড় চোখে তাকায় উৎসা।
“তার মানে কাল ছাদে গিটারের শব্দ শুনেছিলাম ওইটা সত্যি তাই তো?”
জিসান খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। ঐশ্বর্য উৎসার কাছে।
“সুইটহার্ট হাউ ইজ দ্যাট?”
উৎসা অধর বাঁকিয়ে হাসলো।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী ভালো হয়ে যান। ভালো হতে পয়সা লাগে না।”
উৎসা হনহনিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দুতলায় চলে গেল। ঐশ্বর্য নাক মুখ কুঁচকে নেয়,কী মেয়ে রে বাবা একটু প্রশংসা করলো না! কিন্তু ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী তো ছাড়বে না,সে তার পাওনা নিয়েই ছাড়বে।
ঐশ্বর্য বড় বড় পা ফেলে উপরের দিকে গেল।
উৎসা হেঁটে নিজের রুমে গেল চেঞ্জ করতে, আপাতত অনুষ্ঠান শেষ। খুব গরম লাগছে তার, কতক্ষন এই ভারী গাউন পরে থাকবে?
কানের দুল আর গলার নেকলেস খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো উৎসা। তৎক্ষণাৎ কর্ণে এসে স্পর্শ করলো দরজা লাগানোর শব্দ। উৎসা পিছন ফিরে তাকালো, ঐশ্বর্য দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উৎসা কিছুটা চমকালো।
“কী চাই?”
ঐশ্বর্য পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে, ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো। উৎসা ঐশ্বর্যের রহস্য মিশ্রিত হাসির কারণ বুঝলো না।
“কী হলো ব্যাপার টা? এখানে কেন আপনি?যান তো আমি ঘুমাবো। ঘুম পাচ্ছে।”
ঐশ্বর্য ঝড়ের গতিতে এসে উৎসা কে দু হাতে চেপে ধরলো
“নো মোর ওয়ার্ডস,কিপ কুয়াইট।”
উৎসা ঘাবড়ে গেল, ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়।চোখ তার খোলাই আছে, উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের চোখের দিকে। ঐশ্বর্য কিছুই করছে না,জাস্ট ঠোঁট লাগিয়ে রেখেছে। উৎসা থরথর করে কাঁপছে,একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশ্বর্য সরে দাঁড়ালো, উৎসার গাল খানিকটা বেঁকে ধরে। উৎসা কিছুই বুঝলো না, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। অল্প অল্প করে গভীর স্পর্শ করছে, আবার ছেড়ে দিচ্ছে। ঐশ্বর্য অদ্ভুত রকম আচরণ করছে, উৎসার চুলের মধ্যে যত্নে আঙুল রেখে আবার শক্ত করে টান দিচ্ছে। ব্যথা পাচ্ছে উৎসা, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে। আবার ছেড়ে দিচ্ছে,উৎসা বুঝলো না। আচ্ছা এটা কী আদেও তার ঠোঁট নাকি রাবার।
উৎসা দু হাত ঐশ্বর্যের বুকে রেখে আলতো ভাবে ধাক্কা দিলো। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ঐশ্বর্য এবারেও একই কাজ করলো।
মিনিট দশেক পর ঐশ্বর্য নিজ থেকেই ছেড়ে দিলো।
উৎসা অনুভব করলো তার ঠোঁট কেটে র’ক্ত বের হচ্ছে।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী, ব্যথা পেয়েছি আমি,ম্যাড।”
ঐশ্বর্য অদ্ভুত স্বরে বলে।
“বেইবি ডার্ক রোমান্স চেনো?”
উৎসা অস্বস্তি বোধ করছে। ঐশ্বর্য কী এখন ওসব দেখে নাকি? আস্তাগাফিরুল্লাহ।
“দদেখুন এবার কিন্তু খারাপ হচ্ছে!”
ঐশ্বর্য নিঃশ্বাস টেনে নেয়, ঠোঁটে লেগে আছে তার উৎসার ঠোঁটের র’ক্ত। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিলো সে।
“আর মাত্র দু দিন।”
ঐশ্বর্য হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল, দু’দিন? কীসের দু’দিন? উৎসা বুঝলো না।
“তো? আমি কী করব? আপনি যা ইচ্ছে করুন আমার তাতে কিছু যায় আসে না!”
নিকি জিসান কে পাত্তা দিচ্ছে না, বেচারা জিসান নিকি কে ভয় দেখাতে বলে উঠে।
“আমি সুইসাইড করব।”
নিকির কোনো পরিবর্তন নেই উল্টো বলেছে যা ইচ্ছে করতে। জিসানের মনটা ঠাস ঠাস করে ভে’ঙে গেল, বেচারা দেবদাস হয়ে বাগানে বসে আছে।
“কী আশ্চর্য, এখন মনে হচ্ছে ঐশ্বর্যের মত একটু হলে ভালো হতো। তাহলে অবশ্যই নিকি তাকে ভালোবাসতো।”
নিজ মনেই বিড়বিড় করছে জিসান।
তার বংশ বৃদ্ধি আর হলো না,সে শেষ কালে এসে ঠেকে গেল। মন টা চাচ্ছে অ্যাংরি বার্ড কে ধরে ঠাস ঠাস করে দুটো চুমু খাই।তবে যদি ফিলিংস টা একটু বুঝে?
নিজের উল্টো পাল্টা ভাবনাতে পাগল হয়ে যাচ্ছে জিসান। কিন্তু না থামলে চলবে না,এই মেয়ে কে বোঝাতেই হবে জিসান কে?
গুটি পায়ে গিয়ে নিকির রুমের দরজা টান দিয়ে খুলে ফেললো জিসান। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলো পেলো তার অ্যাংরি বার্ড ঘুমাচ্ছে।
জিসান মূহুর্তে গলে জল, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।কী একটা ভেবে বেডের পাশে গিয়ে বসলো।
“হায় অ্যাংরি বার্ড ইউ আর সো সুইট। একটু ভালোবাসলে কী হয়? আমার মত শুদ্ধ পুরুষ আর পাবে?”
জিসান কী একটা ভেবে নিকির হাত টা অল্প ছুঁয়ে দিলো।
নিজেই লজ্জা পাচ্ছে পরক্ষণে।
রাত বিরেতে ড্রয়িং রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ঐশ্বর্য। আফসানা পাটোয়ারী তখনো জেগে আছে,নিচে আসতেই নজরে এল ঐশ্বর্য।
ঐশ্বর্য দেখলো আফসানা পাটোয়ারী কে,সে দুষ্টু হাসলো।
“মিসেস মহিলা জেগে যে?”
আফসানা দাঁত কটমট করে বললো।
“প্রবলেম কী তোমার? সবসময় পেছনে পড়ে থাকো!”
ঐশ্বর্য হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“আপনাকে ডিস্টার্ব করতে ভালোই লাগে।”
আফসানা বিরক্ত বোধ করলো। কিন্তু কিছু একটা ভেবে বলে।
“আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তুমি আদেও কী উৎসা কে ভালোবাসো?”
ঐশ্বর্য মূহুর্তে গাম্ভীর্য ভাব মুখে টেনে নেয়।
“কেন আপনার কী মনে হচ্ছে?”
আফসানা মিহি হাসলো।
“আমি যতদূর জানি তুমি মোটেও উৎসা কে ভালোবাসো না, অ্যাম ড্যাম শিওর।”
“ওকে।”
রেড রোজ পর্ব ৩২
আফসানা ঐশ্বর্যের আর কোনো প্রশ্ন বা উত্তরের অপেক্ষা করলো না। উপরে নিজের রুমে চলে গেল।
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো, ভ’য়ংকর সেই হাসি। আচ্ছা সত্যি সে ভালোবাসে রেড রোজ কে?আ আ একদম নয়। তার মাথায় নিডস্ ছাড়া আর কিছুই নেই,মোহ, আকর্ষণ জাস্ট এটুকুই। এরপর? নাথিং,উৎসা নিজের পথে।আর ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী জার্মানি।
ঐশ্বর্য ফের হেসে উঠলো। ভালোবাসা বলতে কিছু নেই,নাথিং। এভরিথিং ইজ ফিজিক্যাল নি’ড’স এন্ড এন্ড এন্ড….. সামথিং।